#প্রণয়ের_আসক্তি
২৩.
#WriterঃMousumi_Akter
–ভাবি আপনি যদি সত্যি উনাকে দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই আবার ও দেখতে পাবেন।পরের বার দেখলে আমাদের ডাক দিবেন আমরা উনার থেকে জেনে নিবো উনি কি আসলেই আপনার বাবা কিনা?
–উনিই আমার বাবা হবেন নিরব ভাইয়া।কোনো মেয়ে কি তার বাবাকে চিনতে ভুল করতে পারে।ছোট বেলা থেকে অপেক্ষা করছি কবে হুট করেই বাবার সাথে দেখা হয়ে যাবে সেই আশায়।
–আঙ্কেল এর কোনো পিকচার আছে ভাবি।থাকলে দেখান তাহলে আমরা এত জনের মাঝে যে কারো সাথে দেখা হলেই উনাকে চিনতে পারবো না।
–মুনতাহা বিষন্ন মলিন মুখে বললো না নেই।আমার কাছে কোনো ছবি নেই।আমি তো কোনো ছবি সাথে করে নিয়ে আসি নি।কিভাবে দেখাবো বলেন তো?
–রিফাত বললো ভাবি আঙ্কেল কি রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়েছিলেন।ঠিক কি কারণে আপনাদের সাথে যোগাযোগ রাখে নি।প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ভাবি।এভাবে ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করে আপনাকে হার্ট করে ফেলছি আমি।
–মুনতাহা বললো আরে না না ভাইয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করতে কোনো সমস্যা নেই।মুনতাহা চোখের পানি মুছে বলা শুরু করলো,,”আমি তখন খুব ছোট বয়স মাত্র তিন আমার।আমার বাবা ঢাকায় ব্যাবসা করতেন।আমাকে আমার বাবা রাজকুমারী বলে ডাকতেন।বাবার কলিজার টুকরো ছিলাম আমি।আমি আম্মু আর দাদা দাদীর সাথে নড়াইলেই থাকতাম।বাবা প্রায় মাঝে মাঝে অনেক ব্যাস্ততার জন্য ঠিক ভাবে যোগাযোগ করতেন না এটা নিয়ে আম্মুর সাথে খুব অশান্তি হতো।তখন আম্মু আবার প্রেগন্যান্ট হয়।আম্মু জিদ ধরে বাবার সাথে ঢাকায় থাকবে।কিন্তু বাবা রাজি হন না নিতে।সেদিন ছিলো আমার জন্মদিন।আমরা কেক নিয়ে অপেক্ষা করছি। বাবা আমার জন্মদিনের গিফট আমার গলার এই চেইন আর লকেট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।বাট বাবা আর আসেন নি।অপেক্ষা করেই যাচ্ছি আমরা।সেদিন আর কেক কাটলাম না আমরা।মধ্যরাতে বাবা এলেন।মা রাগ করে ঘরের দরজা খুললেন না।অনেক ঝগড়া হলো দুজনের।তারপর বাবা সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না।তারপর আমার ভাইয়ের জন্ম হলো।ভাই আজ ও বাবার মুখ দেখে নি।মা রোজ কাঁদেন আর নিজেকে দোষারোপ করেন।আমরা রোজ অপেক্ষা করি কিন্তু বাবা আর ফিরে আসেন নি।
মুনতাহা কাঁদছে খুব কাঁদছে।বাবা হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা মুনতাহাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মুনতাহার সে কি সত্যি এখানে তার বাবাকে দেখেছে।তার বাবা কি তাদের ছেড়ে অন্য কোথাও বিয়ে করেছে।অন্য কোথাও সংসার শুরু করেছে তাদের ছেড়ে।তা না হলে কেনো এতগুলো বছর যোগাযোগ রাখবে না।কি কারণ হতে পারে।ভেতরে ভেতরে খুব ভেঙে পড়েছে মুনতাহা।
