দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২০

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২০
লেখা:Zannatul Eva

মুন্নীকে কারা যেনো তুলে নিয়ে গেছে। ফোন করে হুমকি দিচ্ছে আমাকে। মুক্তিপণ চাইছে। নয়তো……

রুহির চলে যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠা মুনিরার হাসি হাসি মুখটা একনিমিষেই কালবৈশাখী ঝড়ের মতো কালো কুচকুচে হয়ে গেল। একটা চিৎকার দিয়ে বলল, নয়তো কী!! কারা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে? কারা? মুন্নীর বাবা….. কই তুমি?

মাহির বলল, শান্ত হও সবাই। মুন্নী কখন বেরিয়েছিলো বাড়ি থেকে? আর কার সাথে বেরিয়েছিলো?

মুনিরা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ও তো বলে গেল ওর বান্ধবীর বাড়িতে যাবে। হায় আল্লাহ! আমার মেয়েরে কে কিডন্যাপ করলো!!

রুহি বলল, কেউ কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?

মুনিরা ঝাঁঝালো গলায় বলল, তুমি আবার কী বলবা হ্যাঁ? তোমার ছায়া পরাতেই এমন অঘটন ঘটছে। হায় আল্লাহ এখন কী হবে আমার!

রুহি বলল, আপনারা এখানে বসে না থেকে থানায় যান। বাড়িতে বসে হাহুতাশ করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

শুনুন, আপনি বরং সোজা থানায় চলে যান। মাহিরকে বলল।

তামজিদ আহমেদ বললেন, আমিও যাবো মাহিরের সাথে।

ওদিকে মুন্নীর বাবা হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। ভয়ে একদম চুপসে গেছে সে। মেয়েকে যদি আর ফিরে না পায় এসব ভেবে ভেবে ভেঙ্গে পরছে। ইতোমধ্যেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।

মুনিরা কাঁদতে কাঁদতে নিজের স্বামীর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলো।

কিছুক্ষন পর তার জ্ঞান ফিরে এলো।

তামজিদ আহমেদ বললেন, তুই বাড়িতে থাক। আমি আর মাহির যাচ্ছি থানায়।

ইতোমধ্যেই মাহিরের ফোনে ঐ একই নাম্বার থেকে আবারও কল এলো।

মাহির ফোন রিসিভ করে বলল, মুন্নী কোথায়? ঠিকানা বলেন আপনারা।

ওপাশ থেকে একজন পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো। বলল, যদি থানায় যাস তাহলে তোদের বাড়ির মেয়ের এমন হাল করবো যে জীবনে আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবি না তোরা। তোর বউয়ের থেকে একবার জেনে নিস সেসব ঘটনা হাহাহাহা……. টাকা রেডি কর নয়তো তোর বোনের সাথেও একই ঘটনা ঘটবে……..

একথা বলেই ফোন কেটে দিলো। মাহির ফোন লাউড স্পিকার দিয়েই কথা বলছিলো। সবাই সবটা শুনতে পেয়েছে। মুন্নীর বাবা-মা আরও জোরে কাঁদতে শুরু করলো।

মাহির বলল, একবার মুন্নীর বান্ধবীর নাম্বারে ফোন করে দেখো তো ও কখন বেরিয়েছিল ওখান থেকে। যদি ওর থেকে কিছু জানা যায়।

মুনিরা কাঁদতে কাঁদতে মুন্নীর বান্ধবীর কাছে ফোন করলো৷ কিন্তু ওরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারলো না। শুধু বলল, মুন্নী অনেক আগেই বেরিয়ে গেছল বাড়িতে ফিরবে বলে।

তালেব আহমেদ ভারী গলায় বললেন, হুমকির ভয়ে থানায় ও যাওয়া যাবে না৷ তাহলে এখন টাকার ব্যবস্থা করো। তামজিদ তুমি শিগগিরই ব্যাংকে যাও। গিয়ে লাখ খানেক টাকা তুলে নিয়ে আসো।

