#হবে_কি_আমার(২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_24
চারিদিকে সবুজে সবুজে ঘেরা গ্রাম। ধানের খেত বিশাল বিশাল দুধারে, তার মাঝখান দিয়ে সরু রাস্ত। সাইকেল বাইক সহ ছোটছোট ট্রাক ও যাচ্ছে, অরিন্দম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর একবার করে অনুকে টেনে নিজের কাছে আনছে,সে সারাক্ষণ জানালা দিয়ে হাত বাহিরে করে গাছে ডাল থেকে পাতা ফুল যা হাতে আসছে টেনে ছিঁড়ে নিচ্ছে,আর অরিন্দম তা দেখে ভয় পাচ্ছে কোথায় কি হয়ে যায় বলা যায় না। অনু উৎসুক হয়ে আছে গাড়ি আর একটু এগিয়ে গেলেই সে সামনের ছোট পেয়ারা গাছের পাতা ছিঁড়বে যেই ভাবা সেই কাজ অনু ডান হাত বাইরে দিতে যাবে অরিন্দম এবার অনুর বাহু ধরে নিজের ওপর ফেলে,অনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়, কোনো রকম উঠে সরে আসতে নিলে অরিন্দম তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
__”একটু ও নড়াচড়া করবে তো হাত বেঁধে নিয়ে যাব! কখন থেকে বলছি বাইরে হাত দিও না, একটু যদি শোনে আমার কথা।”
__”আপনি এমন কেন করছেন বলুন তো? আপনাদের গ্রামটা খুব সুন্দর এত গাছপালা দেখে হাত দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে, তাই দিচ্ছি। এতে আমার আনন্দের ভিলেন হচ্ছেন কেন?”
__”তোমার সেইফটির জন্য ভিলেন হলে তাই আমি ভিলেন হতে রাজি! কি যেনো বলছিলে আমার গ্রামটা ভালো কিন্তু আমার তো তোমাদের গ্রাম টা বেশ ভালো লেগেছিল।”
__”কেন আমাদের গ্রাম টা তো ছোটখাটো শহরের মতো! এত জমি ধান চাষ নেই।”
__”তা হলেও তোমাদের গ্রাম আমার প্রিয় কারন সেখানে আমি তোমাকে পেয়েছি।”
অনু মুচকি হেসে অভিমানী সুরে বলল,
__”আপনি তাহলে প্রথমে আমাকে অবহেলা করতেন কেন? জানেন আমার কত কান্না পেত, কত মন খারাপ হত, কিন্তু আপনি আমাকে গুনে গুনে পনেরো বার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন! যদি আপনার ওপর রাগ করে আমি.. অনুর কথা শেষ হওয়ার আগে অরিন্দম বলল,
__”আমি জানতাম তুমি আমাকে আর ছাড়বে না!”
__”আচ্ছা এই ব্যাপার! যদি আপনাকে ভুলেই যেতাম তখন কি করতেন?
__”তোমার মাথায় চাঁটি মেরে মনে করাতাম!”
অনু একটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
___”আমি আপনাকে কখনো ভুলব না বরবাবু! আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি!”
অরিন্দম হাসলো! একহাতে তাকে জড়িয়ে ড্রাইভ করতে থাকল!
গাড়ি এসে অরিন্দমের কাকার বাড়ির সামনে পৌঁছাল তখন সন্ধ্যা সাতটা, উঠানের বাইরে গাড়ি রেখে যেতে হবে, কিন্তু বিপত্তি ঘটল বৃষ্টির কারণে আধাঘন্টা ধরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে,কাকিয়া বাড়ির ভিতরে তাই তাকে ডাকতে পারছে না আর ফোনে সিগনাল পাচ্ছে না। এদিকে অনু ছটফট করছে কখন সে কাকিয়া সামনে যাবে অনু’র সাথে ভিডিও কলে কথা হয় কাকিয়া’র। এক কথায় কাকিয়ার খুব ভালো লেগে গিয়েছে অনুকে। তাদের সাথে দেখা করার এক্সসাইমেন্ট কন্ট্রোল করতে পারছে-না অনু। অরিন্দম উপায় না পেয়ে ছোট ছাতাটা অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
___”তুমি খুব সাবধানে যাবে আর গিয়ে কাকিয়া’কে বলবে আমার জন্য ছাতা নিয়ে আসতে, তুমি আর আসবে না তুমি যা ছোটাছুটি করে হাঁটো, দেখব তুমি কাঁদায় পড়ে গিয়েছ। সাবধানে যাও।
অনু মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে বেরিয়ে পড়ল এখন আর ওকে ধরে কে। অরিন্দম এতক্ষণ অনুর হাত ধরে ছিল কারণ খুব বৃষ্টি হলে উঠানে কাঁদা,হয়ে স্লিপ হয়ে যায় আর অনু কে নিয়ে সে রিস্ক নিতে চায়-না তাই তাকে ধরে বসে ছিল, বৃষ্টি একটু কমে এলে তাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে ও। কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না বলেই এবার তাকে ছাড়লো কিন্তু যে ভয়টা ছিল সেটাই হলো অনু কিছুটা গিয়েই স্লিপ খেয়ে কাঁদায় পরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠে, অরিন্দম অনুকে পরতে দেখে আঁতকে উঠে। সে কোনো ক্রমে গেইট খুলে অনুর কাছে দৌড়ে আসে অনু এদিকে ডান পা ধরে কেঁদে চলেছে অরিন্দম অতি দ্রুত নিচে বসে অনুকে একহাতে ধরে। অনু আহ্লাদে ঠোঁট উল্টে দিয়ে আরো কাঁদতে থাকে। অরিন্দম চমকে উঠে বললো,
