আসমানী ও জ্বীন পর্ব -১০+১১+শেষ

#আসমানী_ও_জ্বীন
#১০+১১(শেষ পার্ট)
#ইসরাত_জাহান_এশা

আসমানী, নুহা আর রাইয়ান দ্রত জঙ্গলে চলে গেলো। জঙ্গলে তারা অনেক খোজাখুজি শুরু করল কিন্তু কোথাঔ সেই কালো গোলাপের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আসমানী পাগলের মত হন্য হন্য হয়ে খুজতে থাকে কিন্তু পুরো জঙ্গলে কোনো ফুল গাছই দেখা মিলছে না।

রাইয়ান মনে মনে চিন্তা করছে আচ্ছা নিশিকাল তো মিথ্যাও বলতে পারে এতোদিন আমি এই জঙ্গলে ছিলাম কখনো তো এমন কোনো ফুল চোখে পড়েনি৷ ভাবতে ভাবতে রাইয়ান একটা গর্তে পড়ে যায়। নুহা আর আসমানী রাইয়ান কে গর্ত থেকে উঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।

রাইয়ান—আরে তোমরা এমন টানাটানি করো না আমি উঠতে পারবো আমি জ্বীন বারবার ভুলে যাও কেনো?
নুহা— হ্যা তাই তো উঠে আয় শুধু শুধু সময় নষ্ট। আচ্ছা রাইয়ান এখানে কোথাও পানির ব্যবস্থা নাই।

রাইয়ান গর্ত থেকে উঠে বলে আচ্ছা ভালো কথা মনে করছেন সামনে একটা ছোট কুয়োর মতো আছে সেখানে অনেক ফুল ফোটে। আমাদের সেখানেই যাওয়া উচিৎ।
সাথে সাথে তারা কুয়োর কাছে চলে যায়। কুয়োর মাঝখানে একটা কালো গোলাপ গাছ। আসমানী খুশিতে কুয়োর পারে দাড়াতেই আসমানীর সুন্দর্য্য পানিতে ফুটে উঠে। রাইয়ান পানিতে আসমানীর এমন প্রতিবিম্ব দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
নুহা রাইয়ানের ব্যপার টা বুঝতে পেরে আসমানীকে পানির সামনে থেকে সরে আসতে বলে। আসমানীও ওস্তাদজীর কথা মনে পড়তে দূরে সরে আসে।

রাইয়ান পানিতে আর কোনো প্রতিবিম্ব না দেখতে পেয়ে একটু চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকেত থাকে।
নুহা— আসমানী আমি তোমাকে গোলাপ গাছের কাছে যাওয়ার জন্য সাহায্য করব। তুমি আমার হাত ধরো। আসমানী নুহার হাত ধরতেই তারা চোখের পলকে গাছের কাছে পৌঁছে যায়। এদিকে রাইয়ান ভেবলার মতো কিছু একটা ভাবছে। কি ভাবছে তা নিজেও জানে না।

আসমানী গোলাপ গাছে স্পর্শ করতেই ২০ বছরের এক যুবক সেখান অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকে। নুহা আসমানী আর ওর ভাই অসীম কে নিয়ে কুয়ো থেকে জঙ্গলের মাঝে আসে।
অসীমের জ্ঞান আসলে জিজ্ঞেস করে আমি এখানে কেনো?
আর আপু তুমি এখানে? কোথায় আছি আমরা?

আসমানী— ভাই তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো?
অসীম— হ্যা আপু চিনতে পেরেছি।
আসমানী অসীম কে সব কিছু খুলে বলে। অসীম পিশাচদের কথা শুনে চোখ দুটো লাল বর্ন হয়ে যায়।

অসীম— চলো আপু আর এক মুহূর্ত দেড়ি না বাবা মা আর দাদা কে এখনি খুজে বের করতে হবে।
আসমানী — চলো ভাই আমরা সামনে আগাই।

এদিকে রাইয়ান এর মাথায় কিছু ঠুকছে না। সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো পানিতে ও কার প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো নিমিষেই যার মায়ায় পড়ে গেছে। চোখ বন্ধ করলেই শুধু সেই প্রতিবিম্ব ভেসে উঠে।
আসমানী,অসীম, নুহা এরা সামনে আগাতে থাকে। কিন্তু রাইয়ান আসমানীর পানিতে পড়া প্রতিবিম্ব নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়।

