#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২২.
রাগে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে সাঁঝ তাকে এই মুহূর্তে দেখতে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর লাগছে মনে হচ্ছে তার ওই লাগে লাল হয়ে যাওয়া রক্তমুখী হিংস্র চোখের দ্বারা সব কিছু জ্বালিয়ে খাঁক করে দেবে। হাত দুটো শক্ত করে মুঠোবদ্ধ করে রেখেছে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে চোয়াল শক্ত করে দাঁত পিষতে পিষতে তীক্ষ্ণ হিংস্র দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
বেলা তার কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আর.এমের সাথে হেসে হেসে কথা বলে যাচ্ছে। শুধু এতেই সীমাবদ্ধ থাকলে তবুও ঠিক ছিল আর.এম কথার মাঝে মাঝে বেলার হাত ধরার চেষ্টা করছে আর এতে সে সফল ও হচ্ছে সে কথার ছলে বেলার হাত তার হাতে নিয়ে কথা বলছে বেলা ছাড়িয়ে নিলে আবারো হাত ধরছে এমন ভাব যেনো মনে হচ্ছে সে বেলার সাথে এত উৎসাহী কথা যে বারবার হাত ধরে ফেলছে ঠিক বন্ধুরা যেভাবে কথা বলে সেই ভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে, আর চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে বেলার শরীরের আনাচে কানাচে আর.এম কথার বলার অছিলায় তার লোভী চোখ দিয়ে বেলাকে মেপে নিচ্ছিলো পুরো গিলে খাচ্ছে যেনো। মাঝে সব কিছুর লিমিট ছাড়িয়ে কাঁধেও হাত রাখছিলো।
আর দূর থেকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখেই সাঁঝ রাগে ফেটে পড়ছে চোখ মুখ লাল করে ভয়ংকর হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে তার মন চাইছে এখুনি সব টা শেষ করে দিতে।
আজ সকালের দিকে একটু মন খারাপ থাকলেও বেলার আর বাকিদের বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন আর বেলার বলা কথা গুলো শুনে সাঁঝ খুশি ছিল তার বেলাযে তার ব্যাপার ভুল বুঝেছিল সেটাও আজ সম্মুখ সমরে স্বীকার করে নিয়েছিলো কিন্তু সবটাই পাল্টে গেলো সাঁঝের হাসি খুশি মুখটা এখন হিংস্রতায় ভর করেছে। দুপুরের পরেই নিউ প্রজেক্টের একটা মিটিং ছিল সব শেয়ার হোল্ডার আর বেলার টিম সাথে আর.এম সবাই মিলে তো আর.এম মিটিংয়ে আসার পর থেকে বেলাকে দেখে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো তারপরই নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে মিটিং শেষ করেছে তবে মিটিং রুম ছেড়ে সে বাইরে বেরিয়ে যেতে আর.এম ইনিয়ে বিনিয়ে বেলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তবে বেলা প্রথমে এড়িয়ে গেলেও বেলা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে ঠিক সাঁঝের কেবিনের পাশে তাদের জন্য বরাদ্দ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলতে থাকে। তবে কথা বলার সময়েও তার নজর ঠিক সাঁঝের কেবিনের দিকে তাক করে রেখেছিলো আর সাঁঝের হিংস্র ভয়ংকর রূপ দেখে মনে মনে একটু ভয় পেলেও সাঁঝকে জব্দ করতে পেরেছে তাকে যে জ্বালিয়ে দিতে পেরেছে কেমন জ্বলে যায় বুকের ভিতর যখন ভালোবাসার অন্য কারোর সাথে এইভাবে থাকে সেটা বোঝাতে এই ব্যবস্থা বেলার আর সাঁঝের রূপ দেখে মনে বেলা সফল হয়েছে। এতদিন এতবছর সে জ্বলেছে যন্ত্রণায় ছটফট করেছে এবার নাহয় সাঁঝও একটু সেই যন্ত্রণায় জ্বলতে থাকুক ক্ষতি কি এতে।
বেলা আর.এমের গায়ে পড়া ভাবটা আর নিতে না পেরে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এতটুকু ডোজ আজকের যেয়ে ঠিক আছে না জানি আবার কি তান্ডব শুরু করে দেয় আর তার উপর না কোন সুনামি এসে পড়ে তবে যায় আসুক না কেনো বেলা এত বছর যেই কষ্টে যন্ত্রণায় ছিল সেটাও সে সাঁঝকে অনুভব করাতে চায় তাই এই প্রকল্প জারি থাকবে। বেলা, নিশান ওম বেদ শান্তা সারা রুহি আর এখন তাদের সাথে যোগ হয়েছে জাকিয়া সবাই মিলে নিজেদের কাজ করছে আর জাকিয়া বেলার পাশে বসে তার কাজে সাহায্য করছে কম বকবক করছে বেশি।
