#পর্ব ২
#অপূর্নতার _সংসার
#লেখিকা #তানজিনা_মেহরিন_মিশু।
আদিলঃ” তাহলে শোনো, বিয়ের বারো বছর হতে চললো এখনো তুমি একটি ছেলে জন্ম দিতে পারলে না! মা তো ঠিকই বলতেন। আমি শুধু আগে এগুলো বুঝতাম না। মায়ের বিরোধিতা করতাম। এখন বুঝতে পারছি যে বৃদ্ধ বয়সে আমাকে দেখাশোনা ও সংসার সামলানোর জন্য আমাদের একটি ছেলে প্রয়োজন আছে। আর সংসার করছি কম দিন তো হচ্ছে না! তাও তুমি একটি ছেলে জন্ম দিয়ে দেখাতে পারলে না এই পযর্ন্ত”।
–আদিল এর কথা শুনে রোজা অবাকের চরম এর বিস্ময়কর পর্যায়ে চলে গেলো! তার মানতেই কষ্ট হচ্ছে তার এতোদিনের পাশে থাকা মানুষটি সে তাকে এরকম ভাবে ধোকা দিলো!
রোজাঃ –আদিল কি বলছো কি তুমি! তোমার কি মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে না কি? এসব কথা তো কোনদিন ও আমার আদিল বলে নি! তাহলে আজ কেনো এসব কথা বলছো? তুমিই তো বলতে আল্লাহ চাইলে ছেলে সন্তান আমাদের হবে। ধৈয্য ধরতে এখন। আমরা তো আরো একটা বেবি নিতে পারতাম আদিল। এখন তুমিই আমাকে এসব কথা বলছো? এই কারনেই তুমি আমাদের সুখের সংসার টা ভেঙে দিয়ে দিত্বীয় বিয়ে করলে!
আদিলঃ রোজা তোমার মনে আছে আমরা মাস খানেক আগে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম?
রোজাঃ হ্যাঁ মনে আছে। কিন্তু এসব কেনো বলছো? তুমি কথা এড়িয়ে যেও না। যা বলছি সেটার স্পষ্ট উওর দাও।
আদিলঃ “ডাক্তার তোমাকে দেখে বলেছিলো যে, তুমি যদি আরো একটা বেবি নিতে চাও তাহলে এটাই হবে লাস্ট বেবি। কারন এর আগেও তোমার দুটো বেবি হয়েছে অনেক ঝুঁকি নিয়ে। আর এবার ও যদি আমরা বেবি নেই তাহলে যদি এবারো মেয়ে হয় তখন কি করবো? তৃতীয় বারও মেয়ে হলে মেনে নিতাম কিন্তু তোমার তো তারপরে আর বেবিই জন্ম দিতে পারবে না। সে ক্ষমতাটা আর তোমার ভেতরে থাকবে না।
কারন তোমার শরীর একটু উইক আছে এবং , তোমার কিছু মেডিক্যাল সমস্যা ও আছে। যার কারনে চর্তুথ বার বেবি জন্ম দেওয়া তোমার পক্ষে সম্ভব না। যদিও বা চেষ্টা করি তাহলে তোমার মৃত্যু ও ঘটতে পারে। তাই আমি বাধ্য হয়েই রিনিকে বিয়ে করেছি গোপনে”।
—পর পর আদিল এর দু’গালে দু’টো করে চারটা চড় মেরে দিলো রোজা! আদিল এখনো স্তম্ভিত হয়ে রয়েছে, যে রোজা তার সাথে কখনো উঁচু গলায় পযর্ন্ত কথা বলে নি সে কিনা আজ তার গালে চড় মারলো! সে অবাক হয়ে যাচ্ছে রোজার এহেন ব্যাবহারে! কিন্তু তার ভেতরে একবারো এটা প্রশ্ন জাগলো যে রোজা কতোটুকু কষ্ট পেলে আদিলকে চড় মারলো।
রোজাঃ “এতোক্ষণ সহ্য করেছি তোমার কথা! কিন্তু এখন যা বললে সেটা শুধু নিছকই একটা কারন নয়! এটাতে তুমি আমাকে অপমান করেছো? অপমান করেছো আমার নারীত্বকে। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! কি বললে তুমি তোমার ছেলে দরকার? কতো মানুষের তো বাচ্চা পযর্ন্ত হয় না! সেখানে আল্লাহর রহমতে আমাদের দুটো মেয়ে রয়েছে। ছেলের দরকার তোমার? কেনো আমরা যদি আমাদের মেয়েদের ভালো করে মানুষ করতে পারি তাহলে ওরা দুজনই আমাদের ভবিষ্যতে পাশে থাকবে। এখানে ছেলে মেয়ের কোনো প্রশ্নই আসে না আমি দেখছি। ছেলেও মানুষ, মেয়েও মানুষ। পার্থক্য শুধু একটাই তোমার মতো নিচু মন মানসিকতার কিছু মানুষজন ছেলে, মেয়েকে আলাদা করে দেখছে”!
আমার পক্ষে সম্ভব নয় আর তোমার সাথে থাকা! তুমি তোমার দিত্বীয় স্ত্রী কে নিয়েই সুখে সংসার করো”।
আদিলঃ আমার কথা শুনো আমি তোমাকে সংসার থেকে বেরিয়ে যেতে তো বলনি, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো রোজা! আমার যদি একটা ছেলে না থাকে তাহলে কি হবে বুঝতে পেরেছো তুমি?
