#দ্বিতীয়_বসন্ত-৪
Zannatul Eva
হেই রুহি! তুমি এখানে! হোয়াট এ কোয়েন্সিডেন্স!! ঘুরেফিরে আমাদের সেই দেখাই হয়ে গেলো।
রুহি চুপচাপ তার মায়ের পাশে বসে আছে। এমন একটা ভান করে আছে যেনো মাহিরকে সে চেনেই না। শর্মী মাহিরকে দেখে রুহিকে চিমটি কেটে ফিক করে হেসে দিলো৷
মমতা খানম বললেন, ছেলেটাকে চিনিস তুই?
না মা আমি কি করে চিনবো! মনে হয় আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র কেউ হবে। এর বেশি জানি না।
মমতা খানম বললেন, আমি চিনি।
রুহি মায়ের দিকে হা করে তাকিয়ে বলল, তুমি চিনো একে! কিভাবে?
আরে আমাদের গ্রামের ছেলেই তো। তুই দেখিস নি। আমি ছোটবেলায় কয়েকবার দেখেছিলাম। চেহারা তো একদম ওর বাবার মতো হয়েছে। তোর বাবা আর ওর বাবা ক্লাসমেট ছিলেন। ছেলেকে মনে হয় ঢাকায় রেখে পড়াশোনা করাচ্ছে এখন। তুই চিনবি কি করে তুই তো গ্রামের বাড়ি তেমন যাসই না। আর গেলেও কোথাও বের হোস না। আমরাও তো ঢাকায় এসেছি অনেক বছর। তোর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন আমরা ঢাকায় এসেছি। ওর বাবা ভীষণ ভালো মানুষ।
রুহি বিড়বিড় করে বলল, বাবা এতো ভালো আর ছেলে ছ্যাচড়াদের মতো মেয়ে মানুষের পেছন পেছন ঘুরে বেরায়।
কিছু বললি?
ইয়ে…. নাহ কিছু না।
পাশ থেকে শর্মী রুহিকে খোঁচা দিয়ে বলল, বাহ সবার ক্রাশ মাহির এখন তোর পরিচিত।
রুহি মুখ বেকিয়ে বলল, তাতে কি! বিশ্ব জয় করে ফেলেছে নাকি? এমনিতে আমার ভার্সিটির সিনিয়র ভাই সে এর বেশি আর পরিচিত হওয়ার দরকার নেই আমার।
শর্মী হেসে বলল, শুনিস নি এরা প্রথমে ভাইয়া হয়ে জীবনে আসে আর তারপর ভাইয়া থেকে হয়ে যায় সাইয়া হাহাহাহা……
কি করে তোরা দুটোয় কী গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিস?
কিছু না মা।
তোরা ড্রেস গুলো দেখ আমি একটু আসছি।
রুহি আর শর্মী দুজনেই ড্রেস দেখায় ব্যস্ত এমন সময় মাহির আবারও এসে হাজির হলো।
বিয়ের শপিং চলছে!! কার বিয়ে?
শর্মী দুষ্টুমি করে বলল, রুহির বিয়ে। ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
মাহিরের মন ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেলো। এক ধাক্কায় তার চোখের সামনে নিজেকে দেবদাসের চরিত্রে দেখতে পাচ্ছে। মনে হচ্ছে চারপাশে বিরহের গান বাজছে।
ইতো মধ্যেই মমতা খানম চলে এলো। মাহির তাকে সালাম দিলো।
আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো বাবা?
আপনি আমাকে চেনেন নাকি?
হ্যাঁ, তুমি তো তামজিদ ভাইয়ের ছেলে তাই না? ছোট বেলায় দেখেছিলাম কয়েকবার। চেহারা একদম তোমার বাবার মতোই হয়েছে।
মাহির যেনো মনে একটু খানি ভরসা পেলো। কিন্তু তাতে আর কি হবে! রুহির তো বিয়ে ঠিক হয়েই গেছে। মাহির মলিন স্বরে বলল, আন্টি এতো তারাতারি রুহির বিয়ে ঠিক করে ফেললেন? ওর তো এখনও গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয় নি।
মমতা খানম অবাক হয়ে বললেন, রুহির বিয়ে! না না রুহির বিয়ে না। বিয়ে তো আমাদের বাসার ময়নার। ঘরের মেয়েই বলতে পারো৷ বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেই তোমার আঙ্কেল শপিং করতে পাঠিয়ে দিলেন। জানোই তো তোমার বাবা আর রুহির বাবা মানুষের বিপদে কতটা ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মাহির একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুহির দিকে তাকালো। তার মানে ইচ্ছে করে আমাকে বোকা বানানো হচ্ছিলো।
তা বাবা তুমি কী কিনতে এসেছো?
আমি কিছুই কিনবো না আন্টি। মা এসেছেন কিছু কেনাকাটা করার জন্য। আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি জাস্ট।
ওহ আচ্ছা। তা কোথায় তোমার মা?
ওই তো আন্টি, ঐ দিকটায় আছে মা।
কথা বলে আসছি ভাবির সাথে হ্যাঁ! কতদিন পর দেখা হলো!
