১৪+১৫
#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১৪
.
“আমি জুনায়েদের বিয়ের প্রথম সাক্ষি হতে চাই।”
পরীর কথা শুনে উপস্থিত সকলে অবাক। বর্ষা বিষয়টি বুঝতে পেরে জুনায়েদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে-
“কিসব বলছো পরী! তুমি সাক্ষি হতে যাবে কেন? জুনায়েদ আমার কাজিন ব্রাদার, আমিই পরশকে তোমাদের বিষয়ে জানিয়েছিলাম। আর এখন তোমার আর জুনায়েদের বিয়ে।”
পরী কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থাকে। মাথা উঁচু করতেই জুনায়েদ পরীকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে। পরীর বাহু ধরে বলে-
“তোর আমাকে এতোটাই নিকৃষ্ট মনে হয় পরী? তোকে ভালোবাসি তাই এতো অপমান করছিস তাই না রে? জানি অনেক বড় ভুল করেছিলাম সেটার জন্য কি কম ক্ষমা চেয়েছি আমি? তুই আমার সাথে থাকতে চাস না তো, ঠিক আছে লাগবে তোর আমার মতো খারাপ মানুষের সাথে থাকা। চলে যাচ্ছি আমি, এই মানুষটা আর আসবেনা তোর সামনে।”
জুনায়েদ ঘুরে দাড়াতেই পরী পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ক্রন্দনরত কন্ঠে বলে-
“আমার আর ওখানে কি করার ছিল জুনায়েদ? তোমাকে ঐ মেয়েটার হাত ধরতে দেখে ভালো লাগেনি আমার। আমিও যে খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।”
“বর্ষাপু বিবাহিত পরী। বর্ষাপু তোর পরশ ভাইয়ের ক্লাসমেট ছিলো। শুনেছি আগে কখনোই কথা বলেনি কিন্তু আমাদের জন্য প্রথম কথা বলা শুরু করে ২বছর আগে।”
“২বছর আগে?”
“হুম পরশ ভাই কোন এক কারণে দেশে আসতে পারেনি কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ ছিল তার।”
“বিয়ে করবে আমায়?”
“না করবো না। এতোদিন জ্বালিয়েছিস এখন এবার আমার সময় তোকে পুড়ানোর।”
“ঠিক আছে আমি তাহলে নিশাদকে বিয়ে করে নিবো।”
“এই নিশাদটা কে? ওর সাহস কিভাবে হলো আমার পরীর দিকে চোখ তুলেও তাকানোর?” “এই নিশাদটা কেউ না। তবে তুমি যদি এখনি বিয়ে না করো এই নিশাদটাকেও আমি ঠিক খুঁজে নিবো।”
“নাহ্ লাগবে না খুঁজতে চল এখনি বিয়ে করবো আমরা।”
.
.
.
“পরশ সুমেন ভাই যে বলেছিল, কুহেলী আপুর বিয়ে ঠিক করেছে তার ফ্যামিলি আর কিছুদিন পরেই বিয়ে। বিয়েটা কেন হয়নি? তোমার সাথে কি আপুর তখনও যোগাযোগ ছিলো?”
“যোগযোগ অফ ছিলো কিন্তু বিয়ের কথা কুহেলী কল করে বলে, তার বিয়ের ডেট ফিক্সড্ হয়েছে। আমি সাইকিয়াট্রিষ্ট এর ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিলাম তখন। যেহেতু আমি সত্যিটা জানতাম তাই কুহেলীকে বলি বিয়েটা যেন না করে। তারপর কুহেলী কিভাবে কি করেছে জানিনা, তবে কল করে আমাকে সব আপডেড দিয়েছিল।”
“পরশ আমার আর এখানে ভালোলাগতেছেনা। বাড়ী যেতে চাই আমি। পরশ কাকিমা পরীর বিয়েটা না মেনে নিলে কি করবে?”
“মা মানতে বাধ্য মৃদপাখি।”
“কীভাবে বাধ্য?”
