#কাশফুলের_মেলা_২
#পর্ব_২
#Nusrat_Jahan_Sara
সামান্থা ওর বাসায় আসার পর সেই যে ঘুমিয়েছিলো এখনও ঘুমিয়েই আছে।সন্ধ্যাও হয়ে আসছে।এই মেয়েটাকে দেখে মনে হবে শশুড় বাড়িতে যাওয়ার পর এই দুই দিনে আর ঘুমাতে পারেনি।আদনান ওর দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।এক সুযোগে সামান্থার মা ওর হাতে চা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।সামান্থা কিছুক্ষন পর আরমোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে হাল্কা হেঁসে বলে,,,
“গুড মর্নিং।
” মর্নিং???
“হ্যাঁ ঘুম থেকে উঠে তো মর্নিং ই বলতে হয়।আল্লাহ কী যে ভালো ঘুম হলো।
আদনান কিছু না বলে চুপ করে চা খেতে থাকে।এই মেয়ের সাথে কথা বলে মাথা নষ্ট করার কোনো মানে নেই।তাই চুপচাপ থাকাই শ্রেয়।
সামান্থা আস্তে আস্তে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রাত আটটা আদনান সামান্থা আর ওর মা বাবা বসে গল্প করছেন।সামান্থার বাবা কিছুক্ষন আদনানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,,,
” আদনান বাবা সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?মানে সামান্থা কোনো ভেজাল করছে কী?
“সেটা আর বলতে হয়?ও কী কখনো সুধরে যাওয়ার মত মেয়ে যে সুধরে যাবে।কাল কয়েকজন প্রতিবেশী এসেছিলো ওদেরকে তো আপনার মেয়ে অপমান করেই দিয়েছে সাথে ওদের কাছ থেকে সালামীও উদ্ধার করেছে।এইরকম হলে চলবে বলুন?
” সামান্থা এসব কী ধরনের অভদ্রতা।
“বাবা তুমি জানোনা উনারা আমাকে অনেক কথা শুনেয়েছে।
” আচ্ছা এখন এসব বাদ দাও।আমি ডিনার রেডি করছি তোমরা খেতে আসো।সামু আমার সাথে আয় সার্ভে হেল্প করবি।
~~~
সকাল দশটা বাজে।আদনান সবেমাত্র ব্রেকফাস্ট করে সোফায় এসে বসেছে। কলিংবেল বাজছে, সামান্থা ওর মা কেউ এখানে নেই দুজনই কিচেনে।আদনান গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।দরজার ওপারে একটা মেয়ে হাতে মস্তবড় একটা রুই মাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আাদনানকে দেখে সে দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দেয়।
“দুলাভাইইইই,,,আসসালামু আলাইকুম,,কেমন আছেন?ওমা আপনি দেখতে তো ভারি সুন্দরী,অপস্ স্যরি সুন্দর হবে। সামান্থার কপাল ভালো জানেন?
আদনান মেয়েটির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।সে ভেবেছিলো হয়ত সামান্থাই একমাত্র মেয়ে যে কারন ওকারনে কথা বলে।কিন্তু আদনান ভুল।এই মেয়েতো আরও বেশি।
” আরে দুলাভাই এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?রাস্তা ছাড়ুন ভিতরে যাব।
মেয়েটি আদনানকে টেলে ভেতরে আসে।সামান্থা তখন তার কোমড়ে বাঁধা ওরনাটা খুলতে খুলতে আসছিলো।মাছ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে জলদি এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।
“আরুহীরে কতদিন পর দেখা বল?এতদিনে মনে পরলো আমার কথা?
” আর বলিস না,,লেখাপড়ার চাপে আছি ইয়ার। শুনলাম তোর বিয়ে হয়েছে,, এই কথা শুনে তো আমি শেষ কবে এখানে আসব আর তোর বরকে দেখব।আর দেখনা আমার আসার কথা শুনে মা আমার হাতে রুই মাছ ধরিয়ে দিয়েছে যেন তোর জন্য নিয়ে যাই।আমি আনতে চাইনি।আসার সময় সবাই এমন করে তাকিয়েছিলো যেন আমি কিছু চুরি করেছি,ইশ কী লজ্জা কী লজ্জা?আচ্ছা এখন আমায় ছাড়।আর মাছটা ধর।আর কতক্ষন এটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব?
