তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -২১

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২১.
বেলার কথার মাঝে হঠাৎ করে পিছন থেকে বিস্ময় ও আনন্দ ভরা মেয়েলি কন্ঠে চিৎকার করে কথা বলে ওঠায় সব পিছনের দিকে তাকায় বেলাও তার কথা থামিয়ে দিয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায় দেখে সারিফ অবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা সুন্দরী বিদেশীনি মেয়ে। বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছে আসলেই মেয়ে টা কে হতে পারে। এদিকে বাকিরা দরজার দিকে তাকিয়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে সব কটা। বেলার মুখ থেকে হঠাৎ করে অস্পষ্ট ভাবে বেরিয়ে আসে।

-“জাকিয়া ।

-” আরে জিকু বেবি তুই এখানে হঠাৎ করে? কখন এলি? কই আমাকে জানালি না তো? সারা জাকিয়ার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।

-“হেই জাকিয়া বেবি কেমন আছো হ্যাঁ আর সারপ্রাইজ টা কিন্তু দারুণ ছিলো। নিশান এগিয়ে গিয়ে জাকিয়াকে জড়িয়ে বলে ওঠে।

-” ফাইনালি পাঁচ বছর পর আবার দেখা হলো। শান্তা বলে ওঠে।

-“তোমাকে খুব মিস করেছি জিকু বেবি । রুহি বলে ওঠে।

-” আমিও তোমাদের সবাইকে খুব মিস করেছি। তোমরা সেই যে গিয়েছিলে কানাডায় ফেস্টিভেলের সময়ে তারপরে তো আর সেইরকম কথা হয়ে ওঠেনি তাই আমি আমার স্টাডি কম্পিলিট করে আমিও ইন্ডিয়া চলে এলাম। সারিফ ভাই আমাকে আনতে গিয়েছিলো এয়ারপোর্ট থেকে তো ভাইয়ের থেকে শুনলাম তোমরা এখন অফিসে আছো তাই সোজা এখানে চলে এলাম তোমাদের সাথে দেখা করতে জাকিয়া হেসে বলে ওঠে।

-“খুব ভালো করেছ এখানে এসে আমরা সত্যি সারপ্রাইজ হয়েছি। বেদ বলে ওঠে।

বেলা একভাবে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে সবাইকে কিন্তু হঠাৎ করে পাশে তাকাতেই বেলার কপালে ভাঁজ পড়ে। ওম বুকে হাত রেখে একভাবে জাকিয়াকে দেখছে মুগ্ধ চোখে। আমরা যখন হঠাৎ করে আমাদের প্রিয় জিনিষ, প্রিয়জন বা পছন্দের মানুষকে দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই বা কিছু কিছু সময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই তবে চোখে মুখে তার ছাপ থেকে যায় ওমের অবস্থা এখন ঠিক তেমনই ওম কে দেখে মনে হচ্ছে ওর সামনে কোনও পছন্দের মানুষ বা ফিল্মস্টার দাঁড়িয়ে আছে। বেলার বুঝতে বাকি নেই ওমের মনে প্রেমের ঘন্টি বেজে গিয়ে কুছ কুছ হোতা হে শুরু হয়ে গেছে, তার মানে ওমের মনে যে আগের থেকে এমন কিছু ছিল সেটা বুঝতে পারে বেলা। বেলা এগিয়ে গিয়ে ওমের কাছে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে হাত নাড়াচাড়া করে কিন্তু তাতেও ওমের চোখের পলক পড়ে না সে এখনও এক ভাবে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো জাকিয়ার দিকে বেলা ওমের কাঁধে হাত রেখে আলতো করে ধাক্কা দেওয়ার পরও সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বেলা এবারে সামনে সবার দিকে তাকাতে দেখে শান্তা সারা বেদ নিশান একবার সারিফকে আবার রুহিকে দেখছে এরাও একে অপরের দিকে শুভ দৃষ্টি সেরে নিচ্ছে। রুহি প্রথমে সারিফকে খেয়াল করেনি তবে জাকিয়ার সাথে কথা বলার পর পাশে দেখতেই সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে আর সারিফ বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। বেলা সামনে দেখে নিয়ে এবার ওমের দিকে দেখে।

-“বাহ এখানেই দেখি সবার মনেই কুছ কুছ ফিলিং চলছে এদের সবার মনেই দেখছি প্রেমের বাতি জ্বলে গেছে। বেলা বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।

বেলা আলতো করে ইশারা করে শান্তা সারা নিশান বেদ কে ডাকতে তারা বেলার দিকে তাকায়, বেলা ইশারা করে ওম জাকিয়াকে দেখায় সাথে সারিফ ও রুহিকে দেখায় বাকিরা এতক্ষণ ওদের খেয়াল করলেও ওমকে খেয়াল করেনি কিন্তু এখন দেখতেই বেদ এগিয়ে এসে ওমের পাশে দাঁড়িয়ে তারপর সবার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দুষ্টু হেসে ওমের কানের কাছে জোরে চিৎকার করে ওঠে। ওম নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে যায় সাথে সাথে সবাই প্রায় চিৎকার করে হেসে ওঠে আর এদের হাসির ঠেলায় রুহিও নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে সে হাবলার মত করে দাঁড়িয়ে সবার হাসি দেখছে সে আসলেই বুঝতে পারিনি হয়েছে টা কি আর ওম কেনো নিচে পড়ে আছে। জাকিয়া ওমের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে সে জানে ওমের এতক্ষণ কি করছিলো। জাকিয়া বেলার দিকে এগিয়ে এসে বেলার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।

