হবে কি আমার পর্ব -১৪

#হবে-কি-আমার(2)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_14

বাহিরে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি পড়ছে, তার ছিটেফোঁটা এসে পড়ছে ব্যালকনিতে, ফলে রেলিং এর ওপরে এক কোনায় অবস্থিত টবে রাখা লজ্জাবতী গাছটা বৃষ্টির স্পর্শ পেয়ে লজ্জায় মুড়ে গিয়েছে, রেলিং দেওয়া ঘেঁষে একটা ছোট্ট পাখি উড়ে এসে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে। অনু এক’মনে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে, তার দৃষ্টি পাখিটি’র কার্যকলাপের দিকে! পাখিটা তার সরু ঠোঁট দিয়ে পালক থেকে জল ঝাড়ছে,অনু সে দিক পানে চেয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসছে, সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে মিনিট পাঁচেক হলো, ব্রেকফাস্ট করে যখন রুমে এল তখন পাখিটা’র কিচিরমিচির শব্দ শুনে সে এগিয়ে এসে দেখল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সে তাদের রেলিং এ আশ্রয় নিয়েছে। সে এগিয়ে গেল না আর নিশব্দে দাঁড়িয়ে রইল। অরিন্দম রেডি হচ্ছে অফিস যাবে। বাড়িতে এখন অনু আর রান্নার মাসিমা থাকবে। অরিন্দম ল্যাপটপ টা ব্যাগে রেখে ব্যালকনিতে তাকাল, না অনু তার দিকে কোনো খেয়াল নেই। অরিন্দম অনু কে নিজের কাছে আনবে বলে খুখু করে কাশে কিন্তু অনু’র এবার ও হুস নেই সে পাখি দেখতে ব্যাস্ত! অগত্যা অরিন্দম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যালকনিতে এগিয়ে গিয়ে শীতল স্বরে বলল,
__এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে এসো। আমি অফিস যাচ্ছি!
অনু ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
__ আরে আস্তে কথা বলুন!
অরিন্দম আরও একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,
__কেন?
___আরে দেখছেন না অতিথি এসেছে আমাদের ব্যালকনিতে। আপনি জোরে কথা বললে ও পালিয়ে যাবে।
অরিন্দম বুঝতে না পেরে ফিসফিস করে বলল,
__” কোন অতীতের কথা বলছো? ”
__” আরে ওই যে রেলিং এ বসে আছে তার কথা বলছি। আপনি প্লিজ জোরে কথা বলবেন না। তাহলে আপনার ভয়ংকর শব্দ ও ভয় পেয়ে পালাবে। ”

অরিন্দম রেলিং এ দেখল একটা দোয়েল পাখি চুপটি করে বসে আছে ওটা দেখে বলল,
___”ওকে ঠিক আছে জোরে কথা বলব না আস্তেই বলছি। তুমি রুমে এসো বৃষ্টির ছিটেফোঁটা তোমার গায়ে পরছে ঠান্ডা লেগে জ্বর হবে।”

অনু পাখিটার দিকে আবার ঘুরে দাড়িয়ে বলল, ___আরে কিছু হবে না। আপনি যান।

অরিন্দমের মুখ চুপসে গেল সে তাকে রুমে ডাকছিল নিবিড় ভাবে তাকে একটু কাছে পেতে, কিন্তু মেয়েটা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। অরিন্দম কিছু একটা বলার জন্য হাঁসফাঁস করচ্ছে কিন্তু সে কিছুতে বলতে পারছে না। কেমন যেন তার কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবুও সে মনে সাহস নিয়ে বলল,
___” দু সেকেন্ড তোমাকে জড়িয়ে ধরে তারপর যাই!”

কথাটা কর্ণগুহতে যেতেই অনু’র গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল তবু ও তা প্রকাশ করল না! নিজেকে ধাতস্থ করে সে ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ পাকিয়ে বলল,
__” জড়িয়ে ধরবেন মানেটা কি? কি পেয়েছেন কি আপনি আমাকে?”

অরিন্দম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে কি এমন ভুল বলে দিল, সে কি একটু জড়িয়ে ধরতে ও পারে না নিজের বউ কে! তার ভাবনার মাঝে অনু হেসে বলল,
___”আরে দু সেকেন্ড কেন? আপনার বউ চাইলে সারাদিন জড়িয়ে ধরে থাকতে পারেন। তার জন্য আমার জিগায় কোন পতি শুনি?”

অরিন্দম অনু’র কথায় কিছুক্ষণ বিভর হলো অতঃপর অর্থ বুঝে সে হেসে দিল। অনু এগিয়ে গিয়ে অরিন্দমের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। অরিন্দম এক গাল হেসে একহাতে অনুকে জড়িয়ে অপর হাতে তার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কেটে গেল কিছুক্ষণ নিরবেই খুব গোপনে খুব কাছে, অরিন্দম মোলায়েম কন্ঠে বলল,
___”টাইম করে খেয়ে নেবে! মন খারাপ করবে না। আমি তাড়াতাড়ি আসব!”
অনু অরিন্দমের বুকে কপাল ঘষে মিনমিনে কন্ঠে বলল,
__”হুম। সাবধানে যাবেন। আর তাড়াতাড়ি আসবেন। মিস ইউ !”