“কারণ ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর তাছাড়া ওরা অন্য কোথাও বিয়েও করতোনা কখনোই।”
.
ট্যুর ক্যান্সেল করে সবাই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
“ভাই তোকে কিছু বলার আছে, শুনবি আমি যা বলব।”
আশনির কথার ধরন শুনে অবাক হয় আন্বিষ। সিরিয়াস কিছু বলার হলে তুই করে বলে। তবে এভাবে ঘটা করে বলেনা।
“হুম বল কি বলবি।”
“ভাই মৃদুলাকে ভুলে যা। মৃদুলা ভালো আছে পরশের সাথে, তাকে আর কষ্ট পেতে দিসনা।”
“তুই ভুলতে পারবি পরশকে?” “ভাই তুই জানিস আমি পরশকে ভালোবাসিনা। আমি আমার অতীত ভুলতে চাই ভাই।”
“ঠিক আছে সেটা পরে দেখা যাবে।”
.
.
“সুমু তোমার মা-বাবা আমাকে মেনে না নিলে কি করবো?”
“মেনে না নিলে আর কি করবে, বাড়িতে চলে যাবে নিজের।”
“সুমু কি বলছো তুমি, আমি আমার বাড়িতে চলে যাবো?” সুমেন কুহেলীর হাত শক্ত করে ধরে বলে-
“কুহু আমি তোমাকে আগেও বলেছি, আবারও বলছি আমার থেকে তোমাকে আলাদা করা সম্ভব না। তোমার দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্যতা আমি অনেক আগেই অর্জন করেছি কুহু।”
কুহেলী মুচকি হেসে সুমেনের বাহু ধরে কাঁধে মাথা রাখে।
.
.
“আগে তোমার শশুড়বাড়িতে যেতে চাও নাকি আমার শশুড়বাড়িতে?”
“তোমার শশুড়বাড়িতে। মা যদি মেনে না নেয়?”
“বিয়ে কোনো ফাইজলামি না পরী। তুমি আমার হয়ে গেছো। এখন চাইলেও কেউ পারবেনা তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে।”
.
.
বাড়িতে পৌঁছানোর পরে সবাই দেখে রুশানা বেগম বাড়িতে নেই। সবাই যে যার রুমে চলে গেলে পরশ মৃদুকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। মৃদুকে বিশ্রাম করতে বলে কোন এক কাজে বেরিয়ে যায় পরশ।
.
রুশানা বেগম বাড়িতে আসলে কাজের মানুষটার থেকে জানতে পারে সবাই চলে এসেছে। রুশানা বেগম খুব খুশি হয় কিন্তু সেটা সাময়িক হয়ে যায় যখন আন্বিষ মৃদু আর পরশের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে বলে। কিছু ছবি দেখিয়ে বলে-
“আন্টি মৃদু তো পরশের থেকে ২মিনিটের জন্যও আলাদা হয়নি। পরশ যতবার-ই আশনিকে নিয়ে কোথাও যেতে চেয়েছে মৃদু বাধা দিয়েছে।”
মৃদুকে নিয়ে অনেক কথা বানিয়ে বলে আন্বিষ। আন্বিষ সব মিথ্যা বলে যেন পরশের থেকে মৃদুকে আলাদা করা যায়। আশনির থেকে আগেই শুনেছে রুশানা বেগম মৃদুকে পছন্দ করেনা। রুশানা বেগমের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিলো মৃদুকে শাস্তি দেয়ায়। রুশানা বেগম যখন মৃদুর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আন্বিষ জানায় মৃদু পরশের রুমে। এটাই যথেষ্ট ছিলো রুশানা বেগমকে তেলে বেগুনে জ্বলানোর জন্য। পরশের রুমে যেয়ে দেখে মৃদু শুয়ে আছে। মৃদু থ্রী কোয়াটার স্লীভ পরায় হাত দুটো দৃশ্যমান। কালচে দাগ হালকা হয়ে আছে আর দেখেই বোঝা যাচ্ছে নরমও হয়েছে। রুশানা বেগম ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে নিজের রুম থেকে পুরাতন ছিলা বাঁশের বেতটা নিয়ে যায় পরশের রুমে।
.
