হবে কি আমার পর্ব -১৫

#হবে-কি-আমার(2)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_15

সন্ধ্যা নেমেছে ক্ষণিক আগে অরিন্দম অফিস থেকে ফিরে গাড়ি পার্ক করে, গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে মেইন ডোরের কাছে পৌঁছাল, অতঃপর সে একটা জোরে নিঃশ্বাস নিল, খুব তাড়াহুড়ো করে সে এসেছে,আজ প্রথম সে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে, শুধুমাত্র মিষ্টি বউটার জন্য, তাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে তার,হাসি মুখে সে কলিংবেল চাপে মিনিট পাঁচেক হলেও দরজা কেউ খোলে না। তার বা হাতে শপিং ব্যাগ অনু’র জন্য সালোয়ার কিনে এনেছে তাকে শাড়ি পড়তে বারণ করবে আজকের পর থেকে! কয়েক মিনিট পর বিমলা মাসিমা দরজা খুললেন,তা দেখে অরিন্দম একটু আশাহত হল সে ভেবেছিল অনু প্রথম দরজা খুলবে আর তার সামনে একগাল হেসে দাঁড়াবে কিন্তু হল উল্টোটা। অরিন্দম মুখ ছোট করে ড্রইং রুমে প্রবেশ করে। অতঃপর সে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল অনু আছে কিনা, না অনু নিচে নেই তাকে না পেয়ে অরিন্দম উপরে উঠতে যাবে ঠিক তখনই বিমলা মাসিমা চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
__”অরি বাবা একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে!”

অরিন্দম দাঁড়িয়ে গেল সে ঘুরে দাঁড়িয়ে নম্র ভাবে বলল,
__”কি হয়েছে মাসিমা?”
__”বউমনি কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিকাল থেকে।”
এই একটা বাক্যে অরিন্দমের কর্ণগুহতে পৌঁছে সে চমকে গেল, হাত থেকে ব্যাগটা নিচে পড়ে যায়, কিছুক্ষণ ইতিউতি ভেবে সে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
___” পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? ও একা কোথায় যাবে। হয়তো রুমে আছে!”
___”আমি বউমনি সারাক্ষণই একসাথে ছিলাম কিন্তু বিকালে আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঘুম থেকে উঠতে দেখি বউ মনি তোমাদের রুমে নেই আমি ভাবলাম ছাদে আছে সেখানে গিয়ে দেখলাম কিন্তু না সেখানে নেই, বাগানে ও নেই আর দারোয়ান তো দুপুরে ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছে তোমাকে তো বলেছিল, আমি আশেপাশে খুঁজে এসেছি কিন্তু কোথাও পাইনি!”

অরিন্দমের বুক কেঁপে উঠলো সে কোথায় খুঁজবে মেয়েটা’কে। মাত্র দুদিন হল অনু কলকাতা শহরে এসেছে তার মধ্যে একা কোথাও যেতে পারে?সে তো এখন রাস্তাঘাট ও ভালো চেনে না। আর রাস্তা ঘাটে কত মানুষ আছে কত রকমের কার মাথায় কি চলছে কেউ জানে না। এর মধ্যে এখন একটা মেয়ে কোথায় যেতে পারে। অরিন্দম ছুটে এলো বাহিরে। রাস্তায় এসে পায়চারি করতে লাগলো এদিক ওদিক ছুটতে থাকলো নানান চেনা অচেনা মানুষ কে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো।কেউ দেখেনি তাকে, অরিন্দমের সাথেও বিকালের পর আর কথা হয়নি মেয়েটার,সে গেলো কোথায়?

___

নিকোষ আলোআঁধারির ঘটা ছেয়েছে চারিপাশে। অরিন্দম পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসে থাকা মেয়েটির দিকে আসলে বসে থাকা না, ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটির দিকে, যাকে সে এক ঘন্টা ধরে পাগলের মত খুঁজে বেরিয়ে ঘাম ঝড়িয়েছে সে কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে ছোট বাচ্চাটির কোলে। অনু পার্কে একটা বেঞ্চে একটা সাত আট বছরের বাচ্চা মেয়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে তা দেখে অরিন্দম স্বস্তি পেলেও এমন ভাবে শুয়ে থাকায় সে অবাক হয়ে এগিয়ে বেঞ্চের কাছে আসে। সে আসতেই বাচ্চা মেয়েটি তাকে দেখে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
___’আঙ্কেল দেখ-না আন্টি আমার সাথে গল্প করছিল তার পর আমার কোলে মাথা রেখেও গল্প করছিল, হঠাৎ বলল আমি চোখ বুজিয়ে থাকবো তুই হানডেট প্রচন্ড কাউন্ট করার আগে চোখ খুলে একটা জাদু দেখাবো। আমিও কাউন্ট করলাম কিন্তু আন্টি ঘুমিয়ে গেছে আমি কতো চেষ্টা করছি উঠানোর তাও উঠছে না, এখন রাত হয়ে গেছে আমার মা তো আমার জন্য চিন্তা করবে বল?

