তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৩৪

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৪.

-“ভালোবাসি তোকে, বুঝতে পেরেছিস আমার কথা, কান খুলে শুনে রাখ ভালোবাসি আমি দ্বিতীয়বার আর তোকে এই ভাবে বলব না। রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে বেদ ।

বেদের মুখের কথা শুনে সারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এতক্ষণের ছটফট থামিয়ে তারা সারা শরীরের যেনো হটাৎ করেই কারেন্ট বয়ে যায়। নিজের কানকেও যেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা সে ঠিক শুনেছে তো বেদ তাকে ভালোবাসি বলছে ভাবতেই শিহরিত হয়। সে এতদিন বেদের আচরণ দেখে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভেবেছিল আর এই কয়েকদিন এর বেদের আচরণ তাকে আরো বেশি কনফিউজড করে দিয়েছিলো কিন্তু আজ তার সব কনফিউশনের উত্তর সে পেয়ে গেছে তারমানে বেদ তাকে ভালোবাসে ফাইনালি গাধা টা মনের কথা বহিঃপ্রকাশ করেই দিলো। এতক্ষণের ব্যাথা ভুলে এক দৃষ্টিতে বেদের দিকে তাকিয়ে ইতি মধ্যে কয়েক দফা চোখে মুখের রং প্রতিক্রিয়া পাল্টেছে কিছু সেকেন্ড আগেই রাগ অবাক আর বিস্ময় থাকলেও এখন মুখে লেগে রয়েছে মুগ্ধতাও প্রশান্তির ছোঁয়া। বেদ যে তার তাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে বলতে গেলে বেদের আঙুলের নখ প্রায় তার কাঁধের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ব্যাথা মালুম হয়না সারার সেতো বেদের ভালোবাসি কথাটা বলার সাথে সাথে ফ্রিজ হয়ে গেছে।

-“দেখ আমি অন্যদের মতো তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে বা কোনো ফুলের গুচ্ছ দিয়ে রোমান্টিক ভাবে প্রোপোজ করতে পারবো না আমি সোজাসুজি ভাবে একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলছি আর একবারই বলছি আমি তোকে ভালোবাসি তুই শুধু আমার কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। আমার কাছে থেকে এর থেকে ভালো কোনো প্রোপোজ আসা করবি না তুই জানিস আমি কেমন ছোটো থেকেই দেখে আসছিস তাই এমন ভাবেই তোকে আমায় মেনে নিতে হবে আর এই ভাবেই আমাকে তোর ভালোবাসতে হবে। বেদ সারাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তেজি কন্ঠে বলে ওঠে।

-“রসকসহীন ছেলের থেকে এর বেশি আর কি আশা করা যায়। সারা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।

-” আমার কাছে এটাই শুনতে চেয়েছিলিতো, নে শুনিয়ে দিলাম তারমানে বুঝতেই পারছিস আজ থেকে তুই কিন্তু আমার সিল মারা হয়ে গেলি এতদিন যে নাটক করে গেছিস সেটা যেনো আজকেই এই মুহূর্ত থেকে ইতি হয়ে যায়, তোকে যেনো আর কারোর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে না দেখি নাহলে কি হতে পারে সেটা তুই খুব ভালো করে জানিস। বেদ শীতল কন্ঠে ওয়ার্নিং দেওয়ার মতো করে বলে ওঠে।

-“আর হ্যাঁ আমি রসকসহীন ছেলে আপাততঃ এইরকম থাকতে চাই এখন এর থেকে বেশি কিছু নয় অফিসিয়ালি একবার আমার হয়ে যা তখন বুঝিয়ে দেবো আমি কেমন, ওকে বেবি! কথাটা যেনো মাথায় থাকে। বেদ বলে উঠে সারার গালে আলতো কামড় দিয়ে সারাকে ছেড়ে চলে যায়।

সারা এখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেদের বলা কথা গুলো ভেবেই সে একটা শুকনো ঢক গেলে। বেদ যে তার করা কাহিনি ধরে ফেলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই সারার, আসলেই সারা বেদের তার প্রতি এই এক্সট্রা কেয়ার চাল চলন সব কিছুই বন্ধুত্বের থেকেও বেশি অনুভব করে বেদ যে তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু মনে করে সেটা বুঝতে পারে সারা আর তাই সেটা কি জানার জন্যে কয়েকদিন থেকেই শুরু করে তার মিশন আর কেনো বা শুরু করবেনা সারা যতো বেদের মনের কথা জানতে বুঝতে চেষ্টা করত বেদ ততই যেনো আরো বেশি রহস্যময় হয়ে উঠত আর তাইতো বেদের মুখের থেকে আসল কথা বের করার জন্যে এই পরিকল্পনা অফিসের একজন স্টাফের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো যদিও সেটা কাজ নিয়েই আলোচনা করছিলো কিন্তু সেটাতো আর বেদ জানেনা,আর আজকে তো সারা সারিফের বন্ধু ম্যাক্সের সাথে কথা বলছিল আর সেখানে কথা বলার মাঝে ম্যাক্স সারার হাতটা ধরে ছিল ব্যস এতেই বেদের বুকে আগুন লেগে গেছিলো আর তার মনের ভিতরে জমে থাকা কথা গুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটলো আর আজ সে সফল তবে বেদের থেকে এইরকম কিছু আশা করলেও ঠিক এইভাবে আশা করেনি কিন্তু কি করার এই ছেলে এইরকম।