.
প্রায় ২০মিনিট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রুশানা বেগম রুম থেকে বের হচ্ছেনা। আন্বিষ অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। ফ্রেস হয়ে বসে আছে ড্রইংরুমের সোফায়, মৃদুর ক্রন্দনরত চেহরা দেখার জন্য। আন্বিষের ধারণা রুশানা বেগম যেহেতু মৃদুকে পছন্দ করেনা নিশ্চই অনেক বকা দিবেন। ৩০মিনিট হয়ে যাওয়ায় আন্বিষ বাধ্য হয়ে পরশের রুমের দড়জায় কড়া নারে। ভিতর থেকে কোন জবাব না আসায় অবাক হয় আন্বিষ। ৪৫মিনিট পর ঘামে ভিজে টইটম্বুর হয়ে বের হয় রুশানা বেগম।
“তুমি এখানে কেন?”
“পরশ এসেছে কিনা দেখতে এসেছিলাম।”
রুশানা বেগম গেট লাগিয়ে দিয়ে বলে-
“নাহ্ পরশ আসেনি।”
রুশানা বেগমের হাতের রক্তমাখা বেত লুকিয়ে নিতে চাইলেও দেখে ফেলে আন্বিষ, দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে আন্বিষের। রুশানা বেগম চোখের আড়াল হতেই আন্বিষ পরশের রুমে ঢুকে এক পা এগুতেই নিচে বসে পরে। শুধুমাত্র তার জন্যই যে এমনটা হয়েছে বেশ বুঝতে পাচ্ছে আন্বিষ। আন্বিষের এখন নিজেকেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করতেছে।
হাত দুটো রক্তে লাল হয়ে আছে। ফ্লোরেও রক্তের মাখামাখি। গোঙানোর শব্দ বের হচ্ছে মৃদুর ওষ্ঠ্যদ্বয় দ্বারা। বেত দিয়ে মারায় যেসব অংশ ফুলে গেছে সেখান থেকেই টুপটুপ করে রক্ত বের হচ্ছে। আন্বিষ কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে মৃদুর কাছে যায়। মৃদুকে তুলে নিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।
.
.
পরশ বাড়িতে ঢুকতেই রুশানা বেগমের তলব শুরু হয়।
“পরশ তুই নাকি মৃদুর সাথে….”
“মা আমি ব্যস্ত আছি।”
রুশানা বেগমকে বলতে না দিয়ে পরশ নিজের রুমে ঢুকে দেখে মৃদু নাই। মৃদু নিজের ঘরে গেছে ভেবে যেই ঘাড় ঘুড়ালো, সাথে নিজের দুনিয়াটাও ঘুরে যায় পরশের। ফ্লোরে রক্ত মেখে আছে, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে হাল্কা জমাট বেধেছে। অনেক বেশি সময়ের নয় এই রক্ত। দ্রুতপায়ে রুশানা বেগমের কাছে এসে প্রশ্ন করে-
“মা আমার মৃদপাখি কোথায়?”
“পরশ তোর সব কথা শুনি দেখে কি তোর অন্যায় আবদারও মেনে নিবো?”
“মা আমার মৃদপাখি কোথায়? আমার রুমের ফ্লোরে রক্ত কেন মা?”