সামান্থা আরুহীকে ছেড়ে ওর কাছ থেকে মাছটা নেয়।আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে বেচারা ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।সামান্থা একটু হেসে বললো,,
“ও আমার একমাত্র ফুপাতো বোন আরুহী।বয়সে আমার একমাসের ছোট। তাতে কী? আমরা একসাথেই বড় হয়েছি।গোসল করেছি,খেয়েছি,দেয়েছি,নেচেছি।
আদনানঃ আর কিছু?আচ্ছা একটা কথা বলো তোমরা এত কথা কীভাবে বলো?মানে সিরিয়াসলি।
” দুলাভাই এসব কী বলেন?আল্লাহ তো মুখ দিছে কথা বলার জন্যই, তো কী কথা বলবো না?
“আরুহী তুই আমার সাথে আয়।এখন এই রুই মাছটাকে একটু মানুষ করবো।
আরুহী আর সামান্থা চলে যাওয়া মাত্রই আদনান একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।চায় কোথায় একটু সামান্থাকে রাগ দেখাবে কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনা।এমনিতেই পাগলের পাল্লায় আছে এখন আবার আরেক পাগল এসে জুটেছে।আদনান কপালে হাত দিয়ে বসে পরে।
সামান্থা আর আরুহী মিলে রান্না করছে।সামান্থা ওর মাকে কিচেন থেকে বিদায় করে দিয়েছে।আরুহী পেয়াজ কাটতে কাটতে বলল,,
“আচ্ছা সামু তোর দেবর আছে?
” আছে তো।বাহিরে থেকে লেখাপডা করে।কিছুদিনের মধ্যেই বিডিতে ফিরছে।হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলি যে?
“আসলে কী বলতো তোর জা হওয়ার আমার বহু আগ থেকেই শখ।তো তোর যদি কোনো দেবর থাকত তাহলে আমি তার ঘাড়ে উঠে বসে থাকতাম।তুই আর আমি মিলে ঢেং ঢেং করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম।বিশ্বাস কর সামু আমি যদি তোর জা হই তাহলে তোকে একটা কাজও করতে দিবনা।
” তো এখন আমায় কী করতে বলছিস?
“তোকে কিছু করতে হবে না।জাস্ট তুই যাওয়ার সময় আমাকে সাথে করে নিয়ে যাস। বাকিটা আমি সামলে নিব।যদি আমার মন মত হয় তাহলে,,তো কথাই নেই।আর যদি পছন্দ না হয় তাহলে যেভাবে যাব ঠিক সেই ভাবেই বেড়িয়ে আসব।
” ওকে তুই কাল রেডি থাকিস।যাওয়ার সময় তোকেও সাথে করে ব্যাগে পুরে নিয়ে যাবনি।
~~~
রাত দশটা বাজে।সামান্থা ধোঁয়া উঠা কফির মগ হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলেও বারবার সেই অতীতের কথাই মনে পরে।যতই অতীতের কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়,দিন শেষে সেই অতীতের কথাই বেশি মনে পরে।কয়েকদিন আগেও সামান্থার আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু দেনাপাওনার বিষয় নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় আর পাত্রপক্ষ বিয়ে ভেঙে দেয়।ইতোমধ্যে সবাইকে ইনভাইটও করা হয়ে গেছে।লজ্জায়, অপমানে সামান্থার বাবা তখুনি হার্ট এ্যটাক করেন।আদনানের বাবা বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ায় উনার কাঁধে তখন হাত রাখেন আর সামান্থাকে তুলে দেন নিজের ছেলের কাঁধে।আদনান সেদিন অনেক মানা করেছিলো কিন্তু ওর বাবা শুনেননি।তাই বিয়েটা হয়েই গেলো।কতই না ছেলেটাকে কথা শুনিয়েছে,আর আজ সেই ছেলেটাই ওর সম্মান রক্ষা করেছে।
রুমে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে সামান্থা ওর চোখের জল মুছে নেয়।পেছন ফিরে দেখে আদনান পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
“আব তুমি,,এখানে?