রোজাঃ “আমি সব বুঝতে পেরেছি আদিল । এও বুঝে গেছি তোমার মতো পাগলের সাথে কিছুতেই থাকবো না। বেশ তোমার যখন এতোই তোমার ছেলের দরকার তাহলে তুমি থাকো তোমার দিত্বীয় স্ত্রী রিনি কে নিয়ে। আমিও আমার মেয়েদেরকে নিয়ে থাকবো। ওদের কে মানুষের মতন মানুষ তৈরী করবো। তারপরে ভবিষ্যতে দেখো তুমি, আমার দুই মেয়েই আমার পাশে দাড়াবে ছায়ার মতন হয়ে থাকব, আমার আর কোনো ছেলের দরকার হবে না। আমার দুই মেয়েই আমার ছেলে হবে”।
আদিলঃকিন্তু যাবে টা কোথায়? তোমার তো বাবা গতো বছরই মারা গেলো। আর এখন তোমার বোনের ও বিয়ে দিয়ে ফেলেছে তোমার বাবা। আর তোমার মা, তিনি তো তুমি ছোটো থাকতেই মার গেছে। বাড়িতে ছিলে শুধু তুমি আর তোমার বোন, আর তোমার বাবা। এখন কোথায় যাবে? আর বাড়িটা তো তোমার চাচারা মিলে বিক্রি করে দিয়েছে গতোবছর তোমার বাবা মারা যাবার পর পরই। এর চেয়ে ভালো তুমি এখানেই থাকো, সংসার করো আগের মতন, আর রিনিকে একটু দেখে রাখবো ব্যস এটুকুই। তোমার আর কোনো অভাব থাকবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো এখানে তোমার মেয়েদের নিয়ে।
রোজাঃ সত্যি ই তো বলছে আদিল। এতোক্ষণ চলে যাবো বললেও তো যাওয়ার কোনো জায়গাই নেই আমার। আর এ শহর তো বড্ড কঠিন, দু’টো মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? কি করবো? মাথার উপর আশ্রয়, খাবার, কিছুইতো দিতে পারবো না আমি ওদের। সামনে মেয়েগুলোর ও পরীক্ষা, পরীক্ষা টা যদি দিতে না পারে তাহলে তো ওদের এক বছর ক্ষতি হয়ে যাবে! এভাবে হুট করে বাড়ি থেকে চলে গেলে কিছু ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং আমাকে এখানে থেকেই কিছু একটা করতে হবে। (মনেমনে)।
আদিলঃ রোজা তোমার সাথে কথা বলতে বলতে এবার আমি হাঁপিয়ে গেছি যাও রান্না ঘরে গিয়ে ঠান্ডা শরবত বানাবে আমার আর রিনির জন্য। আর রিনির জন্য ফ্রিজে রাখা যতোটুকু ফল আছে সব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে সুন্দর করে কেটে রিনিকে দিবে।
–“ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আমারই স্বামীর সাথে আরো একটি মেয়েকে মেনে নিতে হবে আমারই সংসারে! তাও আবার কিছু মাস পর তাদের বাচ্ছা ও হবে। এখন যতোদিন থাকবো এখানে ততোদিনই আমাকে এসব ফাই ফরমাশ খাটতে হবে। আদিল এর একবারো মনে হলো না এতে আমার কষ্ট হবে? কি করে ও এমনটা করলো আমার সাথে? হয়তো নির্ধিধায়ই সবকিছু করেছে কারন ওর তো এখন ছেলে চাই”!
–রোজা যখন আদিল এর ঘরে গেলো শরবত দিয়ে
আসতে তখনি নজর গেলো খাটের উপর বসে থাকা এক জোড়া দম্পতির দিকে! কি সুন্দর করে মেয়েটি আদিল এর কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে! সেই মেয়েটিই তো আদিল এর বিয়ে করা স্ত্রী। রোজা চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলো সে দৃশ্য, তার ও মনে পড়ে গেলো সে নিজেও কোনোসময় এভাবে আদিল এর কাছে থাকতো। এখন সেগুলো শুধু সৃত্বি মাএ। রোজা শরবতটুকুনি আর ফল দিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরে। তার এখন রান্না করতে হবে।
–রোজার ননদ শিলা যখন গেলো তার ভাই এর রুমে ভাইয়ের সাথে মেয়েটিকে দেখে সে অবাক হয়ে গেলো! সে দেখলো তার ভাইও মেয়েটিকে কিছু বলছে না। যখনি তার ভাই তাকে বললো যে রিনি তার বিয়ে করা স্ত্রী। তখনি তার চোখ গেলো পর্দার আড়ালে থাকা তার স্নেহময়ী ভাবীর দিকে! মানুষটি নিঃশব্দে কাদছে।
শিলাঃভাইয়া তুই ভাবীর সাথে এসব কি করে করতে পারলি? তোর কি একবারো বুক কাঁপলো না? তোর মেয়েদের কথা মনে হলো না? মা কোথায় মা কি জানে এসব কিছু?
আদিলঃ না মা জানে না কোনো কিছু। মা এখনো ঘুমোচ্ছে। আরো পরে ওঠবে।
শিলাঃএসব শুনে মায়ের কি আদৌ ঘুমুতে ইচ্ছে হবে? আমি গিয়ে মাকে ডাকছি! সব বলছি মাকে।
–কি হবে তারপর? শিলার মা কি বলবে? তার ছেলের এই দিত্বীয় বিয়ের কথা শুনে? কি মনে হয় সবার?
জানতে হলে তৃতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। আর গল্প পড়ে এখনোই কেউ হাইপার হবেন না! সামনে দেখুন কি হয়। আদিল অবশ্যই শাস্তি পাবে, সবটা জানার জন্য গল্পটা পড়বেন।
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। কপি করা নিষেধ❌❌❌।
#চলবে?