কাঠপুতুল পর্ব ১৩

#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১৩
.
“পুরো ৭টা মাস আমাকে এইসব ছবি দিয়েছে রুবেল। আমিও রুবেলের দেয়া ছবি আর কথায় বিশ্বাস করে ফেলি। নাফিজ নামের ফ্রেন্ডকে সুমেন ভাইয়ের উপর রাখতে বলি। তার থেকে পাওয়া ইনফরমেশন থেকে জানতে পারি কুহেলী নামের কারো সাথে সে সম্পর্কে আছে। আমি যেমন তোমাকে তোমার জন্মের পর থেকে জানি তেমনি সুমেন ভাইকেও আমার জন্মের পর থেকে জানি। সে একজনকে রেখে অন্য একজনের কাছে কখনোই যাবেনা কিন্তু এই যে এই ছবিগুলো দেখো। তখনই প্রথম মনে হয় রুবেল আমাকে মিথ্যা বলতেছে। নাফিজের দেয়া ছবি এগুলো, এইসব দেখে আমি কুহেলীর সাথে যোগাযোগ করি। কুহেলী কিছুতেই সুমেনকে ভুল বুঝবেনা পণ করে।। আমি অনেকগুলো ছবি দেখিয়ে বলি সুমেনের উপরে নজর রাখতে। প্র্রথমে এটা ঠিক না বললেও পরে রাজি হয়ে যায়। আর আমার ভাগ্য দেখো, কোনো এক কারণে একদিন তুমি সুমেনের সাথে বেরে হও।”
“একটা ছিনতাইকারী আমার ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ায় আমিও ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পরে যাই। সুমেন ভাইয়ের আমাকে আগলিয়ে নেয়াটাকে কুহেলী আপু দেখে নেয়। সেটা থেকেই তারও মনে আমার আর সুমেন ভাইকে নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়।”
“হ্যাঁ ঠিক এটাই। বাহ্ খুব ভালো বুঝো তো তুমি। আমিই কুহেলীকে বলি আরও নজর রাখতে। অন্যদিকে রুবেলের সাথে নাফিজ যে আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলো সেদিকে আমি দেখার সময়-ই পাইনি। ছবিগুলোর একটাতেও পজিটিভ ভিউ নেই, আমিও বাধ্য ছিলাম এগুলোকে সত্যি মানতে।”
“আমার কিশোরী মনের আবেগটাও আপনিই ছিলেন পরশ।”
“আপনি? প্লিজ মৃদপাখি সম্পূর্ণটা বলতে দাও, আমাকে ভুল বুঝিও না প্লিজ।”
“আমার শুনতে ইচ্ছে করতেছে না পরশ। আমি ঘুমোবো।”
“না তুমি ঘুমাবে না। সব শুনবে এখনি।”
“আপনার ভালোবাসায় বিশ্বাস ছিলোনা পরশ। ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখাটা অত্যাবশকীয়। হয়তো আপনি জানতেন না আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনার এটাও বুঝা উচিৎ ছিলো আমি যদি আপনাকে ভালো না বাসতাম বিয়েতে কখনোই রাজি হতাম না।”
মৃদু ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলে পরশ শোয়া থেকে বসায় মৃদুকে। মৃদুর কাঁধে মাথা রেখে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আবারো বলতে শুরু করে-
“কুহেলীর সুমেনের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে। যখন মনে হচ্ছিল রুবেল আর নাফিজের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করে ভুল করতেছি নাতো? দুজনের প্রতিই বিশ্বাস কমে যায়, তাই একটা প্রাইভেট ডিটেক্টিভ হায়ার করি। তার থেকে জানতে পারি রুবেল আর নাফিজ আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। তাই আমি দেশে ফিরে আসি।”
“আপনি দেশে এসেছিলেন? আমাদের সাথে তো দেখা করেননি।”
“আমাকে বলতে দাও মৃদপাখি। ১বছর ৫মাস ১৮দিন পর আমি দেশে ফিরে আসি। রুবেলের বাড়িতে যেয়ে জানতে পারি সে তার পাগল বোনের জন্য আমাকে ডাবল ক্রস করার চেষ্টা করেছে।”
“রুহানী আপু?”