সবাই মুনতাহা কে খুব বোঝালো।সবার আনন্দ করার মুড নষ্ট হয়ে গেলো।মুনতাহা লাল একটা শড়ী পরে সমুদ্র পাড়ে বসে আছে।মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানি মুনতাহার পা ছুঁয়ে যাচ্ছে।শাড়ির আঁচল বালুতে পড়েছে।রিক মুনতাহার পাশে বসে বুঝিয়ে যাচ্ছে।
রিফাত আর সুপ্তি আলাদা ঘুরছে দুজনে দুজনের হাত ধরে।সুপ্তি রিফাত কে বললো,মৃথিলা মেয়েটা এ ক’দিনে আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছে।মেয়েটা বেশ ভদ্র আর ভালো।রিফাত বললো ঠিক ই বলেছো।
মৃথিলা ব্লু জিন্স আর কালো টপস পরেছে সাথে কালো ওড়না।নিরব কালো জিন্স আর কালো গেঞ্জি পরেছে।দুজনের ই জিন্স গোটানো নিচে থেকে।খালি পায়ে পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছে দুজনে।মৃথিলা এক মুঠো পানি নিয়ে নিরবের মুখে ছুড়ে মারলো।পানির ছোঁয়াতে নিজে থেকেই নিরবের চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। মৃথিলা গাল ভরে হাসতে হাসতে ছুটে পালালো।নিরব ও ছুটছে মৃথিলার পিছে পিছে।নিরব মুগ্ধ হয়ে দেখছে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া মৃথিলাকে।প্রকৃতির থেকে কম সুন্দর না মৃথিলা।প্রাণচঞ্চল মেয়েটিকে আজ বড়ই সুন্দর লাগছে।আজ যেনো মন খুলে হাসছে।হেসেই যাচ্ছে মেয়েটি।মেকাপ ছাড়া ন্যাচারাল লুকে অসম্ভব সুন্দরী নিরবের চোখে মৃথিলা।এই সমুদ্রের দেশে নিজের ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে মৃথিলা।নিরব এর আগেও অনেকবার কক্সবাজার এসেছে কিন্তু কখনো এতটা সুন্দর লাগে তার কাছে।আজ বুঝি তার প্রেয়সীর জন্য তার এত ভাল লাগা।মৃথিলা নিরব কে ভিজিয়েই যাচ্ছে নিরব ও মাঝে মাঝে পানি ছেটাচ্ছে।দুজনেই ভিজে গিয়েছে প্রায়।মৃথিলাকে আজ অনেক খুশি দেখা যাচ্ছে , মেয়েটিকে এত বেশী খুশি আগে দেখা যায় নি।নিরব মৃথিলার এই হাসি খুশি মুহুর্তের বেশ কতগুলো পিকচার তুলে নিলো।
মৃথিলা পানিতে দাঁড়িয়ে চারদিকে দেখছে। নিরব খানিক টা দূরে বসে কিছু একটা করছে।কি করছে বোঝা যাচ্ছে না।কয়েক মিনিট পরে নিরব এগিয়ে গেলো মৃথিলার কাছে।মৃথিলা ভ্রু নাচিয়ে বললো কি করছিলেন ওখানে।নিরব মৃথিলার সামনে বসে পড়লো হাঁটু গেড়ে।মৃথিলা বুঝতে পেরেছে নিরব কিছু একটা করতে চলেছে।নিরব মৃথিলার পা নিজের হাঁটুর উপর তুলে নিজ হাতে বানানো শামুক আর ঝিনুক এর একটা পায়েল পরিয়ে মৃথিলার হাত টেনে হাতের তালুতে একটু চুমু দিয়ে বললো আই লাভ ইউ মৃথিলা।আমি কখনো কোনো মেয়েকে প্রপোজ করিনি।কিভাবে প্রপোজ করতে হয় আমার জানা নেই,তোমাকে ইমপ্রেস করার ক্ষমতা আমার নেই।বাট মৃথিলা তোমার কাছাকাছি এলেই আমার অন্য রকম অনুভূতি হয়।যে অনুভূতিতে প্রকৃতির সব কিছুই ভাল লাগে আমার।