#হবে-কি-আমার(2)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_16
রৌদ্দুর ঝলমলে সকাল, আকাশ সচ্ছ। বাতাস মৃদু মৃদু বহিছে কেমন যেন একটি মিষ্টি সকাল আজ। আর এই মিষ্টি সকাল মৃন্ময়ের বিরক্ত লাগছো। সে সূর্যিমামা ঝলমলে সোনালী রশ্মির দিকে বিরক্ত হয়ে চোখমুখ কুঁচকে তাকাল মুখ থেকে বিরক্তি তে “চ” সূচক শব্দ হয়ে সে আবার গাড়ি ধোঁয়ায় মনোযোগ দিল। তখন নিজের রুমের ব্যালকনি থেকে তনুশ্রীর কথা শোনা গেল। মৃন্ময় মাথা তুলে ব্যালকনির দিকে দৃষ্টিপাত করল,দেখল তার লাজুকলতা তার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলছে পরনে তার বিয়ের সময় সিঁদুর দানের পর যে শাড়ীটা লজ্জা বস্ত্রে দেওয়া হয়েছিল সেটা, সুন্দর করে পরেছে। চুল গুলো এখনও এলোমেলো হয়ে আছে, মৃন্ময় নিজের খেয়ালে প্রেয়সী কে দেখতে ব্যাস্ত। তনুশ্রী হাঁক ছেড়ে বলল,
__” তাড়াতাড়ি রুমে এসো,মা বারবার ফোন দিচ্ছে, বেশি দুপুর করলে চলবে না। তুমি শ্বশুরবাড়ি যাবে কী ভর দুপুরে? ”
___” তুমি রেডি হয়ে নাও, আমি পাঁচ মিনিটে আসছি। ”
মৃন্ময় উঁচু গলায় বলল,তনুশ্রী রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল, অতঃপর সে সিঁথি করে সিঁদুর পরে কপালে লাল টিপ দিয়ে মুচকি হাসে,তখন মৃন্ময় এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, তনুশ্রী আয়নায় তাকে দেখে লাজুক হেসে মাথা নিচু করে নেয়। মৃন্ময় তার কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
