শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -১৮+১৯

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_১৮
#Tahmina_Akther

চোখ বুঁজে শুয়ে থাকলেও কোমড় থেকে ধরে পায়ের পাতা পর্যন্ত আমার শরীরের এই অংশগুলো জ্বলে যাচ্ছে,এইটুকু অনুভব আমি করতে পারছি।

যেন কেউ মরিচ বেটে আমার শরীরে মেখে দিয়েছে? তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম যখন সহ্যের সীমা পাড় হয়ে গেল তখন আর না পেরে চিৎকার শুরু করলাম।

আয়াত রুশার বেডের পাশে রাখা ছোট টুলে বসে বসে সেই আগন্তুকের কথা ভাবছিল।আচমকা, রুশার আর্তনাদ ওর কূর্ণ কুহুরে পৌঁছাতে ও রুশার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো, রুশা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। রুশাকে স্বান্তনা দিয়ে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো রুশার ডক্টরের কাছে৷ ডক্টর সাথে নিয়ে এসে দেখলো রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কাজল। রুশা আগের মতো চিৎকার না করলেও কান্না করছে যার দরুন ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।

ডক্টর এসে নার্সকে সাজেস্ট করল রুশাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিতে নয়তো যতক্ষণ জেগে থাকবে ততক্ষণ এভাবে যন্ত্রণায় কাতরাবে।

নার্স রুশার হাতে লাগানো ক্যানোলায় ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিতেই মিনিট দশেক পর ঘুমিয়ে পরে রুশা।

কাজল পুরোটা সময় ধরে রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। রুশা ঘুমিয়ে যাবার পর আয়াতকে জিজ্ঞেস করলো, কিভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেল রুশার সাথে?

আয়াত সব কিছু বললো কাজলকে।সব শুন কাজল শুধুমাত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই রইল না।

এমন সময় কাজলের মোবাইল ভাইব্রেট হতে লাগলো। কাজল ওর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখলো ওর আব্বা কল করেছে। নিজেকে যত সম্ভব স্বাভাবিক রেখে কল রিসিভ করে সালাম প্রদান করলো কাজল। রায়হান সাহেব সালামের উওর নিয়ে কাজলকে বললেন,

-কাজল,রুশা গতকাল রাত থেকে আমার কল রিসিভ করছে না। ওর সাথে কি তোর কথা হয়েছে?

-হ্যা আব্বা, পুতুল তো আমাদের বাড়িতে এসেছে।ও নাকি দশ পনেরোদিন আমাদের এখানে বেড়াবে৷

-কিন্তু, ওর না সামনে পরীক্ষা। ওর কি এখন তোদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াটা কি যুক্তি সংগত?

-আব্বা, চিন্তা করবেন আপনি। জানেন না আপনি আমাদের পুতুল মাশাআল্লাহ অনেক মেধাবী। ওর পরীক্ষা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। ফাহিমা খালা বাড়িতে আছে?

-হ্যা, আছে।

-তাহলে তো ভালোই হলো।আপনি ভালোভাবে খাওয়াদাওয়া করবেন আর ঔষধ সময় মতো খাবেন।রাখছি তাহলে আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম আব্বা।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

কাজল মোবাইল রেখে আয়াতের দিকে তাকাতেই দেখলো আয়াত ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাজল,আয়াতের রাগের কারণ বুঝতে পেরে বললো,

-দেখুন আব্বাকে মিথ্যা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আব্বা কিন্তু রুশাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করেন। আর যতদিন রুশা সুস্থ না হবে ততদিন নাহয় ও আমাদের সাথে থাকবে। পরে আব্বাকে ধীরেসুস্থে রুশার শারীরিক অবস্থা জানিয়ে দিবো।

-কিন্তু, এভাবে মিথ্যা বলাটা উচিত হয় নি তোমার কাজল।

বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো আয়াত। কাজল আয়াতের যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও রুশার দিকে তাকালো। এরপর অচেতন রুশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-তুমি আমার খুব পছন্দের একজন।আমি যত জনকে ভালোবাসি তারা কোনো না কোনোভাবে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে কিন্তু তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেও না পুতুল। তুমি চলে গেলে আমি ছাড়াও কেউ একজন আছে যে খুব করে কাঁদবে কিন্তু তুমি এর কিছুটি জানবে না। কিন্তু, এই কেউ একজন তোমার জীবনে কতখানি জড়িয়ে আছে তা তোমার জানার খুব প্রয়োজন।দোয়া করি তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। এরপর আমি তোমাকে তোমার আমানতের কাছে ফিরিয়ে দেবো।

কিন্তু,একটা কথা কি জানে তুমি না অনেক বোকা রুশা। তোমাকে আমি কেন পুতুল বলে ডাকি একবারও আমাকে প্রশ্ন করো নি?
আমিও তোমাকে নিজ থেকে এই ব্যাপারে আর কিছু বলবো না যতদিন না তুমি আমাকে এই নামে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস না করছো?

