তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১৫

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৫.
বেলা রেডি হয়ে নিচে বাচ্চাদের মাঝে বসে আর বাচ্চা গুলো তাকে ঘিরে জড়িয়ে রেখেছে! বেলা বাইরে যাওয়ার আগে তাদের লিস্ট বলে যাচ্ছে একে একে কার জন্যে বেলাকে কি আনতে হবে আর বেলাও হাসি মুখে একে একে সব তার ফোনে নোট করছে। ওদের থেকে একটু দূরে বসে আছে মায়া চৌধুরী বেলার নানীমা যিনি মুগ্ধ হয়ে বেলাকে দেখে যাচ্ছে এটা তারই মেয়ের অংশ যাকে আকড়ে তিনি এখনও বেঁচে আছে তিনি একমাত্র সম্বল নাহলে যে বেলাকে দেখার মত কেউ ছিলোনা তিনিই এক হাতে বেলাকে গড়ে তুলেছে। বেলা যখন তার কাছে আসে তখন মাত্র পনেরো বছরের এক সদ্য কিশোরী সেই থেকেই তিনি নিজে হাতে গড়ে পিঠে মানুষ করেছে। বারো বছর বয়সে মেয়ে মা হারিয়ে একা হয়ে গেছিলো তবুও বাড়ির লোক ছিল তিনি ছিলেন কিন্তু কি হলো আবারো একা হয়ে গেছিলো মেয়েটা সেদিন যদি তিনি বেঁচে না থাকতেন তাহলে হয়তো মেয়েটাও এতদিনে শেষ হয়ে যেতো ভাবতেই বুক কেঁপে ওঠে মায়া চৌধুরীর সেদিনের সেই বিধ্বস্ত অবস্থার বেলার রূপ তিনি মনে করতে চাননা আর মেয়েটা এখন হাসি খুশি আছে এটাই অনেক তার কাছে।

এরই মধ্যে বাড়ির মধ্যে ঢোকে শান্তা সে বেলাকে বাচ্চাদের মাঝে থাকতে দেখে সোজা নানীমার কাছে গিয়ে কোলে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে, বেলা যদিও শান্তাকে ভিতরে ঢুকতে দেখে নিয়েছিলো আর নানীমার কোলে মাথা রাখতেই বুঝতে পারে তার মন খারাপ নিশ্চয়ই আবার বাড়ির থেকে ঝামেলা করে বেরিয়েছে এই মেয়ে তার জন্যে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেলা।

-“কি হয়েছে আমার শান্তার! মন খারাপ বুঝি? মায়া চৌধুরী জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” উম.. শান্তা শুধু মুখ থেকে মৃদু আওয়াজ করে।

মায়া চৌধুরী হেসে ফেলে শান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে, এই মেয়েটাও ঠিক বেলার মত পাগলি বেলা বলতে এই মেয়ে পাগল, একটুও খারাপ কথা শুনতে পারেনা সাথে সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে ফেলে।

-” হয়েছে চল অনেক আদর খেয়েছিস এবার ব্রেকফাস্ট করে অফিসে বের হতে হবে আজকে অনেক কাজ। বেলা ওদের কাছে এসে বলে ওঠে।

-” হুম চল খুব খিদে পেয়েছে। শান্তা বলেই উঠে দাঁড়ায়।

-“খাবারে উপরে রাগ না দেখিয়ে খেয়ে এলে পারতি আর নাহলে ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে চলে আসতিস তাহলে আর অযথা কাটাকাটি হতো না। বেলা বলে এগিয়ে যায়।

-“উফ একটুও শান্তি নেই এই মেয়ে সব বুঝে ফেলে। শান্তা নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।

বেলা শান্তা আর তাদের নানিমা একসাথে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ব্রেকফাস্ট করতে থাকে। বাচ্চারা আগেই খেয়ে নিয়েছে কারণ তাদের আরও অনেক সকালে ঘুম থেকে তোলা হয় তাই তাদের এত বেলা পর্যন্ত না খাইয়ে রাখে না, তবে রাতের ডিনারটা সবাই একসাথে করে মাঝে মাঝে বেলার যেদিন আসতে দেরি সেইদিন ছাড়া।

