গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ৭
লিখাঃ Shakil
~
~
~
— ঐ দিনের মত মিতুকে ঠাশশশ করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। আজ আর ও ঐ দিনের মত আমার সাথে মারামরি না করে ও বসিয়ে দিলো এক চিৎকার
—- ওর এক চিৎকারে পুরো বাড়ি যেনো কেঁপে উঠলো,, আমি ভয় পেয়ে মিতুর মুখটা চেপে ধরলাম। এটা তুমি কি করলে মিতু??
— ভাইয়া- আপু এসে দরজার ঠকঠক করতে লাগলো।
কি হয়েছে ভাই দরজা খুল। আবির দরজা খুলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনাহ। অবশেষে মিতুর মুখ ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেলাম।
— দরজা খুলে মিতুর দিকে তাকাতে দেখলাম,, এই কয়েক সেকেন্ডে ও ওর চুলগুলো এলেমেলো করে ফেলেছে,, ওড়নাটিও মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। ভাইয়া- আপু রুমে প্রবেশ করতেই মিতু গিয়ে মাসুদ ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে কান্নার নাট ক শুরু করে দিলো।
—– ভাইয়া আবির আমাকে জোর করে,,, আমি রাজি হয়নি দেখে এই দেখ চড় মেরেছে (গালটি দেখিয়ে)
—– ছিঃ আবির এগুলো কী,, আমাকে মারতে গেলে আপু ধরে ফেলেন মাসুদ ভাইয়াকে। আপুকে ঝাটকানি মেরে ফেলে দিয়ে আমার কাছে মারতে এসেই হঠাৎ থেমে গিয়ে বলেন,, তুমি এখনি এই বাড়ি হতে বের হয়ে যাবা৷ নইলে আমি তোমার গায়ে হাত উঠাতে বাধ্য হবো। ভুলে যাবো তুমি আমার সালাবাবু।
—- আমি চলে আসছি আর ভাবছি আজ মিতু মাসুদ ভাইয়ার কাছে সত্যিই আমাকে খারাপ প্রমান করেই ছাড়লো। আমার জন্য আপুকে মাসুদ ভাইয়ার কত কথাই না এখন শুনতে হবে। এসব কি হয়ে গেলো,,,!!
—- মিতুর এ কেমন ভালোবাসা বুজলাম নাহ,,একটু আগেই বললো আমি নাকি অমূল্যসম্পদ যা এতদিন ওর হাতের কাছেই ছিলো। আর এখন কী চাল দিলো যে ও বাড়িতে যাওয়ার আমার আর মুখটা রইলো নাহ।
—– বাসায় আসলাম। কিছুই ভালে লাগছে নাহ। আজ চারদিন ওয়ার্কশপের মানুষদের কাজে আসলে ঘুরিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আপুর সাথে কোন কথা নেই।
—- মিতু আসলেই আমার জীবন টাকে বিষিয়ে দিচ্ছে। ওর ভালোর জন্যই ঐ দিন পার্কে ওর সাথে ওমনটা করেছিলাম,, ও আমাকে জেলে দিলো তবুও আমার কোন রাগ হয়নি ওর ওপরে। ইচ্ছে করেনি ওর ওপরে কোন প্রতিশোধ নিতে।
—- পাঁচদিনের দিন দেখলাম আপু বিটকেস নিয়ে বাসায় এলো। আপু কি হয়েছে তোর??
ভাই তুই আসার পর থেকে উনার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হতো মিতুকে নিয়ে।
—- কালরাতে ওর সাথে অনেক ঝগড়া হয়। রাতেই আমাকে বাড়ি হতে বাহির করে দিয়েছিলো। কিন্তু ওত রাত কোথায় যাবো তাই বাড়ির বাইরেই রাতটা কাটিয়ে আজকে চলে আসলাম।
—– আমার আর সহ্য হলো নাহ। মিতু আজ শুধু আমার নই আমার আপুর জীবনটাও নিয়ে খেলেছে। এবার ওকে দাঁতভাঙা জবাব না দিলেই নয়। আমি রাগে কটমট করে যাবো কি,,
—- না ভাই,, তুই কিছু করলে আমার সংসারটা পুরো ভেঙ্গে যাবে। আমরা বরং ধৈর্য্য ধরি। উনার রাগ কমলে সব ঠীক হয়ে যাবে।
—- আমি থেমে গেলাম। এখানে তো মাসুদ ভাইয়ের কোন দোষ নেই। নিজের বোন যদি নাটক করে বা ভাই শুনে অন্য তার বোনকে কেউ রেপ করতে চেয়েছে তাহলে সে কী চুপ করে থাকবে,,, থাকবে নাহ।
—- যা দোষ সব মিতুর। মিতুর সাহস ও অহংকার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমি ওকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।
— আপু অনেক কান্না করলো। আমি কি বলে শান্তনা দিবো বুজলাম নাহ।
দুইদিন হলে আবার আমি ও আপু ওয়ার্কশপে পুনরায় কাজ শুরু করে দিলাম।
—-খুব ভালই চলছিলো। কিন্তু প্রতিদিন আপুর কান্না আমার ভালো লাগতো নাহ।
—– দশদিন,,, মাসুদ ভাইকে আপু ফোন করেই চলে উনি ধরে নাহ। এভাবে আরও বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো। আমি ও আপু পথ চেয়ে বসে থাকলাম কবে মাসুদ ভাই এসে আমার আপুকে নিয়ে যাবে। কিন্তু উনি আসলেন ই নাহ।
—- এরই মধ্যে আমার কলেজে ভর্তি ডেট চলে আসলো,, কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। কিন্তু আমি কলেজ শুধু ভর্তির দিন ছাড়া যাই নি।
