হবে কি আমার পর্ব -০৯

#হবে-কি-আমার(2)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_9

নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, সূয্যিমামা চকচক করছে তার মিষ্টি রোদ ছড়াচ্ছে ধরিত্রীতে, পরিবেশটা আজ কোলাহল মগ্ন হয়ে আছে অনুদের বাড়ি।হবেই না বা কেন আজ বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা। একটা খুশির আমেজ বয়ে চলেছে সর্বত্র। তনুশ্রী কে পিঁড়িতে বসানো হয়েছে হলুদ মাখানো জন্য পরনে তার হলুদ আর লালে তাঁতের শাড়ি, হাতের শাঁখা পলা আর স্বর্ণকার বালা! নতুন বউকে খুব সুন্দর লাগছে আজ।তারপাশেই সব আত্মীয়-স্বজন ভিড় জমিয়েছে, হলুদ পর্ব শুরু করার জন্য। পায়েল তনুশ্রীর পাশে বসে তার গায়ে গামছাটা ভালো করে পরিয়ে দিল। অনু কোথা থেকে দৌড়ে এসে বাটি থেকে থাবা মেরে হলুদ নিয়ে তনুশ্রীর দুগালে ভর্তি করে মাখিয়ে দিয়ে বলল,
___”কি সুন্দর লাগছে তোকে দি!”

পায়েল বকা দিয়ে বলল,
___’এমন ভাবেই হলুদ দিতে নেই ।এখনও সব নিয়ম সম্পূর্ণ হয়নি!
অনু হেসে বলল,
____’আমি ওর বোন আমি দিলে কোন কিছু হবে না।আর এরপর আমার একটু কাজ আছে তাই আগে আমি হলুদ দিয়ে গেলাম। বলে আবার দৌড়ে চলে যায়।
তনুশ্রী হেসে বল,
___’ওর কথা বাদ দে!ওর যা মন চায় তাই করে! ওকে বলে ও লাভ নেই।

অরিন্দম আর কলি গাড়ি থেকে নেমে মৃন্ময়কে ছোয়ানো হলুদের বাটি নিয়ে তনুশ্রীদের বাড়ি দিকে আসছে,অরিন্দমের পরনে আজ হলুদ পাঞ্জাবি।আর কলি হলুদ শাড়ি পরেছে তার চুলগুলো ব্রাউন কালার তাকে বলিউডে হিরোইনের থেকে কম কিছু লাগছে না। অরিন্দমের সাথে তনুশ্রী দের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। অরিন্দম যত দ্রুত কলি থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কলি ও যেন পিছু ছাড়ছে না,সে দৌড়ে ওর পাশে পাশে হাঁটছে আর তার সাথে কথা বলে যাচ্ছে।অরিন্দম তাকে আনতে চাইনি কিন্তু কলি জোড়াজুড়ি করে তার সাথে এসেছে। এই দিকে অরিন্দমের ভয়ে হয়ে যাচ্ছে সে কলি কে সাথে করে এখানে এসেছে,আর এটা অনু দেখলে কি যে করবে কে জানে। মেয়েটা তাদের এক সাথে দেখে যদি আবার কান্না করে আর তার শাস্তির লিস্ট বাড়ায় তখন? অরিন্দম কোন রকমে বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখল একটা কোনে সুন্দর জায়গা সাজিয়ে তনুশ্রীকে হলুদ মাখানো পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে, সে কলির দিকে তাকিয়ে বলল,
___”তুমি হলুদটা তনুশ্রী কাছে নিয়ে যাও!আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি!
কলি মাথা নেড়ে তনুশ্রীর কাছে এগিয়ে গেল। অরিন্দম চারিদিকে ভালো করে দেখতে লাগল,তিশা মন্দিরের সামনে আলপনা দিচ্ছে সেখানে অনু নেই, প্যান্ডেলের দিকে চোখ পড়তেই দেখল অনুরাগ ফুলদমে কাজ করে যাচ্ছে যেন তাকেই সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে চেয়ার টানাটানি করছে, সেখানে ও অনুকে দেখতে পেলো না। অরিন্দম বাড়ির ভিতরের দিকে গেল তনুশ্রী মা তাকে দেখে বললেন,
___’তুমি কখন এলে বাবা?’
অরিন্দম হালকা হেসে বলল,
____’এই তো আন্টি একটু আগেই!’
____’ তা বেশ বেশ তুমি বস আমি তোমার জন্য শরবত নিয়ে আসছি!বলে তিনি চলে গেলেন অরিন্দম চেয়ারে বসলো তার দৃষ্টিও এখনো অনুকেই খুঁজে চলেছে, কিন্তু না এখনো তার দেখা পেল না।অলকা দেবী শরবত নিয়ে এসে দিতে অরিন্দম বলল,
_____’আন্টি ওয়াশরুম টা কোন দিকে?’

