তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১৬

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৬.
সাঁঝ বেলার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মিশে দাঁড়িয়ে আছে দুজনেই অস্বাভাবিক ভাবে বড় বড় করে দম নিচ্ছে ফোনের রিংটোনে তাদের ঘোর কাটে নাহলে একটু আগে পর্যন্তও সাঁঝ বেলার অধরসুধাতে মেতে ছিলো। সাঁঝ নিজের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে নিয়ে বেলার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়। বেলা নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে সাঁঝকে ধাক্কা মারে কিন্তু নিজের থেকে সরিয়ে দিতে পারেনা সাঁঝ তাকে শক্ত করে ধরে আছে, বেলার চোখ যায় সাঁঝের বুকের কাছে কিছুটা আঁচড় কেটে রক্ত জমছে একটু একটু করে এটা দেখেই কেমন একটা অনুভূতি হয় তার নিজের মাঝে সে সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। সাঁঝ এখনও তাকিয়ে আছে বেলার দিকে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।

-“উফ এই মিষ্টির কাছে পৃথিবীর সব মিষ্টি হার মানতে প্রস্তুত, সাথে আমার খিদে টাও মিটে গেলো সকাল থেকেই মনটা আনচান করছিলো এই খিদেতে আহা এখন শান্তি। সাঁঝ বেলার ঠোঁটের উপর আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে ফিচেল কন্ঠে।

সাঁঝের এমন কথায় বেলা কটমট করে রাগী ভাবে তাকায় সাঁঝের দিকে, বেলার তাকানো দেখে সাঁঝ বুঝতে পারে তার সুইটহার্ট রেগে গেছে কিন্তু কিছু করার নেই বেলাকে যে তার প্রতি মুহূর্তে চাই, আর সাঁঝ নিজেও জানে বেলার দুর্বলতা সে নিজেই বেলার কাছে আসলে বেলা তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে যতো তাকে দূরে সরিয়ে রাখুক না কেনো তার প্রতি বেলার ভালোবাসা এখনও এক টুকরো কমেনি শুধু অভিমানের স্তূপে ঢাকা পড়ে গেছে সেটাই এখন ফুটিয়ে তুলতে হবে আবারো, আবারো তার মাঝে ফিরিয়ে আনতে হবে তার জন্যে ভালোবাসা যে গুলো বেলা অভিমানে জমিয়ে ফেলেছে।

-“ছাড়ুন আমাকে। বেলা রাগে কটমট করে বলে ওঠে।

-“উহুহ ছাড়তে যে মন চাইছে না আমার। সাঁঝ বেলার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলে ওঠে।

-“নিশ্চয়ই থাপ্পড় খেতে মন চাইছে না আপনার? বেলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-” বাহ তোমার সাহস দেখছি বেড়ে গেছে আমাকে থাপ্পড় মারার কথা বলছো নট ব্যাড হুম, তবে তোমার এই নরম হাতের থাপ্পড়ও মজা লাগবে তোমার যদি মন চায় তাহলে কোনো বাধা নেই তবে তুমি থাপ্পড়টা আসলেই দিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। সাঁঝ মৃদু হেসে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা কোনো কথানা বলে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় সে মুখে বললেও কখনোই এই কাজ করতে পারবে না যেখানে রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বলে বলতে পেরেছে এমনি হলে কখনই মুখ থেকে এই কথা বের হতো কিনা সন্দেহ আছে থাপ্পড় মারা তো অনেক দূরে থাক। সাঁঝ বেলার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দেওয়া দেখে মৃদু হাসে বেলার ঠোঁটে আলতো করে আবারো অধরের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে বেলার ড্রেস ছিল ঠিক করে দেয় যেগুলো একটু আগেই সে ঘেঁটে দিয়েছিলো বেলা কোনা চোখে চুপচাপ সাঁঝের করা কাজ দেখতে থাকে সে জানে এখন কিছু বললেও এই বান্দা তাকে ছাড়বে না বরং আরো বেশি জ্বালিয়ে খাবে। সাঁঝ বেলার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে গিয়ে বেলাকে যাওয়ার পথ দিয়ে দেয় বেলা এক পলক সাঁঝকে দেখে নিয়ে দ্রুতই সাঁঝের কেবিনে থেকে বেরিয়ে যায় আর এদিকে সাঁঝ বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

————-

শান্তা ওম বেদ নিশান রুহি পরপর বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে তবে তাদের মধ্যে কাজ করতে গেলে বলতে গেলে তারা কাজ করার মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে অলীক স্বপ্নে হারিয়ে যাচ্ছে বেশি। বেদ একভাবে রুমের বাইরের দিকে সামনের ডেস্কে তাকিয়ে আছে কাঁচের দেওয়াল তাই বাইরের সব কিছু অনায়াসে দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ভিতরের কিছু দেখা যায়না, বেদ ল্যাপটপে কাজ করছে কম বাইরে তাকিয়ে আছে বেশি আসলেই সামনের ডেস্কে সারা দাঁড়িয়ে অফিসের একজন বয় স্টাফের সাথে অনেকক্ষণ দিয়ে কথা বলে যাচ্ছে শুধু তাইনা হাসছেও এটাই যেনো তাকে আরো বেশি করে রাগিয়ে তুলছে কিন্তু এর কারণ বেদ এখনও খুঁজে পাইনি তার এমনি হয় যখন সারা অন্য কারোর সাথে এইভাবে হেসে কথা বলে মনে হয় তাকে গিয়ে খুব করে পিটিয়ে আসে।

