হবে কি আমার পর্ব -১৩

#হবে-কি-আমার(২)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_13

সূর্য তখন পূর্ব আকাশে মৃদু মৃদু ভাব ছড়াচ্ছে। আকাশে আজ মেঘ ও করেছে। বৃষ্টি হবে কি হবে না সে নিয়েই অর্ধেক মানব দ্বিধাদ্বন্বে আছে। ঘড়িতে এখন সকাল সাড়ে সাতটা। অরিন্দম বেঘড়ে ঘুমাচ্ছে পরম শান্তিতে। কিন্তু হঠাৎ তার মুখে উষ্ণতা অনুভব করতেই চট করে চোখ জোড়া খুলে সামনে যা দেখল তা দেখে ভূত দেখার মত চিৎকার করে উঠল। অনু তার মুখের সামনে ঝুঁকে ছিল। অরিন্দমের চিৎকারে সে উঠে সরে দাঁড়ালো। অরিন্দম শুয়ে থেকেই বুকে হাত চেপে ভয়ার্ত গলায় বলল, __”মুখে কি মেখে আমাকে ভয় দেখাচ্ছ তুমি? আমাকে একেবারে মেরে ফেলবে না-কি?”

অনু ভাবভঙ্গি বিরক্তি নিয়ে বলল,
__”এটা ফেস প্যাক। ফেস প্যাক জানেন তো কি? সেটাই দিয়েছি মুখে। তাতে এত চিৎকারের কি আছে! আজব!”

__”তা তুমি এত সকালে ভূত হয়ে আমার সামনে কেন ঝুঁকে ছিলে আর ফেস প্যাক মুখে দেওয়ার কি আছে শুনি?”

___”আপনি বুঝবেন না এইসব ব্যাপার! আর তাছাড়া আপনি আমাকে কাল সারারাত ঘুমাতে দেননি সে জন্য মুখটা শুকিয়ে গেছে আমার।”

অরিন্দম আকাশ থেকে পড়ল সে তাকে ঘুমাতে দেয়নি কিন্তু সে তো? অরিন্দম হঠাৎ কিছু ভেবে চোখ বড়বড় হয়ে গেল তার! কিন্তু সে এত বেখেয়ালি না যে মেয়েটার সাথে…অরিন্দম ধরফর করে উঠে বসালো অতঃপর নিজের অবস্থা দেখতে লাগল… না তার পোশাক আশাক তো সব ঠিক আছে! তাহলে?

অনু অরিন্দম কে এমন করতে থেকে ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
__” আরে আপনি নিজেকে এমন ভাবে দেখছেন কেন? আপনি যেটা ভাবছেন সেটা নয়। আমি তো কাল সারারাত আপনাকে দেখতে দেখতে ঘুমাতে ভুলে গিয়েছি তাই বললাম! আপনার জন্য ঘুমাতে পারিনি। আপনি যেমনটা ভাবলেন তেমন তো কিছুই হলো না। আপনি খুব নিরামিষ শুয়ে জানেন, বিছানায় পড়েই ষাঁড়ের মত ঘুমাচ্ছিলেন। নতুন বউ পাশে আছে কোথায় দুষ্টুমি করবেন তা না মোষের মত ঘুমাচ্ছিল। ভাল্লাগে না যেনো!

অরিন্দম হা করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে এ মেয়ে কত ফার্স্ট রে বাবা একটু ও লাজলজ্জা নেই। অনু কথা বলতে বলতে ওয়াশরুমে চলে গেল। অরিন্দম মাথা চুলকে বলল,
___ নির্লজ্জ বউ পেয়েছিস অরি। তুই ও একটু নির্লজ্জ হতে শেখ।

___

অরিন্দমের বাড়িটা অনেক টা বড়। বাড়িতে ঢুকতেই দক্ষিণ দিকে একটু গিয়েই কিচেন তার সামনে ডাইনিং টেবিল পাশে দুটো গেস্ট রুম। ওপরে দুটো রুম। তার ওপর চিলেকোঠার ছাঁদ। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান আর একটা সুইমিং পুল। সুন্দর করে গুছানো তার মা বাবার তৈরি স্বপ্নের বাড়ি।