“হুম রুহানী। ভালোবাসতো আমায় সে। কি বলেছিলো জানো? প্রয়োজনে মৃদুলাকে পরশের জীবন থেকে সরিয়ে দিবে। রুবেল অনেক রিকুয়েষ্ট করে তার বোনের সাথে কথা বলার জন্য। রুহানী একটা চাকু নিয়ে আমার গলায় ঠেকিয়ে বলে-মৃদুলাকে ভুলে যাও প্লিজ। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবো। প্র্রয়োজনে মৃদুলাকে মেরে ফেলবো। রুহানী জানতো না মৃদপাখি, পরশ শুধু মৃদুলার। সেই চাকু দিয়েই গলা কেঁটে দেই রুহানীর।”
মৃদু অনুভব করে তার শরীর প্র্রচুর ঠান্ডা হয়ে আসছে। পরশ এতোটা হিংস্র কি শুধুই মৃদুর জন্য হয়েছে? নাকি অন্য কোন কারণ আছে??
“রুহানীকে মেরে ফেলার দুই মিনিট পরেই রুবেল আসে। রুহানীর নিথর দেহ দেখে আমার উপর ঝাপিয়ে পরে। কিছুক্ষণ হাতাহাতি হয়, তারপর একই চাকু দিয়ে ওর বুকটা চিরে ফেলি। রুবেল ইচ্ছে করেই এমন এ্যাঙ্গেল থেকে ছবিগুলো ক্যাপচার করেছিল যে কেউ প্রথম দেখাতেই মানতে বাধ্য হবে, সুমেন ভাই আর তুমি অনেক ক্লোজ। তাই রুবেলের হৃদপিন্ডটাকেও বের করে সেটা গুণে গুণে ১০০টা পিস করি। প্র্রথমে ভেবেছিলাম নাফিজকে রুবেল আর রুহানীর খুনের দায়ে ফাঁসিয়ে দিবো, কিন্তু নাফিজ কেনো আমাকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিচ্ছিলো সেটা তখনও আমি জানতাম না। ‍নাফিজকে খুব সহজেই এই দুই ভাই-বোনের খুনের জন্য ফাঁসানো যেতো। আমার ডিটেক্টিভ জানিয়েছিলো নাফিজ প্রতিদিন প্র্রায় ৩-৪বার রুবেলের সাথে তার বাড়িতে দেখা করতে যেতো। আমার ভাগ্য বরাবরের মতোই ভালো ছিলো তাই নাফিজ ও রুবেলের বাড়িতে তখন উপস্থিত হয়। ‍নাফিজকে কয়েকটা মারার পরে জানতে পারি সে নাকি রুহানীকে নিজের বোন মনে করতো তাই তাদেরকে সাহায্য করেছে। এমন একটা ঠুনকো কারণ ছিল আমাকে ধোঁকা দেয়ার, তাই ওর কথা শুনে ওকে জীবিত রাখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হলোনা। ‍ওকে দিয়ে একটা চিঠি লিখালাম। রুহানী আর রুবেলকে তাকে ধোঁকা দেয়ায় তাদেরকে মেরে সে নিজেকেও শেষ করে দিবে। নাফিজ রিকুয়েষ্ট করেছিল যেনো ওকে না মারি কিন্তু চিঠি তো লিখা হয়েই গিয়েছিল তাই নাফিজকে মেরে ফিরে যাই আমি।”
পরশ অনুভব করে মৃদু তার শরীরের ভর ছেরে দিয়েছে। নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখে মৃদুর চোখ বন্ধ সে ঘুমোচ্ছে। পরশের খুব রাগ লাগে, সব শুনেছে কিনা জানেনা পরশ। নিজের সত্যিটা জানাতে এতোটাই মগ্ন ছিলো যে মৃদুর দিকে নজর-ই যায়নি। পরশ মৃদুকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাতলা কম্বলটা টেনে মৃদুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। বর্ষাকাল হওয়ার হাল্কা ঠান্ডা লাগতেছে। ‍৫মিনিট পর মৃদু চোখ মেলে তাকায়। নিরবে চোখজোড়া দিয়ে পানি নিঃসৃত হতে থাকে।
মৃদু নিজের মনকে প্র্রশ্ন করে-
“পরশ তো খুনি। পরশের সাথে কি থাকা সম্ভব? কিভাবে থাকা যাবে একটা খুনির সাথে? পরশ তো আমার জন্যই করেছে এইসব, ‍আমি পরশকে ছেড়ে চলে গেলে পরশ কি করবে? পরশ তাহলে ৪বছর পর কেন দেখা করলো? আরো আগেই তো আসতে পারতো। পরশ তো আমাকে সন্দেহ করতো, যেখানে সন্দেহ আছে সেখানে বিশ্বাস নেই, আর যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই।”
.