অলকা দেবী সামনেই অনু আর তনুশ্রীর রুমটা দেখিয়ে বললেন,
___”এই রুমে চলে যাও!”

অনুর রুমে এখন কেউ নেই আর বাদ বাকি রুমে আত্মীয়-স্বজন ভরপুর। অরিন্দম ধীর পায়ে অনুর রুমে প্রবেশ করতেই একটা সুন্দর সুগন্ধ তার নাকে ভেসে এলো,অরিন্দম লম্বা করে তা টেনে নিল। খুব মিষ্টি ঘ্রাণ টা সেটা কোথা থেকে আসছে তা অনুসন্ধান করার জন্য এদিক ওদিক তাকালো সে কিন্তু না কাউকে দেখতে পেল না ঘরের মধ্যে। অরিন্দমের দৃষ্টি আটকে গেল খাটের উপরে একটা ফটো ফ্রেম দেখে যেখানে অনু ব্লাক শাড়ী পড়ে মুখ ফুলিয়ে আছে আর তনুশ্রী তাকে জড়িয়ে ধরে আছে, অরিন্দম অনুর ফেস রিয়েকশন দেখে হালকা হাসল, সত্যি মেয়েটাকে কালো পোশাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে সে ঠিক করে নিল তাকে ছাড়া অনুকে একা কোথাও পাঠালে কালো পোশাক পড়তে দেবে না কিছুতেই। কেমন অধিকারবোধ কাজ করছে তার মধ্যে সে এসব ভেবে নিজেই নিজের উপর হাল্কা হাসলো অতঃপর সে এগিয়ে যেতে যাবে তার আগেই তার গালে তরল জাতীয় ভিজে অনুভব করল কিছু, সে বাহাত দিয়ে ডান গালে হাত বুলিয়ে হাতটা চোখের সামনে আনতে চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল তার, কারণ তার গালে হলুদ লাগানো কিন্তু কে থাকে হলুদ লাগালো সে পিছন ঘুরে দেখল এলোকেশী হলুদ শাড়ি পড়ে দৌড়ে রুমের বাইরের দিকে যাচ্ছে অনু। অরিন্দম দৌড়ে তাকে হাত ধরে টেনে দরজা ছিটকিনি টেনে দিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল অনু ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত মোচড়ামুচড়ি করে যাচ্ছে অরিন্দম তাকে দুহাতে ধরে বলল,
__”এমন কই মাছের মত লাগাচ্ছ কেন?”

অনু তেতে উঠে বলল,
___”আমি মোটেও কই মাছ না বুঝেছেন!”
___”তুমি আমাকে হলুদ লাগিয়ে পালাচ্ছো কেন?
___”আমি আপনার ওপর দ্বিতীয় বার রেগে আছি অরিন্দম!”

অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বলল,
_____”এবার আমি আবার কি দোষ করলাম?”