অরিন্দম ওপরের পাশের রুমে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে এসে দেখল অনু এখনও ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বার হয়নি। অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বলল.. মেয়েটার কতক্ষণ সময় লাগে ওয়াশরুমে। সে বিড়বিড় করে আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে তাকিয়ে শার্টের বোতাম দিতে লাগল। খুট করে দরজা খুলতে অরিন্দম দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল,মুখ হা হয়ে গেল তার। কারন অনু কালো ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে গায়ে টাওয়ার পেঁচিয়ে আছে সে ভিজে চুলে নতজানু হয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তা দেখে অরিন্দমের হাত থেমে গেল সে শুকনো ঢোক পর পর গিলে তুতলিয়ে বলল,
__”ত তুমি এমন ভাবে এসেছ কেন? আর আমার দিকে এগিয়ে আসছ বা কেন?”

অনু লজ্জা মাখা একটা হাসি দিয়ে বলল,
__”রোমান্স করবো তার জন্য!”

অরিন্দম তা দেখে আর ও পিছালো তার এসব রোমান্স যেন ঠিক আসে না। অনুকে এমন রুপে দেখে তার অনুভূতি হলেও কেমন যেন তার ভয় ভয় করছে অরিন্দম আগের ন্যায় বলল,
__”কি হয়েছে তোমার? যা যাও শা শাড়ী পড়ে এসো।”

অনু তাকে ভয় পেতে দেখে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল অতঃপর সে দুহাত কোমড়ে গুজে বলল,
___”এত ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আপনার ইজ্জত নিয়ে নেব না। সো রিলাক্স ম্যান। আমি শাড়ি পড়তে পারিনা তাই এমন ভাবে এসেছি। আপনি তো আমার বর ন্যাকার মত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আর তাছাড়া আপনি আমাকে শাড়ী টা পড়ানো দেখিয়ে দিন।

অরিন্দম চোখ বড় বড় করে অনু’র দিকে তাকালো সে তাকে এমন অবস্থা দেখেই মৃগী রোগীর মত কাঁপছে আর যদি তাকে শাড়ি পরাতে যায় তাহলে তো এক্ষুনি বেহুঁশ হয়ে যাবে। অরিন্দম কাঁপা গলায় বললো,
___আমি শাড়ি পরাতে জানি-না আমি পারবো না!

অনু আলমারীর কাছে গিয়ে দুটো শাড়ি বার করল অতঃপর একটা হলুদ শাড়ী নিজের জন্য আর একটা নিয়ে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বলল,
___”আপনাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে কে বলেছে? আপনাকে পড়িয়ে দিতে হবে না! জাস্ট দেখিয়ে দেবেন।”

অরিন্দম স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল… ও আচ্ছা এই ব্যাপার!

___হ্যাঁ এই ব্যাপার!নিন এই শাড়ীটা আপনি নিজে পড়ে আমাকে দেখিয়ে দিন।”

অরিন্দম হতভম্ব হলো সে শাড়ী পড়বে? লাইক সিরিয়াসলি? সে বিষ্ময় ভরা কন্ঠে বলল,
__”হোয়াট? আমি শাড়ী পড়বো! আর ইউ ম্যাড?”

___”নো আ’ম সিক। হ্যাপি! এবার এটা পরে দেখান!”

___”তুমি ইউটিউবে দেখে পড়ে নাও!”

___”নো!” ইউটিউব আন্টি ভালো পারে না! আমি লাইভ দেখে পড়বো! প্লিজ পড়ুন না! এমন করছেন কেন? একটা মাএ বউ না আমি আপনার! আপনি না বলেছিলেন আপনার ঘরে আমি আসলে যত্নে রাখবেন তাহলে এখন কেন এমন করছে? আচ্ছা আপনি কি আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছে? আমাকে কি আপনি এখানে রাখতে চান না?
কথা গুলো বলে অনু মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইল।

