হবে কি আমার পর্ব -২৩

#হবে_কি_আমার(২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_23

দীর্ঘ কিছুদিন পর আজ বৃষ্টি নেমেছে, ভাঙাচোরা রাস্তায় বৃষ্টি জল জমে যাচ্ছে। আর এই এলাকায় রোডটা’য় গর্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়, রাস্তা মেরামতের কাজ ও চলছে বেশ কিছুদিন ধরে কিন্তু আজ বৃষ্টি হওয়ার দরুন কাজ বন্ধ। অরিন্দম খুব সাবধানে গাড়ি ড্রাইভ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। আকুলতায় সে নিজের কান্ট্রল হারিয়েছে,চোখে মুখে বেহাল দশা,কোন রকম গাড়ি নিয়ে পৌছাতে পারলে সে বাঁচে,অতি অপেক্ষার পর গন্তব্যে পৌঁছায় সে। গাড়ি থামায় মৃন্ময়দের বাড়ির সামনে। গাড়ির গেইট খুলে দৌড়ে গিয়ে কলিং বেল বাজেতে লাগলো কিছুক্ষণের মধ্যে তনুশ্রী গেট খুলে অরিন্দমের শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকাল,সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিন্দম উৎকণ্ঠা ভরা কন্ঠে বলল,
___”কোথায় ও?”
তনুশ্রী সরে এসে রুমে দিকে ইশারা করতে অরিন্দম দৌড়ে চলে যায় সেখানে।
তনুশ্রী তা দেখে মুচকি হাসে,অরিন্দম রুমে গিয়ে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখল যার জন্য চিন্তায় সে মরে যাচ্ছে সে নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে! অরিন্দমের চিন্তিত মুখশ্রী শান্ত হলো অনুর নিস্পাপ ঘুমন্ত মুখ দেখে। মেয়েটার এতটা বেশি রাগ সে জানত না, জানলে হয়তো এতটা রাগের কারণ হত না। না তাকে এত ঘন্টা দূরে রাখত। শুধুমাত্র সেই জানে বিকাল সাড়ে চারটে থেকে সে কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে। অনু অ্যাডমিশন হওয়ার পর ক্লাস করছে প্রায়দেড় মাসের মতো এতগুলো দিন অরিন্দম তাকে নিজের দায়িত্ব দিয়ে আসে ছুটি পর আবার তাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়েছে,কিন্তু আজ নির্দিষ্ট সময় গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ও ক্লাস শেষের পর অনু বাইরে আসেনি, অরিন্দম তাকে ক্রমাগত ফোন করে গেছে কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি অগত্যা সে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করে কিন্তু জানতে পারে ক্লাস এক ঘন্টা আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, কথাটা শুনে চমকে উঠেছিল সে,অনু একা বাড়ি ফিরে গিয়েছে, অরিন্দম হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে যায় কিন্তু যখন দেখল সেখানে ও অনু আসেনি তখন আরো পাগল হয়ে উঠল সে। তাদের বিয়ে আড়াই মাস হলো, কিন্তু অনুকে নিয়ে খুব একটা বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয়নি তার। শুধু কলেজ ছাড়া কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাইনি, কিন্তু আজ একা কোথায় যেতে পারে মেয়েটা, অরিন্দমের হাত-পা শিথিল হয়ে আসে সে কোথায় খুঁজবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ বাড়ির আশেপাশে খোঁজে, সেদিন অনু পার্কে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে পরতেই অরিন্দম সেখানে যায় কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়ে আবার পাগলা হয়ে ওঠে কাঁপা কাঁপা হাতে সে মৃন্ময় কে কল করে দুচোখ ছলছল কলছিল তার, এইটুকু সময় তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মৃন্ময় ফোন রিসিভ করে না,তনুশ্রীর কথা তার মাথা থেকে বার হয়ে গিয়েছিল। উদভ্রান্তের মতো গাড়ি নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেরিয়েছে সে। কিন্তু কোথাও না পেয়ে সে এক নির্জন ব্রিজে গাড়ি থামায়। কিছুক্ষণ বসে সে এক ঝটকায় গাড়ি থেকে নেমে যায় ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটা,এত রাতে ও অনুর খোঁজ না পেয়ে সে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নেয়, হঠাৎ করে শরীর কাঁপিয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠে। কোথায় হারিয়ে ফেললো তার ছোট জীবনে খুশির বন্যা বয়ে দেওয়া মেয়েটাকে, তাকে এ’কয়েক ঘন্টা না দেখেই তার শরীরের মরন রোগ ধরেছে, মনে হচ্ছে মনে হচ্ছে এই বুঝি সে মারা যাবে এই বুঝি তার শ্বাস বিদায় জানাবে। সে আর বাঁচবে না, কিছুতেই না।