ক্বীন ব্রীজে দাড়িয়ে আছে সবাই। মৌন ব্রত পালন করতেছে মৃদু। পরশকে দেখিয়ে পরীর সাথে কথা বললেও পরশের হাজারো চেষ্টার পরেও তার সাথে কথা বলেনি। অবশিষ্ট আছে আর মাত্র ১০দিন। পরশ প্ল্যান করেছিলো মৃদুকে নিয়ে অন্যত্র্র ঘুরতে যাবে এই ট্যুরের পরে কিন্তু মৃদু তো কথাই বলতেছেনা। জান্নাত সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো-
বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর সিলেটের কেন্দ্রস্থল দিয়ে বয়ে গেছে ‍সুরমা নদী। আর সুরমা নদীর উপর লৌহ নির্মিত সেতুর নাম ক্বীন ব্রীজ (Kneane Bridge)।সিলেট শহরের “প্রবেশদ্বার” খ্যাত এই স্থাপনাটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে সকলের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত। ১৯৩৬সালে নির্মিত ক্বীন ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৩৫০.৫২মিটার এবং প্রস্থ ৫.৪মিটার।
উনিশ শতকের ত্রিশ দশকে আসামের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন সিলেট সফরে আসেন। তখন সুরমা নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মাইকেল ক্বীনের স্মরণে ব্রীজটি নির্মাণ এবং নামকরণ করা হয়। মাইকেল ক্বীন ১৯৩২ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত আসামের গভর্ণর ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী বাহিনী ডায়নামাইট দিয়ে ব্রীজের একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজটির বিধ্বস্ত অংশ পুনঃনির্মাণ করা।
.
আশনি কিছু একটা বলায় আন্বিষ অনেক খুশি হয়। সে তার প্লান রেডি করে ফেলে। অন্যদিকে মৃদুর মনে হয় সে একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলতেছে। পরশের সাথে আজকেই কথা বলে নিজের মনের প্রশ্নগুলো করবে।
.
.
“আই লাভ ইউ”
“উফ্ আপনি?”
“তুমি কি বলতো? একবার তুমি বল তো একবার আপনি। তুমি করেই বলো আপন আপন লাগে।”
“আপনি আপন নয় অনেক বেশিই পররররররর।”
“গেট রেডি টু বি মাইন বেবু।”
পরী একটা ভেংচি কেঁটে জুনায়েদের থেকে দূরে সরে যায়। জুনায়েদ মনে মনে বলে-
আগামীকাল তুমি আমার হয়ে যাবে পরী, সারাজীবনের জন্য।
.
.
“তুমি আমায় মন থেকে মাফ করে দিয়েছো তো?”
“তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? এক কাজ করি চলো কালকেই বিয়ে করে এখানেই হানিমুনটাও সেরে ফেলি।”
“ফ্যামিলি ছারা?
“ফ্যামিলির কেয়ার আমি আর করবোনা কুহু। কেউ বাঁধা দিলেও এবার আর তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা।”
সুমেনের কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে কুহেলী।
সুমেন মনে মনে বলে-
তুই আমার থেকে আলাদা হয়েও আলাদা কখনোই ছিলিনা কুহু। এমন কোন দিন কোন ঘন্টা কোন সেকেন্ড ছিলনা যখন তুই আমার থেকে দূরে ছিলি। তুই আমার নজর বন্দিই ছিলি সবসময়। তুই নিজেই আর আমার থেকে দূরে যেতে চাবিনা কুহু। আগামীকালকে তোর জন্য কিছু অপেক্ষা করছে কুহু।
.
.
পরশের রুমে বসে আছে মৃদুলা। অপেক্ষা করছে পরশের জন্য। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া যে এখনো বাকী আছে। পরশ রুমে ঢুকতেই অবাক! মৃদুলা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মৃদুলার চাহনীতে আছে কিছু জানার তীব্র আকাঙ্খা।
“পরশ ফ্রেস হয়ে জলদি আসো প্লিজ। আমার কিছু প্রশ্নের জবাব তোমায় দিতে হবে।”
মৃদু তুমি করে বলাতেই পরশ যেন শান্তি পেলো। তাছাড়া পরশ নিজেই তো সব কিছু বলতে চায় মৃদুকে। পরশ ফ্রেস হয়ে মৃদুর পাশে বসতেই মৃদু প্রশ্নের ঝুলি খুলে-
“তুমি এতোগুলো খুন করে কীভাবে এতো শান্ত আছো পরশ?”