নুহা— কিরে রাইয়ান তুই যাবি না?
রাইয়ান কথাটা শুনেই চমকে উঠে বলে হ্যাঁ যাবো তো।
নুহা— তুই কি কিছু ভাবছিস?
রাইয়ান—- নাহ কি ভাবব এমনি।

কিন্তু নুহা রাইয়ানের বিষয়টা বুঝতে পারে। কিন্তু এখন কিছু বলছে না পড়ে ওকে সাবধান করা যাবে।

আসামনী, নুহা, রাইয়ান,অসীম চারজনে হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এগিয়ে গেলো। প্রায় চন্ডিদের জঙ্গলে কাছাকাছি আসতেই আসমানি একটা গর্তে পড়ে যায় আর পড়ার সাথে সাথে গর্তটাও মিলিয়ে যায়।
<>

অধরা— তুমি কার কথা বলছ মা?
চন্ডী— আফিয়ার আর আমিরের কথা বলছি ওরাই তোর বাবাকে বন্ধী করে রাখে।
অধরা— কিন্তু কেনো মা?
চন্ডি— শোন আমরা ছিলাম পিশাচ জাত শয়তান লুসিফারের উপসনা করি মানে যাকে আমরা প্রভু মানি। আমরা মানুষের যতো প্রকার খারাপ কাজগুলো সব তান্ত্রিকদের কথায় করে দিতাম। যেমন– বিবাহ আটকানো, বিবাহ বিচ্ছেদ ঝগড়া ঝাটি পারিবারিক অশান্তি কাউকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা ভয় দেখানো ইত্যাদি। এমন কোনো খারাপ কাজ ছিলো না যা আমরা করতাম না।

ভাগ্যক্রমে আমিরের বাবা জয়নাল হুজুরের মেয়েকে আমরা চরম ভাবে কষ্ট দেই একটা তান্ত্রিকের কথায়। জয়নাল হুজুর বিষয়টা যখন টেরপায় তখন তোর বাবাকে বন্দী করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তখন কোনো উপায় অন্ত না পেয়ে আমি ঐ মেয়েটাকেই মেরে ফেলেছি।

মেয়ের শোকে জয়নাল হুজুর অনেকটা ভেংগে পরে তখন তাকে আমি বন্দী করার চেষ্টা করি। অনেক কষ্টে তা পেরেও যাই। কিন্তু তখন সমস্যা করেছিল তার ছেলে আমির সে তার বাবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা চালায় যাতে আমাদের বড় বড় শক্তিগুলো নষ্ট করে ফেলে। তারপর থেকে আমার দলের সব পিশাচরা তাদের শক্তি হাড়িয়ে ফেলে।

অনেক চিন্তা ভাবনা করে অন্য এক তান্ত্রিকের মাধ্যমে জানতে পারি ভবিষ্যতে আমির তুই যেখানে ছিলি ঐ বাড়ির বড় মেয়েকে বিয়ে করবে। তখন তুই অনেক ছোটো একদম আফিয়ার ছোটোবোনের মত। তাই গুরুজীর কথা মত আমি তোকে আফিয়ার ছোটো বোনের সাথে বদলে দেই। আর আফিয়ার ছোটো বোনকে এনে শয়তানের নামে বলিদেই।

এরপর আমির বিয়ের পর যখন ওর ২টা বাচ্চা হয় তখন আরেক তান্ত্রিক দিয়ে আফিয়াকে আর ওর ছেলেকে বন্দী করি। পরে আমীরের মেয়েকে দেখাশুনার জন্য তোকে আবার বিয়ে করে সেই সুযোগে আমিরকেও চাঁদনী হওয়ার পর বন্ধী করে নিয়ে আসি।
কিন্তু ঐ তান্ত্রিক বলেছিল এতো সহজে সব ঠিক হবে না কেউ একজন এসে হয় আমাদের ধংশ করবে না হয় আমরা ধংস করব।

