#গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট_পর্ব_০২
অজানা ভালোবাসার গল্প।
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল।
মেঘ খুব জোরে কান্না করতে লাগলো। আজ সব শেষ হয়ে গেলো সব। অবশেষে বিয়ে টা সম্পুর্ণ হলো।
বিয়ে শেষ করে কাজী চলে গেলো। ।মেঘ আকাশকে বলতে শুরু করলো………
মেঘঃ-স্যার এবার তো আমি মায়ের কাছে যেতে পারি?
আকাশঃ-হুমম চলো?
মেঘঃ-এই পোশাকে.?
আকাশঃ-হুমম এটাই পড়ে যাবে। তোমার মায়ের কাছ থেকে আসির্বাদ নিতে হবে না। ওনার তো দেখা
দরকার ওনার মেয়েকে বউ সাজে কেমন লাগে। তাও আবার #চুক্তির_বউ
আম্মুঃ-কিরে কি এমন বলছিস ওকে?
আকাশঃ-মামনি মেঘ ওর মায়ের সাথে দেখা করতে চায়?[ কথা ঘুরিয়ে ]
আম্মুঃ-ঠিক আছে তুই ওকে নিয়ে যা। আর হ্যা পৌঁছে আমাকে একটা কল করিস আমি চিন্তায় থাকবো।
আর তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসিস কেমন??
আকাশঃ-মামনি তুমি চিন্তা করিও না, আমরা দ্রুত পিরে আসবো। মিলি এই মিলি কোথায় তুই??
[কাজের লোক]
মিলিঃ-জ্বি ভাইজান বলেন??
আকাশঃ-মামনির খেয়াল রাখিস। আমি একটু
বাহিরে যাবো??
মিলিঃ-জ্বি ভাইজান রাখবো আপনি কোনো টেনশন কইরেন না??
আকাশঃ-গুড। মেঘ চলো আমাদের বের হতে হবে??
মেঘঃ-আসছি মা..??
আম্মুঃ-তাড়াতাড়ি আসিস মা??
মেঘঃ-আচ্ছা ঠিক আছে মা..??
এরপর দুজনে হসপিটালে চলে গেলো। হসপিটাল গিয়ে মেঘ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো……..
মেঘঃ-ডাক্তার আমার মা কোথায়। এখন মায়ের কি অবস্থা কেমন আছে??
ডাক্তারঃ যদিও অপারেশন সাকসেসফুল। কিন্তু ওনার অবস্থা খুব একটা ভালো না। মনে হয় না ওনাকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে??
মেঘঃ-মানে কি ডাক্তার…??
ডাক্তারঃ-দেখো আকাশ জীবন মরন সবই আল্লাহর হাতে। উনি চাইলে মানুষকে বাঁচাতে পারেন আবার মারতেও পারেন। আপনার মা আর বেশি দিন
বাঁচবেন না..??
মেঘঃ-আপনি পাগল হয়ে গেছেন ডাক্তার,এটা কখনোই হতে পারে না। আমার মা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। আমি আমার মায়ের কাছে যাবো??
এই কথাটা বলেই মেঘ এক দৌড়ে মায়ের কেবিনে গিয়ে
মায়ের পাশে বসে কান্না শুরু করলো। এ দিকে আকাশ ডাক্তারের সাথে কথা বলতেছে…….
আকাশঃ-ডাক্তার উনাকে কবে রিলিজ করবেন??
ডাক্তারঃ-দুই দিন পর উনাকে রিলিজ করে দিবো।
আর একটা কথা??
আকাশঃ- জ্বি ডাক্তার বলুন….??
ডাক্তারঃ-প্লিজ উনার একটু খেয়াল রাখবেন। উনার হাতে বড় জোর ৪/৫ মাস সময় আছে। উনাকে
একটু দেখে রাখবেন..??
আকাশঃ-okay doctor i will try my best
ডাক্তারঃ-Thank you Akash
আকাশঃ-আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি??
ডাক্তারঃ-ওকে আসুন..??
আকাশ কেবিনে এসে দেখে মেঘ পাগলের মতো কান্না করতেছে। আকাশ কি ভাবে মেঘকে সামলাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে.. মেঘের ঘাড়ে হাত রেখে বলতে শুরু করলো………
|||
যারা গল্প পড়েন…আশাকরি সবাই লাইক কমেন্ট করে উৎসাহ দিবেন। এবং লাইক কমেন্ট করে আমার সাথে থাকবেন। গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখীত। ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
আকাশঃ-প্লিজ মেঘ তুমি এভাবে ভেঙে পড়োনা। তুমি যদি ভেঙে পড়ো তাহলে মাকে কে সামলাবে। মা তো এখনো জানেন না, যে তার হাতে সময় মাত্র কয়েকটা মাস…??
মেঘ পিছনে ঘুরে আকাশ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো………
মেঘঃ-মায়ের কিছু হলে আমি বাঁচবো না স্যা। মা ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই। আমি যে বড্ড একা হয়ে যাবো??
আকাশঃ কেনো আমরা আছি তো তোমার সাথে।
আমি আছি মামনি আছে। তুমি কেনো ভেঙে
পড়ছো মেঘ নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করো??
