অপূর্নতার সংসার পর্ব ১

#অপূর্নতার_সংসার
–দরজা খুলে নিজের স্বামীর সাথে একটি মেয়েকে দেখতে পেয়ে বড়ই অবাক হলাম! মেয়েটিকে আমার স্বামী তার দু বাহু জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে। এরকম অবস্থায় ওদের দেখে মনে প্রশ্ন জাগলো! কে এই মেয়েটি? এভাবে কেনো দাঁড়িয়ে আছে?

আদিল : রোজা ও হচ্ছে রিনি আমার দিত্বীয় স্ত্রী ।

“বিয়ের এগারো বছর পর আমার স্বামী তার দিত্বীয় স্ত্রী কে হাজির করলেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায়! আমার সংসার এর দোর গোড়ায়। তার উঁচু পেটটা দেখে মনে হচ্ছে কম হলেও ছয় মাসের গর্ভবতী আমার স্বামীর সাথে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটি! ঠিক মহিলা নয় তার দিত্বীয় স্ত্রী”।

“আমি রোজা, আদিল এর সাথে বিয়ে হয়েছে প্রায় বারো বছর হতে চললো। আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরই আদিল এর সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সব কটা দিনই যেনো ছিলো স্বপ্ন এর মতন। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে খুনসুটি তে দিন শুরু হতো আমার। মাঝে মাঝে সংসার এর কাজ এর ফাঁকে দুজন মিলে ঘুরতে যেতাম, একসাথে ফুচকা খেতাম, বিকালে হাতে হাত রেখে অনেক খানি আকা বাঁকা পথ দুজন মিলে একসাথে পাড়ি দিতাম। পরিশেষে আমার খোঁপায় বেলী ফুলের মালা দিতে কখনো ভুলতো না আদিল! মাঝে মাঝে এমন ও দিনও গেছে আমার যখন আমি অসুস্থ ছিলাম, আদিল আমার সেবা শুশ্রূষা করতো। যখন আমাদের প্রথম মেয়ে আলো হলো, তখন আদিল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো এর থেকে বেশি খুশি নাকি ওর আর কোনদিন ও হয় নি। ”

— “আদিল একটি জব করে। সকালবেলা বেরোয় বাড়ি থেকে সন্ধার দিকে আবার চলে আসতো। আমার শশুড়বাড়ি তে তেমন কেউ নেই বলতে গেলে, শুধু আমি, আদিল, আমার শাশুড়ি আর একটি ছোটো ননদ আছে যে এবার ক্লাস টেন এ পড়ছে। আমার শশুড় মশাই আমার বিয়ের আগেই মারা গেছেন হার্ট এট্যাকের ফলে। আমরা বর্তমানে ছয় জন ছিলাম পরিবারে। আমার দুই মেয়ে আর ননদ, শাশুড়ি মাকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিলো। ছেলে না হওয়ায় শাশুড়ি মা দু একটা কটু কথা শোনাতো আমায় তখন আদিল যেনো আমার সামনে ঢাল হয়ে দাড়াতো”।

“কিন্তু বর্তমানে মায়ের যেনো এরকম ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তিনি মনে করেন তার বংশ রক্ষার জন্য একটি ছেলে প্রয়োজন যেটা আমি পূরন করতে পারছি না! আর সেই কারনে ওনার যতো কটু কথা শোনানো আমাকে। মাঝে মাঝে তো বলেন ওনার ছেলেকে নাকি আরেকটি বিয়ে করাবে! আদিল সবটা নিরব দর্শকের মতন শুনে যায়। আদিল এ নিয়ে মাকে কিছুই বলে নি। যেনো মা যা বলছে সবটাই ঠিক বলছে। কোন ভুল ই নেই মায়ের কথাতে”।

“আর সাথে সাথে আদিল এর ব্যবহার ও কেমন জানি পাল্টে যাচ্ছিলো। বাসায় খেতো না ভালো করে, সকাল বেলা অফিসে গেলে আগে আমাকে কতোবার ফোন করে খোঁজ খর নিতো, কিন্তু এখন সে সকালে যায় আর ফিরে রাত এগারো টা বারোটা বাজে! কিছু জিগেস করলেও অফিসের কাজ আছে বলে চুপচাপ করে শুয়ে পড়ে। কোন দিন তো বাসায়ই আসতো না! শুধু ফোন করে বলে দিতো আজকে কাজ আছে আমি আসতে পারবো না ব্যস! আর মেয়েদের কেও যেনো আজকাল আদিল আর কাছে নেয় না। বরং ওরা যদি আদিল এর কাছে যায় আদিল ওদের কেও একটু কোলেও নিতো না ! তার কাজ আছে বলে চলে যেতো। আদিলের এরকম ব্যবহার কয়েক মাস যাবত লক্ষ্য করেছিলাম, কিন্তু কিছু বলিনি। ভাবতাম ও হয়তো সত্যিই কাজে ব্যস্ত। আর ওর এই ব্যস্ততা, কাজ, আমাদেরকে সময় না দেওয়া, ভাবতাম এগুলো তো আমাদের জন্যই করছে”।

–কিন্তু সকালবেলাই দরজা খুলে এরকম একটি দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পাবো কখনো ভাবি নি! সকালবেলা নাস্তা বানিয়ে সবেই বের হচ্ছিলাম মেয়ে দের স্কুলে দিয়ে আসার জন্য। ঠিক তখনি আদিল হাজির হলো তার স্ত্রী কে নিয়ে। তখন যেনো দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছিলো। মেয়েদেরকে বাসে ওঠিয়ে দিয়ে আসলাম, ওদের এখন বাসায় না থাকাটাই শ্রেয়। আর রাস্তায় ভাবতে লাগলাম আদিল কেনো এমনটা করলো? এর জন্যই আদিল এর ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছিলো দিনকে দিন। ওসব কাজ তো বাহানা ছিলো আসল কথা হলো ও ওই মহিলাটির সাথে সময় কাটাতো!