তুমি দূরে গেলে ভীষণ অস্হিরতা কাজ করে,তুমি পাশে এলে সব অস্হিরতা বন্ধ হয়ে যায়।আমি হয়তো অনেক টাকা দিয়ে সুখ কিনে এনে দিতে পারবো না।তবে সুখের মুহুর্ত একটা চকলেটের মাধ্যমে সেলিব্রেশন করতে পারবো।একটা চকলেট শেয়ারের আনন্দ হবে ভীষণ গভীর।রোজ সকালে তোমার মুখ দেখে ঘুম থেকে ওঠা,তোমার মুখ দেখে সকাল টা শুরু করার মতো আনন্দ নেই কিছুতেই।তুমি আমার জীবনে আমার স্ত্রী হয়ে এসছো মৃত্যুর আগের মুহুর্তে যেনো তোমার মুখ দেখেই পরযাত্রা পাড়ি দিতে পারি।আই লাভ ইউ মৃথিলা।
মৃথিলা ভীষণ সারপ্রাইজড হয়ে খুশিতে আত্মহারা।ভীষণ আনন্দে মৃথিলার ঠোঁট নেমে এলো নিরবের কপালে।নিরবের কপালে আকস্মিক চুমু খেয়ে নিলো মৃথিলা।
দুজনের সময় টা বেশ সুন্দর ভাবে কেটে গেলো।
দুজনে হঠাত খেয়াল করলো মেধা হেঁটে যাচ্ছে।নিরব আর মৃথিলা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেলো।দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্যজনক ভঙ্গিতে তাকালো।এখানে মেধা কিভাবে এলো।
নিরব মেধাকে নাম ধরে ডাক দিলো। মেধা নিরবের ডাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।খুশিতে লাফিয়ে উঠে নিরব মৃথিলার কাছে ছুটে আসলো।মেধা মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো আরে মিথু তোরা এখানে আমি রিয়েলি সারপ্রাইজড কবে এসছিস এখানে।
মৃথিলা অবাক হয়েই আছে এখনো।মেধাকে বললো গতকাল বাট তুমি এখানে?
–আমার খুব মন খারাপ করছিলো।তাই মা বাবাকে বললাম আসার জন্য।বাবাকে অনেক কষ্টে রাজি বানিয়ে নিয়ে এসছি।এইতো আজ সকালেই এসছি।
–আমাদের বললে না যে এখানে আসবে।
–আমি চাই নি যে তুই আর নিরব আমাদের সাথে আসিস।বাবা তো বলে দিয়েছে ওদের টাকা দিয়েছি ওরা আলাদা ভাবে সময় কাটাক কোথাও ঘুরে আসুক।
–মৃথিলা বললো দেখলে আপু আমাকে ফাঁকি দিতে পারলে না।সেই দেখা হয়েই গেলো।
–ওরা বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো।গল্প করে যে যার রুমে চলে গেলো।নিরব-মৃথিলা মেধাদের রুমে গিয়ে মেধার মা বাবার সাথে দেখা করে এলো।রাতে ওদের সাথেই ডিনার শেষ করে বাসায় ফিরলো।
পরেরদিন বিকালে মৃথিলা সুপ্তি আর মুনতাহা ঘুরতে বের হয়েছে।মিসেস শিরিনা মাহমুদ কল দিয়েছেন।মৃথিলার সাথে কথা বলছেন।হঠাত মুনতাহা একটা লোক কে দেখিয়ে বললো ভাবি আমার বাবা দেখুন ভাবি।সুপ্তি আর মৃথিলা দুজনে তাকালো।সুপ্তি আর মৃথিলা দুজনেই তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।মৃথিলা হা করে তাকিয়ে রইলো মুনতাহার দিকে।মুনতাহা এটা কাকে দেখাচ্ছে বাবা হিসাবে।এই মানুষ টা কিভাবে মুনতাহার বাবা হতে পারে।মুনতাহার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কষ্টে।মৃথিলা মেনে নিতে পারছে না বিষয় টা।
মৃথিলা বললো ভাবি ওই মানুষ টা কে আমি চিনি।উনি আপনার বাবা হওয়ার কোনো চান্স নেই উনার।
চলবে,,
(