আকাশের কথায় মেঘ ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে যায়। আর বলতে থাকে………
মেঘঃ-I am sorry sir
ঠিক সেই সময় মেঘের আম্মা বলে উঠলো…….
আম্মাঃ-মেঘ…??
মেঘঃ-মা তুমি ঠিক আছো তো??
মেঘের মা উঠতে গেলে আকাশ উনাকে ধরে পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে উনাকে বসিয়ে দেয়…। এরপর মেঘের মা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো……..
আম্মাঃ-বাহহ তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই পোশাকে??[বিয়ের পোষাক দেখে]
মেঘঃ-মা আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে না জানিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি?
আম্মাঃ-আকাশ আমাকে সব কিছু বলেছে??
মেঘঃ-তুমি জানো..??
আম্মুাঃ- হ্যা অপারেশনে যাওয়ার আগে আকাশ আমাকে সব কিছু বলেছে। আমি নিজে ওকে
অনুমতি দিয়েছি তোকে বিয়ে করার জন্য??
মেঘের মনে ভয় ডুকে গেলো।। কি বলে মাকে বিয়ের জন্য রাজি করলো। তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করা বিয়ে। মা কি এটা জানে।
মা এটা জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। মেঘ আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। আর তখন তার মা বলতে লাগলো……..
আম্মাঃ-তুই খুব সুখি হবি মা। আমি তোর জন্য রোজ আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে এমন এক জনকে চেয়েছি যে তোকে অনেক ভালো রাখবে। মা আকাশ খুব ভালো ছেলে ও তোকে অনেক ভালো রাখবে??
মেঘঃ-মা এখন এসব কথা ছাড়ো তো। এখন তোমার কাছে কেমন লাগছে সেটা বলো??
আম্মাঃ-আমি একদম ঠিক আছি??
আকাশঃ-মা এখন একটু রেস্ট নেন নয়তো শরীর আরো অসুস্থ হয়ে যাবে??
আম্মাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে??
আকাশঃ-মেঘ চলো আমরা বাসায় যাই মামনি অপেক্ষা করতেছি??
মেঘঃ-স্যার আমি এখানেই থাকি..মাকে ছেড়ে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না??
আম্মাঃ-কিন্তু মা আজ তো তোদের বিয়ের প্রথম…?
মেঘঃ-মা প্লিজ.. আমি এখন কোথাও যাচ্ছি
না এটাই ফাইনাল??
মেঘ বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। এরপর মেঘের মা বলে উঠলো……..
আম্মাঃ-পাগল মেয়ে??
মেঘঃ-😭😭কান্না করেই যাচ্ছে??
আকাশঃ-মা মেঘ না গেলে আমি না হয় চলে যাই??
আম্মাঃ-না বাবা মেঘ যাবে। আজ মাত্র ওর বিয়ে হলো। আজতো ওর বরের বাড়িতে থাকার কথা। তাছাড়া আমি এখন ভালো আছি। তোমরা সকালে এসো রাতে তো দুজনে এখানে থাকতে পারবে না। এটা হসপিটাল এখানে কি এত লোকজন allow করবে??
মেঘঃ-কিন্তু মা আমি তোমাকে ছাড়া….??[পুরোটা বলতে না দিয়ে]
আম্মাঃ-রাতটাই তো সকালে আসিস অনেক সময় মিলে আড্ডা দিবো মা মেয়ে মিলে। এবার যাও মা
তোর তোর সংসার সাজানোর প্ল্যান কর??
মেঘঃ-😭😭..মা??
আম্মাঃ-কাঁদে না মা। আজকে যে সুখের দিন এইদিনে কাঁদতে নেই??
মেঘঃ-মা আমি যাবো না??
আম্মাঃ মায়ের কথা শুনতে হয়। আর তোর শ্বাশুড়ি মা অপেক্ষা করছে তোদের জন্য??
মেঘঃ-তাতে কি হয়েছে??
আম্মাঃ-আকাশ ওকে নিয়ে যাও তো বাবা??
মেঘঃ-মা তুমি এমন করছো কেনো??
আম্মাঃ-পাগলী মেয়ে নিজের বরের বাড়িতে যাবি না এখানে থাকবি সেটা হয় নাকি??
আকাশঃ-মা মেঘ খুব জেদি ও আমার একটা কথাও শুনে না। ওকে বকা দিন তো একটু??
আম্মাঃ-মেঘ কি শুরু করলি তুই যাবিনা ওর সাথে??
মেঘঃ-যাচ্ছি তো নিজের মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইকে প্রায়োরিটি দিচ্ছো,তুমি খুব পঁচা??
মেঘ এই কথা বলে রাগ দেখিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।
এদিকে মা আমাকে বলতে শুরু করলো……..
আম্মাঃ-বাবা তোমার কাছে আমার একটা
অনুরোধ??
আকাশঃ ছি মা অনুরোধ কেনো বলছেন। বলেন না কি বলবেন??
আম্মাঃ-আমি জানি আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমি যখন থাকবো না..তুমি তাকে দেখে রেখো বাবা।
আমি চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে। এটা একটা সন্তানের কাছে মায়ের অনুরোধ বাবা??