রুহি ভীষণ অস্বস্তিবোধ করছে। মাহিরকে তার একদমই পছন্দ না। বেশি কথা বলে। সব সময় গায়ে পরা স্বভাব। রুহি শর্মীকে নিয়ে উঠে অন্য পাশে চলে গেলো।
মাহির সাইডে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেট না খেলে মাহিরের মাথা ধরে যায়। বন্ধুমহলের সবাই বলে, সিগারেট হচ্ছে মাহিরের প্রথম গার্লফ্রেন্ড এবং দ্বিতীয় গার্লফ্রেন্ড যে হবে তাকে অবশ্যই প্রথম গার্লফ্রেন্ড মানে সিগারেটকে মেনে নিতে হবে। কারন মাহির সব ছাড়তে পারলেও সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারবে না।
ওদিকে রুহি একদমই তার বিপরীত। পৃথিবীর যতো গুলো অপছন্দের জিনিস আছে তার মধ্যে সিগারেট হলো তার প্রথম অপছন্দের জিনিস। সিগারেটের গন্ধে রুহির প্রচন্ড মাথা ধরে যায়। এমনকি যারা সিগারেট খায় তাদেরকেও রুহি প্রচন্ড অপছন্দ করে।
দেখ দেখ শপিং মলের ভেতরে এসে কিভাবে সিগারেট টানছে। এইবার বুঝেছিস কেনো আমি একে পছন্দ করি না। আই হেইট সিগারেট। এসমস্ত সিগারেট খাওয়া ছেলেরা নিজেদের স্মার্ট মনে করলেও আমার কাছে এদের একদমই আনস্মার্ট ক্ষ্যাত লাগে।
শর্মী বলল, এভাবে বলিস না। এরকম ড্যাসিং, হ্যান্ডসাম ক্রাশবয়রা একটু আধটু সিগারেট টানবেই। এই জন্যই তো মেয়েরা ওর জন্য এতো পাগল।
রুহি মুখ বেকিয়ে বলল, মেয়েরা নয় বল কিছু সংখ্যক ছ্যাচড়া মেয়েরা ওর জন্য পাগল। মেয়েদের রুচি এতো নিচে নেমে গেলো কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। আর হ্যাঁ প্লিজ এখন আবার তুই বলিস না তোরও ওকে ভালো লাগে।
তা তো লাগেই। এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে কার না ভালো লাগবে! কিন্তু কপাল দেখ আমাদের তো আর পাত্তা দেয় না। অথচ তুই কিভাবে সবসময় ইগনোর করিস!
আমার মাথাটা খাস না তুই। আয় তো আমার সাথে একটু। শপিং মলের ভেতরে সিগারেট খাওয়া বের করছি।
এই রুহি….রুহি দাঁড়া……. শর্মী ডাকতে ডাকতে রুহির পেছন পেছন গেলো।
এক্সকিউজ মি! এটা কী আপনার বেডরুম নাকি! এখানে এভাবে সিগারেট টানছেন কেনো? ইশশ! কী বাজে গন্ধ বেরোচ্ছে। এক্ষুনি বাইরে গিয়ে সিগারেট ফেলে আসবেন।
মাহির ভারী গলায় বলল, যদি না ফেলি?
রুহি চেঁচিয়ে বলল, আমি সিকিউরিটি ডাকবো।
মাহির হেসে বলল, ডাকো কে বারন করেছে?
রুহি চোখ মুখ খিঁচে বলল, দেখেছিস কেনো আমি এসব সিগারেট খোর ছেলেদের পছন্দ করি না! আমি কেনোই বা একে এসব বলতে এসেছি! গন্ধে আমার মাথা ধরে যাচ্ছে উমমহুমম শর্মী চল এখান থেকে।
মাহির হুট করে বলে উঠলো, ওয়েট।
বলেই শপিং মলের বাইরে গিয়ে সিগারেট ফেলে দিয়ে আসলো।
শর্মী অবাক হয়ে বলল, রুহি! এইটা কী ছিল!! তুই বললি আর মাহির তোর কথায় সিগারেট ফেলে দিলো?
রুহি আশ্চর্য না হয়ে বলল, তো কী হয়েছে তাতে! এসব ছেলেদের আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য এসব সিনেমার ঢং শুরু করে দেয়।
মাহির ভেতরে এসে বলল, ফেলে দিয়েছি। হ্যাপি?
ডিজগাস্টিং।
একথা বলেই রুহি শর্মীকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। মাহির একটা হাসি দিয়ে বলল, এতো জেদ!! হুট করেই মাহির ভাবলো, এই প্রথম সে কারো কথায় সিগারেট না খেয়ে ফেলে দিলো! এরকম গত কয়েক বছরে কখনও ঘটে নি। একমাত্র মায়ের ভয়েই সে সিগারেট লুকায় কিংবা ফেলে দেয়। রুহিই দ্বিতীয় কোনো মেয়ে যার জন্য আজ সে তার প্রিয় সিগারেট ফেলে দিলো।
হোয়াই মাহির? রুহিকে তুই পছন্দ করিস কিন্তু তার জন্য তোর প্রথম গার্লফ্রেন্ড সিগারেটকে প্রত্যাখ্যান করলি! ব্যাপার না পরে ডাবল খেয়ে পুষিয়ে নেবো।
____________________
পরের দিন রুহির বাসার সবাই মিলে ময়নার বিয়ে এ্যাটেন্ট করার জন্য গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
চলবে…….