-” বেলা রাইট আমিতো তোমাকে চিনি আমাদের দু একবার কথাও হয়েছে। কিন্তু তুমি আমাদের ভাবি এটা জানতাম না সত্যি আমি এখানে এলাম বলেই জানতে পারলাম। জাকিয়া বেলাকে টাইট করে জড়িয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ এটা আমরাও জানতাম না আজকেই জেনেছি বেলা আমার ভাবি হয়। সারা অভিমানী হয়ে বলে ওঠে।

-” আরে যাইহোক ইয়ার আমি তো খুব খুশি তোমার মত কিউট একটা মিষ্টি মিষ্টি দেখতে আমাদের ভাবি উফ আমি তো তোমাকে দেখেই প্রথমে ক্রাশ খেয়েছিলাম যদি ছেলে হতাম না উঠিয়ে নিতাম। জাকিয়া বলে ওঠে।

-” আমিও জানতাম না তুমি আমাদের ভাবি। ভাই যে পাঁচ বছর আগেই বিয়ে করে নিয়েছে সেটা জানতেই পারিনি। সারিফ এগিয়ে এসে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা তারপর বলো সেই আনিসের কি হলো আমিতো গল্প মাঝপথেই থামিয়ে দিয়েছি। জাকিয়া এক্সাইটেড হয়ে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ সেটাই বেলা ওই ডাইনী মহিলার কি হলো সাথে ওই হারামযাদাটার কি হলো? নিশান বলে ওঠে।

-“আমি জানিনা আনিসের খবর। ওর আর কোনো খবরই পাইনি আমি। সেদিন ওখান থেকে তোমার ভাইয়ের সাথে আসা গার্ড গুলো ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে চলে যায়। আর রিসা খানকে তোমাদের ভাই নিজে থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান করে ফেলে সাথে হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরেছে রুমাল দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিয়েছে সাথে রুমাল ও ছুড়ে ফেলে দিয়েছে এমন করে যেনো মনে হচ্ছিলো সে কোনো ময়লা জিনিসে হাত দিয়েছিলো এর রুমাল টাও নোংরা হয়ে গেছে। রিসা খানকেও ওখান থেকে গার্ড তুলে নিয়ে চলে গেছিল। বেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলতো হেসে বলে ওঠে।

-“আনিস তাহলে আর বেঁচে নেই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে গার্ড যেহেতু তুলে নিয়ে গেছে তাহলে ওখানেই খবর শেষ। সারিফ হেসে বলে ওঠে।

-” আমি শুনেছিলাম ওই ডাইনি মহিলাকে কেউ বা কারা নাকি বাড়ির দরজার সামনে ফেলে রেখে গেছিলো হাত পা ভেঙে দিয়ে। শান্তা বলে ওঠে।

সারিফের আর শান্তার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। সাঁঝ যে এতটা হিংস্র তারা বিশ্বাস করতে পারছেনা প্রথমেই বেলার মুখে ফাইটিং এর গল্প শুনে আর এখন সারিফ যা বললো তাতে যে সাঁঝ কোনো ভাবে হিংস্র থেকে কম নয়।

-“আচ্ছা বেলা আমাকে একটা কথা বল তুই যে বললি তুই আনিস আর রিসাকে দেখে ফোন করে কল করেছিলিস কিন্তু কাকে? আর ওই যে বললি জিন্দেগি মানে ঠিক বুঝলাম না?তুই তো বলেছিলি তোর জিন্দেগির সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে? রুহি বলে ওঠে।

-” আমি জিন্দেগিকেই কল করেছিলাম ওদের দেখে

-” তারমানে ভাই তোর জিন্দেগি ছিলো? সারা আনন্দ আর বিস্ময়ে চিৎকার করে বলে ওঠে বেলাকে বলতে না দিয়ে।

-“হ্যাঁ আমি প্রথম ওকে দেখে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু পরে যখন ওর মুখ দেখি তখনই আমি নিজেই বিস্ময়ে ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ওর আসল পরিচয় যে সাঁঝ রওশন হবে সেটাও আমি ভাবিনি ওকে তো দেখে আমি নিজেই শকড হয়ে গেছিলাম। বেলা মৃদু হেসে বলে ওঠে।

-” মানে তুমি আগে থেকে ভাইকে চিনতে না তুমি জানতে না? জাকিয়া জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” না তোমার ভাইকে এজ অ্যা গভর্নমেন্ট লিডার প্রেসিডেন্ট সাঁঝ রওশন হিসাবে চিনতাম ব্যাস এটুকু আর সারাও কখনো তার ভাইকে নিয়ে বলেনি তাই বেশি কিছু জানতাম না। তবে তোমার ভাইকে চিনতাম সেটা সম্পূর্ণ অন্য রূপে আমার জিন্দেগি হিসাবে তাই ওকে প্রথম দেখেই চমকে গেছিলাম নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বেলা বলে ওঠে ।