————-

-“স্যার আপনি ঠিক যেমনটা বলেছিলেন তেমনি কাজ হয়ে গেছে। আকাশ সাঁঝের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

-“গুড জব আকাশ। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-“স্যার সেই দিনের সমস্ত ঘটনার সব রেকর্ড আমাদের হাতে চলে এসেছে প্রমাণ সহ, আর ওদিকে ওদের প্ল্যানও রেডি তবে স্যার মিসেস মির্জা আর মিস্টার মেহতা এদের মধ্যেও আরো একটা রহস্য আছে। আকাশ তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

সাঁঝ আকাশের কথা শুনে মাথা তুলে আকাশের দিকে কোনা চোখে তাকায়, সাঁঝের তাকানো দেখে আকাশ বুঝতে পারে সাঁঝ কেনো তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে আর কি জানতে চাইছে তার থেকে তাই আকাশ নিজের হাতের থাকা আরও একটা ফাইল নিয়ে এগিয়ে দেয় সাঁঝের দিকে সাঁঝ একবার তেরছা নজরে তাকিয়ে হাত থেকে ফাইল নিয়ে নেয়। আকাশ বাঁকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে সাঁঝ আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে ফাইল চেক করতে থাকে তবে একটার পর একটা পেইজ চেক করতে করতে সাঁঝের চোখে মুখের প্রতিক্রিয়া পাল্টাতে শুরু করে ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। আকাশও তার স্যারের মুখের হাসি দেখেই বুঝে যায় কি চলছে আর কি হতে চলেছে সামনে।

-” আকাশ সব প্ল্যান রেডি করো সময় হয়ে গেছে। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

-” ইয়েস স্যার। বলে আকাশ রুমের বাইরে চলে যায়।

ব্যস সময় হয়ে এসেছে এবার সব রহস্য থেকে পর্দা উঠতে চলেছে আর আমিও দেখি কিভাবে কি করে চাল উল্টো করে নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে নিতে পারো সাঁঝ রওশনের শিকার থেকে কিভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারিস এতদিনের সমস্ত হিসেব নিকেশ মিটিয়ে নেবো। সাঁঝ বাঁকা হেসে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

—————-

খান বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শান্তা চোখে মুখে ফুটে আছে রাগ ও বিরক্তির ছাপ বারবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর একবার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পর শান্তার সামনে এসে বাইক থামে শান্তা রাগী চোখে তাকাতেই দেখে নিশান মাথায় থেকে হেলমেট খুলে এক হাতে ধরে আরেক হাত দিয়ে কান ধরে ইশারায় স্যরি বলছে কিন্তু এতে কি! শান্তার রাগ এখনও কমেনি সে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন এতক্ষণ তাকে এইভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে আর এখন এসে স্যরি চাইছে এতই সহজ নাকি স্যরি চাওয়া। শান্তা মুখ ফিরিয়ে নেয় সাথে সাথে নিশানের দিকে থেকে।

-“শান্ত, কেনো তুমি অশান্ত হয়ে উঠছ না তুমি না শান্ত। নিশান শান্তাকে মানানোর জন্যে বলে ওঠে।

নিশানের কথা শুনে উদ্দেশ্য বুঝতে বাকি থাকেনা শান্তার ও যে কথার জালে ভুলিয়ে নিতে চাইছে সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা আর।

-” আরে বাবা রাস্তায় জ্যাম ছিল সত্যি বলছি তাইতো দেরি হয়েছে নাহলে আমি কি দেরি করতাম। নিশান আবারও বলে ওঠে।

-” ওই মিস জগড়ুটে বলছিতো স্যরিরে বাবা এইবার তো বাইকে উঠবে আমাদের কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওখানে যেতে দেরি হলে আবার বেলাও ঝাড়বে। নিশান বলে ওঠে।

শান্তা এখনও চুপ হয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে কোনো কথা বলেনা তাঁকে যেমন এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো এখন তেমনি নিজেও কিছুক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকুক তারপর সে যাবে এখন দেখুক এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন মজা লাগে। নিশানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিশান শান্তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তাকে কেমন মুখ ভ্যাঙায় এটা দেখেই নিঃশব্দে হাসে নিশান ।

-“টুসুন বেবি তুমি কি নিজের থেকে বাইকে উঠবে নাকি আমি নেমে কোলে তুলে উঠাবো। বাঁকা হেসে বলে ওঠে নিশান ।

নিশানের কথা শুনে শান্তা কটমট করে তাকায় নিশানের দিকে নিশান বাঁকা হেসে ইশারায় বাইকে বসতে বলে শান্তাকে। রেগে তেড়ে যায় নিশানের দিকে দুম দুম করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়। নিশান হেসে শান্তার হাত ধরে বাইকে বসিয়ে শান্তার হাত নিজের কোমরে জড়িয়ে নিয়ে বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে যায়।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here