নিশান কাজ করছে আর তার সামনে বসা শান্তা কে দেখছে আর মাঝে মাঝে বাঁকা হাসছে যদিও এরও কারণ আছে শান্তা কাজের মাঝে কিছুক্ষণ পরপর উসখুশ করছে আর এটা দেখেই নিশানের এই বাঁকা হাসি। নিশান কাজের মাঝে পা দিয়ে শান্তাকে সুড়সুড়ি দিয়ে চলেছে পালকের সাহায্যে শান্তা খুঁজে দেখার পরই কিছু পাইনি সাথে বুঝতেও পারিনা কি হচ্ছে তাই কাজের মাঝে বারবার উসখুশ করছে আর নিশান তার মজা নিচ্ছে, শান্তা রাগিয়ে দিতে ঝগড়া করতে তার খুব ভালো লাগে শান্তার সাথে না লাগলে তার রাতের ঘুম হয়না মনে হয়। কিন্তু অন্য সবার কাছেই নিশান একদম শান্ত বেদ ওম যতোটা দুরন্ত ছটফটে চঞ্চল হিসাবে জানা যায় নিশানকে তার বিপরীত একদম শান্ত লাগে কিন্তু সবার সাথে থাকা এই শান্ত ছেলে শান্তার সামনে আসলেই অশান্ত হয়ে পড়ে তখনই লেগে যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এটা দেখেও মাঝে মাঝে সবাই অবাক হয়ে যায়।

এদিকে ওম একদম শান্ত হয়ে কাজের মধ্যে ডুবে আছে তার এখন কোনো দিকে ধ্যান নেই এদের মত সে এখনও কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িনি তাই তাকে শান্ত ভাবেই দেখা যায় সব সময়ে কোনো চাপ নেই তবে সবার মধ্যে বদমাশের শিরমনি কিন্তু এই ওমকে ধরা হয়।

আর রুহি সেতো কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে কম ভাবনার জগতে বিচরণ করছে বেশি সারিফের সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে এই পর্যন্ত হওয়া ঘটনা ভাবতে থাকে দেখতে গেলে তাদের দুইবার দেখা হয়েছে তবে দুইবারই সারিফ তাকে ধরে নিয়েছে পড়ে যাওয়া থেকে আর তারপরেই শুরু হয়ে যায় তাদের চোখে চোখে চলতে প্রতিযোগিতা হালকা পাতলা একটা মোমেন্ট ক্রিয়েট।

বেলা রুমে ঢুকে এক এক করে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে দেখে সবাই যেযার ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছে একইতো সাঁঝের জন্যে তার মাথা গরম হয়ে আছে সে যতো চাচ্ছে তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্যে ততই আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে এর জন্যে সে বিরক্ত তার উপর এরাও শুরু করেছে কাজে ফাঁকি বেলা কাছে গিয়ে সব কয়টার মাথায় বাজিয়ে দেয় সারাকেও রুমে ডেকে এনে তাকেও কিছুটা ঝাড় দিয়ে কাজ শুরু করে সবাই মিলে, বলতে গেলে সাঁঝের উপরে রাগটা এদের উপরে থেকে গেছে অল্প করে। সাঁঝ তার রুমে বসে ল্যাপটপে ফুটেজে সবটা দেখতে থাকে সাথে বেলার রাগী মুখটা দেখে আরো বেশি হাসতে থাকে তারও বুঝতে বাকি নেই তার রাগটা ওদের উপরে ঝেড়ে দিচ্ছে।

