দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২৮

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৮
Zannatul Eva

দাদিজান নাকি অন্য জায়গায় রুহির বিয়ে ঠিক করেছে! এসব কী হচ্ছে দাদাভাই? এতো কাঠ খোর পুড়িয়ে তোমাদের দেখা করালাম শেষ পর্যন্ত এই দিন দেখার জন্য!!
অশান্ত গলায় বলল মাহির।

সেটা তুমি রুহিকে জিজ্ঞেস করো।সায়েদার সাথে আমিও কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না। শুধু তাই নয় ওর মুখদর্শন ও করতে চাই না আমি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার ডিভোর্স করিয়ে আবার নতুন করে বিয়ে দেবো। আমি চাই না এ নিয়ে তুমি আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করো।

মাহিরের মা রেহনুমা বলল, এসব আপনি কী বলছেন চাচাজান! মাহিরের আবার বিয়ে দেবেন!! আমি তো রুহিকে আমার পুত্রবধূ হিসেবে মেনেই নিয়েছি। তাহলে এখন এসবের কী প্রয়োজন। ঘরের বউকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।

তামজিদ আহমেদ বললেন, ঠিকই তো। আর তোমাদের দুজনের মধ্যে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি তো কেটেই গেছে তাহলে এখন এসব কী বলছো?

কিচ্ছু কাটাকাটি হয় নি। আর হবেও না। আমি যা বলছি তাই হবে। ও বাড়ির কারো সাথে কোনো রকম কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না আমি। খুব শীঘ্রই মাহিরের ডিভোর্স করাবো।

ইম্পসিবল। আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো না। কোনোদিনও না। মাহির বলল।

তাহলে আমাকে আর কোনোদিন দাদাভাই বলে ডাকবি না।

একথা বলেই তালেব আহমেদ হুরমুর করে বেরিয়ে গেলেন।

বাড়ির সবাই প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল।

মাহিরের ছোট চাচা বলল, চাচাজানের মাথাটা হঠাৎ এমন গরম হয়ে গেল কেনো? সবটা হয়েছে ঐ বুড়িটার জন্য। কী দরকার ছিল বুড়িটার সাথে কথা বলতে যাওয়ার! হয়তো বুড়িটা এমন কিছু বলেছে যাতে চাচাজান ভীষণ রেগে গেছেন। এখন ওনাদের দুজনের রাগের যাতাকলে যাতা পরে পিষে যাবে ছেলে মেয়ে দুটো।

নীলিমা বলল, আহ আস্তে বলো। চাচাজান শুনতে পাবেন।

নির্ঝা বলল, জানো তো বাবা যাতাকল সবসময় যে আমাদের পিষে মারে এমনটা নয়। কখনও কখনও যাতাকল আমাদের জীবনটাকে পিষে জীবন থেকে সুগন্ধি নির্জাশ বের করে আনে।

কী বলে গেল তোমার মেয়ে?

আমি কী জানি! তুমি গিয়ে জিজ্ঞেস করো তোমার মেয়েকে। শুনো তোমার মেয়ে কিন্তু বড্ড বেশি পেকে গেছে। যেমন বাবা তার তেমন মেয়ে।

কী আমি পাকা! আমি অল্প বয়সে পেকে ছিলাম?

তা নয়তো কী! না পাকলে কী স্কুল থেকে ফেরার সময় সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আমাকে দেখার জন্য!

সে তো তোমাকে ভালোবাসতাম বলে।

হয়েছে হয়েছে অতো ভালোবাসার কথা বলতে হবে না। ওদিকে মাহিরের সংসারটা ভাঙ্গতে বসেছে। তুমি কিছু করতে পারছো না?

কী করবো বলো? চাচাজানের মুখের উপরে কিছু বলতে পেরেছি আমরা কখনও?

তা বলে ছেলে মেয়ে দুটোর ডিভোর্স হয়ে যাবে?

দেখা যাক কী হয়। তবে আমার বিশ্বাস এতো সহজে মাহির চাচাজানের কথা মেনে নেবে না। এখন ওই একমাত্র ভরসা।
____________________

ওদিকে রুহিদের বাড়িতে আজ পাত্রপক্ষের আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনও আসে নি। সকাল থেকেই রুহি ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সায়েদা বেগম সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মাহিরকে ডিভোর্স দিতেই হবে।

আশরাফ খান বললেন, মাইয়ার জীবন নিয়া এমন নিছিনিমি খেলতে পারি না আমরা। মাহির খুব ভালো ছেলে। আপনি কেন এমন করতেছেন ফুপুজান? এতো বছর পরেও আপনার রাগ ভাঙ্গে নাই? আমার মাইয়ার জীবনটা নষ্ট হইয়া যাইবো।

চুপ থাক আশরাফ। তোর কী মনে হয় আমি রুহির ভালো চাই না!! তোর থেইকা কী আমি কম বুঝি! মাথার চুলে এমনি এমনি পাক ধরে নাই আমার। সবাই এহন যার যার কামে যাও। পাত্রপক্ষ বলছে আগে থেইকা আর কোনো দেখা সাক্ষাৎ এর দরকার নাই। হেরা একবারে বিয়ার দিন তারিখ মতো আইবো বউ নিতে। বড় বউ মাইয়ারে বিয়ার জন্য তৈরি হইতে বলো।

মমতা খানম মুখে কাপড় গুঁজে কাঁদতে শুরু করলেন।
_________________

সায়েদা বেগম ডিভোর্স পেপার নিয়ে রুহির কাছে এলেন। রুহিকে কাগজে সই করতে বলার পরই রুহি কেঁদে ফেলল। বলল, আমি পারবো না দাদিজান। মাহির খুব ভালো। আমাকে খুব ভালোবাসে। তার চেয়েও বেশি সম্মান করে। কেনো তুমি আমাকে ওর থেকে আলাদা করে দিচ্ছো?

মমতা খানম বলল, ফুপুজান একটাবার ভেবে দেখলে হইতো না? মাইয়াটার মুখের দিকে তাকাইয়া সব ভুইলা যান।

রুহি আরও জোরে কাঁদতে শুরু করলো।

সায়েদা বেগম ভারী গলায় বললেন, তুমি এহন এই ঘর থেইকা যাও বড় বউ। আমার রুহির লগে কথা আছে।

মমতা খানম কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন।

সায়েদা বেগম দরজা বন্ধ করে দিলেন। টানা দশ মিনিট ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি রুহির সাথে কথা বললেন।

ওদিকে বাড়ির সবাই ও ভীষণ টেনশনে আছে।

ইতোমধ্যেই মাহির ফোন করলো রুহিকে। রুহি ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মাহির অস্থির গলায় বলল, তুমি কিন্তু ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে না রুহি। একদম না। আমি জানি তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে চাও। তুমি বলে দাও দাদিজানকে তুমি আমাকে ভালোবাসো।

আমি সাইন করবো। শান্ত গলায় বলল রুহি।

মাহির প্রচন্ড রকমের একটা ধাক্কা খেলো। বলল, কী? কী বললে?

আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি। এবার আপনি মুক্ত। ভালো থাকবেন।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here