অনু অরিন্দমের পেটে এক ঘুসি দিয়ে বলল,
____”আপনি কি দোষ করেছে আপনি জানেন না?” ওই ন্যাকি কে গাড়ি করে এনেছেন এটা আপনার অপরাধ।আর শুধু আনেননি আবার দুজনে পাশাপাশি হেঁটে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে এলেন। এই আপনার এত সাহস কী করে হল আপনাকে একবার বলেছিলাম যে ওর থেকে দূরে থাকবেন তবুও আপনি ওর সাথে কেন এলেন? ও আপনাকে আজ ও জড়িয়ে ধরেছিল নিশ্চয়ই।

অরিন্দম নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তাড়াতাড়ি করে বলল,
____”আমার কোন দোষ নেই। ট্রাস্ট মি! আমি ওকে আনতে চাইনি ও নিজে থেকেই জোর করে আমার সাথে এসেছে। তুমি প্লিজ আমার উপর রাগ করবে না।

_____”সে আমি জানি না আপনার দ্বিগুণ শাস্তি হবে! কথাটা মনে রাখবেন?”
অরিন্দম বুঝল সে মেয়েটাকে আবার রাগীয়ে দিয়েছেন কিন্তু ওর তো কোন দোষ নেই আর মেয়েটা তার ওপর রেগে থাকলে তার কাছে এর কেন, তাই সে বলল,
_____”তুমি আমার ওপর রেগে আছো তাহলে আমার কাছে এসেছ কেন?”

____”আমি রেগে আছি কিন্তু আপনার থেকে দূরে থাকবো এমন বলিনি! আমার আগে যদি আপনাকে কেউ আর বিশেষ করে ওই ন্যাকা ফুলকলি আপনাকে হলুদ মাখিয়ে দেয় তাই আমি আগে এলাম!”
___’তা তোমার গালে হলুদ নেই কেন?’
অনু মিষ্টি হেসে বলল,
___’আমি একটু পর মাখব!’

অরিন্দম ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
___’একটু পরে নয় টিয়াপাখি এখন মাখবে!’
অনু চোখমুখ কুঁচকে বলল,
___”একদম না আমি এখন ওখানে যাব না। আর আপনি ও ওই মেয়ের কাছে এখন যাবেন না! যদি আপনি ওখানে যান না তাহলে কিন্তু আপনাকে আমি খুব মারব!হুম!”

_____’কথা শেষ হওয়ার আগে অরিন্দম অনুর মুখের সামনে ঝুঁকে গিয়ে তার ডান গালে নিজের বাম গাল ঘষে দেয়। অনু হঠাৎ তার এমন স্পর্শে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় হঠাৎ করেই সে কেঁপে উঠলো। অরিন্দম থামলো না সে একই তালে অনু’র বাম গালে নিজের ডান গাল ঘষে, ক্ষণেই অনু’র হৃদয় স্পন্দন তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে সে অরিন্দমের পাঞ্জাবি পেটের কাছে মুঠো করে ধরে রইল! অরিন্দম তা দেখে নিশব্দে হাসে অতঃপর সে ক্ষীণ সময় অনু’র লাজুকতা মুখশ্রী দেখতে থাকে কি অদ্ভুত লাগছে তার নিজেকে সে কখনো ভাবেনি যে সে এমন ভাবে কোনো মেয়ের নিকট আসবে! কোনো মেয়েকে সে এত দ্রুত নিজের মনে’র বিশেষ অধিকারীনি করে তুলবে! নিজের সবটা দিয়ে কাউকে এতটা চাইবে! সে যে এই মেয়েটার ভালোবাসায় অথৈ সমুদ্রে ভাসছে যার তরী একমাত্র এই মেয়েটার কাছেই পাবে সে! এই মেয়েটা তার না হলে সে যে সেই অথৈই সমুদ্রে ডুবে মরে যাবে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না কেউ না! শুধুমাত্র এই মেয়েটা ছাড়া! অরিন্দমের চোখের কোণে হঠাৎ করেই অশ্রু চিকচিক করে উঠলো কেনো সে জানে না সে গভীর ভাবে অনুর বন্ধ দু’চোখ দেখতে থাকলো বুকটা কেমন ভারি হয়ে এল তার, হঠাৎ করে তার কি মন হল সে নিজেও জানে না এগিয়ে গিয়ে অনুর কপালে অধর ছোঁয়াল!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here