–রুমে ঢোকার সাথে সাথেই মনে হলো, এ রুম, ঘর বাড়ি, এখন আর কিছুই তো আমার রইলো না! এর সবকিছুর উপর আরেকজন দাবিদার চলে এসেছে!

কিন্তু আমি কি করবো? আদিল কেনো করলো এমনটা? আমার মাঝে কি এমন কমতি ছিলো, যে ও এরকম একটা কাজ করলো! আমার বিশ্বাস কেনো ভঙলে আদিল? বারো বছরের সংসার ছিলো আমাদের। কোনো কিছুর কমতি ছিলো না কখনো, কোনো দিক দিয়ে আমরা অসুখী ছিলাম না তাহলে?

আদিলকে সব বলতেই হবে আমাকে,
রুমে গিয়ে দেখতে পেলাম যেখানে আমি আর আদিল ঘুমোতাম সেখানে ও আয়েস করে ওই মহিলাটিকে নিয়ে শুয়ে রয়েছে!

রোজা : আদিল বাইরে এসে আমার কথা শুনে যাও। এরকমটা কেনো করলে তুমি? এই মেয়েটি কে তোমার সাথে? এভাবে আমাদের বেডরুমে কেনো রয়েছে মেয়েটি? বলো আমাকে? বলো?

আদিল: দেখো রোজা আমি সত্যি ই বলছি ও আমার দিত্বীয় স্ত্রী। ওকে বিয়ে করেছি আমি প্রায় এক বছর হতে চললো। ও এতোদিন একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতো কিন্তু ওর এই অবস্থায় আমি চাচ্ছি না রিনির কোনো অবহেলা হোক। কারন রিনির গর্ভে আমার সন্তান রয়েছে। তাই জন্যই আমি ওকে বাসায় এনেছি। আর আমি তো একবারো বলিনি বলো যে তোমাকে আমি ডির্বোস দিয়ে দিবো। আমি তোমাদের দু’জন কেই সমান অধিকার দিবো। কিন্তু এসময় রিনির পাশে থাকাটা আমার স্বামী হিসেবে দায়িত্ব। তুমি সবটা মেনে নিয়ে যেমন ছিলে তেমনই থাকো। কোনো অশান্তি করবে না এটা নিয়ে। কারন আমি রিনিকে বাড়িতে এনেছি ওর খেয়াল রাখার জন্য। ওর সাথে বিন্দু পরিমানও খারাপ আচরন তুমি করবে না রোজা। কথাটা যেনো মাথায় থাকে।

নিজের স্বামীর মুখে এসব কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে রইলাম। যেনো মাথায় সমগ্র আকাশ এসে পড়েছে। হয়তো সমগ্র আকাশ এসে পড়লেও এতোটা কষ্ট পেতাম না যতোটা কষ্ট পেলাম আদিল এর এই কথা গুলো শুনে।

আদিল:দেখো রোজা আমার কথাটা আগে তুমি শুনো তারপর আমাকে প্রশ্ন করো। তোমার এই সংসারে কোনো অবহেলা আমি হতে দিবো না। আগে যেমন ছিলে তেমনটিই থাকবে। তুমি আমার মেয়েদের দেখাশোনা করবে, রান্না বান্না করবে, আমার মায়ের সেবাযত্ন করবে, পুরো ঘরটাকে আপাততো তুমিই সামলাবে, আর শোনো রিনির ও এখন বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে বুঝেছো? কারন ও এখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট। ওকে কোনো কাজ করতে দেওয়া যাবে ন। ও যা চাইবে তুমি তাই করে দিবে ওকে। ওর যত্নে কোনো এুটি হোক সেটা আমি চাই না। রিনির বাবা মা কেউই নেই। তাই আমাকেই এখন সর্বক্ষন থাকতে হবে রিনির পাশে।

কি নিষ্ঠুরতম বাক্য শোনাচ্ছে আমায় আদিল! ও কীভাবে এতো সাবলীল ভাবে আমাকে এতো গুলো কথা বলতে পারলো? আমার কি কষ্ট হয় না? নাকি এক মুহুর্তেই সব ভুলে গেলো!

রোজা: মানে কি! তুমি আমারি সামনে আমারই স্বামী হয়ে আমাকেই বলছো তোমর দিত্বীয় স্ত্রী কে মেনে নিতে! তোমার কি বিন্দু পরিমান ও লজ্জা নেই? এখানে আমার দোষ কি? কেনো আমাকে ছেড়ে তুমি দিত্বীয় বিয়ে করলে? এমনটা তো হবার কথা ছিলে না! তাহলে কেনো করলে? আমাদের মেয়েদের নিয়ে আমরা সুখী থাকতে পারতাম না! বলো? চুপ করে থেকো না? বলো আমাকে?

আদিল :তাহলে শুনো, কারনটা……..?

বিঃদ্রঃ আমি নতুন লেখিকা ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দিত্বীয় পর্ব তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য সবাই লাইক কমেন্ট করে উৎসাহিত করবেন । আর কেউ কপি করবেন না ❌❌

#পর্বঃ১
#লেখিকা #তানজিনা_মেহরিন_মিশু
#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here