অরিন্দম অনু’র ছোট হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেল। মেয়েটা কত মায়াভরা কন্ঠে তার কাছে প্রথম আবদার করছে। সে না করতে পারছে না। কিন্তু তা বলে নিজে শাড়ী পড়বে। কিন্তু বউটাকে দেখে মন খারাপ হচ্ছে তার। অগত্যা সে মাথা নেড়ে বলল,
___”দেখিয়ে দিচ্ছি কিন্তু কাউকে বলবে না!”
অনু সিরিয়াস ফেস করে বলল
__”বর প্রমিস!”

অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বলল.. বর প্রমিস মানে?
___”আরে আপনার দিব্যি কাউকে বলব না। এবার তাড়াতাড়ি পরে দেখিয়ে দিন আমার ক্ষুধা পাচ্ছে।

অরিন্দম শাড়ীটা হাতে নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোমড়ে গিট্টু দিল। বৌ আস্তেই তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিল। হায় কি কপাল তার। অরিন্দম নিজ মনে শাড়ী পেছাতে লাগলো। তার কোন দিকে কোন হুশ নেই সে কুঁচি করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এইদিকে অনু নিজে শাড়ী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে শাড়ি পড়তে জানে তবুও অরিন্দম কে বোকা বানানোর জন্য বলেছিল শাড়ি পড়তে জানে-না! ক্যামেরা ফটো তোলার শব্দে অরিন্দমের ধ্যান ভাঙ্গলো সে কুচি থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই তার চোখ ছানাবড়া। কারন অনু শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে আছে,আর তার থেকে বড় কথা সে মোবাইলে অরিন্দমের শাড়ী পড়া ফোটো তুলছে। অরিন্দম বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল,
__তুমি…

অনু খিলখিল করে হেসে বলল,
__আমি শাড়ী পড়তে জানি বরবাবু‌।

অরিন্দমের মাথায় হাত সে বোকা বনে গেলো, কিন্তু অনু ফটো.. অরিন্দম গমগমে গলায় বলল,
__ফটো তুলছো কার?
__”আপনার!”
অনু স্পষ্ট স্বীকারোক্তি অরিন্দম ভড়কে গেল,ভড়কানো কন্ঠে বলল,
__’আমার…’
____’হ্যাঁ আপনার! দেখুন শাড়ী পরে আপনাকে কি সুন্দর লাগছে!’

অরিন্দম ধমক দিয়ে বলল
___’ডিলিট কর!’
অনু মুখ বাঁকিয়ে বলল,
___’করবো না!’

অরিন্দম অনুর দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে পা’য়ে শাড়ী পেঁচিয়ে নিচে পড়ল..তা দেখে অনু হেসে দিল। অরিন্দম হতবাক হয়ে বলল
___”দাঁড়াও পাঁজি মেয়ে, একবার ধরি তোমাকে। তারপর দেখাচ্ছি মজা!”
অনু হাসতে হাসতে দৌড় দিয়ে বলল,
____”ধরতে পারবেন না!”
অরিন্দম কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ি গা থেকে সরিয়ে তার পিছনে দৌড় দেয় অনু সিঁড়ি বেয়ে নামছে আর হাসছে অরিন্দম তাকে ধরতে সমান তালে দৌড়াচ্ছে কিন্তু অনুর হাসি শুনে সে ও হেসে চলেছে..দুজনেই হাসছে মনপ্রাণ ভড়ে হাসছে, তাদের নতুন জীবনের নতুন পথচলা হাসি খুশি শুরু হয়েছে আজ অরিন্দমের স্বপ্ন পুরন হয়েছে এই চঞ্চল মেয়েটা তার ঘরে তার চঞ্চলতা মাতিয়ে তুলেছে তার খিলখিল হাসির শব্দে বন্ধ ঘরে প্রানের সৃষ্টি করছে। নতুন ছন্দ দিয়েছে সর্বত্র। ভালোবাসায় ভড়াতে এসেছে তার জীবন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here