অধরা— সে কে মা?
চন্ডি— জানিনা এখনো।
অধরা— আচ্ছা মা জাদু আয়নাকে জিজ্ঞেস করি?
চন্ডি —- হুমম করে দেখ।
অধরা— জাদু আয়না জাদু আয়না।
উষা— কতবার বলেছি আমাকে উষা বলে ডাকবে।
অধরা— চুপ বেয়াদব! বল কে আমাদের শত্রু যে আমাদের মারতে আসবে।
উষা আয়নায় আসমানিকে আর অসীম কে দেখিয়ে দেয়।

অধরা চিৎকার দিয়ে বলে আসমানী? এতোদিন দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি?
চন্ডী— তুই চিনিস?
অধরা— মা ও তো আমিরের বড় মেয়ে আসমা।কিন্তু ছেলেটা কে?
চন্ডী— কি বলিস? এটা আগে জানলে ওকে তো আগেই মেরে ফেলতাম। আর ঐ ছেলেটা তো অসীম আমিরের ছেলে তার মানে৷ ও মুক্তি পেয়ে গেছে।
আমাদের এখনই কিছু একটা করতে হবে।
চন্ডি আর অধরা দৌড়ে গুরুজীর কাছে যা সেখানে।গ্রামকে মায়াদ্বারা আটকানো তান্ত্রিক উপস্থিত হয়। গুরুজি দু’জন কে একসাথে দেখে চমকে উঠে। একি তোমরা দু’জন এখানে?
এবার চন্ডি আর তান্ত্রিক সব গুরুজির কাছে খুলে বলে।

শোনো কিছু করার নেই হয় ওরা মরবে না হয় তোমরা এখন তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে বাচাওঁ ওদের সাথে শক্তিশালী একজন আছে। যে তোমাদের চোখের পলকে বন্দী করবে।
<>
আসমানি নুহা,রাইয়ান অসীম কাউকেই দেখতে পায় না। আসমানী চারদিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে সব জায়গায় শুধু আসমানীকে দেখা যাচ্ছে। আসমানি বুঝতে পারে এখানে আয়না লাগানো তাই সব জায়গাতেই আসমানী কে দেখা যাচ্ছে। আসমানি এবার আস্তে আস্তে সামনে আগাতে থাকে।

হটাৎ আসমানী দেখতে পেলো একটা দৈত্য কয়েকটা ছেলে মেয়েকে আয়না বন্ধি করছে। আসমানী এবার দৈত্য কে বলে উঠে।
—- কে তুমি কি করছ এসব?
—- আমি দৈত্য তুই কে?
—- আমি আসমানি। তুমি সবাইকে আয়না বন্ধি করছ কেনো?
—- সেই কৈইফত তোকে দিব নাকি?
—- হ্যাঁ দিবে।
দৈত্য রেগে আসমানীর গায়ে আগুনের গোলা ছুড়ে মারে কিন্তু আগুন আসমানীকে স্পর্শ করেনা। দৈত্যের জাদু পুনরায় দৈত্যের দিকে ফিরে যায়।
দৈত্য রেগে এবার আসমানিকে জিজ্ঞেস করে সত্যি করে বল কে তুই। কেনো এসেছিস আমার কাজে বাঁধা দিতে?
— আমি কারো কাজে বাঁধা দিতে আসিনি। যাচ্ছিলাম পিশাচদের মারতে।তাদের থেকে আমার বাবা মা কে উদ্ধার করতে, কিন্তু দূর্ভাগ্য ক্রমে এখানে এসে পরে আমি আমার সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেছি।
দৈত্য বুঝতে পারে এ আমাদের শত্রু যেভাবে হোক এই মেয়েটাকে বন্দী করতে হবে।

দৈত্য আসমানীকে বন্দী করার জন্য বুদ্ধি খোঁজে কিন্তু আসমানীর উপর কোনো জাদুই প্রয়োগ করতে পারছে না। তাই দৈত্য আসমানীকে বলল আচ্ছা তুমি আমার মেহমান ঘুরে ঘুরে আমার আস্তানা দেখো৷ পরে তোমাকে সব খুলে বলব।
— আচ্ছা।

আসমানী চারদিকে ঘুরে দেখতে শুরু করে৷

এদিকে নুহা অসীম রাইয়ান আসমানীকে না দেখে চিন্তায় পরে যায় নুহা দ্রুত ওস্তাদজীর সাথে দেখা করে। তিনি নুহাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে চিন্তা করো না আসমানীর কিছু হবে না৷

