আসমানী ও জ্বীন পর্ব -০৫+৬

#আসমানি_ও_জ্বীন
#৫+৬
#ইসরাত_জাহান_এশা

ওটা কি এত্তো সুন্দর?
— তুমি দূর থেকে একে যতটা সুন্দর দেখছ কাছাকাছি এটা ততটাই বিশৃঙ্খল।
— কিন্তু কেনো?
— কারন এখানে মায়ার জাল ফেলা তোমার নজর বন্ধির মত তুমি দেখবে স্বর্ন আসলে সেটা মাটি।
— কি বলছ এমনও হয়?
ওমনি কিছু লোকের গমগম আওয়াজ শোনা গেলো মনে হচ্ছে বড় কোনো হট্টগোল হচ্ছে।
আসমানীর কানে আসতেই আসমানি নুহা জ্বীন কে বলল দেখো নুহা আমার মনে হয় ঐখানে নিশ্চিত কোনো গন্ডগোল হয়েছে আমরা বরং গিয়ে দেখি।
— না আসমানী না আমাদের হাতে সময় অনেক কম।
— কিছু হবেনা চলো তো।

নুহা আর আসমানী আস্তে আস্তে ভিতরে প্রবেশ করল। কিন্তু ওরা কিছুতেই ভিতরে যেতে পারছে না যতো সামনে আগাচ্ছে ততই পিছনে চলে যাচ্ছে রাস্তা আগানো তো দূরে থাক আরো পিছনে চলে যাচ্ছে।
তবে নুহা যেহুতু জ্বীন সে বাতাসের সাথে চলতে পারে কিন্তু আসমানী পারছে না।

<>
—- রানী মা আমাদের গ্রামে কেউ হয়তো প্রবেশ করতে চাইছে বার বার কুপ থেকে আগুনের বলয় তৈরি হচ্ছে আর উপরে ভেসে উঠছে।
—- তুরা এগুলো তুই কি বলিস কার এতো বড় সাহস যে ভিতরে প্রবেশ করার চিন্তা করছে। তারাতারি পথ আটকানোর চেষ্টা কর। এদিকে পানি শুকিয়ে গেছে নিশ্চয়ই কুর্তাবা নারাজ। চারদিক খা খা করছে আর কতো অপেক্ষা করব আমরা পানি পাবো কোথায়? কোনো তো একটা উপায় বেড় করতে হবে।
—রানী রজ্জুরূপী যদি অভয় দেন তাহলে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
— হ্যা বলো৷
— আমাকে একজন আগন্তুক লোক বলেছেন যদি পানি পেতে চাও তাহলে কোনো যুবতী মেয়েকে কুর্তাবার নামে বলি দাও তাহলে সে খুশি হয়ে তোমাদের পানি দিবে।
— কি বলো এটা তো মারাত্মক কাজ? কিন্তু পানি তো দরকার তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।
—- তাহলে কি আবার উপসনা শুরু করবো রানী রজ্জুরূপী?
— হ্যা তাই করো না হলে পানি ব্যতিত আমরা মারা যাবো।
— তাতে তো কোনো এক যুবতী কন্যা কে এই কুপে কুর্তাবার নামে বলি দিতে হবে।
—- সেটাই করো।
—- কিন্তু রানী মা কেউ তো তা রাজি হবে না তার কন্যাকে দিতে। জোরপূর্বক তুলে আনতে হবে৷
—- রাজি না হলে তাই করো কিন্তু পানির দরকার এভাবে হলে তো চলবে না। ধংস হয়ে যাবো আমরা পানি আমাদের দরকার তারাতারি যাও কোনো এক সুন্দরী যুবতীকে ধরে নিয়ে আসো।

রজ্জুরানীর সৈন্যরা গ্রামে প্রথমে সবার সাথে আলোচনা করে কিন্তু কেউ তার মেয়েকে বলি দিতে রাজি নয়। রজ্জুরানীর সৈন্যরা উপায় অন্ত না পেয়ে জোরপূর্বক সেই গ্রাম থেকে একটা যুবতী মেয়ে ধরে আনে।