একটু পরেই তাদের কানে আসে কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ, তবে বেলার বুঝতে বাকি থাকেনা এটা ভাঙচুরের আওয়াজ আর এত আসছেও সাঁঝের কেবিনের থেকে একের পর এক তোড় ফোড় করে যাচ্ছে শুধু কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ আসছে সবাই অবাক হয়ে বেলার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে পাশের রুমের দিকে তাকায় তবে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা আর এইসব ভাঙচুরের আওয়াজ শুনে বেলার মুখে অদ্ভূত এক হাসি ফুটে উঠে যেটা সবাই লক্ষ করেছে বাকিরা ভ্রু কুঁচকে একবার বেলার দিকে তাকায় সাঁঝের রুমের দিকে দৃষ্টি দেয় তাদের কাছেও খুব অদ্ভূত লাগছে বেলার হঠাৎ এই অনাকাঙ্খিত এই হাসি তারমানে কি সাঁঝের এই ভাঙচুরের পিছনে কোনও ভাবে বেলার হাত আছে।
-“কি ব্যাপার বেলা তুই এভাবে হাসছিস কেনো? শান্তা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ সেই তুই এমন অদ্ভূত ভাবে কেনো হাসছিস? কোনো ভাবে তুই এইসবের পিছনে নেইতো? সারা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
শান্তা আর সারার প্রশ্ন শুনে বেলার ঠোঁটের হাসি আরো কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সে কিছু না বলে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রেখে নিজের কাজ করতে থাকে।
-” ওহ মাই গড তারমানে ভাইয়ের এইসব ভাঙচুরের পিছনে তুমি আছো? জাকিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” বেলা তুই কি করেছিস সত্যি কথা বল, যে স্যার এমন ভাবে রেগে গেলো হঠাৎ করে! নিশান বলে ওঠে ।
-“কিছুই করিনি আমি। আমি কি কিছু করতে পারি বলে তোদের মনে হয়? বেলা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-“তোর এই হাসিটা বলে দিচ্ছে তুই কিছু করেছিস এমন যার জন্যে এখন এই ভাঙচুর চলছে। বেদ বলে ওঠে।
-“আমি কি করেছি আমি কিছুই করেনি আমিতো শুধু আর.এমের সাথে কথা বলছিলাম এতে রেগে যাওয়ার কি আছে! সে যখন দিশার সাথে কথা বলতো আমি কি সেটা নিয়ে এমন তোড়ফোড় করেছি না তার দিশার সাথে চিপকে থাকা নিয়ে কিছু বলেছি তাই সামান্য আমার আর.এমের সাথে কথা বলা নিয়ে এত ভাঙচুরের কারণও আমি দেখছি না। বেলা ঠোঁটে হাসি রেখে তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে সব কটা আকাশ থেকে পড়ার মত করে বেলার দিকে বসে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সব ধুপ ধাপ করে চেয়ারে বসে পড়ে অবাক হয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে তাদের আর বুঝতে বাকি নেই আসলেই ঘটনাটা কি ঘটেছে আর কেনো সাঁঝের এমন ভাঙচুর চলছে আর বেলার কথা গুলোও তাদের বুঝতে বাকি নেই বেলা এইসব ইচ্ছে করে করেছে সাঁঝকে জ্বালানোর জন্যে সেটাও বুঝতে পারে। কেউ কিছু বলবে এর আগেই খুব জোরে বিকট একটা আওয়াজ সবাই বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাঁঝ তার কেবিনের দরজা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে না সে অন্য কোথাও যাচ্ছেনা সে অফিসে থেকে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। বেলা সাঁঝের যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাঁঝ কেমন আউলে ঝাউলে গেছে এই কয়েক মুহূর্তে দেখেই বেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নেয়।
-“বেলা তুই জানিস তুই কি করেছিস এটা ভাইকে তুই ভয়ংকর ভাবে রাগিয়ে দিয়েছিস তুই কিছু করিসনি বললেও এর মধ্যে দিয়ে তুই অনেক কিছুই করে ফেলেছিস। সারা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।
-” আমি কিছুই করিনি এটা তার প্রাপ্য এটুকু তাকে ভোগ করতেই হবে যেমনটা আমি করেছি এত গুলো বছর ধরে। বেলা কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে সবাই থমকে যায় বেলার সবার দিকে তাকিয়ে নিজের ছোটো হ্যান্ডব্যাগটা ঠিক করে পিঠে বাধিয়ে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। বাকিরা বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এছাড়া তাদের কিছুই করার নেই।
বেলা অফিসে থেকে বেরিয়ে সোজা মায়ানীড়ে চলে আসে। বাড়িতে ঢুকেই কোনো দিকেই না তাকিয়ে নিকের রুমের দিকে পা বাড়ায় তবে রুমের ভিতর ঢোকার দুটো হাত শক্ত করে রুমের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।