গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ১৫

0
2162

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১৫
লেখাঃ Shakil
~
~
~
— মাসুদ ভাইয়া অনুকে বিয়ে করবে,, এটা আমি কী শুনলাম ….!
মাসুদ ভাইয়ার ভিতরের রুপ টা এমন সত্যিই ভাবাই যায় নাহ..ছিঃ।
—- ওয়াসরুম হতে চলে এসে আব্বু ও মাকে বললাম আমার একটু দরকারে বাইরে যাচ্ছি। একটুপর ফিরবো বলে চলে আসলাম।
— আপুর সুখের সংসারে
একমাত্র আমার জন্যই আগুন লেগেছে। সংসারটি ভেঙ্গে গেলেও আপু এখনো মাসুদ ভাইয়াকে ডিভোর্স দেই নি। পথ চেয়ে বসে আছেন মাসুদ ভাইয়ার। উনি কবে যেনো এসে ওকে নিয়ে যাবে।
—- আমি জানি আপু মাসুদ ভাইয়াকে কতটা ভালোবাসে। মাসুদ ভাইয়ার থেকে আপু দুরে আছে ঠীকই কিন্তু আমার মনে হয় না মাসুদ ভাইয়ার প্রতি আপুর ভালাবাসা একটুও কমে গিয়েছে। বরং আজও দেখি আপু মাঝে মাঝে উনার জন্য কাঁদে।
—- আজ যদি মাসুদ ভাইয়া অনুকে বিয়ে করে নেই আপু তাহলে সত্যিই পাগল হয়ে যাবে। আপু এই কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারবে নাহ।
—- নাহ এ হতে পারে নাহ আমার জীবন থাকতে আমি এটা হতে দিবো নাহ। প্রয়োজনে মিতুর পায়ে ধড়বো ও যেনো মাসুদ ভাইয়াকে সব সত্যি কথা খুলে বলে। তবুও আমি এটা হতে দিবো নাহ।
—– অনুকে ফোন করে আসতে বললাম। আমি হন্য হয়ে দৌঁড়ে গেলাম।
অনু দেখি আমার আগে গিয়ে বসে থেকে বাদাম খাচ্ছে।
—- অনু তুমি ফোনে এগুলো কী বললে তা আসলেই কী সত্যি ..??
হুম সত্যিই (অনু)
নাহ এ হতে পারে না । এটা কোনদিনও হতে পারে নাহ। তুমি মাসুদ ভাইয়াকে কোনদিনও বিয়ে করতে পারো নাহ। আমি তোমায় মাসুদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে দিবো নাহ । কোনদিনও নাহ।
—– অনু কিছু না বলে ও একটা মুচকি হাসি দিলো ।
অনু হাসছে কেনো আমি বুজলাম নাহ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
অনু এবার বললো…
এত ভালোবাসো আমায় এতদিন বলো নাই যে,,,??
আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো
তাই আজ পরীক্ষা করতেই আমি এসব বলেছি। আমি কেন মাসুদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে যাবো ?? আবির প্লিজ.. আমি চাই তুমি ঐ তিনটি ওয়ার্ড সর্বপ্রথম তোমার মুখ দিয়ে আমাকে বলবে। বলো প্লিজ…..
—- আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম নাহ পরপর অনুর গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম…
ঠাশশশশশ ঠাশশশশশ
ভালোবাসা কখনো পরীক্ষা দিয়ে হয় নাহ। কাউকে বিশ্বাস করতে হলে তার বিশ্বাসকে ভরসা করতে হয়। ভালোবাসার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তুমি এতোটা নিচ হবে এমন উপায় বেছে নিবে ছিঃ অনু আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।
—- সেফ এইটুকু থেকে আপু আমায় কোলে পিঠে বাবা-মায়ের আদরে বড় করেছেন। আর তুমি কিনা পরীক্ষা হিসেবে
আমার আপুর ভালোবাসা টাকেই বেছে নিলে।
— আর শুনে রাখো
” মাসুদ ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হতে পারে নাহ”… এই কথাটি তোমাকে ভালোবেসে নয় আমার আপুর সংসার আর তার সন্তানের ভবিষ্যৎ কথা মাথায় রেখেই বলেছি। আমি তোমায় ভালোবাসি নাহ। তোমার মত মেয়েকে ভালবাসাও পাপ।
— আমার রাস্তায় আর কোনদিন আসবে নাহ। বলে আমি বাসায় চলে আসলাম।
আসলে মেয়েরা যে নিজেদের কী ভাবে । এতটা নিচ মনোভাব হবে অনুর ভাবিনাই।
— বাসায় এসে দেখি হাসপাতাল হতে বাসায় এখনো কেউ ফিরে নাই। আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে রইলাম। একটুপর সবাই আসলো। আমি গিয়ে আমার ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলাম।
—- অনেক কিউট ও মায়াবী দেখতে আমার ভাগ্নে।
এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো অনু একটিবারের জন্যও আমায় ফোন করলো নাহ । আমিও ওকে ফোন দেই নি। হয়তো কোনদিনও দিবো ও নাহ।
একদিন আব্বুকে ডেকে বললাম আব্বু… আমাদের এই সম্পদ আছে বলে আমরা এভাবে বসে থাকলে
এক সময় সবটা ফুরিয়ে যাবে। তাই আমি আর লেখাপড়া করবো নাহ। এবার বিজিনেস জগতে পা রাখবো।
—- আব্বু আমাকে বললো আচ্ছা ঠীক আছে ।
পুরনো ছোট্ট ওয়ার্কশপটি এবার বৃহদায়তন এ পরিণত করলাম। যে গার্মেন্টস এ আমার আপু কাজ করতো ঐ গার্মেন্টস টাকেই কিনে বসলাম ।
——- মাঝখানে মায়ের সাথে কিছু মন মালিণ্য হলেও অবশেষে আমি রাজি হয়ে গেলাম সবার ইচ্ছায় ,,,
একদিন মা বলে বসলো..