নুহা— কিন্তু ওস্তাদজী কোথায় আছে সেই খবর তো পাচ্ছি না।
ওস্তাদজী— দাড়াও আমি দেখছি তোমরা ততক্ষণে খোঁজাখুজি করো।

রাইয়ানের মন কেমন যেনো ছটফট করছে রাইয়ান বার বার খালি ভাবছে ওর যদি কিছু হয়। যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে। নুহা আর অসীমের থেকেও রাইয়ান বেশি চিন্তা করছে।

ওস্তাদজী ধ্যানে বসল কতক্ষণ পর সে দেখতে পেলো আসমানী আয়নার জগতে চলে গেছে৷ ওস্তাদজী সাথে সাথে করীম সাহেবকে ডাকে।
—- কি করা যায় বলতো আসমানী তো আয়নার জগতে চলে গেছে।
করীম সাহেব—- চিন্তা করবেন না। আসমানী ঠিক ফিরে আসবে।

আজ করীম সাহেবের বাড়িতে এক বুড়ি এসেছে ভিক্ষা চাইতে করীম সাহেবের মেয়ে অবনী দরজা খুলে বুড়িকে দেখে চমকে উঠে একদম ফকফকা ফর্সা।
অবনী— নানু কে আপনি?
বুড়ি— আমি ভিক্ষা করি মা। তুমি আমাকে কিছু খাইতে দিবা?
অবনী — হ্যা নানু বসেন।

অবনী বুড়িকে ঘরে যা ছিল তাই খেতে দিল। হটাৎ ওর বাবার কথা মনে পড়ল। ওর বাবা ওকে বলেছিল এক বুড়ি আসবে ভিক্ষা করতে তাকে যাওয়ার সময় যেনো কিছু দিয়ে দেই।
কিন্তু অবনীদের ঘরে ঐরকম দেওয়ার মতো কিছু নেই তাই বাধ্য হয়ে অবনীর হাতে সেলাই করা নকশীকাঁথাটা দিয়ে দেয়।

অবনী— নানু এটা রাখুন।
বুড়ি— এটা কি তুমি সেলাই করেছো?
অবনী— জ্বী।
বুড়ি— আচ্ছা মা আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিক। বলেই বুড়ি হাঁটা শুরু করল।

ওস্তাদজী নুহাকে বলে শোনো আসমানী আয়নার জগতে চলে গেছে।
নুহা— তো আমরা এখন পৌঁছাবো কি করে?
ওস্তাদজী— শোন ঐখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটা বড় বড় হিজল গাছ আছে সেখানে একটা বুড়ি থাকে বুড়ির হাতে একটা নকশীকাঁথা আছে দেখলেই বুঝতে পারবে সেও আয়না বন্দী নিশ্চয়ই আয়নার জগত চিনে। তবে নকশীকাথা ছাড়া আরো বুড়ি আছে তাদের সাথে কথাও বলবে না।
যার কাছে নকশীকাঁথা তার কাছেই জিজ্ঞেস করবে।

নুহা রাইয়ান অসীম ওস্তাদজীর কথা মতো সেখানে চলে গেলো কিন্তু অনেক বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পেলো কিন্তু ঐরকম কউকে কে দেখতে পেলো না।
প্রায় ঘন্টা খানিক সেখানে বসে থাকার পর দেখতে পেলো একটা বুড়ি গুটি গুটি পায়ে হিজল গাছের দিকে হেঁটে আসছে। আর তার হাতে রয়েছে একটা সুন্দর নকশীকাঁথা।
বুড়িকে দেখে সবাই বুড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়না জগতের কথা। কিন্তু বুড়ি নিশ্চুপ কিছু বলতে চায় না।
নুহা বুড়িকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে বুড়ি যা চাইবে তাই দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে।

তখন বুড়ি বলে তাহলে আসো আমার সাথে।তারপর একটা আয়নার পাশে ওদের নিয়ে গিয়ে বলে সবাই এই আয়নার উপর হাত রাখো।
হাত রাখার সাথে সাথে সবাই আয়নার জগতে চলে গেলো।