“তোমার কি আমাকে রোবট মনে হয় মৃদু? আমি শান্তিতে নেই মৃদপাখি। খুন করার সময় আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। খুন করার পরেও আমার মনে হচ্ছিল ওদের আরো একবার করে যদি মারা যেত হয়তো তখন শান্তি পেতাম। আমি যখন ফিরে যেয়ে প্রথমবার ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করি তখন থেকেই শুরু হয় মনের অশান্তি।”
“তুমি আরো আগে কেনো দেশে আসলেনা? সময় কেনো নিলে?”
মৃদুর কথা শুনে পরশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে শুরু করে-
“আমার অবস্থার অবনতি শুরু হয় মৃদপাখি। সাইকিয়াট্রিষ্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট নেই আমি পুরো ১বছর ৩মাস। আমি দূর্বল মনের ছিলাম না মৃদপাখি তাই অনেক বেশি সময় লাগেনি আমার ঠিক হতে। আর বাকী সময়টা নেই নিজেকে দেয়ার জন্য। যখন মনে হলো আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি তখন-ই ফিরে এলাম।”
“তুমি এতোটা হিংস্রই বা কিভাবে হয়েছিলে?”
“সম্ভাবত মায়ের জন্য মৃদপাখি। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে মা আমার সাথে কলেজ পর্যন্ত যেত যেন আমি তোমার সাথে দেখা করতে না পারি। তোমাকে একনজর দেখার তীব্রতা প্রতি সেকেন্ডেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। মা আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত আবার ক্লাস শেষ হতেই চলে আসতো নিয়ে যেতে। কলেজের ভিতরে আমি কি করতাম সেটা মায়ের দেখার সময় হয়নি কখনোই।”
এতটুকু বলে পরশ থামলে মৃদু বিরক্ত হয়।
“প্লিজ থামবে না বলো কি করতে তুমি?”
“প্রথমবার ফাহাদ নামের একটা ছেলে আমাকে ফার্ষ্ট বেঞ্চ এ বসায় গায়ে হাত দেয়। তোমার সাথে ১৮দিন থেকে দেখা না হওয়ায় আমার কষ্ট হচ্ছিলো মৃদপাখি তাই সেই কষ্টগুলোকে ফাহাদের উপরে ঝেড়ে ফেলি। প্রথমবারের মতো কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেয়। দিত্বীয়বার কিছু সিনিয়রেরা আমাকে ফাহাদকে মারার অপরাধে গালে থাপ্পর দেয়, আর আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যাই। তখন থেকেই কলেজের এবং ভার্সিটি লেভেলের সকলের কাছে আমি পরিচিত নাম হয়ে যাই। আমার থেকে সকলে দূরত্ব রেখে চলতো। সাহস করে রুবেল, নাফিজ, জয়, রুহানী আর মনিষা আমার সাথে বন্ধুত্ব করে। আমিও বেশ ভালোই ছিলাম ওদের নিয়ে কিন্তু সমস্যার শুরু হয় তখন যখন আমি জানতে পারি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে খালুজান আর ছোটমনি। তোমার এসএসসি এক্সাম শেষ হতেই তোমার মায়ের কোন এক দূর-সম্পর্কের বোনের ছেলের সাথে। তখন থেকেই খোঁজ নিতে শুরু করি সেই ছেলের। খোঁজ পেয়েও যাই খুব তাড়াতাড়িই, জানো কে ছিলো ঐ ছেলেটা? ফাহাদ! ফাহাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমাকে যেই সিনিয়রেরা মারতে এসেছিলো তাদের ফাহাদ ড্রাগ সাপ্লাই করে। ঐ সিনিয়রগুলোকে মারার সময় আমি নিজেও বেশ অবাক হয়েছিলাম যে এতো বড় ছেলেগুলো আমার কাছ থেকে মার খেয়ে কিভাবে ঠাস-ঠুস করে পরে যায় আবার পাল্টা জবাব ও দিতে পারেনা? পারবেই বা কীভাবে যখন শরীরটাকে আগেই অকেজো করে ফেলে রেখেছে। আমার কাছের প্রমাণগুলো দিয়ে পুলিশে দেই ফাহাদকে। ফাহাদ এখনো জেলেই আছে মৃদপাখি। মায়ের প্রতি আমার ভয় কমতে থাকে আর আমি বখাটে ছেলেদের মতো হতে শুরু করি। রাস্তাঘাটে মারামারি করা আমার নিত্যদিনের কাজ হয়ে যায়। পড়াশোনায় গাফিলতি করিনি আমি এসব কারণেও। চেয়েছিলাম দেশের বাহিরে যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করবো কিন্তু মা আমাকে ঘর বন্দি করে দেয়।”
.