__”কোথায় লেগেছে দেখি!’
অনু গলা জড়িয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,
__”আমি পা নাড়াতে পাচ্ছি না,মনে হয় আমার পায়ের সব হাড় ভেঙে গিয়েছে!”
অরিন্দম তাকে তাড়াতাড়ি করে কোলে তুলে খুব সাবধানে যেতে যেতে বলল,
__”কাঁদে না বউ, কিছু হয়নি!”
দরজা করাঘাত করতে অরিন্দমের কাকিয়া চন্দ্রানী দেবী হাসি মুখে দরজা খুললেন কিন্তু দুজনকে এমন কাঁদা মেখে দেখে চমকে গেলেন আর অনুকে কোলে নিয়ে দেখেও চিন্তিত হয়ে বললেন,
__”কি হয়েছে বৌ’মার? কাঁদছে কেন?”
অরিন্দম হাঁপিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল, ভিতরে যেতে দাও। ওর পায়ে লেগেছে!
অরিন্দম অনুকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসায়, চন্দ্রানী দেবীর অনুর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
__”খুব লেগেছে মা?”
অনু কাঁদতে কাঁদতে ঠোঁট উল্টে বলল,
__’খুব লেগেছে কাকিয়া! তোমার বৌমা খোঁড়া হয়ে গেল!”
অরিন্দম ধমক দিয়ে বলল,
__”চুপ কিছু হয়নি! সেই থেকে আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে!”
অনু চন্দ্রানী দেবীর হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
___”কাকিয়া দেখুন বকছে!”
চন্দানী দেবী চোখ গরম করে বলবেন,
__”অরি বকছিস কেন বকিস না! আমি ঠান্ডা জল এনে দিচ্ছি পা ধুয়ে আগে দেখ কোথায় ব্যথা পেয়েছে আর ডাক্তার কে ফোন কর!”
___
ডাক্তার এসে অনুর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে আর কিছু ওষুধ দিয়ে গিয়েছে বেশী গুরুতর কিছু হয়নি একটু মোচ লেগে গিয়েছে দু তিনদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু অনু ব্যাথা পেয়ে সে কি কান্না চন্দ্রানী দেবী কোনো ভাবে তাকে চুপ করিয়েছেন। মেয়েটা আদুরে ভালো করেই বুঝতে পারছেন তিনি। বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি এসে মেয়েটা পা ভেঙে যেতে উনার যন ভারী হয়ে এসেছে অরিন্দমের কাকাই এর শাড়ীর ব্যাবসা তিনি আজ দোকানেই থাকবেন অরিন্দম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঔষধগুলো আনতে গিয়ে ফিরতে রাত হয়ে যায়। এসে দেখে অনু কাকিয়ার রুমে এখনো আছে অরিন্দম নিজের রুমে ঔষধ রেখে পাশের রুমে গিয়ে দেখে অনুকে কাকিয়া বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজিয়ে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে একেঅপর কে কত দিনের চেনা। অনু মেয়েটাই এমন সবাইকে নিজের ভালোবাসার জালে জড়িয়ে ফেলবেই, অরিন্দম ধীর পায়ে খাটের কাছে কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। চন্দ্রানী দেবী ঘুমিয়ে ছিলেন না তাই তিনি পাশে উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে দেখলেন অরিন্দম দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে হালকা হেসে বললেন,
__”তুই এসে গিয়েছি, দেখ না মেয়েটাকে জোর করে একটু খাইয়ে দিতে ব্যাথা নিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছে। এখন আর ডাকার দরকার নেই ও উঠলে একটু পর ওষুধ দিয়ে দিবি।”
অরিন্দম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়!