দৈত্য আসমানীকে বন্দী করার অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয় তখন চন্ডি কে ডাকতে চায়। কিন্তু তার আগেই বুড়ি গিয়ে দৈত্য কে বাঁধা দেয়। দৈত্য বুড়িকে দেখে বলে ওঠে তুই এখানে কি করে?
— তোর দিন শেষ তাই দেখতে এলাম এবার মনে হয় আমরা মুক্তি পাবো।
দৈত্য বুড়ির গায়ে আগুন ছুড়ে মারে কিন্তু নুহা সামনে দাড়িয়ে দৈত্য কে বন্দী করে ফেলে তখন বুড়ি চিৎকার দিয়ে বলে উঠে মেরে ফেলো ওকে। ও আমাদের জীবন নষ্ট করে ফেলেছে বন্দী করে ফেলেছে এই আয়নায় বানিয়ে দিয়েছে পিশাচদের দাস।

আসমানী নুহাকে দেখে বলে তোমরা এখানে? আমরা এখানে কেনো? এটা কোথায়?

রাইয়ান আসমানীকে দেখে একটা স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলে বলে। আসমানী এটা আয়নার জগৎ। ভয় পেয়েও না আমরা এসে গেছি।
অসীম একটা কোপ দিয়ে দৈত্যকে শেষ করে ফেলে।

বুড়ি— আমাদের কে বাঁচাও আমাদের সবাইকে মায়া আয়নায় বন্দী করা হয়েছে।

আসমানী এবার আয়না গুলোর মায়া কাটিয়ে সবাইকে মুক্ত করে দেয়। পাশের বুড়িটা হয়ে যায় একটা ১৭ বছরের যুবতী মেয়ে।

আসমানী— কে তুমি?
বুড়ি— আমি উষা একদিন রাত ১টার দিকে বাতরুমে যাই। আমাদের বাতরুমে আয়নায় চোখ পড়তেই আমি একটু দাড়িয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছিলাম তারপর আয়নার মধ্যে একটা কালো ছায়া দেখতে পেলাম তারপর আমার পিছনে তাকিয়ে দেখি না আমার পিছনে কেউ নেই কিন্তু আয়নাতে দেখা যাচ্ছে সামনে তাকাতেই কেউ একজন আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।

নুহা— উষা এতে তোমারো একটু দোষ আছে আমার মনে হয় তুমি আয়না দেখার সময় দোয়া পড়নি আর এতো রাতে আয়না দেখাও ঠিক না।
উষা— হুমম দাদীর মুখে শুনেছি রাতে আয়না দেখা বা মাথা আচরানো এগুলো করলে নাকি জ্বীনদের নজর লাগে স্বামীর হায়াৎ কমে যায়?
নুহা— এগুলো কিছু না শোনো আমার কাছে তাহলে কিছু কথা আছে যেগুলো কুসংস্কার তোমাকে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন তোমরা যখন রাতে বেলা আয়না দেখবে অথবা যে কোনো সময় তোমরা আয়নার সামনে যাবে তখন অবশ্যই এই দোয়াটি পড়বে- আল্লাহুম্মা হাস-সানতা খালক্বি ফা-আহসিন খুলুক্বি । (শু আবুল ঈমান হাদিস নাম্বার 8302)
অর্থ হলো- হে আল্লাহ আপনি আমার চেহারাকে সুন্দর করে দিন এবং এই চেহারর সাথে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দিন (সুবহানাল্লাহ)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, জ্বিনেরা রাতের বেলায় আয়নাতে অবস্থান করে। এমন কি দুষ্ট জ্বিনেরা বাথরুমে সর্বক্ষন অবস্থান করে । এর জন্য আমাদের সকলের উচিত । রাতের বেলা বাথরুম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে অবশ্যই বাথরুমে যাওয়ার দোওয়াটি পড়ে এর পর বাথরুমে প্রবেশ করবো ।

বাথরুমের প্রবেশের দোয়াটি হচ্ছে – আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবসী ওয়াল খাবায়িস । অর্থ- হে আল্লাহ আমি চক্রান্তকারী ও নাপাক শয়তান হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।