<>
—কি করব এখন আমরা তো আগাতেই পারছি না। ভিতরে প্রবেশ না করতে পারলে জানব কিভাবে কি হচ্ছে।
— আচ্ছা আসমানী একটা বুদ্ধি আছে।
— আমি তো জ্বীন আমার প্রবেশ বাঁধা আসবে না কিন্তু তোমার বাঁধা আসছে এই কাঠিটা হাতে রাখো তাহলে তুমিও বাতাসের সাথে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে।
— আচ্ছা দাও

আসমানী আর নুহা বাতাসের সাথে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করে দেখতে পেলো ভিতরে নানা রকম মন্ত্র পড়ে একটা কালো বিড়ালের উপাসনা করা হচ্ছে।
সবাই নাচ গান করে কুর্তাবা কে ডাকছে।

সামনেই বসে আছে রানী রজ্জুরূপী আর তার স্বামী রুদবা।
এবার সেই যুবতীকে কুর্তাবা নামক কালো বিড়ালের মূর্তীর সামনে আনা হলো আস্তে আস্তে তাকে অর্ধ উলাঙ্গ করে হাত পায়ে বেড়ি বেঁধে নিচে শুয়ে রাখা হলো।

আমাকে এভাবে মেরো না,,, এভাবে মেরো না কেউতো বাঁচাও,,, মেয়েটি বাচার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে উঠে আসার কিন্তু তার শক্তি লোহার বেড়ির কাছে কিছুই না। বাঁচাও বাঁচাও বলে মেয়েটি আর্তনাদ করছে কিন্তু কেউ কোনো কিছু আমলেই নিচ্ছে না নাচ গান মন্ত্র পরে সবাই মেয়েটিকে বলি দিবে সেই আনন্দে ব্যস্ত।

এবার যুবতিকে বলি দেবার পালা
যখনি সেই যুবতীর গায়ে ছুরি দিতে যাবে তখনি আসমানী বলে উঠে কি করছো তোমরা এসব জীবন্ত একজন মানুষকে এভাবে কেনো হত্যা করছ? আর মেয়েটিকে এভাবে অর্ধ উলাঙ্গ কেনো করেছো?

রুদবা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে কে তুমি এতো বড় সাহস তোমার তুমি আমার গ্রামে প্রবেশ করো? আর কিভাবে প্রবেশ করলে তুমি এখানে?

— আমি আসমানী আমি আপনাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে এখানে এসেছি। এই মেয়েটাকে এতো নির্মম ভাবে মারছেন কেনো?
— সেই জবাবদিহি তোমাকে কেনো করব? বন্ধি করো এদের।
সাথে সাথে নুহা আসমানীর সামনে আগুন ছড়িয়ে দেয়। রুদবার সৈন্যরা সব থমকে দাড়ায় কেউ আসমানীর কাছে আসতে পারল না।
রুদবা এবার আসমানীকে বলে উঠে কেনো তুমি আমাদের কাজে বাঁধা দিতে আসছ?

— বিনা কারনে আপনি কেনো এই মেয়েটিকে এভাবে একটা কালো বিড়ালের সামনে বলি দিচ্ছেন।
— মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে নাহলে তোমাকেও বলি দিবো এটা আমাদের প্রভু কুর্তাবার মূর্তি। আমরা তারি উপসনা করছি।
— একটা মুর্তির উপসনা? আর এই মুর্তি যার কোনো প্রান নেই দেখতে বিড়ালের মতো তার উপসনা? কি এর ক্ষমতা যে এই কালো বিড়ালের উপাসনা করছেন?
—- আমরা পানির জন্য উপসনা করছি। আমাদের কুপে এই ২মাসের মতো কোনো পানি নেই আর কুর্তাবা যখন আমাদের উপর রেগে যায় তখন পানি বন্ধ হয়ে যায়। আর আমরা এই যুবতীকে তার নামে বলি দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করব। যাতে খুব তারাতারি পানিতে কুপ ভরে উঠে।
— এসব কি বলছেন এগুলো কোনো কথা? কিছু কিছু মৌসুমে অনেক অনেক জায়গার পানি স্তর কমে যায় হয়ত তেমন কিছু হয়েছে। আর শুনেন এসব কিছু না সব কিছু শুধু একজনের হুকুমেই হয় আর সে হলো আল্লাহ তায়া’লা।
— এই যে শোনো তোমার এসব কথা আমরা শুনতে ইচ্ছুক নই বরং তুমি কোন সাহসে এই গ্রামে প্রবেশ করেছ তার জন্য তোমাকে শাস্তি দিবো। না জানি কুর্তাবা আরো রেগে যায় আমাদের উপর এই তেমরা তোমাদের কাজ শুরু করো (রজ্জুরূপী)
— আমি থাকতে কখনো এমন জঘন্যতম কাজ হতে দিব না।
— পারলে আটকে দেখা আমি এখনি ওকে বলি দিব (তুরা)
—- না তোমরা এমন কাজ করো না। এটা অতি জঘন্য কাজ একটা বার আমার কথা শোনো দয়া করো, তেমরা কি ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) তার কথা জানো?
—- কে সে (রুদবা)
— সে ছিল অর্ধ পৃথিবীর খলিফা।
—- তো কি হয়েছে।
—শোনো তাহলে

