#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১০
.
“আমরা ৩০দিন নয় ৬০দিনের জন্য যাচ্ছি বউ।”
“মানে কি? কাকিমাকে ৩০দিনের জন্য বলেছো না?”
“হুম বলেছি কিন্তু বাকী সবার জন্য ৩০দিন হলেও আমরা ৩০দিন পর বাকীদের সাথে ফিরে যাবোনা। তুমি আর আমি যাবো অন্য কোথাও এদের সাথে ৩০দিন আর আমাদের একান্তে ৩০দিন। আর বাকী সময়টা বাড়িতে থেকে ফিরে যাবো।”
“ফিরে যাবে মানে? তুমি কি আমাকে রেখে আবারো চলে যাবে?”
“এবার আর ৪বছরের জন্য যাবোনা বউ। তোমাকে খুব করে মৃদপাখি বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে গো।”
“তো বলো। তুমি তো মৃদ-ই বলতে কিন্তু আসার পর থেকে একবারের জন্যও বলোনি। আমি প্রশ্ন করতে চেয়েও করিনি।”
“আগে তোমায় সব সত্যি জানাবো মৃদুপাখি তারপর তোমার থেকে আবারো মৃদপাখি বলার অধিকারটা নিবো। তুমি দিলে তো নিচ্ছিই আর না দিলেও আমি বাধ্য ছিনিয়ে নিতে। তোমাকে ছাড়া আমি পারবোনা থাকতে মৃদুপাখি।”
“তোমার এভাবে বলাতে আমার খুব ভয় করছে পরশ। প্লিজ বলো কি বলতে চাও।”
“বলবো তো মৃদুপাখি। আগে বলো আমার সাথে যেতে তোমার সমস্যা নেই তো?
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি পাশে থাকলে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
পরশের কাঁধে মাথা রাখে মৃদু। কিছু একটা মনে পড়তেই মাথা তুলে প্রশ্ন ছুরে-
“শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি সুমেন ভাইকে কেন ভালোবাসতে যাবো? তোমার এমন-ই বা কেন মনে করলে? হ্যাঁ ভালোবাসি তবে ভাই হিসেবে অন্য কিছু নয়।”
“এখন নয় পরে বলবো, আমি একটু ঘুমোবো বউ সারারাত ঘুমোতে দাওনি তুমি।”
“আমি ঘুমোতে দেইনি মানে? তুমি তো আমার সাথেই ঘুমালে।”
“ঘুমাইনি। সারারাত তোমাকে দেখেছি।”
“কেন?”
“সেটা জানিনা কিন্তু খুব ভয় করতেছে মৃদুপাখি। কথা দাও আমাকে ছেড়ে যাবেনা।”
.
.
“আপনি এখানে কিভাবে? আমি আপনার পাশে বসবোনা।”
পরী উঠে যেতে চাইলে তার হাত খুব শক্ত করে ধরে জুনায়েদ। এই মেয়েটার প্রেমে পরে পুরোই বেহায়া হয়ে গেছে সে। বন্ধুদের দেয়া ডেয়ার পূরণ করতে পরীকে মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজেই ফেঁসে যায় সে। সত্য বলার আগেই কেউ পরীকে সেটা বলে জুনায়েদের থেকে দূর করে দেয়। জুনায়েদ শত চেষ্টা করেও পরীর মান ভাঙ্গাতে পারেনি। অনেক বেশিই অভিমানিনী যে মেয়েটা।”
“প্লিজ পরী আমাকে এক্সপ্লেইন করতে দাও।”
“আমি কি এক্সপ্লেনেশন চেয়েছি? আপনার মতো মানুষের সাথে আমার কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।”
.
.
“তুমি এখানে? কেনো এসেছো? আমি তো ভালোনা চরিত্রহীন তাহলে একটা চরিত্রহীনের পাশে কেন বসেছো?”
“সুমেন আমাকে ক্ষমা করা যায়না? ভুল আমার ছিলো সেটা আমি জানতে পেরেছি তবে অনেকগুলো ভুল করার পরে। আম সরি সুমু প্লিজ ফরগিভ মি।”
“ক্ষমা? তুমি করেছিলে? আমার ভুল না থাকার পরেও আমি ক্ষমা চেয়েছি, যদি ভুলেও ভুল করে থাকি মাফ করতে বলেছিলাম তখন তো তুমি করোনি তো এখন আমি কেন করবো?”
.
.
“আশনি একটা প্রশ্ন করবো একটাই উত্তর দিবি।”
“হ্যা ভাই বল।”
“পরশকে ভালোবাসিস?”
আশনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয়-
“হুম অনেক বেশি।”
পরশের বিহেভিয়ার দেখে বুঝা যাচ্ছে ও মৃদুলাকে ডিভোর্স দিবেনা। আমার যে মৃদুলাকে চাই রে। আমি যা বলবো তা তোকে করতে হবে।আশনি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলে-
“ভাই তুমি কিছু না করলেও আমি করতাম।”
.
.
.
একটা মেয়ে হুট করে দাড়িয়ে বলতে শুরু করল-
“তোমরা সবাই কম-বেশী জানো সিলেট সম্পর্কে। অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকলেও আমরা ১৩টা স্থানে যাবো। আর সেগুলো হলো-
রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, লোভাছড়া, হযরত শাহজালাল (রঃ)মাজার, হযরত শাহ্ পরান (রাঃ)মাজার, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্না, পান্থুমাই ঝর্না, ক্বিন ব্রীজ, মালিনীছড়া চা বাগান, লালাখাল, হাকালুকি হাওর, ডিবির হাওর। আমরা ৩-৪দিন প্রত্যেকটি স্থানের জন্য ঠিক করলেও ২-৩টাতে কম সময় থাকবো তাই ১মাসে কভার করতে পারবো।
.
.
মৃদু শকড্। এতো তাড়াতাড়ি পরশ ঘুমিয়ে গেলো? পরশ হয়তো মৃদুর মাথায় বোম্ব লাগিয়ে সেটা কথার মাধ্যমেই ব্লাস্ট করে দিবে। কি এমন বলবে সে? না জানা পর্যন্ত যে শান্তি পাওয়া যাচ্ছেনা। ঘুমিয়ে গেছে ফাজিলটা। মাথা হেলিয়ে পরীকে দেখতেই মৃদু মহা-অবাক। পরীর পাশে জুনায়েদ! পরীর হাত নিজের বুকের বা-পাশে নিয়ে কিছু বলতেছে, হয়তো ভালোবাসার প্রকাশ করতেছে আর পরীর নাকচ তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে।পরশের মাথা মৃদু তার কাঁধ থেকে হাল্কা উঠিয়ে সুমুকে দেখতেই, মৃদু হাল্কা আওয়াজ করেই বলে-
“কুহেলী আপু? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? সুমেন ভাইয়া তো বলেছিলো আপুর বিয়ে ঠিক করেছে তার ফ্যামিলি, তাহলে কি বিয়েটা হয়নি?”
.
.
মৃদুর মাথায় কেউ ঘন্টা বাজাচ্ছে। ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে মাথা তার। কেউ একজন গিটার নিয়ে গান গাইতে শুরু করলো, এমনিতেই মাথা ব্যথা তার উপর গান! অসহ্যকর পরিস্থিতিতেও এমন চমৎকার সূরের গান মনটাকে নিমিষেই ভালো করে দিলো মৃদুর।
.
.
চলবে-