আকাশঃ-মা আমি আগেই আপনাকে সব কিছু বলেছি।
আপনি ভাববেন না, দায়িত্ব যখন নিয়েছি তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার? আজ হোক কাল হোক মেঘ আমার হবেই।
|||
হ্যা মেঘ আগে এক জনকে ভালোবাসতো। হয়তো সে থাকলে মেঘ আজকে আমার হতো না। মা আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ থেকে মেঘকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।
|||
একফোঁটা কষ্ট ও মেঘকে স্পর্শ করবে না.। মা আপনি শুধু আমাদেরকে দোয়া করবেন। আমি জেনো আমার সবটা দিয়ে মেঘকে ভালো রাখতে পারি??
আম্মাঃ-আমি দোয়া করি একদিন তোমার ভালোবাসা জয় হবেই??
আকাশঃ-চিন্তা করবেন না, বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে তখন ও চাইলেও এই পবিত্র বন্ধন থেকে বের হতে পারবে না। আমি ওকে মুক্ত দিবো না। সারাজীবন আমার কাছেই রেখে দিবো। আচ্ছা মা আসি মেঘ গাড়িতে একা??
আম্মাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে বাবা যাও??
তারপর আকাশ গিয়ে গাড়িতে উঠলো।। তারপর গাড়ি স্টার্ড করলো। মেঘ চুপচাপ বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। ভাগ্যিস মেঘ তখন কেবিনে ছিলো না।
নয়তো সব শুনে ফেলতো…
মেয়েটা এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর ওকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে আসলো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে দুজনে ভিতরে চলে যায়….
ঘরে গিয়ে আকাশ মেঘকে আলামারি থেকে কিছু শাড়ি নামিয়ে দিয়ে বললো ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য। এরপর মেঘ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্না ঘরে যায়। তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ।
আকাশ রুমে ডুকে মেঘ কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আর ভাবতে থাকে আজকের দিনটার কথা।
মেঘ কে কতটা কষ্ট দিলো একটা চুক্তির কাগজ দিয়ে।
মেঘ নিজেও জানেনা তার সাথে কি হচ্ছে….। আকাশ নিজেকে বারবার বকা দিচ্ছে..।
ওকে সত্যিটা বলতে পারতো কিন্তু যদি মেঘ দুরে সরে যায়। সেই ভয়ে একটা চুক্তি করে নিলো.। জেনো মেঘ আকাশকে ছেড়ে না যেতে পারে।
কিন্তু আকাশ কি পারবে এই এক বছরের চুক্তির মধ্যেই মেঘের মন জয় করে নিতে। পারবে মেঘের ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে। নাকি মেঘ আকাশকে ভুল বুঝে এক বছর পর দুরে সরিয়ে দিবে। শেষটা জানতে অবশ্যই লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকুন।। এরপর আকাশ তার ডায়রী টা হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করে…….
আকাশের একটাই অভ্যাস এই পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছুই এই ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করে রাখা।
সেটা যত সুখ কিংবা যত দুঃখের হোক না কেনো। সব কিছু এই ডায়রীতে লিখে রেখেছে….। লিখতে লিখতে আকাশ চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে…
মাঝ রাতে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের লাইট টা অন দেখে মেঘ অনেকটা অবাক হয়। এতো রাতে লোকটা লাইট জ্বালিয়ে রাখলো কেনো। চারদিকে তাকিয়ে পরে দেখতে পায় আকাশ চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে…
মেঘ উঠে আকাশের কাছে যায়। তারপর হাতের নিচে একটা ডায়রী দেখতে পায়..
মেঘ সেটা ধরবে কি ধরবে না এই সব ভাবতে ভাবতে ডায়রী টা হাতে নিয়েও আবার টেবিলে রেখে দিলো।
কারন মেঘ জানে কারো পার্সোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া টা চরম অন্যায়। মেঘ সেই অন্যায় কিছুতেই করবে না। মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় শেষের দিকে.। তাই মেঘ ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে ওজু করে আসলো…।
পর্ব ০৩ এর লিংক 👇👇
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=134036338476080&id=111134014099646
ওজু করে এসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর কোরআন তেলওয়াত করে ফজরের আজান দিলে নামাজ আদায় করে নিলো। একটু পর চারদিকে আলোয় চিকচিক করবে। তাই দেরি না করে মেঘ রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো….
ঠিক তখনই ওর শ্বাশুড়ি মায়ের রুম থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছিলো। উনার ফুঁপানির কন্ঠ শুনে মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না..যে উনি কান্না করছেন।
কিন্তু এতো সকালে কেনো কান্না করছেন সেটা জানার জন্য মেঘের বড্ড কৌতুহল হয়। তাই মেঘ দরজার কাছে কান পেতে শুনতে লাগলো। এমন কিছু কথা শুনে মেঘ স্তব্ধ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে..
কিছুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে রেডি করলো। তারপর আকাশের মায়ের রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক দিয়ে বলতে লাগলো…….
চলবে কি….??