মরন বললেই কি এত সহজে মরন হয় শরীরের? অরিন্দম ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বলল,
___”কোথায় তুমি বউ?কোথায় হারিয়ে গেলে? এইটুকুর জন্য কেউ এত বড় শান্তি দেয়!”

ক্ষীণ প্রহর অতিক্রম হতে অরিন্দমের ফোন রিং হয়ে ওঠে,সে পকেট হাতড়ে ফোনটা পকেট থেকে বার করে তাকিয়ে দেখল জ্বলজ্বল করছে তনুশ্রী নাম্বার,ক্ষনেই মনে আসা জাগলো এই বুঝি সে নিজের জীবন ফিরে পাবে। ফোনটা রিসিভ করতে তনুশ্রী অত্যান্ত ব্যস্ত স্বরে বলল,
___”দাভাই অনু..
অরিন্দম অনুর নাম শুনতেই উঠে দাঁড়ালো কিছু বলতে যাবে তনুশ্রী আবার বলল,
__”অনু নদীর পাড়ে বসে ছিল! মৃন্ময় তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে, কিছু কি হয়েছে আপনার সাথে? আপনি প্লিজ চলে আসুন!”
কথাটা কর্ণগুহতে পৌঁছাতেই অরিন্দম পাগলের মত ছুটে এসেছে তাকে চোখের সামনে দেখার জন্য।

অরিন্দম এগিয়ে গিয়ে অনুর মাথার কাছে বসলো,অনু চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেমন ফুলেও গিয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে মেয়েটা। অরিন্দম অনুর মুখমন্ডলে হাতে বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিল, তনুশ্রী দরজার বাইরে থেকে সারা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। অরিন্দম তা দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
__’ও কিছু খেয়েছে?’
__” হ্যাঁ জোর করে একটু খাইয়ে দিয়েছি, কিন্তু আপনার সাথে ওর কি হয়েছে এত রাগ কেন করলো ও?”

অরিন্দম তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
__’আজ ক্লাসে যেতে চাইনি, সাথে আমার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরেছিল, তাই আমি একটু ধমক দিয়েছি বলে আমাকে এত শাস্তি দিল!’
তনুশ্রী চিন্তিত কন্ঠে বলল
___দাভাই আপনি তো জানেন..

অরিন্দম তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
__”জানি সেই জন্য রাগ করছি না! আসলে আমার ভুল,ওর কথা আমার রাখা উচিত ছিল, আমি সাইক্রেটিস কে ওর রিপোর্ট দেখিয়েছি, তিনি বলেছেন ওর ব্রেনে বেশি প্রেসার দেওয়া ঠিক না, ও যেমনটা চায়, কথা রাখার চেষ্টা করতে হবে,ওকে জোর করে কিছু করানো যাবে না। কিন্তু আমি সেটা গুরুত্ব না দিয়ে আজ…
___”আপনার কোন দোষ নেই ও এমনিতেই ঘাড় ত্যাড়া আগে থেকেই, কিন্তু দু বছর আগে থেকে একটু বেশি এমন হয়ে গিয়েছে, আপনি প্লিজ..’
___”আমি সব জানি! আমি ওর খেয়াল রাখবো, ও যা চায় তাই হবে। আগামীকাল আমি ওকে নিয়ে কাকিয়ার সাথে দেখা করিয়ে আনব।”

তনুশ্রী মুচকি হাসলো, অরিন্দম তার বোন কে এত ভালো বাসে তা দেখে খুশি ও হলো, অরিন্দম কে খাবার রুমে দিয়ে সে বেরিয়ে গেল।