——————

-রুশার অভিভাবকের নামে যে ছেলেটা আছে সে সম্পর্কে রুশার কি হয়, জানিস কিছু?

-আসলে আমিও জানি না। ওইদিন,কি প্রয়োজনে যেন কাগজপত্র ঘাঁটছিলাম তখন রুশার এডমিশন ফর্ম আমার হাতে লাগে। কি মনে করে যেন কাগজটি উল্টেপাল্টে দেখলাম আর তখনি অভিভাবকের জায়গায় নুর আহমেদ আয়াত নামটি এবং নাম্বারটি পাই। নাম্বারটি আমার মোবাইলে সেভ করে রাখি। মি.আয়াতের সাথে গতকাল রাতে আমার প্রথম দেখা।কেন, তুই কি মি.আয়াতকে আগে থেকে চিনতিস?

-সে আমার কি পরে জানবি।তবে রুশা কোথায় থাকে আগে এটা জানা জরুরি?

-আচ্ছা, নাজের কাছ থেকে আমি জেনে নিব।আসলে, আদিল তোকে আমার কিছু বলার ছিল?

কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ কন্ঠে বলে উঠলো সুলতানা।

-বল,কি বলবি?

-আসলে, রুশার সি-সেকশনে বেবি হয়েছিল।

সুলতানার মুখে এই কথাটি শুনে আদিল তার হাতে থাকে কফির মগটি টেবিলের উপর রেখে সুলতানার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

-আসলে, আগুনের সংস্পর্শে ওর পেটে কিছুটা আঁচ লাগার কারণে কাটা অংশটিতে ক্ষত হওয়ায় ড্রেসিং করার প্রয়োজন হয়।যে ডক্টর রুশার চিকিৎসা করাচ্ছে সে আবার আমার হবু স্বামীর কাজিন।সে আমাকে জানালো রুশার আগে সি-সেকশনে বেবি হয়েছে। যদি ওর বাচ্চা হয়ে থাকে তবে ওর বাচ্চাটি এখন কার কাছে আছে?

আদিলের বোধহয় সুলতানার কোনো কথা কান অব্দি পৌঁছায়নি।সে রেস্টুরেন্ট এর কাঁচের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। সুলতানা আদিলের মনোভাব বুঝতে পারল খানিকটা।

-আদিল?

সুলতানার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো আদিলের। সুলতানার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

-আদিল,কিছু বলছিস না যে?নাকি রুশার বাচ্চা আছে শুনে তোর ওর প্রতি ঝোঁক কমে গিয়েছে?

-সুলতানা,তুই নিবার্ণকে কতটা ভালোবাসিস?

-যতটা ভালোবাসলে এই পৃথিবীর সকল দুঃখকে তুচ্ছ মনে হয়!

-আমি আমার মাধুর্যকে ভলোবাসি,রুশাকে নয়। সেই মাধুর্যকে যেই কিশোরীর কান্নামাখা মুখ আমার কাঠখোট্টা হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টির পরশ মেখেছে।
যাকে কিশোরী থেকে যৌবনে পা দেয়া অব্দি তাকে আমার নজরে বন্দি রেখেছি। তাকে আমি এক দেখায় ভালোবাসিনি তার প্রতি আমার হৃদয় কাননে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে। তাকে যদি আমার মনের কথা জানাতাম সে হয়তো আজ আমার ঠিক এই পাশের চেয়ারটায় বসে আমার প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শুনতো। কিন্ত,সে আমার হয় নি। সে হয়েছে অন্যের ঘরের জায়া।

-কিন্তু, আদিল?

-তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমি জানি!এতগুলো বছরে তার জীবনে কি ঘটেছে তার সম্পর্কে আমি অবগত নই।
আমি জানতেও চাই না তার জীবনে কি এমন ঘটেছে যে তার স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে? আর রইল বাচ্চার কথা রুশা সুস্থ হলে ওর কাছে থেকে তুই জেনে নিবি। কিন্তু, একটা কথা মনে রাখিস সুলতানা, ও আমার মাধুর্য। তাকে এমনভাবে কোনো প্রশ্ন করবি না যাতে সে তার জীবনের অবস্থান নিয়ে বিব্রতবোধ করে।

-আদিল, তুই আমার ফ্রেন্ড এটা ভাবতে আমার গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায়। দোয়া করি দোস্ত তুই জলদি সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে যা। আর কতদিন এভাবে দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবি বয়স তো আর কম হলো না, বুড়ো হয়ে যাচ্ছিস।

-হ্যা, আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। তোর আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না এখন। তুই বাড়িতে ফিরে যা আর কতক্ষণ এভাবে হলুদ শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ঘুরে বেড়াবি?তোর না আজ বিয়ে?

-আচ্ছা, আমি আসি তাহলে। তুইও বাড়িতে চলে যা। আমি রুশার ব্যাপারে ডক্টরের সাথে কথা বলে আসি সাথে মি.আয়াতের সাথেও।

-হুম।

সুলতানা চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যাচ্ছিল কিন্তু কি মনে করে আবারও আদিলের কাছে ফিরে এলো।
আদিল সুলতানাকে আবারও ফিরে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

-কি হয়েছে?

-একটি কথা মনের মাঝে আন্দোলন করছে যতক্ষণ না পর্যন্ত এর সঠিক উত্তর না পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি পাবো না বোধহয়।

-বল কি জানতে চাস?

-তুই তো রুশাকে ভালোবাসিস আর তাকে তোর জীবনের একাংশে স্থান দিতে চাইছিস। কিন্তু,আদিল রহমানের প্রস্তাব রুশা হাসান নাকচ করে দেয় তখন কি করবে আদিল রহমান?

সুলতানার কথা শুনে আদিলের কপালে চিন্তার ভাজ ভেসে উঠলো।

এই ভাবে তে ভেবে দেখেনি আদিল।আসলেই তো রুশা যদি ওকে মেনে না নেয়?
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_১৯
#Tahmina_Akhter

দেখতে দেখতে কেটে গেলো চারমাস।রুশার সুস্থ হতে প্রায় দু’মাস লেগেছিল।কাজল আর আয়াতের সেবায় খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থতা কাটিয়ে পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রিপ্রেয়ার্ড করতে পেরেছিল রুশা।কাজল আর আয়াত রুশাকে দেখাশোনা করার জন্য আবারও কুঞ্জ বাড়িতে শিফট হয়েছে।

রায়হান সাহেব তো ক্ষণে ক্ষণে রুশাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন,

-এখন কেমন লাগছে মা, তোর?ইশশ,তোর এই শরীরী যন্ত্রণার অর্ধেক যদি তোর এই বুড়ো বাবাটাকে দিতে পারতি তাহলে তোর যন্ত্রণা একটুও হলেও কমে যেতো।

রায়হান সাহেবের এমন ব্যাকুলতা আয়াত,কাজল আর রুশা হাসিমুখে তাকিয়ে দেখতো।

—————-

আজ এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল প্রফ শেষ হলো।নাজ আর রুশা হাসিমুখে এক্সাম হল থেকে বের হলো।যখন ওরা দুই বান্ধবী রিকশায় উঠবে ঠিক এমন সময় কে যেন নাজের নাম ধরে বার দুয়েক ডাক দিলো।নাজ আর রুশার সেই কন্ঠের অনুসরণ করতে গিয়ে দেখে দূর থেকে মিসবাহ ওদের হাত নেড়ে ডাক দিচ্ছে। রুশা আর নাজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিসবাহর কাছে এগিয়ে গেলো।
মিসবাহর সামনে গিয়ে নাজ জিজ্ঞেস করেলো,

-কি হয়েছে,আমাকে ডাক দিয়েছ কেন?

নাজের এমন প্রশ্ন শুনে মুচকি মিসবাহ এক ঢোক গিললো এরপর কপালের চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে বললো,

-আসলে,তোমাদের দু’জনের সাথে আমার কিছু কথা ছিল একটু সময় নিয়ে শুনবে আমার কথা?

রুশা বেশ অবাক হলো মিসবাহর কথা শুনে কারণ ওদের সাথে মতো মিসবাহর তেমন সখ্যতা নেই। তাহলে, এভাবে ডেকে এনে কি কথা বলতে চায় সে?
মিসবাহর চোখের আড়ালে নাজ রুশার পেটে কনুই দিয়ে হালকা গুঁতো দিয়ে ইশারা করলো,ও যাবে কি না?