বাবা এই বাসা তো আমরা পরিবর্তন করতে পারি। তোমার নানার বাসা টিতে কেউ নেই খালি পড়ে আছে। আমরা তো ওখানে থাকতে পারি,,।
— সবাই ঐ বাসায় থাকলেও আমি থাকতে পারবো নাহ আমি তা মাকে সাফ জানিয়ে দেই। এই নিয়েই মায়ের সাথে মূলত কিছুটা মনমালিন্য হয়। কিন্তুু আজ আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
— এই ছোট্ট বাসাটি ভাড়াটে করে দিয়ে নানার বাসায় পাড়ি জমালাম। আজ আমার জীবনের সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে সারাদিন অফিস করে বাসায় এসে ভাগ্নের সাথে আনন্দ দুষ্টমিতে মেতে উঠতাম।
—-আজ আমার নামটি দেশের নামকরা স্বল্পবয়সী বিজিনেস ম্যানের মধ্যে যোগ হয়েছে।
বাড়ি গাড়ি এমন কী নামের সাথে অফিসের কর্মকতারা (চৌধুরী) যোগ করে ডাকেন।
—- দীর্ঘ একবছর পেরিয়ে গিয়েছে। মাসুদ ভাইয়া মিতু বা অনু কারো সাথে আমার আর এই একটি বছরের কোনদিনও দেখা হয় নি। আমি দেখা করার চেষ্টাও করি নি।
—- সমাজের যেখানেই টাকার অভাবে এতিম দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাই সেখানেই আমার হাতটা বাড়িয়ে দেই। কেননা আমি ও জীবনের এক পর্যায়ে ওদের মত এতিম ছিলাম।
—- এরই সুবাদে আমি যে কলেজে পড়তাম সে কলেজে প্রধান অতিথি হয়ে এক অনুষ্ঠানে ডাক পেলাম।
সমাজের হত দরিদ্র ও এতিম মানুষদের সাহায্যে করার জন্য কলেজে একটা ক্লাব খুলবে মূলত তার জন্যই অনুষ্ঠানের আয়োজনটা করা হয়েছে।
— আমি ওদের ডাকে সাড়া দিলাম । এবং যাবো বলে জানিয়ে দিলাম।
ভাবতেও যেনো অবাক লাগছে। মানুষের ভাগ্যে কি লিখা আছে তা আসলে বলা অনেক কষ্ট।
— আজ যে কলেজে পড়তাম একসময় সে কলেজেরই এক অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি হয়ে যাচ্ছি।
— আমার ভাগ্নে কে সাথে নিয়ে যাবো বলে ভাবলাম। এই একবছরে যতটা পরিবর্তন হয়েছি সব পরিবর্তন বদলিয়ে আগের মতই এতিম ও গরিব বেশ ধরলাম । আমার ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে ভাড়াই চালিত গাড়ি করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে গেলাম।
— একটু সামনের দিকে গিয়ে চেয়ারে বসে ভাগ্নে কে নিয়ে বসে থেকে বাদাম খাচ্ছি। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কেননা আমি অনার্স ২য় বর্ষে উঠার পর পড়ালেখা বাদ দিয়েছি আর একবছর হলো পড়ালেখা বাদ দেওয়ার সেই হিসাব মতে অনুর আজ এই কলেজেই ৩য় বর্ষে পড়ালেখা করার কথা। কিন্তু অনুকে দেখছি নাহ।
— আমার পাশে থাকা দুই ভদ্রলোক রা গল্প করছিলো,,,
প্রিন্সিপাল স্যারকে কতবার বললাম আবির চৌধুরীর মত মানুষ কে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি না করতে।
— উনি শুনলেন ই নাহ আমাদের কথা ।
উনার মত মানুষ কী এসব অনুষ্ঠানে আসবেন নাকী,,?? এবং এই ক্লাবে কী স্পনসোর করবেন কখনো,,?? কখনই করবেন নাহ। এবার বুজুক ঠ্যালা অনুষ্ঠান আয়োজনের সব লক্ষ্যটাই বৃথা গেলো।
—- মাঝখান থেকে শুধু শুধু এতগুলো টাকা নষ্ট হয়ে গেলো। আর মাত্র ৫মিনিট সময় অনুষ্টান বাকির এখনো প্রধান অতিথি আবির চৌধুরী আসে নাই। ফোন দিলে ফোনও ধরছেন নাহ।
— আসলে সবার কি প্রতিক্রিয়া আমার বিষয়ে সেটা শুনতেই আমি এভাবে এখানে উপস্থিত হয়েছি।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো..