রুহি বলল, কিন্তু আজ তো ব্যাংক বন্ধ।

তামজিদ আহমেদ বলল, এখন কী করবো চাচাজান? বাড়িতে তো এতো টাকা-পয়সা নেই।

রেহনুমা বলল, দরকার হলে আমাদের গহনাগাঁটি নিয়ে সোজা সোনার দোকানে চলে যাও। আমাদের বাড়ির মানসম্মান জড়িয়ে আছে এখানে। আর তাছাড়াও এটা আমাদের মেয়ের জীবন মরনের প্রশ্ন। যা করার জলদি করো।

হঠাৎ করে ভয়ে রুহির হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো। রোহন যখন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তখনও ঠিক এমনই ভয় করছিলো তার।

মাহির রুহির দিকে তাকিয়ে বলল, আর ইউ ওকে?

আমাকে একটু পানি খাওয়াবেন? আমার গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে।

মাহির রুহিকে পানি খাইয়ে বলল, তুমি বরং ভেতরে গিয়ে রেস্ট নাও। এসব কথাবার্তার মধ্যে তোমাকে থাকতে হবে না।

রুহি বলল, না। আমি এখানেই থাকবো এখন৷ তবে আমাকে একবার রুমে যেতে হবে। সবার সাথে আমিও আমার তরফ থেকে কিছু দিয়ে সাহায্য করতে চাই।

রেহনুমা ভারী গলায় বলল, তুমি আবার কী করতে চাও? সংসারে আসতে না আসতেই একটা অঘটন ঘটে গেল। বলি এমন মেয়ের সাথেই ছেলের বিয়ে দিলে যে মেয়ের নিঃশ্বাসে বিষ ভরা। দেখলে তো সংসারে কেমন শুনি ঢুকিয়েছো। ছারখার করে দিলো।

তালেব আহমেদ রেগে গিয়ে বললেন, আহ বড় বউ থামো তুমি। এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় না। তবে ও কী করতে চায় সেটাও আমাদের একবার শোনা উচিত। বলো তুমি কী করতে চাইছো?

রুহি নিচু স্বরে বলল, আমি আমার কানের দুল আর হাতের আংটিটা দিতে চাই। মানে এখন তো অনেক টাকার দরকার। যদি কম পরে যায় তখন! আমিও তো এই বাড়িরই সদস্য। যদিও আমি চলে যাবো এখান থেকে। কিন্তু আমি চাই আপনাদের বিপদের সময় একটু হলেও সাহায্য করতে। কারন আমি জানি, যখন সন্তানের উপর কোনো বিপদ আসে তখন বাবা-মায়ের ঠিক কতটা চিন্তা হয়।

মুনিরা রুহির কথা গুলো শুনে একদম চুপ হয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষন আগেও সবাই মিলে এই রুহিকেই অনেক খারাপ খারাপ কথা শোনাচ্ছিলো।

তালেব আহমেদ বললেন, না না তোমার থেকে কেনো নেবো? ওগুলো তোমার বাবা- মা দিয়েছেন তোমাকে। সেগুলো তো আমরা নিতে পারবো না।

রুহি বলল, এগুলো আমাকে
শ্বশুর বাড়িতে সব সময় ব্যবহার করার জন্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো আর এখানে থাকবো না। আর বিপদের সময় যদি শ্বশুর বাড়ির সবার পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে এসব দিয়ে কী হবে!! একটা মেয়ের কাছে তার স্বামী, শ্বশুরবাড়িই হচ্ছে প্রকৃত অলংকার। প্লিজ দাদাভাই আপনি না করবেন না। এখন এসব ভাবার সময় না। তারাতারি করুন। আল্লাহ না করুক ওদিক থেকে যেনো কোনো খারাপ খবর না চলে আসে।

তালেব আহমেদ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ঠিক আছে। তবে তোমার সব জিনিস তোমাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ কথা দিচ্ছি।

মাহির এবং তামজিদ আহমেদ তারাতারি করে গয়নাগাটি নিয়ে সোনার দোকানে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলো এমন সময়ই মুন্নী বাড়িতে ফিরে এলো।

কিন্তু মুন্নীকে দেখার পর বাড়ির সবাই প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল। হয়তো মন্নীকে এমন অবস্থায় দেখার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিল না।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here