” এই রুমেই তো থাকা হয় তো এত রাতে এই রুমে আসব না তো কই যাবো?এখন বল এতো রাতে চা খাচ্ছিস কেন?
“এমনি ইচ্ছে হলো তাই।
” শুন যা বলতে আসলাম,,কাল থেকে আমি হসপিটালে জয়েন করছি।চাইছিলাম তো জয়েন করে তবেই বিয়ে করব কিন্তু সেটা আর হলো কই তার আগেই তো বাবা আমার কাঁধে বউ নামক একটা দায়িত্ব তুলে দিলো।
“হ্যাঁ সেজন্য তো আমায় অনেক শাস্তিও পেতে হলো। বিয়ে করে শশুড় বাড়িতে যাবার পরই আমার কাছ থেকে খাবার কেড়ে নিলে,তারপর তোকে আমি ভালোবাসিনা আমার কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্ট করিস না,আমার খাট থেকে নাম,ব্লা ব্লা ব্লা।
আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলোতো তোমার কী গার্লফ্রেন্ড আছে?
” ছিলো এখন আর নেই।বিয়ের আগেই আরেকটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।
সামান্থা কথাটা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।আদনান ঠোঁট উল্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সামান্থা হাল্কা করে নিজের পেট চেপে ধরে বলল,,,
“এতই ভালোবাসা যে ছেড়েই চলে গেলো।আর তুমি কিনা এই মেয়েটার জন্য আমার সাথে এমন রুড ব্যবহার করলে বাহ।
~~~~
সকাল দশটায় আদনান, সামান্থা আর আরুহী বেড়িয়ে পরলো।বাপের বাড়িতে আড়াইদিন থাকতে হবে এটাইতো নিয়ম।আরুহী গাড়িতে বসে এটা ওটা বলে মাথা খেয়ে ফেলছে।আদনান বিরক্ত হয়ে আপাতত কানে ইয়ারফোন গুঁজে রেখেছে।আর ভাবছে এই মেয়েটা না আবার কী শুরু করে।
বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামতেই আরুহী লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে। হাত দুটি মেলে একটা হাই তুলে।
” দুলাভাই কী শত্রুতা ছিলো আপনার সাথে কে জানে?এতক্ষন গাড়ি চালালেন নাকি অন্য কিছু আপনিই জানেন।
“তাহলে তুমিই ড্রাইভ করতে।মনে তো হয়না কোনোদিন স্টিয়ারিঙেই হাত দিয়েছো।
” এই সামু তোর বর কিন্তু আমায় ইনসাল্ট করছে।
আদনান সামান্থার কাছ থেকে কিছু শুনার আগেই হনহনিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেছে।আরুহী আর সামান্থাও পেছন পেছন আসছে।আরুহী বাসায় এসেই আপাতত আদনানের মা’কে লম্বা একটা সালাম দিলো।যে করেই হোক উনায় ইমপ্রেস করতে হবে।আদনানের মায়েরও আরুহীর চালচলন অনেক পছন্দ হয়েছে।
সামান্থা আর আরুহী বসে চা খাচ্ছিলো, এমন সময় আদনানের মা এসে বললেন পরশু দিনই এই বাড়ির ছোট ছেলে আদিল দেশে ফিরছে।কথাটা বলে উনি চলে গেলেন।আরুহী সমান্থার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
“এভাবে তাকানোর মানে কী?
” তোর দেবর আর আমার নামের কী মিল প্রথম শব্দই আ,A।নাম যখন মিলে গেছে তাহলে বাকিটাও মিলে যাবে।
“বেশি উড়িস না ঝরে পরে যাবি।আগে ওকে দেশে আসতে তো দে।
চলবে,,,,,
[সব গল্পে শয়তানী,ভিলেন থাকেনা।কিছু কিছু গল্পে আনন্দ,ভালোবাসা, সুখ, দুঃখ এসবও থাকে।আর আমি চাইছি গল্পটা এভাবেই লিখতে।যদিও গল্পটা বেশি লম্বা করবনা]