রুশা হ্যা সূচক মাথা নাড়াতেই মিসবাহ একগাল হেসে বললো,

-চলো, তাহলে পাশে একটি রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে যেয়ে বসে কথা বলি।

মিসবাহ আজ সাথে করে কার নিয়ে এসেছে।কারে উঠতে ওদের দু’জনকে ইশারা করল মিসবাহ। নাজ আর রুশা বসতেই মিসবাহ ড্রাইভিং সিটে বসে কার চালানো শুরু করলো।

———————

-আদিল,একটা কথা বলি?

আদিলকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল সুলতানা।

আদিল ওর হাতের ট্র্যাভেল ব্যাগ একপাশে রেখে চোখের সানগ্লাসটি খুলে ড্রেসিংটেবিলের উপরে রেখে পায়ের জুতো জোড়া খুললো।
এরপর,সোফায় বেশ আয়েশ করে বসে সুলাতানাকে ইশারা করলো যেন কি বলবে বলুক ও শুনছে?

-তুই নাকি আবারও শিশু হসপাতালে জয়েন করেছিস?

-হ্যা, যদি জয়েন না করতাম তবে কি তোর বাড়িতে আমি আসতাম নাকি?

-আমি কিন্তু বেশ রাগ করেছি তোর সাথে। মানে তুই চারমাস ধরে এইভাবে খাটুনি খেটেছিস এই হসপিটালে জয়েন হওয়ার জন্য আর আমি কি না একটিবারও জানলাম না!

-আসলে,তোদেরকে সারপ্রাইজড করতে চেয়েছিলাম তাই বলিনি। তোর সংসারটা বেশ সাজানো গুছানো আই লাইক ইট। তবে নির্বাণ কোথায়?

-সে আবারও দু’মাসের জন্য কানাডায় গিয়েছে ব্যবসায়িক কাজে।

-বছরের ছয়মাস তাহলে বাইরে থাকেন উনি। তোর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বেশ অমায়িক মানুষ।

-হুম, অনেক ফ্রেন্ডলি।

-সুলতানা?

-হুম,বল আদিল?

-আমার মাধুর্য কেমন আছে রে?

সুলতানা আদিলের প্রশ্নটি শুনে ওর মুখের দিকে তাকালো। এই মুখটি এতক্ষণ বেশ হাসোজ্জল ছিল কিন্তু এখন এই মুখটি এখন বেশ অচেনা মনে হচ্ছে।যেন উনার সে ভালো আছে শুনলে আঁধার কালো মুখটি সকালের প্রথম কিরণে ন্যায় ঝলমলিয়ে উঠবে।

-তোর মাধুর্য ভীষণ ভালো আছে।তবে একটি কথা তোকে জানানো হয়নি।

চোখ বন্ধ করেই রুশার সাথে তার শেষ সাক্ষাতের সেই স্মৃতি মনে করতে লাগল আদিল।খোলা এলোমেলো চুল, যন্ত্রণায় কাতর একটি ভঙ্গুর দেহের কান্নামাখা মুখ।শরীরে কোথাও কাঁটা গেথে গেলে যেমন যন্ত্রণা অনুভব হয় সেই সময়টুক ছিল ঠিক তেমন। এখনও সেই কান্নামাখা মুখখানি মনে পড়লে একই যন্ত্রণা অনুভব হয় বুকের মাঝে।

সুলতানার কাছে তার মাধুর্য ভালো আছে শুনতেই হৃদয়ে এক প্রশান্তির বাতাস ছুঁয়ে গেল আদিলের।
কিন্ত,সুলতানার শেষের বাক্যটি শুনে আদিল চোখ খুলে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।

-আসলে,মিসবাহ আজ আমার কাছে একটি হেল্পের জন্য এসেছিল।

-মিসবাহ তোর কাছে হ্যাল্পের জন্য আসতেই পারে কারণ সে তোর স্টুডেন্ট।

মনে মনে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো আদিল সে ভেবেছিল রুশার ব্যাপারে কিছু হয়তো!

-আসলে, কি ভাবে বলি তোকে কথাটি? মিসবাহ রুশাকে আজ তিনবছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু রুশাকে বলতে পারছে না তাই আমার থেকে রুশার বাড়ির ঠিকানা নিয়েছে যাতে মিসবাহর পরিবার ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারে।

সুলতানা বেশ ভয় ভয় নিয়ে কথাগুলো শেষ করল।কথা শেষ হতেই আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল আদিল কি ভাবছে?কিন্তু, বরাবরের মতো ব্যর্থ হলো সুলতানা কারণ আদিলের মনে কি চলে সে ছাড়া আর কেউ অনুমান করতে পারবে না।

-কি রে কিছু বলছিস না কেন?