___” হায় বউ পেয়েছি লজ্জাবতী লতা। কিন্তু সে কি জানে তার এই লাজুকতা আমাকে আরও নির্লজ্জ বানিয়ে দেয়। ”
তনুশ্রী সরে যেতে নিলে মৃন্ময় তা দেয় না। তনুশ্রী কাঁপা স্বরে বলল
__” সরো লেট হচ্ছে,
__” হুহু হোক তাতে কি, তোমার বোন কে ফোন করে দেখ তার এখন ঢেড় বাকি।”
___”তুমি কি করে জানলে?”
___”সে যা বজ্জাত মেয়ে অরি’কে যা পাগল করে ছাড়ে তার কি সহজে কিছু হয়ে যায় বল?”
তনুশ্রী কনুই মেরে বলল,
___”আমার বোন কে বজ্জাত বলবে না! ও খুব ভালো।”
___”তুমি ও তো ওমন ভালো হতে পারো!”
তনুশ্রী চোখ রাঙিয়ে বলল,
___”মানে আমি খারাপ!”
মৃন্ময় থতমত খেয়ে বলল,
__”খারাপ কখন বললাম?”
__”এই যে একটু আগেই!”
মৃন্ময় তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
__”আরে আমার বলার মানে ওমন দুষ্টু হতে পার তো একটু।”
__’কেমন দুষ্টু?’
__’তুমি জানো ও কত রোমান্টিক!’
তনুশ্রী চোখ সরু করে বলল
__’রোমান্টিক..”
__’হুম তাই তো অরির শার্টে রোজ সিঁদুরে দাগ থাকে..
তনুশ্রী চোখ বড়বড় হয়ে গেল সে বলল
__’ছিঃ তুমি লোকের প্রাইভেসি..
___’আরে না প্রথম দিন ছিল..
তনুশ্রী কথা পাল্টাটে বলল,
__ওকে সরো রেডি হয়ে নাও।
মৃন্ময় তাকে কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে বলল,
__” আগে একটু রোমান্স।”
তনুশ্রী লজ্জায় নতজানু হলো,সরতে পারলো না তার আগেই মৃন্ময় তাকে কাছে টেনে নিল। তনুশ্রী মুচকি হেসে মৃন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।
______
অনুরাগ মিষ্টি দোকানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,অলকা দেবী তাকে মিষ্টি কিনতে পাঠিয়েছেন, সাথে তিশা ও আছে তবে সে হেলমেট নিয়ে বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ঝাঁকুনিতে। রৌদ্দুরে কার দাঁড়াত ভালো লাগে তাই সে অনুরাগকে মিষ্টির দোকানের পাঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অনুরাগ প্রায় কুড়ি মিনিট লাইন দিয়ে মিষ্টি কেনার পর তিশার দিকে তাকিয়েই মেজাজ গরম হয়ে গেল তার কারন তিশা কলেজের সিনিয়র দাদার সাথে কি যেন কথা বলছে আর হেসে চলেছে, মেয়েটার এই প্রত্যেক কথায় হাসির জন্য একদিন আচ্ছা মত ধমক দিতে হবে। আর এই ছেলেটিকে অনুরাগের একেবারেই পছন্দ না,ও তো শুনেছিল এই ছেলে কোলকাতা চলে গিয়েছে তাহলে এখানে কেন, অনুরাগ এগিয়ে যায়, তিশা তাকে দেখে বলল,
_’ দেখ রাগী পল্লবের সাথে কতদিন পর দেখা হল বল?আর তুই দেখ রোগা-পাতলা ছেলেটা কেমন হিরো টাইপ হয়ে গিয়েছে!”
অনুরাগ কটমট চোখে তাকায়,তিশা তা দেখে চুপসে যায়,ও সিংহ কে কি খেপিয়ে দিল? পল্লব বলল,
__’ অনুরাগ কেমন আছিস?’
অনুরাগ তিশার হাত থেকে হেলমেট কেড়ে নিয়ে তা মাথায় পরতে পরতে বলল,
__’ বলতে বাধ্য নই,তিশা ওঠ!’
তিশা শুকনো ঢোক গিল, অনুরাগ রেগে গেলে তাকে তিশা বলে ডাকে,আর আজ…তিশা তাড়াতাড়ি উঠে বসতেই অনুরাগ স্পিড বাড়িয়ে বাইক চালায় প্রায় দশমিনিট পর ফাঁকা রাস্তায় বাইক থামায়,তিশা ভীত গলায় বলল,
__’ থামলি কেন?’
অনুরাগ কিছুক্ষণ নীরবে থেকে রাগ কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ হয়ে থমথমে গলায় বলল,
_’ কি যেন বলছিলিস তুই, হ্যাঁ পুরো হিরো হয়ে গিয়েছে ও! তাই না? তার মানে আমি…’
তিশা কথার মাঝে কথা বলল,
_’ আমি তো ওটা এমনি বলেছিলাম!’
_’তুই এমনি কেন বলবি?’
_’আরে ওটা জাস্ট..’
অনুরাগ শুনলো না তিশা বাইক থেকে নেমে অনুরাগের সামনে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল,
__সরি না ভুল হয়ে গিয়েছে আর এমন হবে না! আসলে ওর কাছ থেকে একটা ইম্পর্টেন্ট নোটস নেওয়ার আছে ওই জন্যই মিথ্যা বলে টপে তুলছিলাম! না হয় ও দেবে না। সেই জন্য হিরো বলেছি, আমার কাছে তুই ছাড়া কেউ হিরো না।
