তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১৪

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৪.

সকাল সকাল শান্তা রেডি হয়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে জয়েন করে, আজ থেকে তাদের প্রজেক্টের কাজ অফিসিয়াল ভাবে শুরু হতে চলেছে তার জন্যে একটা প্রেস কনফারেন্স আছে আর তাছাড়াও নতুন প্রজেক্ট মানে শুরু থেকেই সব কিছু প্রচুর হেডেক, আর তাছাড়া সে বেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট তো সব কিছুই তাকে দেখতে হবে বলতে গেলে বেলার পরই সে তবুও নিজেকে বেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে সে দেখতে চেয়েছে তাই তাকে এই পদে রাখা হয়েছে তার কোম্পানিতে অধিকার কম কিছু নেই বেলার পরেই তার নাম আসে।

টেবিলে রিসা খান, বেলার বাবা বুরহান খান, শান্তার মা মিসেস সীমা খান সাথে তার বাবা জাহির খান বসে আছে, শান্তা কে এমন রেডি হয়ে হন্তদন্ত করে টেবিলে আসতে দেখে সবার ভ্রু কুঁচকে যায় সবাই কিছুটা অবাক হয়ে তাকায় শান্তার দিকে। শান্তা এত তাড়াতাড়ি কখনই টেবিলে আসেনা আর যখন তারা থাকে তখন তো আরো বেশি করে এড়িয়ে যায় তাই তারা কিছুটা অবাক হয়েছে। শান্তা কারোর মুখের দিকে না তাকিয়ে প্লেট নিয়ে নিজের মত খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে, সবাই যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোনো ধ্যান নেই বলা ভালো দিতে চাইছেননা সে খেয়েই যাচ্ছে। বাকিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খাওয়া শুরু করেছে আবারো তবে তাদের চোখ এখনও শান্তার মুখের দিকে। শান্তাকে কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে দেখে জাহির খান আর চুপ করে থাকতে পারেনা।

-“টুসুন..

-“ডোন্ট কল মি টুসুন, আমি এই নাম আপনাদের কারোর মুখে শুনতে চাইনা। শান্তা তার বাবার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে।

মেয়ের কথা শুনে জাহির বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মেয়েটা যে তাদের কে কতটা পর করে রেখেছে সেটা তার কথার মাধ্যমে বোঝা যায় এখনও তাদেরকে আপনি করে ডাকে।

-“কোথাও যাবে নাকি তুমি? এত সকাল সকাল রেডি হয়ে টেবিলে চলে এলেযে সীমা খান জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” কেনো! আমি এসেছি বলে কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি? শান্তা বাঁকা ভাবে উত্তর করে।

-“শান্তা তুমি কিভাবে কথা বলছো! তোমাকে কি কোনো কথা জিজ্ঞেস করা যাবেনা? সীমা খান কিছুটা রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“দেখো না কেমন বেয়াদব হয়েছে বড়দের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলতে বসেছে। সব হয়েছে ওই নষ্টা মেয়ের সাথে মিশে মিশে। রিসা মুখ বাকিয়ে বলে ওঠে।

রিসার কথা শুনে টেবিলে থাকা বাকি তিনজন কোনো কথা বলেনা চুপ করে থাকে আর এটা দেখেই শান্তার মনের ক্ষোভ টা আরো বেশি বেড়ে যায় সাথে মুখে ফুটে তাচ্ছিল্যভরা হাসি।

-“কার সাথে ঠিক কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। যে যেমন মানুষ আমি ঠিক তার সাথে সেই ব্যবহার টা করি। আর বড়দের সঙ্গেও কিভাবে কথা বলতে সেটাও ভুলে যায়নি, তবে আমি এইরকম কথা বলাটা বড়দের কাছের থেকে শিখেছি আর বড়রা সহবদ ভুলে গিয়ে কোথায় কিভাবে এর মেয়ে সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলতে পারে আর বাকিরাও মুখ বুঝে মেনে নিতে পারে সেখানে আমি আর কি ভালো কি শিখতে পারি বলুনতো। মেয়েটা নিজের না হলেও সম্পর্কে মেয়েই হয় আরে কাকে কী বলছি যার মেয়ে তার কোনো হুস পরের কথা উঠবস করে নিজের রক্ত কে ভুলে যায় সেখানে আপনি একজন বাইরের মহিলা সৎ মা। বিদ্রুপ করে বলে ওঠে শান্তা।

-“শান্তা উনি তোমার বড়মা হন। বুরহান খান বলে ওঠে।

-” উনি আমার কেউ হয়না কেউ না, আমার বড়মা একজনই আর তার জায়গা কেউ নিতে পারবেনা আর এই মহিলাতো কখনই নয় যে একজন মেয়ে হয়েও একটা ছোটো বাচ্চাকে রেহাই দেয়না ছিঃ। আর একটু আগে এই মহিলা যখন নষ্টা মেয়ে বলে নিজের রক্ত কে খারাপ কথা বলছিল তখন বুকে বাধেনি এখন যেই আমি বললাম অমনি গায়ে লেগে গেছে তাইনা ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা করে। রাগে ফেটে পড়ে শান্তা বলে ওঠে।