-তোর কথা শেষ হলে এখন এই রুম থেকে চলে যা। আমি এখন ঘুমাব বেশ রাত হয়েছে কাল সকালে হসপিটালে জয়েন দিতে হবে।

-ওকে, আমি চলে যাচ্ছি।

বলেই সুলতানা অবাক চেহারা নিয়ে আদিলের রুম থেকে বের হয়ে এলো। এরই মাঝে সুলতানার মোবাইলে কল করল ওর স্বামী নির্বাণ। সুলতানা কল রিসিভ করে নির্বাণকে আদিলের নতুন করে হসপিটালের জয়েনসহ সব কিছু বলল।সব শুনে নির্বাণ হেসে বলল,

-তোমার বন্ধু আদিল কিন্তু বেশ সিক্রেট পার্সন। তাই ওর কথা ভেবে তোমার মাথা খাটানোর প্রয়োজন নেই। সময় হলে বুঝতে পারবে ও কি করবে?

সুলতানা নিবার্ণের কথা শুনে হেসে ফেললো।এরপর, ওরা নিজেদের ব্যাপারে কথা বলতে লাগল।

——————

-মিসবাহ,তোমার সব কথা আমি বেশ মনোযোগ সহকারে শুনলাম। কিন্তু,তোমার কথাগুলো শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে তুমি শুধু শুধু আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত আবেগি হয়ে এরকম করছো।

-রুশা, আমার তোমার প্রতি ভালোবাসাকে তুমি আবেগি নাম দিতে পারো না। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি তাছাড়া আমি তোমার সাথে আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই।

-মিসবাহ,তুমি জানো যে,আমি ডির্ভোসি এবং এতিম। কিন্তু, এছাড়াও একটি কথা আছে যা তুমি জানো না।

-আমি জানি রুশা। তুমি একটি মৃত মেয়ে বাচ্চাকে জন্ম দিয়েছিলে।কিন্তু,আমি তো তোমার এইসব ব্যাপারে ফোকাস করতে চাইছি না। তুমি বারবার পুরনো ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসছো আমাদের মাঝে।

রুশা মিসবাহকে বুঝাতে না পেরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।রুশাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে নাজ আর মিসবাহ দাঁড়িয়ে পড়লো। রুশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মিসবাহ ওর হাত টেনে ধরল।রুশা ওর হাতে বাঁধা পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল মিসবাহ ওর হাত ধরে রেখেছে।
রাগে ওর শরীর কাঁপতে লাগল তারপরও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে মিসবাহর হাতে থেকে ওর হাত সরিয়ে বললো,

-মিসবাহ, একটি মেয়েকে স্পর্শ করার আগে অনুমতি নিয়ে নিবে আচমকা কেউ তাদের শরীরে টাচ করুক ওদের কাছে এই বিষয়টি ভীষণ লজ্জাজনক।

রুশার মুখে এই কথাগুলো শুনে ভীষণ লজ্জিতবোধ করল মিসবাহ। তবুও, নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রুশাকে অনুরোধ করল চেয়ারে বসার জন্য। রুশাও বেশ বিরক্ত মিসবাহ কান্ডে।আর নাজ বসে বসে ওদের কথাগুলো শুনছে আর কোল্ড কফি খাচ্ছে। রুশা একরাশ বিরক্তি নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল।

-আমি কি করলে তুমি আমাকে মেনে নিবে রুশা? একটিবার বলে দেখো,আমি সব করতে রাজি আছি বিকজ আই’ম সিরিয়াস।

-ভালোবাসা কি এবং কেন মানুষের মাঝে এই ভালোবাসার অনুভূতির খেলা বেশি? যদি এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারো তবে রুশা তোমার প্রস্তাবে রাজি হবে। তাই না,রুশা?

কথাগুলো বলে কফির মগে এক চুমুক দিলো নাজ। নাজের এহেন কথা শুনে রুশা যেন সাত আসমান থেকে জমিনে আছড়ে পড়লো। আর মিসবাহ চিন্তিত ভঙ্গিতে হেসে তাকিয়ে রইল রুশার দিকে।

রুশা নাজের কথা শুনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল।নাজ ওর পিছু পিছু যেতে চাইলেও রুশার চোখ রাঙানো দেখে ওর সাথে যাওয়ার সাহস হয়নি নাজের।

নাজ মনে মনে ভাবছে কি এমন বলল সে যে তার প্রাণের বান্ধবী এভাবে রাগ করে চলে গেলো!

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here