____

অফিসে পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে অরিন্দম ব্যাগ কাঁধে তুলে মেইন গেট ক্রস করতেই দাড়োয়ান তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখলো এমন হাসার কি আছে আজব। অরিন্দম কিছু না বলে এগিয়ে গেল কিন্তু অনেক অফিস স্টাফ তাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে অরিন্দম বিরক্ত হয়ে নিজের ডেস্কের কাছে গিয়ে ব্যাগ রাখল। সবাই এমন হাসার কি আছে অরিন্দম বেশ কিছুক্ষণ ভেবে কারন খুজে পেল,সে যে বিয়ে করেছে সে খবর সবাই পেয়েই তার ওপর হাসছে কিন্তু এতে হাসার কি আছে মানুষ কি বিয়ে করে না। না-কি সেই প্রথম ব্যক্তি যে বিয়ে করে অফিসে এসেছে। অরিন্দম ব্যাজার মুখ করে নিজের চেয়ার টেনে বসতে যাবে তার আগেই দ্বীপ ওর পিছনে এসে দাঁড়াল অরিন্দম তার দিকে তাকিয়ে দেখল সে ও হাসছে অরিন্দমের মেজাজ বিগড়ে গেল সে দ্বীপ কে রাগী গলায় বলল,
__” তোরা এত হাসছিস কেন? আমি সার্কাসের জোকার সেজে এসেছি? ”

দ্বীপ হেসে বলল,
_ভাই জোকার না তবে তলে তলে টেম্পু চালাও সেটা দেখছি!
__” মানে? কি সব বলছিস। বিরক্ত করিস না যা তো!”
___’ আরে এত রুড তো তুই না! আর যা দেখছি তাতে তো মনে হয় না তোর মুড আফ আছে। বেশ তো রোমান্টিক ইমরান হাশমির লাগছে আজ তোকে!’

অরিন্দম ব্যাজার মুখে তাকাল সে আর ইমরান.. অরিন্দম টেবিলের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
___” তুই যা ফালতু কান খাস না! ”
___” চলে গেলে একটু পর আরও স্টাফ এসে তোর ওপর হাসাহাসি করবে।”

অরিন্দমের কপাল কুঁচকালো সে ঘুরে বলল,
____” কেনো?”
___”তোর শার্ট দেখ বাবা!”

অরিন্দম কথামত নিজের বুকের কাছে শার্ট দেখে চমকে গেল, চোখ বড় বড় করে সে চারিপাশে তাকাল সবার মুখে হাসি বিদ্যমান অরিন্দম দ্বীপ কে সরিয়ে ছুটল ওয়াশরুমে, কোনো ক্রমে ওয়াশরুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল, অতঃপর হাত নিজের বুকের কাছে শার্টে দিয়ে জল দিয়ে ওয়াশ করতে থাকল, তার শার্টে সিঁদুরের দাগ লেগে যা আসার সময় অনুকে জড়িয়ে ধরার ফলে হয়েছে কিন্তু সে তো তখন ব্যালকনি থেকে এসে আয়নায় নিজেকে দেখল তখন ছিল না তাহলে এল কি করে? অরিন্দম কিছুক্ষন ভেবেই তার মাথায় হাত। কারন সে বুঝে গিয়েছে এটা অনু জোর করেই করেছে সে যখন গাড়িতে বসতে যাচ্ছি অনু আবার দৌড়ে গিয়ে তার বুকে মাথা ঘষে আদুরে গলায় বলেছিল,
__” ভালোবাসি বরবাবু! ”
অরিন্দম তখন মুচকি হেসে বিদায় জানিয়েছিল কিন্তু…

অরিন্দম ফোনটা পকেট থেকে বের করে অনুকে কল করল, প্রথম রিং হতেই অনু কল রিসিভ করে বলল,
___”অফিস যেতে না যেতেই আমাকে মিস করেছেন বুঝি?”

অরিন্দম তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
___”তুমি এটা জেনে বুঝে করেছ তাই না?”

অনু ঠোঁট টিপে হাসল,সে বুঝে গিয়েছে যে অরিন্দম কিসের কথা বলছে তবুও সে না জানার ভান করে বলল
___”কোনটা?”
___”সিঁদুর….!
কথা শেষ হওয়ার আগেই অনু’র খিলখিল হাসি কানে ফেসে এল যা অরিন্দমের মন কে তৃপ্তি দিল,অনু হাসি থামিয়ে বলল
___” সবাই কে জানিয়ে দিলাম আপনার ঘরে বউ আছে। কেউ লাইন যেন না দেয়। আর এটা প্রতিদিন থাকবে আপনার শার্টে, এটা বৈবাহিক চিহ্ন বুঝেছেন? আমার বাবুটা!”

অরিন্দমের মুখ হা, সে বৈবাহিক চিহ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। লাইক সিরিয়াসলি? এই পাগলি মেয়েটা কোথায় ছিল,সে হতভম্ব হয়ে বলল,
___আর ইউ ম্যাড?আমাকে বৈবাহিক চিহ্ন নিয়ে ঘুরতে হবে,এসব কি?
___”অবশ্যই ঘুরতে হবে! আমি নিয়ে ঘুরব, তাহলে আপনার বেলায় ছাড় কেন? আপনি ও আমাকে নিয়ে ঘুরবেন। বুঝলেন, সোনা টোনা আমার।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here