মৃদুর কি করা উচিৎ হবে জানেনা সে। পরশ এতো কষ্ট এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে নিজের ভালোবাসাকে কাছে পাওয়ার জন্যই। পরশের থেকে দূরে গেলে পরশ হয়তো পারবেনা এবার মেনে নিতে। তাই মৃদু পরশের সাথে থাকবে বলে মন স্থীর করে।
পরশ মৃদুর দুগালে হাত দিয়ে বলে-
“মৃদপাখি আই লাভ ইউ। অনেক ভালোবাসি আমি তোকে, আমাকে ছেড়ে যাবিনা প্লিজ।”
“তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাইতেনা কেন?”
“তোর সাথে কথা বললে ভীনদেশে পরে থাকা সম্ভব হতো না মৃদপাখি। তুই আমার কি তা কখনোই তোকে বুঝাতে পারবোনা আমি।”
“আশনিকে কেন আনলে?”
“আশনি আমাদের বিষয়ে সবকিছু জানে মৃদপাখি। তুই আমাকে ভালোবাসিস কিনা সেটা জানার জন্য আশনি নিজে থেকে আমার সাথে আসতে চায়। আমাকে সাহায্য করবে বললে আমিও মানা করিনি।”
“আশনি যে তোমাকে ভালোবাসে।”
“আশনি আমাকে ভালোবাসেনা মৃদপাখি। আশনি নিজের ভালোবাসাকে ভুলতে আমার মোহে জড়িয়েছে এর থেকে বেশি কিছু না।”
“মানে?”
“তোমার এতো বুঝতে হবেনা। তুমি শুধু বলো আমাকে ছেড়ে যাবেনা।”
“যাবোনা তোমাকে ছেড়ে, কোথাও যাবোনা কখনোই যাবোনা।”
পরশ মৃদুলার কপালে গভীরভাবে অধর ছুঁইয়ে বলে-
“আমি একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই মৃদপাখি। আমি ঘুমাবো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।”
“আমার হাত এখনো অনেক শক্ত পরশ, ব্যথা পাবে তুমি।”
“সরি মৃদপাখি আমার জন্যই তোমায় এতো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।”
মৃদু পরশকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পরশের পাশে শুয়ে মাথায় দিতেই আরো একটা প্রশ্ন উঁকি দেয় মৃদুর মস্তিষ্কে।
“পরশ তুমি কুহেলী আপু আর জুনায়েদের বিষয়ে কীভাবে জানলে?”
“আমি সবার খোঁজ-ই নিতাম মৃদপাখি। বাকিটা সকালে দেখবে এখন ঘুমাতে দাও প্লিজ।”
.
.
কুহেলী নিজেকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। সুমেনকেউ দারুণ লাগতেছে দেখতে। পরী বেশি অবাক জুনায়েদকে দেখে। ‘কাজি অফিস’ লেখা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কুহেলী আর সুমেন এখানেই বিয়ে করবে। মৃদু পরশের দিকে তাকালেই পরশ মৃদুকে চোখ দিয়েই বুঝিয়ে দেয় সব ঠিক হয়ে গেছে।
“এতো সাজার কি আছে আজব-মনে মনে বলে পরী”
কুহেলী আর সুমেনের বিয়ে সম্পন্ন হতেই পরশ বলে-
“আরো একটা বিয়ে হবে এখন।”
পরশের কথা শুনে পরী ভাবে জুনায়েদের সাথে তার বিয়ে দিবে। পরী মনে মনে খুশিই হয়, কারণ ভালো তো সে এখনো বাসেই এজন্যই হয়তো জুনায়েদকে এনেছে পরশ। পরীর সামনে দিয়ে যখন জুনায়েদকে অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে কাজীর সামনে নিয়ে যেতে দেখে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পরে পরী। মেয়েটা তাদের সাথেই এসেছে নাম বর্ষা।
.
.
চলবে-
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here