আবার যদি কেউ আরবি উচ্চারণ না করতে পারেন তাইলে বাংলাই পড়ে নিতে পারেন ।

রাতের বেলা আয়না দেখা কিংবা বাথরুমে প্রবেশ নিয়ে আমাদের সামজে যে সব গুজবগুলো ছড়িয়ে পড়েছে এর পিছনে অনেক গুলো কারণ দায়ী । আগেকার দিনে রাতের বেলায় সব জায়গায় এখনকার মতো বাতি ছিল না কারণ সে সময় বিদ্যুৎ কম ছিল ।

কিন্তু আমাদের আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আর তা হলো – যেখানে বাতির উজ্জ্বলতা থাকে , সেখানে দুষ্ট শয়তানের অসওয়াসা বা আছর খুব একটা কার্যকর হয় না । যেমন দিনের আলোতে শয়তান মানুষের উপর খুব একটা কার্যকর হয়না , যেটা রাতের আবার কার্যকর হয় । একইভাবে রাতেও যদি বাসায় উজ্জ্বল বাতি জ্বলে হাই ওয়াটের বাতি জ্বলতে থাকে, সেখানেও কিন্তু দুষ্ট শয়তানের কিংবা জ্বিনদের অসওয়াসা খুব কার্যকর থাকে না ।

তাই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করতে গেলে রাতে আয়না দেখা বা বাথরুমে প্রবেশ করা অথবা চুল আচড়ানো এই গুলোর কোনটিইকে নিষিদ্ধ বলা যাবে না । কারণ কুরআন ও সুন্নাহ এগুলোর কোনোটিকে সুস্পষ্ট ভাবে নিষেদ্ধ ঘোষণা করছে না ।

তবে রাতের বেলা ভাঙা আয়নার সামনে দাড়িয়ে কোনো কাজ না করাই ভালো । আর এর কারণ হিসাবে কোনো কুসংস্কার মাথায় আনার প্রয়োজন নেই । ভাঙা আয়নার থেকে যেকোনো মুহূর্তেই দুর্ঘটা ঘটতে পারে, হাত কাটতে পারে, নিচে পড়ে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে । তাই ভাঙা আয়নার সামনে না যাওয়াই ভালো ।

আর চুল আচড়ানোর কথা যদি বলতে হয়, রাসূল সাঃ প্রতিদিন দুই তিন বার করে চুল আচড়াতেন । তিনি চুলকে পরিপাটি করে রাখতে পছন্দ করতেন এবং যারা চুল আচড়ায় না তাদের তিনি অপছন্দ করতেন ।

তো আপনি রাতের বেলা চুল আচড়ালে এতে কোনো সমস্যা নেই । তবে রাতের বেলায় চুল আচড়ানোটা পরিহার করতেই বলেন অনেক মুরুব্বিরা । এর কারণ মূলত একটাই তা হলো রাতের বেলায় আপনি যে চুলটাকে পরিপাটি করছেন তা হয়তো ভালো ভাবে হবে না আলো না থাকার কারণে তাই এই কাজ গুলো দিনের বেলা করাই উত্তম ।

এছাড়া রাসুল সাঃ আয়না সব সময় ঢেকে রাখতেন তাই আমরাও ঢেকে রাখবো । কিন্তু বাজে কোন চিন্তা মনে রাখবো না । জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের কে আল্লাহর আইন মেনে চলার তৌফিক দান করুন ।

অসীম আমাদের এখন আগানো উচিৎ।
আসমানী—- হ্যাঁ কিন্তু আর কতদূর পিশাচদের আস্তানা?
উষা— আমি চিনি চলুন আমার সাথে।

উষা সবাইকে পিশাচদের আস্তানায় নিয়ে যায়। আসমানী অসীম কে বলে দেয় আমি এদিকে পিশাচদের বন্দী করব আর তুমি আর রাইয়ান মিলে বাবা, মা,দাদাকে ছাড়িয়ে আনবে।
নুহা— আর ঐখানে রাইয়ানের বাবা মা কেও পাওয়া যাবে।

অসীম—আচ্ছা ঠিক আছে।

অধরা আয়নায় অনেকবার উষাকে ডাকে কিন্তু কোনো সারা পায় না রাগে আয়না ধরে ছুড়ে ফেলে।

অধরা— সব কিছু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ওহহো না এ হতে পারে।