“মেরে ফেলেছি তোর মৃদপাখিকে।”
“মা এমন ফাইজলামি কিন্তু আমি মেনে নিবোনা মা।”
“ফাইজলামি তো তুমি আমার সাথে করেছিস। পরীর, সুমেনের বিয়ে তুই একাই দিয়েছিস আবার এখন ভাবছিস আমি মৃদুলাকেও মেনে নিবো? কখনোই না।”
“তোমার মানতে হবেনা শুধু বলো আমার মৃদপাখি কোথায়।”
“আমি জানিনা কোথায় মৃদু।”
“না মা প্লিজ মা বলো কোথায় আমার মৃদ। আমার মৃদপাখির কিছু হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবোনা মা।”
“তুই আমাকে ক্ষমা করবিনা? আমি তোকে ক্ষমা করবোনা। তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিলি না? এখন শাস্তি ভোগ কর। মৃদুলাকে কখনোই পাবিনা।”
“মা আমি যদি আমার মৃদপাখিকে না পাই, তুমিও তোমার ছেলেকে পাবেনা।”
.
.
মৃদুলাকে নিয়ে যেতে কাজের মহিলাটা দেখেছিল। আন্বিষ নিয়ে গেছে মৃদুলাকে, জানাতেই সকলে আন্বিষকে কল দিতে শুরু করে। আন্বিষ কোন রেসপন্স না করায় পরশ, পরী, জুনায়েদ, সুমেন, কুহেলী ও আশনি আশেপাশের হসপিটালে চেক করবে বলে বের হয়।
.
.
২দিন থেকে খুঁজতেছে মৃদুলা আর আন্বিষকে কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি তাদের। আন্বিষ একটু জেদি টাইপের, পরশ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আন্বিষ ইচ্ছে করেই মৃদুলাকে লুকিয়ে রেখেছে।
.
.
৫দিন পর জ্ঞান আসে মৃদুলার। নিজেকে অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে। সারাশরীরে প্রচন্ড ব্যথা হওয়ায় উঠে বসার মতো শক্তি নেই মৃদুর। রুমে সে একা, বাহিরে যাওয়ার মতো উপায় নেই, প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। জগে অল্প একটু পানি আছে কিন্তু সেটা গ্লাসে ঢালবে কিভাবে? কেউ আসতেছে না কেনো? পরশ কোথায় আছে আমাকে এভাবে ফেলে রেখে? মৃদুলার ভাবনার মধ্যেই রুমে প্রবেশ করে কেউ। আবছা আলোয় চেহরা না দেখতে পারলেও এটা পরশ না মৃদু নিশ্চিত। আধো আধো বুলি আওড়ায়-
“কে আপনি? পরশ কোথায়?”
মানুষটি রুমের লাইট অন করতেই চোখ বুঝে নেয় মৃদু। হঠাৎ করে চোখে আলো লাগায় চোখ জোড়া জ্বলে মৃদুর।
.
চলবে-
*ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১৫
.
ঘাড়ে চিরচেনা মানুষটার উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে আশনি। মানুষটা কি তাহলে সত্যিই ফিরে এলো? কেন আবার ফিরে এলো আশনি জানার জন্য পিছরে ঘুরে দাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু পা-জোড়া যেন নড়তেও নারাজ। এই মানুষটাকে সে চায়না তার জীবনে দ্বিতীয়বার, প্রায় ভুলেই তো গিয়েছিল তবে কেন মানুষটা ফিরে এলো? নিজেই তো ছেড়ে গিয়েছিল। যেভাবেই হোক মানুষটার থেকে দূরে যেতে হবে।
“আ…প…নি এ….এখা.নে কে..ন?”