____

খুব সকালেই অনুর ঘুম ভাঙলো, ঘুম ভেঙে নিজেকে অরিন্দমের বুকে আবিষ্কার করে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে। সে তো..কাল নিজের করা কাজ মনে করে অনু গিলটি ফিল করল, কাল অরিন্দম ওকে কলেজের বাইরে নামিয়ে দিতে ও একটা ও কথা না বলে চলে গিয়েছিল কলেজের দিকে কিন্তু ক্লাস না করে আবার বেরিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বাড়ি যেতে ও ভালো লাগেনি। তাই সে নদীর পাড়ে বসে ছিলো সাথে অরিন্দমের ওপর রাগ হয়েছিল। সে কেন তাকে ধমক দিল মনে অভিমান করে সে বাড়ি ফেরেনি, কিন্তু মৃন্ময় তাকে দেখে জোর করে নিজেদের বাড়ি নিয়ে আসে,আর তনুশ্রী তাকে বুঝিয়ে বলতে তার নিজের করা কাজে অপরাধী মনে হলো নিজের। তনুশ্রী অরিন্দম কে ফোন করার পর সে রুমে বসে ছিল অরিন্দম এলে তার সাথে ফিরে যাবে বলে ঠিক করে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।

অনু অরিন্দমের ফ্যাকাশে মুখ দেখে এবার কেঁদে দিল। সে অরিন্দমের বুকের কাছে শার্ট মুঠো করে ধরে ফুঁফিয়ে উঠলো, অরিন্দম কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখল অনু কাঁদছে। মুহূর্তে তার বুক কেঁপে উঠলো ডান হাতে অনু মাথায় হাত দিয়ে উদগ্রীব কন্ঠে বলল,
__” এই কি হয়েছে কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে?”
অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
__”আমি খুব খারাপ তাই না? আপনাকে খালি কষ্ট দিই, কাল খুব কষ্ট দিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস করুন মাঝেমধ্যে আমার কি হয় আমি নিজেও জানি। আপনি প্লিজ আমার ওপর রাগ করবেন না। কালকের জন্য সরি। আমি আর কখনো এমন করবো না।”
অরিন্দম অনুর দুগালে হাত দিয়ে বলল,
__’কালকের ঘটনার জন্য আ’ম সরি, আমার ভুল হয়েছে তোমাকে বকা। আর কখন বোক’বো না। কিন্তু তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে আসবে না কখনো! জানো কাল কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আমি জান পেরিয়ে গিয়েছিল এক মুহুর্তের জন্য।”

__”ভেবেছিলেন আমি হারিয়ে গিয়েছি?”

অরিন্দম ছলছল চোখে তাকিয়ে তাকাল অনুর দিকে সত্যি সে অবুঝের মত ভেবেছিল,অনু হারিয়ে গিয়েছে তাকে আর কখনো খুঁজে পাবে না।
অনু উঠে অরিন্দমের মুখ ভর্তি করে চুমু দিয়ে বলল,
__”এত সহজে আমি হারাচ্ছি না বরবাবু! এখনও আমাদের বাবু হতে বাকি, তাকে নিয়ে খেলা বাকি!”
অরিন্দম মুহূর্তে সব ভুলে গেল,সে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
__”তোমার সব সময় খেলার কথা মনে পড়ে, বাবুকে পড়াশোনা করাবে না?”
অনু ব্যাজার মুখ করে বলল,
__”আপনার পড়াশোনা কথা ছাড়া আর কোন কথা মনে থাকে না। একটু রোমান্স..”
অরিন্দম হেসে ফেললো, ঠিক কত ঘন্টা পর তার মনে উৎফলিত হল, ঠোঁটে পুরোনো হাসি ফিরলো, শুধুমাত্র সে জানে। সে অনু কে বালিশে শুয়ে বলল,
__” রোমান্স চাই বউ?”
অনুর এবার লজ্জায় গাল ভারী হয়ে এলো সে অরিন্দমকে সরিয়ে উঠে আসতে নিলে অরিন্দম তাকে টেনে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। অনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। অরিন্দম ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তার দৃষ্টিতে মাতকতা ছড়ানো, তা দেখে অনুর বুকে দ্রিম দ্রিম শব্দ হতে লাগলো, অরিন্দম হঠাৎ করে অনু’র সম্পূর্ণ মুখে চুমু দিয়ে অধরে কম্পন ধরালো।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here