অনুরাগ চোখ সরু করে বলল,
__’তুই সত্যি বলছিস?’
তিশা মাথা দুলিয়ে সায় দিল, অনুরাগের রাগ দমন হল,তা না হলে ও হয়তো মেয়েটাকে দুচারটে কামড় দিয়ে বসতো, অনুরাগ তিশার ওড়না দিয়ে নিজের মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,
__’সত্যি বলিস আর মিথ্যা! এটাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট টাইম, আমাকে ছাড়া অন্য কারোর দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করলে, সেই দিন ই বিয়ে করে নেব।
তিশা মাথা নেড়ে দাঁড়িয়ে রইল, অনুরাগ পকেট থেকে চকলেট বের করে তিশার দিকে দিয়ে বলল,
__” মুখ ফুলিয়ে থাকবি না। এটা খা আর পিছনে বস।”
তিশা ছৌ মেরে চকলেট নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।
______
অরিন্দম শার্ট প্যান্ট পরে খাটে বসে আছে চুল গুলো তার এলোমেলো হয়ে আছে,মুখ ফুলিয়ে সে ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে গত তিরিশ মিনিট সে এভাবেই বসে আছে চুলটা কে ও সেট করতে সুযোগ পাইনি আর সুযোগ পাবে বা কি করে অনু যে সেখানে দখল করে দাঁড়িয়ে আছে, অরিন্দম জাস্ট পাঁচ মিনিট চেয়েছে সে ড্রেসিং টেবিলে থেকে ব্রাশ টা নেবে কিন্তু অনু বলেছে তার যতক্ষণ না চুল বাঁধা শেষ হবে অরিন্দম ও এমন চুল নিয়ে বসে থাকবে। না হয় একবার জাস্ট একবার তাকে এই মেয়ে এই মেয়ে না বলে বউ বলে ডাকুক সে সরে যাবে। কিন্তু অরিন্দম ও জেদ ধরে আছে তার যখন মন চাইবে তখন সে বলবে।
অরিন্দম চরম বিরক্ত হয়ে উঠে অনুর পিছনে যেতে নিলে অনুর ফোন বেজে উঠল অরিন্দম খাটের কাছে ফিরে এসে স্কিনে তাকিয়ে দেখলো লেখা আছে”চিকনি চামেলি”অরিন্দমের ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল এমন নাম দেখে। অনু লিপস্টিক দিতে দিতে বলল,
__”কে ফোন করেছে?”
__”চিকনি চামেলি, আবার কে?”
অনু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
__ওটা অনুরাগ!
অরিন্দমের কপাল কুঁচকে উঠলো কারন কাল দেখেছিল অনুরাগের নম্বর গাব্বার সিং ছিল আর আজ? অরিন্দম প্রশ্ন করলো,
__’ কাল গাব্বার…
__’ওটা চেঞ্জ করে এটা দিয়েছি
__কেন?
__বলতে বাধ্য না!
অরিন্দম তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন নিয়ে অনুর কাছে যায়,অনু চুড়ি পরতে পরতে বলল,
__পরে ফোন করব,আর একটু পরেই তো ওখানে যাচ্ছি তখন সারাদিন পাব ওর সাথে গল্প করতে
অরিন্দমের মুখশ্রী হঠাৎ পরিবর্তন হল,সে সব বুঝেও অবুঝের মতো বলল,
__”ওর সাথে সারাদিন কথা বলবে মানে? আমি কি করবো তাহলে?”
__” আরে আপনার সাথে তো এতগুলো দিন ছিলাম।”
__’তোমার মানে কি?’
__’কিছু না রেডি হন!’
অরিন্দম অনুর হাত ধরে নিজের দিকে ঘোরায়,অনু কিছু না বুঝে অরিন্দমের মুখের দিকে তাকায়, অরিন্দমের মুখ মলিন অনু তার কারন খুঁজে পায় না, অরিন্দম অনুর গালে হাত রেখে বলল,
__’এখানে, কি ওখানে, যেখানেই তুমি থাকবে সেখানেই আমি থাকবো! তোমার প্রতিটা সেকেন্ড যেন আমার হয় অন্য কারোর না।’
অনু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল,
_’ যদি না দিই?’
__আমার হাতের মুঠোয় তোমার হাত থাকবে সবসময়।
__ ধরুন আমি আপনার থেকে একেবারে দূরে চলে গেলাম তখন কি করবেন?
অরিন্দম চমকালো সে উদগ্রীব কন্ঠে কিছু বলতে যাবে,অনু তার অধরে শব্দ করে চুমু দিয়ে রুম থেকে দৌড়াল, অরিন্দম কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনু আবার দৌড়ে এসে তাকে আরও একবার ঘায়েল করে বুকে মুখ গুজে বলল,
__” আমি কি পাগল যে আপনার থেকে দূরে যাব, আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আপনাকে চাই। শুধু আপনাকে।”
#চলবে