— দুইটি মেয়ে স্টেজে উঠলো… দেখতে দুজন কেই বেশ সুন্দর লাগছে। ওরা মাউথপিচ নিয়ে বললো,,
আজকে এই অনুষ্ঠান টি আমরা দুইজন উপাস্থাপনা করছি আমি অনু
আর আমি মিতু।
— তার মানে এরা দুজনে অনু ও মিতু আরে বাহ মেকাপে দেখছি দুজনকে চিনতে পারাই দায়।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো মামা ভাগ্নে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে লাগলাম । একটু পরপর আমার ভাগ্নে কান্না করছিলো তাই পাশে বসে থাকা ঐ ভদ্রলোক স্যার দুজন বলে বসলো,,
—- এই টুকু বাচ্চা নিয়ে কেউ অনুষ্ঠান দেখতে আসে। নিজেও দেখবে নাহ আবার আমাদের ও দেখতে দিবে নাহ। এক স্যার বললো কি ব্যাপার তোমাকে এই কলেজেরই ছাত্র মনে হচ্ছে,,, তুমি আবির নাহ??
—– হুমম স্যার আমি আবির।
ওহ পড়াশোনা বাদ দিলে যে,,??
আর এই বাচ্চা টা কার??
এমনি স্যার,, আর ও আমার ভাগ্নে।
—- ওহ। তো বলো এখন কী করো?? ব্যবসা-ট্যাবসা নাকি জব কি করো??
আমি কিছু বলতে যেতে আমার ভাগ্নে আমার কান্না শুরু করলে আমার আর বলা হলো নাহ আবার উনারও একটুপর উঠে গেলেন। অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। একটা যৌথ নাচটি দিয়েই অনুষ্ঠানটি শেষ হবে এবং নাচবে উপস্থাপক অনু ও মিতু।
—– বেশ ভালো নাচ করলো দুজন।
নাচ শেষে অনু মাউথপিচ নিয়ে বলতে লাগলেন..অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের অনুষ্ঠানে আসবে আসবে পথ চেয়ে থেকেও শেষ অবদি প্রধান অতিথি আসেন নাই ৷ আমাদের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যটাই বৃথা গেলো।
—- কোন উদ্দেশ্যই বৃথা যাই নি বলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম ..
আমি ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে স্টেজের দিকে যেতে লাগলাম।
— ভাগ্নে কে নিয়ে স্টেজে উঠলাম। আমাকে দেখে অনু চুপ হয়ে গেলো৷
মিতু বলে উঠলো,, আরে তুই এই খানে কেন??
প্রিন্সিপাল বললেন কে আপনি??
—- আমি আর কেউ নই,, যাকে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে ফোন ও চিঠীতে দাওয়াত করেছেন আমিই সেই,, আবির চৌধুরী
—- এবার মাউথপিচ টা হাতে নিলাম।
সামনে খেয়াল করে দেখলাম মিতুর ভাইসহ বেশকিছু পুলিশ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন।
— আমি এবার সবার উদ্দেশ্য কিছু কথা বলতে লাগলাম। আপনারা ভাবছেন আমি এভাবে কেন এসেছি আর আমার কোলে এটা কে তাইতো??
—- আসলে আমাকে কে কী ভাবে দেখে তাই দেখার জন্যই এসেছি আর এই ছেলেটি আপনারা যে কাজ করতে বা উদ্দেশ্য নিয়ে ক্লাব খুলছেন তারই একটা অংশ।
—- ওর বাবা থেকেও নেই। আজ জন্মের এক বছর তবুও ওর বাবার মুখটি দেখে নি। ও এতিম আমার ভাগ্নে ও। আর মজার বিষয় হলো এই স্টেজেই ওর ফুফু ও স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ওরই জন্মদাতা বাবা।
—- সবাই ভাবছে আমি কোথা থেকে এসে এসব কী বলছি,,,
সবাই যাতে বিষয়টা মনোযোগ সহ শুনে ও বিশ্বাস করে তাই পকেট হতে এক লাখের নগদ একটা বান্ডিল ও আরো এক লাখের একটা চেক সই করে প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে দিয়ে বললাম এই ক্লাবের কাজ যত দ্রুত শুরু করে দিন।
—- সবাই অবাক ও হাত তালি দিয়ে উঠলো।
এবার আপনাদের উদ্দেশ্য আমি কিছু বলতে চাই আপনারা যদি আমায় সময় দেন,,,,!!
— সবাই বললো হুম বলুন আমরা শুনবো।
আজ এখানে অনেক মেয়েই উপস্থিত আছে তাদের উদ্দেশ্য করে ও এক নিষ্টুর বাবার কাহিনী বলবো আপনাদের দশ মিনিটে শুনবেন কি ??
—- সবাই শুনতে চাইলে বলতে লাগলাম,,,
..
..
..
চলবে??
..
(গল্পটি ভালো লাগলে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here