আসমানী পিশাচদের জঙ্গলে প্রবেশ করে বলে উঠে এই জঙ্গলই তো মাঝে মাঝে আমি স্বপ্নে দেখতে পেতাম। এই সেই জঙ্গল এখানেই বাবা মা আছে। আসমানী আস্তানায় প্রবেশ করার আগেই ওরা ২টি দলে ভাগ হয়ে যায়। আসমানী আর নুহা,উষা চন্ডিদের আস্তানার মধ্যে প্রবেশ করে আর রাইয়ান, অসীম দুজন পিশাচদের জঙ্গলে বাবা মা কে খুঁজতে বেড় হয়।

ভিতরে প্রবেশ করে আসমানী অধরাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠে মা তুমি এখানে? তারমানে তুমিই পিশাচ?

পিশাচ গুলো চমকে গিয়ে বলে উঠে তাহলে তোরা এসে গেছিস। তোদের মৃত্যু আমাদের হাতে হা হা হা।

আসমানী— প্রস্তুত হও তোমাদের সময় শেষ৷ মানুষকে অনেক কষ্ট দাও তোমরা।

আসমানীকে পিশাচরা চারদিকে থেকে ঘিরে ধরে। আসমানীর গায়ে চন্ডী তীর মারলে নুহা সাথে সাথে সেটা ধরে নেয়।

চন্ডী— নুহাজ্বীন তুইও আছিস দেখছি।
নুহা— হ্যাঁ আমার ভুলের জন্য তোরা বেঁচে আছিস। ঐদিন যদি তোদের ফাঁদে পা না দিতাম তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।
চন্ডি— আজকে তোর শেষ দিন।হয় আমরা মরব না হয় তোরা।
নুহা— তোরাই মরবি।
অধরা সবাইকে ওর মায়াজালে আটকে দেয়।

আসমানী— মা তুমি একটা পিশাচ?
অধরা— হ্যাঁ। যদি জানতাম তুই আমার শত্রু তাহলে তোকে আগেই মেরে দিতাম।
আসমানী— চাদনীঁ কোথায়?
অধরা— শয়তানের নামে বলি দিয়েছি।
আসমানী— কি? তুমি না ওর আপন মা ছিলে?
অধরা— চুপ! আমি কারো মা না আমি পিশাচ হা হা হা।

অধরা হাসতে হাসতে আসমানীর গলার কাছে ছুরি ধরে। আসমানী ভয় না পেয়ে দোয়া পড়ে ফু দিতেই অধরা ছিটকে দূরে পাথরের সাথে মাথা থেতলে যায় ওখান থেকে মাটি ভেংগে চুরে নিচে পড়ে যায়।

পিশাচদের আস্তানা কাঁপতে শুরু করে ওদের ঘর ওদের মাথায় ভেংগে পড়ে৷
ঐদিকে ওস্তাদজী পিশাচদের বন্দী করে ফেলে। আসমানী আর নুহা উষাকে নিয়ে তারাতারি বাইরে বেড়িয়ে এসে জঙ্গলে চলে যায়। গিয়ে দেখে অসীম ও বাবা মা কে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

আসমানী বাবা মা কে দেখে দৌড়ে তাদের কাছে যায়।
আফিয়া মেয়েকে বুকিয়ে জরিয়ে বলে উঠে মা আমার কতদিন তোদের থেকে দুরে।

আসমানী— দাদু কোথায়?
অসীম— দাদু মারা গেছে৷
রাইয়ান ওর বাবা মাকে ছাড়িয়ে এনে বলে এই যে আমার বাবা মা কৃতজ্ঞ তোমাদের কাছে তোমাদের জন্যই সবাইকে ফিরে পেলাম।

এর মধ্যে সবার সামনে ওস্তাদজী সামনে এসে বলে আগে যা হয়েছে হয়েছে সব ভুলে যাও বাস্তবে আর কোনো প্রভাব পরবে না আশা করি।
সবাইকে বন্দী করে ফেলেছি। ভালো থেকো তোমরা। কথা গুলো বলেই ওস্তাদজী হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
আমির— আমাদের সবাইকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। এই জয়গায় বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। পড়ে সবার সাথে দেখা হবে।
বলতে না বলতে খুব জোরে বাতাস শুরু হয়,,,,
<>