২০ হিজরি সনে দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল ‘আছ (রা.)-এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম মিসর বিজিত হয়। মিসরে তখন প্রবল খরা। নীলনদ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সেনাপতি আমরের নিকট সেখানকার অধিবাসীরা অভিযোগ তুললেন,

হে আমীর! নীলনদ তো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম পালন ছাড়া প্রবাহিত হয় না। তিনি বললেন, সেটা কি? তারা বলল, এ মাসের ১৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা কোনো এক সুন্দরী যুবতীকে নির্বাচন করব। অতঃপর তার পিতা-মাতাকে রাজি করিয়ে তাকে সুন্দরতম অলংকারাদি ও উত্তম পোষাক পরিধান করানোর পর নীলনদে নিক্ষেপ করব।

আমর ইবনুল আছ তাদেরকে বললেন, ইসলামে এ কাজের কোনো অনুমোদন নেই। কেননা ইসলাম প্রাচীন সব জাহেলী রীতি-নীতিকে ধ্বংস করে দেয়। অতঃপর তারা পর পর তিন মাস পানির অপেক্ষায় কাটিয়েদিল। কিন্তু নীলনদের পানিতে হ্রাস-বৃদ্ধি কিছুই পরিলক্ষিত হ’ল না। অতঃপর সেখানকার অধিবাসীরা দেশত্যাগের কথা চিন্তা করতে লাগল। এ দুর্যোগময় অবস্থা দৃষ্টে সেনাপতি আমর ইবনুল আছ খলীফা উমর (রা.)-এর নিকটে পত্র প্রেরণ করলেন।

উত্তরে ওমর (রা.) লিখলেন, হে আমর! তুমি যা করেছ ঠিকই করেছ। আমি এ পত্রের মাঝে একটি পৃষ্ঠা প্রেরণ করলাম, যা তুমি নীলনদে নিক্ষেপ করবে।’ ওমরের পত্র যখন আমরের নিকটে পৌঁছাল, তখন তিনি পত্রটি খুলে তাতে এ বাক্যগুলি লিখিত দেখলেন, ‘আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমর-এর পক্ষ থেকে মিসরের নীলনদের প্রতি। যদি তুমি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয়ে থাক, তবে প্রবাহিত হয়ো না। আর যদি একক সত্তা, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তবে আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন।’

অতঃপর আমর (রা.) পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করলেন। পর দিন শনিবার সকালে মিসরবাসী দেখল, আল্লাহ তা‘আলা এক রাত্রে নীলনদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন। তারপর থেকে আজও পর্যন্ত নীলনদ প্রবাহিতই রয়েছে। কখনো শুষ্ক হয়নি। (সূত্র : আল-বিদায়াহ ৭/১০০; তারীখু দিমাশক ৪৪/৩৩৭; তাবাকাতুশ শাফিয়া আল-কুবরা ২/৩২৬)।