—- ভাই চল আজকে আব্বুকে দেখে আসি৷ উনি আমাদের পিতা,,, ভুল করেই ফেলেছেন। এখন উনি যথেষ্ট সাজা পেয়েছেন। আজ উনি আমাদের মতই এতিম। তুই আমি ছাড়া উনাকে জেলে দেখতে যাওয়ার মতো কেউ নেই।
— আব্বুকে দেখতে যাওয়ার কোন ইচ্ছায় নেই আমার৷ কিন্তু আব্বুকে দেখতে গেলে মাসুদ ভাইয়ার সাথে আপুর দেখা হবে ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম৷
—- কিছু খাবার কিনে নিয়ে আপুর সাথে রওনা দিয়ে দিলাম। থানায় পৌঁছে ১৫ মিনিট ধরে বসে আছি মাসুদ ভাই থানায় নেই। উনার অনুমতি ছাড়া আবৃবুর সাথে কেউ দেখা করতে পারবেন নাহ৷ আপু মাসুদ ভাইয়ের বউ বললেও আমাদের দেখা করার পারমিশন দিলো নাহ৷
—- আমি আপু খাবার গুলো নিয়ে বসে থাকলাম। একটু পর মিতুর বান্ধবীর(অনুর বাবা) বাবা থানার এস আই এসে আমাদের পারমিশন দিয়ে দিলো।
—- আপু আব্বুর কাছে গিয়েই কান্না আরম্ভ করে দিলো৷ আমি একটু দুরে অন্যমুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মা ওকে একটু কাছে আসতে বলনা৷
— ভাই এদিকে আয় আব্বু ডাকছে৷ আমি তবুও গেলাম নাহ। আপু আবারো ডাকলো। এবার গেলাম কাছে যেতে আব্বু দুই হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে যাবে কি আপু উনার হাতটি ধরে ফেললো।
—– না আব্বু নাহ,, তুমি পিতা হয়ে সন্তানের নিকট এভাবে হাত- জোর করতে পারো নাহ৷
—– উনি এবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন বাবা ভালো থাকিস। আর যদি পারিস আমায় মাফ করে দিস। আপু আব্বুকে খাইয়ে দিলো। একজন এসে জানালো সময় শেষ এবার আপনারা আসুন।
— অনুর আব্বু আমাদের বললো উনার আর এক সপ্তাহ পর জামিন হবে। আমি আর আপু থানা হতে বের হয়ে আসতেই গাড়ি করে মাসুদ ভাই আসলেন। আপু ভাইকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। কথা তো দুরেই থাক ভাই আপুকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো।
—- আপু আর আমি বাসায় চলে আসলাম। রাতে ঘুমাতে গিয়ে সত্যিই আমার মনে হচ্ছে আব্বু আজ আসলেই আমাদের মত এতিম। উনি না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছেন। আমার উচিৎ উনাকে মাফ করে দেওয়া। বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
—- এক সপ্তাহ পর আপু আমাকে না বলেই বাসা হতে বের হয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে আমি ডাক দিয়ে কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে আপু আমাকে কিছু বলে নাহ।
—- দুই ঘন্টা পর দেখছি আপু ও আব্বু বাসায় আসলো। আমি গিয়ে আব্বুর হাত চেপে ধরে ক্ষমা চাইলাম। উনিও আমাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েচিস তো। আব্বু এগুলো কি বলো।
—– আজ মনে হচ্ছে আমি এতিম থেকে সব কিছুই যেনো আবার ফিরে পেলাম। কিম্তু মাঝখান হতে আমার আপুর সংসার টা ভেঙ্গে যেতে বসেছে। জানিনা মাসুদ ভাই আপুকে উনার বাসায় আবার ঠাঁই দিবে কিনা।
—– আপু বললো ভাই এখন হতে আমি আর আব্বু ওয়ার্কশপের কাজগুলো দেখবো তুই কলেজ যাহ। শুধু ভর্তি ছাড়া একদিনও কলেজ যাস নাই তুই। কাল থেকে কলেজ যাহ তুই।
—- আচ্ছা,,,
পরেরদিন কলেজ গিয়ে ক্লাসে বসে আছি। একটু পর মিতু ও অনু দজনকেই একসাথে ক্লাসে ঢুকতে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ভাবছি অনু না হয় আমার সাথেই পড়তো ও এই কলেজে ভর্তি হয়ে আমার সাথে পড়তেই পারে কিন্তু মিতু কেন এই কলেজে এসেছে। একটু পর স্যার
—- ক্লাসে আসলেন,, নাম কল করলে মিতু পেজেন্টও করলো। আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম মিতু ফেল পড়ে কিভাবে আবার আমার সাথে পড়তে পারে….
—– স্যার চলে গেলে অনু এসে আমার কাছে বসে গল্প করতে লাগলো। মিতুর তা দেখে সহ্য হলো না ও বাহিরে চলে গেলো।
—– সব ক্লাস শেষে অনু ওর গাড়িতে আমাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিলো। আমি এবার নেমে বাসায় যাচ্ছি আর ভাবছি,,,
—- এবার ভালো হবে মিতু তোর ভাই পুলিশ আর অনুর বাবা এস আই
তুই কার কাছে কমপ্লিন করিস তাই দেখবো। অনু সাথে ভালো বন্ধুত্ব করে ওর বাবা অবদি পৌঁছে তোর লাকে মুখে দঁড়ি দিয়ে ঘুরাবো
..
..
..
চলবে??
..
(গল্পটি আপনাদের যদি ভালো লাগে
তাহলে ছোট্ট করে একটা কমেন্ট করে
জানিয়ে দিবেন)