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন জান? ফিরে এসেছি বলে? চিন্তা করোনা এবার আর কোথাও যাবোনা। ভুল করেছিলাম সেটা এখন শুধরে নিবো সাথে তোমাকেও।”
এই খারাপ মানুষটার চেহরা ও দেখার মতো ইচ্ছে নেই আশনির। তাই চোখ বন্ধ করেই পিছনে ঘুরে জবাব দেয়-
“অসম্ভব। আপনার মতো মানুষের সাথে কথা বলতেও চাইনা আমি ।”
লোকটা আশনির চোখ জোড়ায় ছোট ছোট করে কয়েকটা চুমু দিয়ে বলে-
“আরেহ্ বাহ্ এক ঝাটকায় মিউ মিউ থেকে বাঘিনী হয়ে গেলে? আমি আমার আগের আশনিকে চাই। প্রমিস আগের থেকেও বেশি ভালোবাসবো।”
আশনির মনে পরলো সে তো এখন পরশের বাড়িতে। এই খারাপ মানুষটা কিভাবে আসলো আর জানলোই বা কিভাবে? পরশ এই লোকের ব্যাপারে সব জানে, সে এই ফালতু লোককে বাড়িতে ঢুকতে কখনই দিবেনা।
“আপনি আমাকে কখনো ভালোই বাসেন নি। আপনি এখানে কিভাবে এলেন? জানলেন কিভাবে আমি এখানে? আর ফিরেই বা কেন আসলেন? আমি আপনার সাথে কথা বলতেও চাইনা, প্লিজ চলে যান এখান থেকে।”
আশনির কোমর পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো লোকটা। ঘাড়ে তরল গরম কিছু অনুভব হতেই ছোটাছুটি শুরু করে আশনি। আজব! কান্না করার কি আছে? আশনি তো তাকে ছাড়েনি, সে নিজেই ছেড়েছিল।
“আম সরি আশনি। যেই ভয়ের কারণে তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম, সেটাই তো হলো। আমি পারবোনা তোমাকে ছেড়ে থাকতে। প্লিজ মাফ করে দাও।”
আশনির এই মুহুর্তে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে, কিন্তু একটা মানুষ কান্না করতেছে তার সামনে আর যাই হোক হাসা যাবেনা। আশনিও তো অনেক রিকুয়েষ্ট করেছিল যেন ছেড়ে না যায়, কই তখন তো শোনেনি। তবে আজ কেন আশনি শুনবে?
“হাসালেন মি. রাবিত। আপনার পা ধরাটাই বাকী ছিল আমার। কতবার বলেছি মনে নেই, তবে আপনাকে ফিরিয়ে দেয়াটা সম্ভব হলেও মাফ করা সম্ভব নয় মি. রাবিত।”
“সরি জান। আমি ফিরে এসেছি, তুমি চাইলেও আর পারবেনা দূরে রাখতে। রাবিত যা চায় তা সে নিয়েই ছাড়ে।”
“হ্যাঁ কাছে টেনে নেয়ার আর ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার অধিকারটা তো শুধু আপনারই।”
“উফ্ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি, এখন চোখ খুলে দেখতো। আমি জানি তুমি আমায় অনেক মিস করতেছিলে। এখন আমাকে দেখে নিয়ে চোখের তৃষ্ণা মিটাও।”
আশনি মুখে যতই না বলুক না কেন, দেখতে তারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আশনি এবার এই লোকটার মায়াজালে কিছুতেই নিজেকে জড়াবে না। যদি মায়া লাগানোর পরে আবার ছেড়ে চলে যায়? তখন কি করবে আশনি? তাই এই লোকের চেহরা দেখার ইচ্ছে হলেও বারবার পরে গিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছের সাগরে।
.
.
.
এক নজর ভালোবাসার মানুষটাকে দেখার মতো শান্তি হয়তো দিত্বীয়টি নেই। রুমের আলোটা যেন মৃদুর জীবনটাও আলোকিত করে দিলো। এই মুহুর্তে মৃদুর শক্তি থাকলে হয়তো ঝাপিয়ে পরতো এই মানুষটার বুকে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মৃদু। লোকটার দিয়ে করুন চাহনীতে তাকাতেই সে এগিয়ে আসে মৃদুর কাছে। মৃদুকে বসিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-
“সরি রে মৃদপাখি। জানিনা আর কত কষ্ট সহ্য করবে আমার জন্য। আমি বারবার তোমাকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দেই, তাই না?”
