রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -১৮

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_18

রিনির সামনে হুট করে বৃষ্টি এসে দাঁড়ায়!
বৃষ্টিকে দেখে রিনি সহ তার পরিবারের বাকী সদস্যরা ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে। তারা কেউ এখানে কোনো ভাবেই বৃষ্টিকে এক্সপেক্ট করে নাই।

রিনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে রোদ রিনিকে বলে,”তোর বান্ধবী কে সাথে করে এনেছি। তুই বৃষ্টিকে দেখে খুশি হতে পারছিস না কেনো? তোর চেহারা বলে দিচ্ছে তুই শোকাহত!”

রিনি- রিনরিনে কন্ঠে বলে,”বৃষ্টির কথা তুমি কি ভাবে জানলে?”

রোদ- ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”তোর এতো জানার দরকার নেই। অনেকদিন পর কলিজার টুকরো বান্ধবী এসেছে যা তার সাথে সময় স্পেন্ড কর।”

রিনির কন্ঠে এবার জড়োতা কাজ করতে শুরু করে।

তা দেখে রোদ বলে,”আচ্ছা বৃষ্টি রিনির বান্ধবী সে কথা তো এ বাড়ির সবাই জানতে! তাহলে আমি দেশে আশার পর ঐ দিনের কাহিনী শুনে কেনো বললে না যার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে তাকে তোমরা চেনো!”

তখন রোদের বাবা মিস্টার খান বলে,”রোদ এটা বিয়ে বাড়ি! এখানে অতীতের কাহিনী নিয়ে টানাটানি না করলেই ভালো হয়! বাড়িতে এখন অনেক আআত্মীয় স্বজনে ভরা। তাদের সামনে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করো না। যা জানার পরে জেনে নিও। ”

মিসেস খান বলে,”রোদ বৃষ্টিকে এবাড়িতে আনবার আগে আমাদের জিজ্ঞাস করা উচিৎ ছিলো। হুট করে একটা বাহিরের মেয়েকে এভাবে আনার কোনো মানে হয় না।”

তখন রোদ কড়া গলায় বলে,” শিকদার মির্জা তো আমাকে বলছে তোমাদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক আছে। তোমাদের সাথে বৃষ্টির একটা সুন্দর সম্পর্ক আছে। তাহলে আজ হুট করে বৃষ্টি তোমাদের কাছে বাহিরে মেয়ে হয়ে গেলো কি করে?”

রিয়ানা ড্রয়িংরুমে বসে বসে রোদের বাড়ির ফ্যামিলি ড্রামা দেখছিল এতো সময় ধরে। তার এই সিরিয়ালের কাহিনী মোটেই পছন্দ হচ্ছে না। এমনিতে সে আসতেই চাইছিল না। অগত্যা বাবার কড়া আদেশের জন্য আসতে হলো। আর এসে একটু শান্তিতে বসতে না বসতেই রোদ বৃষ্টির কাহিনী শুরু। এটা বাড়ি না কি চিড়িয়াখানা? রিয়ানা এতো ডং না করে বিরক্ত হয়ে সোজা রিনির সামনে গিয়ে বলে,”রিনি বৃষ্টি কি তোমার বান্ধবী হয়? হ্যাঁ অথবা একটায় উওর দিবা।”

রিনি মিনমিন করে বলে,”অনেক আগে বান্ধবী ছিলো এখন আর সেই সম্পর্ক নেই।”

রিয়ানা -তুমি হাসালে রিনি! বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনো নষ্ট হবার নয়। সে যাই হোক বৃষ্টির সাথে তোমার সম্পর্ক নেই বেশ তো। আজ থেকে বৃষ্টি আমার কাজিন। তোর বিয়েতে না হয় বৃষ্টির পরিচয় সে আমার আত্মীয়।

রিয়ানার মা- আহ রিয়ানা এসব কি হচ্ছে! চেনা নেই,জানা নেই তাকে তুমি আমাদের আত্মীয়ের পরিচয় দিচ্ছ কেন?

রিয়ানা- প্লিজ মাম্মা! তুমি যদি কোনো রকমের সিনক্রেয়ট করো তাহলে আমি বৃষ্টির সাথে সোজা এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাব।

তখন বৃষ্টি রিয়ানার কাছে এসে বলে,”প্লিজ আপু! আমার জন্য আপনাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করবেন না। আমি বরঞ্চ চলে যাচ্ছি তাহলে আপনাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হবে না।”

রিয়ানা – এই তোমাকে পটরপটর করতে বলছি?