অরিন্দম হতভম্ব হল এ কি ঘুমকাতুরে মেয়ে রে বাবা, এখানে এসে ঘুমিয়ে নিজের সাথে বাচ্চা মেয়েটা তো আটকে রেখেছে, অরিন্দম ঝুঁকে অনুর গালে হালকা চাপড় মেরে ডাকতে থাকে কিন্তু সে কোন রেসপন্স করে না।

বাচ্চা মেয়ে আবার বলল,আঙ্কেল প্লিজ আন্টি কে উঠিয়ে বসিয়ে দাও তারপর আমরা দুজন পালিয়ে যাই, না হয় এবার তোমার কোলে ঘুমাবে।

অরিন্দম উপায় না পেয়ে অনুকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে বললো,
___ বাবু তোমার আন্টিকে এখানে রেখে গেলে কি করে হবে বলো? আমি তোমার আন্টিকে খুজতে এসে ছিলাম এবার পেয়ে গিয়েছি তুমি যাও আর আমিও তোমার আন্টিকে নিয়ে যাই।

মেয়েটা এক ছুটে পার্কের বাইরে চলে গেল। আর অরিন্দম হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করে অনুকে কোলে নিয়েই এল।

____

বাড়িতে ফিরেছে প্রায় আধাঘন্টা হলো অরিন্দম ফ্রেশ হয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে তার দৃষ্টি সামনে বেঘোরে ঘুমানো মেয়েটির দিকে। অনু এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যাচ্ছে অরিন্দমের মনে মনে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে সে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারেনি তাই বৃথা চেষ্টা আর না করে নিজে থেকে ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছে,উঠলে আচ্ছা মতো বকা দিতে হবে মেয়েটাকে, এমন ভাবে কেউ ঘুমিয়ে পড়ে পার্কে গিয়ে?

অনু আড়মোড়া ভেঙে পিটপিট চোখে তাকাল, ঘুম ঘুম চোখে অরিন্দমের মুখটা দেখে হালকা হাসল। অনু কে হাসতে দেখে অরিন্দম যেন একটু দমে গেল তবুও মুখে গাম্ভীর্য বজায় রাখল, হঠাৎ অনুর কিছু মনে পড়তেই সে ধড়ফড় করে উঠে বসে বলল,
__” এইখানে কি করে এরা আমি তো…”

অরিন্দম থমথমে গলায় বলল,
___” তুমি তো?”

অনু বুঝল সে ব্র্যান্ডার করে ফেলেছে তাই মেকি হাসি দিয়ে বলল,
___’আসলে..
অরিন্দম রাগী গলায় বলল,
__আসলে নকলে আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি এতটা কেয়ারলেস কেন? এমন ভাবে কেউ খোলামেলা জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে। তোমার ঘুম পাচ্ছিল তো আমাদের রুম নেই?খাট নেই?না-কি রুমে এসি নেই? কোনটা নেই বল?

অনু মাথা চুলকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা সে তো এমনি বিকালে ঘুরতে ঘুরতে পার্কে বাচ্চাদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল কিন্তু দুপুরে না ঘুমিয়ে তার প্রচন্ড ঘুম পেয়ে গিয়েছিলো তাই সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল কিন্তু সে কি করে জানবে এত টা দেরি হয়ে যাবে। অনু ভীত গলায় বলল,
___”সরি বরবাবু! ”

___”কানের গোড়ায় এক চড় দেবো জানো? আমার কতটা চিন্তা হচ্ছিল,জানো তুমি?ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া। অফিস থেকে ফিরে তোমাকে পাগলের মত খুঁজে লাস্টে তোমাকে পেলাম কোথায় পার্কে ঘুমন্ত অবস্থা যদি কোন খারাপ মানুষের চোখে পড়ে যেতে তখন কি হতো কোন আইডি আছে তোমার স্টুপিড গার্ল!”

অরিন্দম এমন ধমকে অনু কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
___” ভুল হয়ে গিয়েছে, সরি বলছি তো। এত বকা দিচ্ছেন কেন? আর কখনো এমন হবে না! প্রমিস, প্লিজ এবারের মত ছেড়ে দিন! আমার না খুব ক্ষুধা পাচ্ছে। ”

অরিন্দম রাগ কমছে না কিন্তু সে কি বলবে এই মেয়েটাকে, অরিন্দমের রাগ দেখে অনু হাঁটুতে ভর দিয়ে অরিন্দমের কাছে এসে ওর গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,
___”আলে সোনা বরটা আমার রাগ করে না! আর এমন হবে না! আমি আর ঘুমাবো না! আজ থেকে ঘুমের সাথে ডিভোর্স নিয়ে নিলাম। রাগ করে না বাবুটা আমার!”

অরিন্দম চোখমুখ কুঁচকে থাকল ঘুমের সাথে কে ডিভোর্স নেয় ভাই। অনু এগিয়ে গিয়ে অরিন্দমের মুখে এলোপাথাড়ি চুমু দিয়ে বুকে মুখ গুজলো। অনুর এহেন কাজে অরিন্দম কিছুক্ষণ তত্তা মেরে বসে ছিল অতঃপর সে দুহাতে অনুকে জড়িয়ে বলল,
___”এমন আর করবে না! জান বেরিয়ে গিয়েছিল আমার। ”

অনু মুখ গুজেই বলল,
___”হুহু!”
____

অরিন্দম কিচেনে নুডুলস বানাচ্ছে,অনু কে ফ্রেস হতে বলে সে নিচে এসেছে, ঘড়িতে এখন রাত আট’টা তাই এখন দুজন নুডুলস খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করবে তারপর রাতে ডিনার করে ঘুমাতে যাবে। অরিন্দম নুডুলস রেডি করে ট্রেতে নিয়ে রুমে গিয়ে যা দেখল তা দেখে তার মুখমন্ডল পরিবর্তন হল সে ট্রে ডেস্কের ওপর রেখে খাটে ধপ করে বসে পড়লো,কারন অনু ফ্রেস না হয়ে হাত পা ছড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, এই সে একটু আগে ঘুমের সাথে ডিভোর্স নিয়েছিল। এত ঘুম আসে কোথা থেকে মেয়েটার? অরিন্দম বিরক্ত হয়ে অনুকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে যায় অতঃপর সে অনুকে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে সাওয়ার অন করে দেয়। আর অনু হকচকিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো।

#চলবে

[ হয়ে যাই।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here