__”আমি খাবার দিচ্ছি খেয়ে তোর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল! বৌমা আমার কাছেই থাকুক।”
অরিন্দম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল
___” কেন? ”
__”আরে বৌমার পা ব্যাথা আবার এতোক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করেছে তাই ওকে আর ঘুম থেকে তুলে বিরক্ত করতে হবে না। রাতে আমি সামলাবো আদুরে মেয়েটাকে। তুই খেয়ে শুয়ে পর।”
অরিন্দম মলিন মুখে খাটে বেঘোরে ঘুমানোর অনুর মুখপানে তাকাল। মেয়েটা কেমন ঘুমাচ্ছে তার ঘুম উড়িয়ে, এবার সে কি করে একা ঘুমাবে? অরিন্দম গোমরা মুখ করে বেরিয়ে গেল কাকিয়ার মুখের উপর বলার মত কিছু ভাষা খুঁজে পেল না আর সে। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে খাটের শুয়ে এপাশ ওপাশ করে চলেছে অরিন্দম। কিছুতেই তার ঘুম আসছে না শেষে এক পর্যায়ে না পেরে ধরাম করে উঠে পড়ে এক লাফে নিচে নেমে যায় অতঃপর সে গিয়ে দরজা খুলে পাশের রুমে গিয়ে চুপিসারে প্রবেশ করে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল অনু চোখমুখ কুঁচকে আছে তা দেখে অরিন্দমের বুক ছ্যাঁত করে উঠলো, অনু কি পায়ের যত্নণায় ঘুমাতে পারছে না? সে অনুর পাশে গিয়ে অনুর মুখে আলতো হাত বোলায়। দেখে না অনু নড়াচড়া করছে না। অরিন্দম কাকিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল তিনি ঘুমাচ্ছেন, সে আস্তে করে অনু’কে পাজা কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়! কাকিয়া তা দেখে মিটিমিটি হাসেন।
অরিন্দম অনু’কে নিজের রুমে এনে খাটে শোয়াতেই অনু চট করে চোখ খুলে অরিন্দম কে সামনে পেয়ে সকচিত হয়, অতঃপর সে অরিন্দম কে কিছু বলার জন্য পাশ ঘুরতে গিয়ে ডান পায়ে তীব্র ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়। অরিন্দম তা দেখে খাটে হাটু গেড়ে বসে বলল,
___”কি হয়েছে এখনও ব্যাথা পাচ্ছ? ওষুধগুলো খেয়ে নাও আর ব্যাথা করবে না।
অরিন্দম প্রেসক্রাইব দেখে ওষুধগুলো খাইয়ে দেয় অনুকে। অনু একটু শান্ত হতে অরিন্দম অনুর মাথা মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
__”এখন ঠিক লাগছে?”
অনু অতি কষ্টে বলল,
__”আপনি আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারেন না! তাই না?”
অরিন্দম মাথা চুলকে হেসে দেয়,অনু আবার বলে,
__’আপনি এত ভালো কেন?’
অরিন্দম অনুর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বলল,
__’কারণ তুমি এত মিষ্টি তাই!’
অনু হাসে। ক্ষীণ প্রহর নিস্পলক তাকিয়ে,দু নেত্র একত্র করলো সে। কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ করে পায়ের ব্যথা শুরু হতে সে চিৎকার করে উঠল, অরিন্দম একলাফে উঠে বসে,অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
__’ আমার পায়ের ভেতর পোকা কামড়াছে খুব!”
অরিন্দম পায়ে হাত বুলিয়ে আবার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
__”তুমি একটু ওয়েট কর! আমি কাকিয়া’কে ডেকে আনছি!’
অনু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
___”এত রাতে আর কাকিয়াকে ডাকতে হবে না! এমনিতেও উনি এতক্ষণ জেগেই ছিলেন।”
অরিন্দম ছটফট করতে থাকে সে যেন অনুর থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। ব্যাথার উপশম না পেয়ে সে অনুর সাড়া মুখমন্ডলে চুমু দিয়ে অবুঝের মতো বলল,
__”ব্যথা কমেছে বউ?”
অরিন্দমের এহেন কথায় অনু বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে, ক্ষীণ প্রহর অতিক্রম হতে কি মনে করে হালকা হেসে দুদিকে মাথা নাড়ল সে।
#চলবে