“মোটেও না পরশ। আমি ঠিক আছি। দেখো কিছুই হয়নি আমার, সামান্য ব্যথা আর কিছুই না।”
“হ্যাঁ সেটার জন্যই তো বসতেও পাচ্ছিলে না।”
পরশের কথা শুনে হেসে দেয় মৃদু। এই মানুষটা যে পাশে থাকলে কষ্টরাও দূরে থাকে। মৃদু তো ভেবেছিল পরশ তাকে মেনেও নিবেনা, কিন্তু মৃদুর জন্য পরশ কি কি করেছে তা জানার পর তো মৃদু নিজে চাইলেও এই মানুষটার থেকে দূরে যেতে পারবেনা। মৃদু জানে পরশ পাশে থাকলে তার কাকিমার দেয়া #কাঠপুতুলের ট্যাগ পরশ খুব যত্ন সহকারে মুছে দিবে। এই মানুষটা ফিরে এলে যে মৃদু এতো ভালোবাসা পাবে সেটা মৃদুর কল্পনার বাহিরে ছিলো। কেননা দেশ ত্যাগের আগে না কোন কথা বলে গেছে আর না যাওয়ার পর ইচ্ছে করে কোনো কথা বলেছে। প্রথম দিকে মৃদু জোর করে কথা বললেও পরশের ইগনোরেন্স সয়ে গিয়েছিল তার, তাই জোড় করা বাদ দিয়েছিলো একসময়।
.
.
.
মাথা নিচু করে বসে আছে আন্বিষ, যেনো সে কত বড়ই না অপরাধ করে ফেলেছে, কিন্তু সে কি সত্যিই কোনো অপরাধ করেছে? মনে পরছে না আন্বিষের। সামনের ব্যক্তির সামনে এভাবে কখনো বসে থাকতে হবে এটা আন্বিষ হয়তো কখনই কল্পনাতেও আনতে পারেনি। কেন বসে আছে এভাবে সেটাও সে বুঝতে অক্ষম।
“এভাবে কি দেখতেছো সানজু? আমার কেমন যেন লাগতেছে।”
আন্বিষের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠে সানজু (সানজিদা)। আন্বিষের লজ্জা আর আনইজিনেস দেখে ধিনাক ধিন ধিনাক ধিন করে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। এই পঁচা ছেলেটা যদি এভাবে বসে না থেকে মাথা তুলে কথা বলতো, তাহলে হয়তো সব সাধারণ মনে হতো। এই ছেলেটা মাঝে মাঝে সাধারণ কাজগুলো অসাধারণভাবে করে যার দরুণ তাকে পূর্বপরিচিত মনে হয় না।
“তুমি তো এমন ছিলে না আন্বিষ, কি হয়েছে তোমার?”
“তুমি আমাকে না বলে ওভাবে কেন চলে গিয়েছিলে সানজু? আমি কি কোন ভুল করেছিলাম?”
সানজুর এবার বলার মতো কিছু নেই। কোন কারণ ছাড়াই তো নিরুদ্দেশ হয়েছিল সে। আন্বিষের জন্য ভালোলাগা বেড়ে যাওয়ায় সে পালিয়েছিল, এটা তো বলা যাবেনা। আন্বিষ তো প্রথমেই বলে দিয়েছিল সে কোনরকম প্রেমলীলায় জড়াবে না।
“একদিন ট্রুথ অর ডেয়ার খেলায় আন্বিষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সে কোন জিনিসটা থেকে দূরে থাকতে চায়? উত্তরে বলেছিল-ভালোবাসা। সে নাকি এসবে জড়িয়ে কোন ভুল করতে চায় না। সেসময়ে প্রায় সকলে ভালোবাসা নামক অনুভুতির সাথে জড়িয়েছিল। পরশ, আন্বিষ আর সানজু বাদে (পরশের তো মৃদু ছিলই)। তখন আশনির সাথে রাবিত এর নতুন পরিচয় আর নতুন ভালোলাগার আবির্ভাব ঘটেছিল।”
“কিসব বলছো আন্বিষ আমি কেন পালাতে যাবো? আমি এমবিবিএস নয় অনার্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাই চলে এসেছিলাম।”
“না এলে কি হতো? আমরা একসাথে থাকতে পারতাম।”
“একসাথে থাকতে পারতাম কিন্তু এক হয়ে তো নয়।”
সানজুর কথা শুনে মাথা উঁচু করে আন্বিষ। এই মেয়েটার মতোই তো মৃদুলা। মৃদুলার মধ্যে সানজুকে দেখেছিল আন্বিষ, তাই মৃদুলার প্রতি এত ভালোলাগা জন্মে আন্বিষের। সানজুকে ভুলতে শত শত গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছিল আন্বিষ, কিন্তু একজনের সাথেও মনের ভাব মেলেনি তার। মনকে তো আর জোড়পূর্বক কেউকে ভালোবাসতে বললেই সে ভালোবাসতে পারেনা। সানজু পাশে থাকতে যেটা বুঝতে পারেনি আন্বিষ, সেটা দূরে যাওয়াতে সেকেন্ডে সেকেন্ডে বুঝেছে সে।
“বিয়ে করবি আমায় সানজু?”