অসীম—-আপু এখনো শুয়ে আছো? আজ তোমাকে দেখতে আসবে।
আসমা— উফফস ঘুমাতে দে রাতে ভালো ঘুম হয়নি। আর শোন বাবা মা কে বল আমি বিয়ে করব না।
অসীম– কেনো করবি না? তোর কোনো পছন্দ আছে?
আসমা— কি যে বলিস না পছন্দ করার সময় কই। আমি তোদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।

আফিয়া বেগম ঘরে ঢুকে রাগী দৃষ্টি ছেড়ে বলে উঠে অনেক হইছে। এতোদিন তোমার অনেক কথা শুনেছি আর না। তারাতারি রেডি হয়ে নিচে চলে আসো।
চল অসীম নিচে তোর বাবা ডাকছে।

আসমা বিছানায় বসে বসে ভাবে কি স্বপ্ন দেখলাম যার আগা মাথা কিছুই পেলাম না মনে হয় বছর খানিক ঘুমিয়ে ছিলাম। টাইম মেশিনে আটকে ছিলাম৷
ধ্যাত কি ভাবছি স্বপ্ন তো স্বপ্নই আমিও না। যাই ফ্রেশ হয়ে নিচে। আজ নাকি কে আবার দেখতে আসবে।

বিকেলে আসমা ছেলে পক্ষের সামনে বসে আছে আছে। একটু মাথা উঁচু করে দেখে রাইয়ান বসে আছে আসমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রাইয়ানের দিকে।

রাইয়ান একটু হালকা কাশি দিয়ে নিচে তাকায়। আসলে আসমানীর তাকানো দেখে রাইয়ান নিজেই লজ্জা পেয়েছে।
আসমানীও এবার লজ্জা পেয়ে যায়। উফফ কি বেহায়া আমি স্বপ্নের কথা ভাবছি কেন। কি যে হচ্ছে আমার সাথে আল্লাহ মালুম।

রাইয়ান আর ওর মা আসমানীকে দেখে চলে গেলো। রাতে জানালো মেয়ে ওদের ভিষণ পছন্দ হয়েছে। এই সামনে শুক্রবার বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে চায়।
আসমানীর বাবা মা তারাও রাজি হয়ে যায়। শুক্রবার আসমানীর আর রাইয়ানের বিয়ে হয়।

বাসরঘরে~~

রাইয়ান— তোমাকে একটা কথা বলতে চাই কিছু মনে করো না।
আসমানী— বলুন শুনছি।
রাইয়ান— তোমাকে কোথায় যেনো দেখেছি।
আসমানী— স্বপ্নে মনে হয়।
রাইয়ান— রাইট, তুমি কিভাবে জানলে?
আসমানী— আমিও আপানকে স্বপ্নে দেখেছি।
রাইয়ান— এটা কিভাবে সম্ভাব।

তখন হুট করেই নুহা আর রাইয়ান জ্বিন চলে আসে আসমানী তাদের দেখে ভয় পেয়ে রাইয়ানের পিছনে গিয়ে লুকায়।

নুহা— ভয় পেও না আমরা দু’জন তোমাদের শুভকামনা জানাতে এসেছি। আর তোমরা যে স্বপ্নের কথা ভাবছ আসলে তা সত্যি। যেটা বাস্তবে হয়ে এসেছে। কিন্তু তোমাদের বর্তমানে তা কিছুই মনে থাকবে না।
রাইয়ান— ভালো থেকো আসমানী। তোমরা দু’জন সূখী হও। আসলে আমি মানুষ রূপে তোমার স্বামীর রূপ ধারন করেছিলাম তাই তুমি আমার জায়গায় রাইয়ান কে দেখতে পেয়েছো।

আসমানী আর রাইয়ান একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে তাহলে সবই আমাদের সাথে হয়েছিল? স্বপ্ন হলেও সত্যি!

নুহা আর রাইয়ান জ্বিন দুজনেই শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেলো।

২ বছর পর রাইয়ান আর আসমানীর ১টা ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। নাম রাখে জায়ান। একটা সুখী পরিবার।

(সমাপ্ত)

(বানান গুলো একটু বুঝে পড়ে নিবেন। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here