মিস্টার খান বলে,”কেউ বৃষ্টিকে নিয়ে কোনো ঝামেলা করবে না। যেহেতু রিয়ানা নিজেই বৃষ্টির দায়িত্ব নিয়েছে সেহেতু বিয়েরদিন পর্যন্ত বৃষ্টির পরিচয় সে রিয়ানার আত্মীয়। ”

এরপরে আর কেউ কোনো কথা বলে না। যে যার মতো নিজেদের কাজে মনোযোগ দেয়। এদিকে মুখ কালো করে রিনি নিজের ঘরে চলে যায়।

রিয়ানা বৃষ্টিকে সাথে করে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুমে এনেই বৃষ্টিকে কে জড়িয়ে ধরে। এতে বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

কিছুসময় পর বৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”জানো আমার কতো শখ ছিলো তোমার সাথে পরিচিত হবার। তবে সে যাই হোক এই তিনদিন আমরা একসাথে থাকবো। আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করো আমি একটু বাহিরের থেকে আসছি। আর শোনো কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে। ওহহো কি করে বলবে? এই আমার নাম্বার টা সেভ করে রাখো। বৃষ্টি বাধ্য মেয়ের মতো রিয়ানার নাম্বারটা সেভ করে রাখে।

রিয়ানা চলে যাবার পর বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে। বৃষ্টি ভাবতে থাকে রিয়ানা মেয়েটা কতো ফ্রি। যাকে চেনেনা জানেনা তাকে সবার সামনে আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে দিলো। তাকে আপন ছোট বোন বানিয়ে রাখছে। তবে সে কি জানে? আমি তার মামাত বোনের সুখের সময়টা কালো মেঘে ঢেকে রাখতে আসছি? উঁহু সে এসবের কিছুই জানে না আর জানতেও পারবে না।

বৃষ্টি নিজের রুমের মধ্যেই পায়চারী করছিল। তখন সেখান হুট করে বৃষ্টি তার রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

বৃষ্টিকে নিজের রুমে দেখে রিনি ভয়ে ঘামতে শুরু করে দেয়। কাঁপাকাপা গলায় বলে,”তু ত ত ত ত মি আ আ আ মা ম ম র রু র র মে কেন?”

বৃষ্টি রিনির একদম মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে আমাকে দেখে এতো তোতলানোর কি হলো? আমি তোমার কলিজার টুকরো বান্ধবী। যাকে তুমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো! তাকে দেখে এমন করাটা শোভা পায়না।”

রিনি বলে,”তুমি একদম ভালোমানুষি করবে না। সোজাভাবে বলো এখানে কেনো আসছো?”

বৃষ্টি রহস্যের হাসি দিয়ে বলে,”তোমার সুখের সময়টাতে তোমার চেহারার মাঝে ভয়েরচিহ্ন দেখতে চাই,সব সময় বৃষ্টি নামের আতংকে আতংকিত থাকবে তা দেখবো বলে এখানে আসা। ”

রিনি – তার মানে তুমি সবটা প্লানিং করে করছো?

বৃষ্টি – উঁহু! সবটা তোমার বড় ভাইয়ের মেহেরবানি। তোমার বিয়ের খবরটাও তো জানতাম না। সে তো দাওয়াত দিয়ে নিজে গিয়ে নিজের বোনের জন্য অভিশাপ ঢেকে আনছে এখানে আমার কি করার আছে? দেখো তোমার বিয়ে ভাঙ্গার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। তবে তোমাকে নিশ্চিন্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দিবো এতোটা ভালো মেয়ে আমি না। সেই বৃষ্টিকে তোমরা খুন করেছো।

রিনি- তাই বলে আমার বিয়েতে তোমাকে আসতেই হলো?

বৃষ্টি গলার আওয়াজটা এবার শক্ত করে বলে,”তুমি যদি আমাকে কোনো ভাবে অপমান অথবা অপদস্থ করতে চেষ্টা করো তাহলে তার ফল খুব খারাপ হবে। তোমার পরিবারের সবাইকে কথাটা গোপনে জানিয়ে দিও। নয়তো সেই পুরাতন অতীতটা আবারো সামনে আনতে সময় লাগবে না। এবার অতীতটা সামনে আসলে তোমারি খারাপ হবে এটা তুমিও ভালোই জানো। শোনো মেয়ে চুপচাপ কাল কে থেকে আমার জন্য তোমার ব্যবহার নরমাল দেখি। একদম সাধারণ নরমাল ব্যবহার করবে। এর থেকে বেশি কথা যেনো বলতে না হয়। তো নতুন হবু বউ একরাশ চিন্তা নিয়ে সারারাত পার করো শুভ রাত্রি। ”

বৃষ্টি এ বাড়িতে আগে অনেকবার এসেছে তাই সব কিছু ভালোভাবে চেনে।

বৃষ্টি রুমে এসে দেখে রিয়ানা একগাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে।

রিয়ানা বৃষ্টিকে বলে,”কালকের ফাংশনে আমি আর তুমি ম্যাচিং ড্রেস পড়বো। ”

বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিয়ানা বলে,”দেখো কোনে বাহানা দিতে আসবে না। তোমার বড় বোন আমি। তাই আমি যা বলবো তুমি তা শুনতে বাধ্য।”

রিয়ানার সাথে কোনোরকম তর্কে যায় না বৃষ্টি।
সেও রিয়ানার সাথে বসে এমনিতে নানারকমে গল্পর ঝুড়ি খুঁলে বসে। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে তারা কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেরাও জানে না।

এদিকে বেচারা রোদের বৃষ্টিকে নিয়ে টেনশনে সারারাত ঘুম আসে না। নির্ঘুম একটা রাত্রি পার করে রোদ।

(




চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here