খুব জোড়ে একটা ঝাটকা খায় সানজু। আন্বিষ কি তাহলে সানজুকে ভালোবাসে নাকি সানজুর মনের কথা জানতে পেরেছে? কি উত্তর দেয়া উচিৎ এখন তার?
“তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি? বিয়ে করবে আর তুমি? তাও আমাকে? আমার সাথে এমন ফাইজলামি করো না প্লিজ, হয়তো দিত্বীয়বার প্রশ্ন করলে হ্যাঁ বলে দিবো।”
সানজুর কথা শুনে মুচকী হাসে আন্বিষ। এতক্ষণ যেই ভয়টা পাচ্ছিল, সানজুর কথা শুনে সম্পূর্ণটা কমে গেছে। আন্বিষ ভাবে তবে তাই হোক যেটা তার সানজু চায়।
“বিয়ে করবি সানজু?”
আন্বিষের আবারো প্রশ্ন করায় কেঁদে দেয় সানজু। সানজুর কান্নায় বিরক্ত হয় আন্বিষ।
“বিয়ে না করতে চাইলেও বলতে পারিস, এসব ন্যাকাকান্না আমার মোটেও পছন্দ নয়।”
ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয় আন্বিষ। সানজুর এখন আন্বিষকে খুন করে বস্তায় ভরে গুম করে দিতে ইচ্ছে করতেছে। ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট দেয় তাকে। আন্বিষ উঠে দাড়াতেই সানজু কাঁপাকাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আন্বিষকে।
“তো করবি বিয়ে? নাকি আবারো হারিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিস? ধরা দিলে কিন্তু শাস্তিস্বরুপ শিকলবন্দি হয়ে যাবি।”
“আমি তোমাকে চাই আন্বিষ।”
.
.
.
“পরশ কাকিমা আমাকে মেনে নিবেনা কখনই।”
“তো?”
“তো? তোমার আর আমার পথ আলাদা হয়ে যাবে।”
“তোর কাকিমা জেলে মৃদপাখি।”
“কাকিমা জেলে মানে? কিভাবে আর কেন?”
“সবসময় এত জানতে ইচ্ছে হয় কেন তোর? বলবো না এখন চুপ থাক।”
“প্লিজ পরশ বলনা।”
“না এইসব বলার সময় আমার নেই। আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”
মৃদু পরশের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই পরশ টুপ করে অধরে চুমু দিয়ে বলে-
“মৃদপাখি এতো ভাবতে হবেনা তোমার। প্লিজ এখন খেয়ে নাও, তারপর ঔষধ খেয়ে ঘুমোবে তুমি।”
“আগে বলো।”
“না।”
পরশের সোজাসাপ্তা জবাবে রাগ উঠে মৃদুর। সময় করে একদিন ইচ্ছে মতো বকা দিবে।
.
চলবে-