-“তুমি যদি ভাইকে তোমার জিন্দেগি হিসাবেই চিনতে তাহলে ভাইয়ের চেহারা চেনা উচিত কেনো ভাইয়ের সাথে সিক্রেট প্রেম চলছিলো নাকি? সারিফ বলে ওঠে।

-” উম বলতে পারো কিছুটা সেইরকম তোমার ভাইকে আমি দেখিনি তবে ওকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিন ওর চেহারা ঢাকা ছিলো আর তারপর যেকয়বার দেখা হয়েছে সব সময়ে তোমার ভাইয়ের মুখ ঢাকা থাকতো আর একদম নরমাল ভাবেই আমার সামনে আসতো তাই আমি কিভাবে বুঝবো আর চিনতে পারব যে ও সাঁঝ রওশন।

-“ওর তেরি ভাই তো হেভি ইউনিক আছে কিভাবে সিক্রেট ভাবে তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে গেলো ভাবা যায়। যাইহোক তুমি যে আমার ভাবি এতেই আমি খুব খুশি হয়েছি। জাকিয়া বলে ওঠে।

বেলা জাকিয়ার কথা শুনে আলতো হেসে এবার তার বন্ধুদের দিকে তাকায় দেখে তার দিকেই তারা তাকিয়ে আছে এখনও সেই অভিমান নিয়ে।

-“আসলে তোরা তখন দেশে ছিলিস না তাই আর তোদের এত কিছু বলে চিন্তায় ফেলতে চাইনি আর তোরা তো আগের থেকেই জিন্দেগির ব্যাপারে জানিস, আমি তোদের বলতাম তবে তোরা যখন ফিরে এসেছিলিস তখন সব কিছুই বদলে গেছিলো সাঁঝের সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মূলত আমিই ভুল বুঝেছিলাম তাই আমি আর সেই সব মনে করতে চাইনি তোদের বলে আমি তখন দ্রুত শহর ছাড়তে চাইছিলাম সাথে সব কিছু ভুলতে চাইছিলাম তাই দ্রুত তোরা ফিরলে গোয়ার ইউনিভার্সিটি এপ্লাই করে চলে গেলাম। বেলা আহত কন্ঠে বলে ওঠে।

-“মানে ভাইয়ের সাথে তোমার ঝামেলা হয়েছিলো? বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে সারিফ।

-” হ্যাঁ, আসলে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিলো আর আমি বুঝেছিলাম তবে সেদিন ও কোনও কথা বলেনি আর না আমার ভুল ভেঙে ছিল আর আমিও সেটা ধরে সব কিছু মিথ্যে ভেবে শহর ছেড়ে ছিলাম। তোরা এখনও আমাকে ভুল বুজবি আমি তোদের কে আমার জন্যে আর কষ্টে দেখতে চাইছিলাম না তোরা যদি ওইসময়ে আমার কথা শুনতি তাহলে তোরাও খুব কষ্ট পেতিস আর তাছাড়া আমি নিজেও সব কিছু ভুলতে চাইছিলাম তাই আর কোনো কথা তুলিনি। বেলা অসহায় হয়ে বলে ওঠে সবার দিকে তাকিয়ে।

বেলার কথা শুনে সারা ওম বেদ নিশান রুহি শান্তা সবাই একসাথে বেলার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে তারাও খুব কষ্ট পেয়েছিলো বেলা তাদের কিছু বলেনি বলে আর এখন বেলার মুখ থেকে সবটা শোনার পর সত্যি ওরা সবাই কষ্ট পেয়েছে ওই সময়ে একা বেলাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যে বেলা যে নিজে এত কষ্ট সয়ে গেছে শুধুমাত্র তারা কষ্ট পাবে বলে এখানে কি আর অভিমান করে থাকা যায়। সবাই একসাথে জড়িয়ে ধরে নিজেদের মান অভিমান মিটিয়ে নিচ্ছে। রুমে থাকা সারিফ আর জাকিয়া ওদের দেখে মৃদু হাসে সত্যি এদের বন্ধুত্ব দেখলেই মনে প্রশান্তি আসে।

এদিকে সাঁঝ তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে এতক্ষণ থেকে ওদের দেখছিল ওদের কথা শুনছিলো ওদের এখন দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে সকাল বেলা তার আর বেলার সম্পর্ক ওদের বলার পরেই সব কয়টা খুব কষ্ট পেয়েছিলো কিন্তু সেখানে সাঁঝ কিছু বলতে পারিনি আসলেই তার বলার মত কিছু ছিলোনা আর না ওদের মাঝে তার কথা বলা সাজে কারণ ওটা বেলার সাথে তার বন্ধুদের বোঝাপড়া ছিল বেলা কেনো ওদের জানায়নি সেটা বেলার বলার কথা ছিল তাই এতক্ষণ সাঁঝ চুপ করে সবটা দেখছিলো।

চলবে…. ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here