————

ডিয়ার জিন্দগি❤️

তুমি কি জানো তোমার ওই বাঁকা ঠোঁটের হাসি আমাকে প্রতিটা সময়ে তাড়া করে বেড়ায় এক মুহূর্তের জন্য ও শান্তি দেয়না। তোমার ওই ভ্রু উঁচু করা তীক্ষ্ণ গভীর নীল চোখের ওই দৃষ্টি আমাকে কতটা পোড়ায় চোখ বন্ধ করলেই ওই চোখ জোড়া চোখের সামনে ভেসে ওঠে গভীর ভাবে আমাকে আকর্ষণ করে। তোমার ওই ঝাংঙ্কারময় তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর আমাকে নেশাগ্রস্ত করে দেয় ইচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত এই ভয়েস শুনতে থাকি যদি এমন কোনো উপায় থাকতো যে ভালোলাগা নেশাগ্রস্ত কোনো ভয়েস খেয়ে ফেলা যেতো তাহলে সেটা আমি এতদিনে খেয়ে নিয়ে নিজের পেটের মধ্যে রেখে দিতাম। জানো যখন কথা বলতে বলতে হটাৎ করে চোখ তুলে তাকায় হায় মনে সময় টা এখানেই থেমে যাক আর আমি সারাক্ষণ তোমার ওই নীল চোখের গভীর সমুদ্রে ডুবে যাই। তোমার গলায় থাকা তিল টা আমাকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করে যখনই তুমি আমার সামনে আসো তখনই আমার দৃষ্টি কেড়ে নেয় নেশা লাগিয়ে দেয়। তোমার সাথে আমার প্রথম দেখাটা ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি আমার জীবনেও সিনেমাটিক কিছু ঘটতে পারে বলে। সেদিনই তোমার ওই চোখের মায়াতে পড়ে গেছি যেটা দিন দিন ক্রমশ গভীর থেকে গভীর হয়েই গেছে। তোমার আসক্তি আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে কোনো ভাবেই এর থেকে বেরোতে পারছি না। যতোই এই আসক্তি থেকে বের হতে চাইছি তত আরো বেশি গভীর ভাবে ডুবে যাচ্ছি। জানি এই আসক্তি আমার জন্য ক্ষতিকারক তবুও বের হতে পারছি না যা কখনো হওয়ার নয় জানা সত্ত্বেও বারবার তার মাঝেই ডুব দিতে চাইছি কি করব সব কিছুই যে আমার হাতের বাইরে চলে গেলে পুরো কন্ট্রোললেস হয়ে গেছে আমার মন সে যে একটুও আমার কথা শুনতে রাজি নয়। মন যে আমার আয়ত্তে নেই সে যে কারোর কথা শোনে না এতে কি করার আছে আমার। হ্যাঁ করার আছে অবশ্যই করার আছে তার প্রতি আকর্ষিত হতে দোষ নেই তার মায়াতে ডুবে যেতে ও দোষ নেই তাকে ভালোবাসতে ও দোষ নেই আমি চাইনা আমার মন কে বাঁধা দিতে ভালোবাসাটাতো অন্যায় নয়। আমি তাকে এই ভাবে ভালোবেসে যাবো তবে সে কখনই জানবে না আমার মনের কথা সব কিছুকেই আমি মনের দরজার ভিতরে তালা বদ্ধ করে রেখে দেবো থাক না কিছু অপ্রকাশিত তাতে কি কারোর ক্ষতি হবে? একদমই না বরং সেও ভালো থাকবে আমিও ভালো থাকবো। তাকে ভালোবেসে না হয় মনের কোণে প্রতি মুহূর্তে রঙিন করে রাখবো যেখানে নেই কোনো বাঁধা শুধু থাকবে এক আকাশ ভালোবাসা…..। ❤️❤️❤️

আলো আধারি অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে বেলা বারান্দায় থাকা গাছের সাথে লাগিয়ে রাখা টুনি বাল্ব গুলো জ্বলছে মিটমিট করে আর তার লাল নীল হলুদ আলোয় আলো আধারি হয়ে আছে গোটা বারান্দা। তবে বেলার সেদিকে কোনো ধ্যান নেই তার হাতে ধরা আছে একটা চিরকুট যেটা বেশ কিছুটা পুরোনো আর তার লেখা গুলোই আবারো চোখ বোলাতে আবারো কেমন করে সে দুর্বল হয়ে পড়ছে তার ভিতরে মনের ঘরে তালা বন্ধ সেই অভিমানে জমা ভালোবাসা বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ জুড়ে নেমেছে অশ্রুবর্ষা দৃষ্টি সামনের কালো নিকষ অন্ধকারে দিকে। চোখের সামনে যেনো একে একে ভেসে আসতে চাইছে কিন্তু সেটা বেলা আসতে দিতে চাইছেনা সে আর কিছুতেই চাইছে না পুরোনো কিছু মনে করতে তাই নিজেকে সামলাতে এই অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রুবর্ষা সংবরন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেনো যে আবারো তার হাতে এইগুলো পড়লো সাথে কেনো বা সাঁঝ আবারো ফিরে এলো সেটার হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছেনা কেনো যে তার জীবনে ফিরে এসে আবারো তাকে যন্ত্রণায় পুড়িয়ে দিতে চাইছে সেটা জানে না এত বছর একা থেকেতো কম যন্ত্রণা পাইনি তাহলে আবারো কেনো? বেলা এক মনে হিসাব করে যাচ্ছে সব কিছু। হটাৎ নিচু থেকে চিৎকার চেঁচামেচির হাসির আওয়াজ আসতে বেলার ঘোর কেটে যায় সে তার ভাবনার থেকে বেরিয়ে আসে বুঝতে পারেনা হঠাৎ করে এমন চিৎকার করছে কেনো কি হয়েছে এত আনন্দিত কেনো বাচ্চা গুলো ভেবেই বেলার ভ্রু কুঁচকে আসে। নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে রুমের ভিতরে এসে চিরকুটটা রেখে দিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে যায়। সিঁড়ির কাছে আসতেই বেলার চোখ যায় নিচে সাথে সাথে তার চোখ মুখ অবাক আর বিস্ময়ে ঘিরে যায় সাথে চোখ গুলোও বড় বড় হয়ে যায়।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here