বেলা শান্তা রেডি হয়ে বের হতেই দেখে বাইরে সব কটা দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে ওম নিশান বেদ রুহি আর সারাও, ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শান্তা ও বেলা ওদের সাথে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাদের সবারই গন্তব্য একই এস.আর গ্রুপ তারা এখন একসাথে প্রজেক্ট করছে বলে এখন এস.আর গ্রুপে যেতে হচ্ছে একসাথে ওখানেই কাজ হচ্ছে সাথে আলাদা একটা সাইড প্রজেক্টের কাজের জন্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই তারা এস.আর গ্রুপে চলে আসে বাইক পার্ক করে সবাই অফিসে ভিতরে ঢোকে। লিফট থেকে বের হতেই রুহি ধাক্কা খায়, সেই প্রথম বাইরে বেরিয়েছে আর মুখ পিছনে রেখে কথা বলছিল বলেই ধাক্কাটা লাগে। তবে পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ তার কোমরে ধরে আটকে নিয়েছে পড়ে যাওয়া থেকে। এদিকে বাকি গুলো সাইটে সরে দাঁড়িয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সামনে চলতে থাকে হবু হবু রোমান্টিক সিন দেখতে থাকে। রুহি পড়ে যাওয়ার ভয়ে সামনের মানুষটার শার্ট আকড়ে ধরে ছিল তবে নিজেকে পড়তে না দেখে আর নিজের কোমরে স্পর্শ পেয়ে সে চোখ খুলে তাকায় আর সাথে চার চোখ এক হয়ে যায়। রুহির সামনে সারিফ দাঁড়ানো দুজনই দুইজনের চোখে ডুবে আছে একভাবে দেখে যাচ্ছে তাদের আশেপাশে যে কেউ আছে সেটা তাদের মাথায় থেকে বেরিয়ে গেছে আর এটাই দেখছে বাকি গুলো, সারাতো চোখ ছোটো করে বোঝার চেষ্টা করছে আসলেই শে ঠিক দেখছে কিনা।

-“ভাই ফেঁসে গেছে। সারা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে।

-” আবে শুধু তোর ভাই ফেঁসে যায়নি সাথে এই ম্যাডামও গেছে পুরো জমে গেছে সিন। ওম বলে ওঠে।

বেলা চারিদিকে একবার তাকিয়ে নেয় তারা ছাড়াও আরও অনেকেই দেখছে এই দৃশ্য সাথে মিটমিট করে হাসছে।

-“আজকেই কি দেখে শেষ করে ফেলবেন নাকি কিছু বাকিও রাখবেন! সারাজীবন তো পড়ে আছে পরেও দেখতেই পাবেন। বেলা বলে ওঠে টিজ করে।

বেলার কথা শুনে বাকিরা মুখ চেপে হেসে ওঠে আর সারিফ আর রুহি নিজেদের হুসে ফেরে সারিফ তাড়াতাড়ি করে রুহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ে, আর রুহি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হতে শুরু করেছে আর বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।

-“কি ব্যাপার হ্যাঁ এমন লজ্জাবতীর মত গুটিয়ে যাচ্ছিস কেনো? সারা মুখ টিপে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“আহা আহা বুঝিসনা লজ্জা পাচ্ছে! ভাবা যায় এই মেয়েও কিনা লজ্জা পায়।

-“লজ্জা কি খায় না মাখে শুনি হ্যাঁ! লজ্জা পাচ্ছে লজ্জা! রুহি নিজেকে ঠিক করে ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠে।

-“ওমা জানো না লাগায় তো ! লজ্জা মুখে লাগায় তাইতো দেখো না মুখ কেমন লাল লাল হয়ে যায়। দিশা হঠাৎ করে ওদের মধ্যে এসে বলে ওঠে।