— দেখো হয়ত তোমাদের এখানে শুষ্ক মৌসুম চলছে তাই পানি নিচে নেমে গেছে আর তোমরা যার উপসনা করো তার কোনো শক্তি নেই পানি ওঠা নামা করানোর।
— তো তুমি কি পারবে পানি এনে দিতে? (রুদবা)
—-যদি আল্লাহ সহায় হয় তবে অবশ্যই পারব৷
—রাগী কন্ঠে রজ্জুরূপী বলে উঠল তুমি কেনো এই মেয়ের কথা শুনছ রুদবা?
— দাঁড়াও আসলেই কাজটি ঠিক না এতোটা জঘন্য ভাবে একজন মেয়েকে হত্যা করা উচিৎ না। শোনো আসমানী তুমি যদি পানি এনে দিতে পারো তাহলে তুমি যা বলবে আমরা তাই করব।আর যদি না পারো তাহলে তোমার দেহ থেকে মাথা আলাদা করে কূপে ফেলে দিবো।
—- আচ্ছা তাই হবে। আমি আপনাদের গ্রাম ঘুরে দেখতে চাই। আর ঐ মেয়েটাকেও সাথে নিতে চাই।

সব আয়োজন এখানেই শেষ সেই যুবতীর বেরি খুলে মুক্ত করে দেওয়া হয়। তখন যুবতী আসমানী কে জরিয়ে ধরে বলে তুমি আমাদের বাঁচাও এই গ্রাম মায়াজালে আবদ্ধ আছে যার জন্য কোনো কিছু স্বাভাবিক না। দিন রাত গরম শীত কিছু মনে হয় না।

— আচ্ছা তোমার নাম কি?
— জুথি।
— আচ্ছা জুথি কবে থেকে এমন অবস্থা?
— সে অনেক বছর আগের ঘটনা একটা খারাপ লোককে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল চুরির অপরাধে পরে সে কালোজাদু শিখে এই গ্রামে এসে সবাইকে একটা মায়ার মধ্যে ফেলে দেয় আর অনেক রকম শাস্তি দেয় পরে বলে যায় এই কালো বিড়াল কুর্তাবা তার উপসনা করতে তখন থেকেই তারা এমন।

—- তবে তুমি এতো কথা কিভাবে জানো?
— আসলে তুমি আমাকে যেভাবে যুবতী দেখছ আমি মোটেও তা নই আমার বয়স প্রায় ২৫০ বছরের মত ঐ সময় আমি বৃদ্ধ ছিলাম কিন্তু এই মায়ায় পড়ার পর থেকে পরম সুন্দরী আর রূপবতী হই একই ভাবে আছি। কিন্তু আজ যে এটা আমার জন্য কাল হয়ে দাড়াবে বুঝতে পারিনি।
— সব বুঝলাম আমরা যা দেখছি তাহলে তা সব সত্যি না। আবার যা ভাবছি না তাই সত্যি?

—- আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আসমানী(নুহা)
—- তুমি তারাতারি ওস্তাদ এর সাথে কথা বলো। আর কি করতে হবে জিজ্ঞেস করো।

কতক্ষন পর নুহা বলে উঠল তোমাকে এক টুকরো মাটি নিয়ে সূরা ইখলাস, ফালাক,নাস পাঠ করে আমার হাতে দিতে বলছে ওস্তাদজী সব মায়া কেটে দিবেন।

আসমানী খেয়াল করল নিচে কোনো মাটি দেখা যাচ্ছে না সব বালু। আসমানী বুঝতে পারে নাহ এটা বালু না এটাই মাটি তারাতারি এক মুষ্টি বালু নিয়ে সূরা পরে নুহার হাতে দিলো।

এদিকে সেই তান্ত্রিকের আস্তানায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তান্ত্রিক কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না আসলে কি হচ্ছে। সে নিজেকে বাঁচাতে তার আগের আস্তানা ত্যাগ করে অন্য আস্তানায় চলে যায় বাচাঁর জন্য।

সেখানে গিয়ে সে ধ্যানে বসে দেখতে পায় তার দেওয়া সকল মায়া ঐ গ্রাম থেকে উঠে যাচ্ছে সাথে এটাও বুঝতে পারছে তার সময় ফুরিয়ে আসতে চলেছে। এবার সে উপায় খুজছে কিভবে বাঁচবে৷

<>
কিছুক্ষন পর মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলো আস্তে আস্তে চারদিকে বাতাস এসে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে পুরো তিন দিন বৃষ্টি শেষে,,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here