টেবিলে বসে থাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে খাবার ফেলে রেখে উঠে যায়। বুরহান খান এখনও স্তব্ধ হয়ে চুপ করে বসে আছে শান্তার বলা কথা গুলো যেনো তার বুকে ছুরির মত গেঁথে গেছে তিনিও কিছু না বলেই আবারো চুপ করে খেতে থাকেন যেনো এটাই নরমাল, বাকিরাও তাই। শান্তা রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে এই বাড়ির কারোর মুখ দেখতেও তার ইচ্ছা করেনা তবে শুধুমাত্র বেলার জন্যে রয়ে গেছে যে অপরাধে বিনা দোষে বেলা বাড়ি ছেড়ে ছিলো শুধু তার হিসাব নিতে শান্তা এখনও খান বাড়িতে পড়ে আছে তা নাহলে কবেই সে এই খান বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো।

————

নিজের মুখের উপর উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়তে অনুভব করে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় সাঁঝ রুমের মধ্যে অন্ধকার হয়ে আছে প্রায় আলো নেই বললেই চলে সাঁঝ চোখ খুলে নিজের মুখের উপরেই দেখতে পায় একটা মুখ ঝুঁকে আছে রুম অন্ধকার হলেও সাঁঝের বুঝতে অসুবিধা হয়না তার মুখের উপর কে এইভাবে থাকতে পারে। এটা বুঝতে পেরেই মুহূর্তেই চোখের থেকে ঘুম পালিয়ে গিয়ে চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখুনি যেনো সব শেষ করে ফেলে।

সাঁঝ ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে তার গলার উপরে থাকা হাত টা টান মেরে সরিয়ে দিয়ে মুখের উপরে ঝুঁকে থাকা মুখে গায়ের জোরে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় সাথে সাথে উল্টে ফ্লোরে পড়ে যায় সাথে চিৎকার করে ওঠে। সাঁঝ শোঁয়া থেকে উঠে বিছানার উপরে সোজা হয়ে বসে নিচের পড়ে থাকা দিশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। যে এখন ফ্লোরে উল্টো হয়ে পড়ে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিয়েছে, সাঁঝ ভয়ংকর রেগে চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে থাকে দিশার দিকে তার মন চাইছে দিশাকে মেরে ফেলতে এই মুহূর্তে তাহলেই হয়তো তার রাগ কমে যাবে।

-“সাঁঝ তুমি আমাকে মারতে পারলে হ্যাঁ? দিশা কাঁদতে কাঁদতে নাক টানতে টানতে বলে ওঠে।

সাঁঝ নিচু হয়ে দিশার গালে আরো দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়, থাপ্পড় এর জোরে ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। ইতি মধ্যে দিশার চিৎকারে বাড়ির সবাই সাঁঝের রুমে এসে হাজির হয়েছে দিশাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে দোলা মির্জা ছুটে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে, আর বাকিরা একবার সাঁঝের রাগী মুখের দিকে তাকায় এই মুহূর্তে তাকে দেখতে ভয়ংকর লাগছে।

-“সাঁঝ বেটা তুমি দিশা কে কেনো মারলে? কি দোষ করেছে আমার মেয়ে দেখো ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে ।দোলা মির্জা বলে ওঠে।

-” তার আগে ওকে এটা জিজ্ঞেস করুন সকাল সকাল ভাইয়ার রুমে কি করছিলো। সারা কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

সারার কথা শুনতেই দোলা মির্জা কিছুটা থমকে যায় সাথে দিশা জোরে কান্না করে ওঠে, সারিফ চোখ মুখ কুঁচকে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার এই মুহূর্তে প্রচুর বিরক্ত লাগছে এই মেয়ের কাজে তাদের এই ন্যাকামি দেখতে দেখতে ক্লান্ত এসে গেছে কিন্তু তারপরেও কিছু বলতে পারেনা তাদের বাবার জন্যে নাহলে কবেই এই দুটো কে বাড়ি থেকে বের করে দিত।

-“কি হলো আন্টি এখন চুপ কেনো জিজ্ঞেস করুন কেনো এখন এই সকাল বেলা ভাইয়ের রুমে আর কি করছিলো। সারা আবারও জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ওকে এখান থেকে নিয়ে যান আর যেনো আমি আমার রুমে না দেখি। সাঁঝ বলে কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

সাঁঝের এমন রাগী কন্ঠস্বর শুনতেই দোলা মির্জা কেঁপে ওঠে সাথে সাথে দিশা কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায় সারা সারিফ ও এক পলক তাকিয়ে থেকে তারাও বেরিয়ে যায় সাঁঝের রুম থেকে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here