-” ওমা তাই নাকি লজ্জা মুখে লাগায়! আচ্ছা লজ্জা যদি মুখে লাগে তাহলে এত এত টাকা খরচ করে অন্য কিছু যেমন ফেয়ার লাভলি আর বাকি যে যে কসমেটিকস আর প্রোডাক্ট আছে সেগুলো লাগানোর কি প্রয়োজন লজ্জা মুখে লাগালেই তো রূপ সুধা ফুটে ফুটে বের হয় দেখতেও ডানা কাটা সুন্দরী লাগে আর কেউ বলতেও পারেনা ময়দা সুন্দরী। বেলা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

এদিকে বাকি গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেলার বলা কথা গুলো শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছে আর দিশা রেগে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে বেলার কথার মানে বুঝতে না পারলেও সবার মুখ টিপে হাসতে দেখে দিশা রেগে যায়। দিশাকে রেখেই বেলা ওখান থেকে সোজা কেবিনে চলে যায়।

-“এই এবার থেকে তোরা দিনে দুবার করে মুখে লজ্জা লাগিয়ে নিস তাহলে আর এত্ত এত্ত টাকা খরচ করতে হবেনা আর আমাদের মত বেচারা ছেলেদের পকেটও ফাঁকা হয়না বেলা ভালো বুদ্ধি দিয়েছে। ওম চোখ টিপে বলে বেলার পিছন পিছন এগিয়ে যায়।

সাথে বেদ নিশান শান্তা রুহি সারা ও কিছুটা রেগে ওমের পিছনে এগিয়ে যায় আর এদিকে দিশা রেগে দাঁড়িয়ে পা ঠুকছে একা একা, তাকে যে সবাই এতক্ষণ অপমান করে গেলো সেটা বুঝতে পারে।

বেলা কেবিনে ঢুকতে গেলে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ টান মেরে পাশের কেবিনে ঢুকিয়ে নেয়। বেলার চোখ মুখ চেপে ধরে থাকায় বেলা কোনো কথা বলতে পারেনা সাথে কিছু দেখতেও পায়না তবে এটা বুঝতে পারে কার এত বড় সাহস তাকে এইভাবে স্পর্শ করার। হটাৎ বেলা অনুভব করে তাকে দেওয়ালে চেপে ধরেছে সাথে চোখ মুখের উপর থেকেও হাত সরে গেছে, বেলা চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাঁঝ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে নেশার্ত চোখে।

-“এই রকম ব্যবহারের কি কারণ কি হ্যাঁ আমাকে এইভাবে টেনে কেনো আনলেন? বেলা কিছুটা রেগে বলে ওঠে।

-” উম ভালোবাসা পেয়েছে একটু তাই সাথে একটু খিদেও পেয়েছে সকাল থেকে না খেয়ে আছি। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে নেশায় বুঁদ গলায় বলে ওঠে।

-“খিদে পেয়েছে তো আমার কাছে কি গিয়ে খান না যান কেউ কি আপনাকে খেতে বারণ করেছে নাকি? বেলা রাগে কটমট করে বলে ওঠে।

-“বলছো খেয়ে নিতে তাহলে? সাঁঝ বেলার দিকে বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

বেলা সাঁঝের এমন হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় হঠাৎ করে সে সাঁঝের কথার মানে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঁঝ আক্রমণ করে বসে বেলার অধরযুগল নিজের অধর দিয়ে আটকে ফেলে বেলা চোখ বন্ধ ছটফট করতে থাকলে সাঁঝ বেলার কোমরে আটকে নিজের সাথে মিশিয়ে এক হাত ঘাড়ে রেখে নিজের দিকে আরও বেশি করে টেনে নেয়, মেতে ওঠে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে বেলার অধরসুধা পান করতে গভীর থেকে গভীর ভাবে ডুবে যায় বেলার অধরের মাঝে শুষে নিতে থাকে সুধারস বেলাও এক সময়ে শান্ত হয়ে যায় তার এক হাত উঠে আসে সাঁঝের কাঁধে আর বুকে খাঁমছে ধরে শক্ত করে সাঁঝের শার্ট সাঁঝের স্পর্শে বেলার শরীরের মধ্যে অনুরণন শুরু হয়ে যায়।

চলবে…..?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here