কাশফুলের মেলা ২ পর্ব -শেষ

#কাশফুলের_মেলা_২
#পর্ব_৩_শেষ
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
আরুহী আদিলদের বাসায় এসেছে তিন-চারদিন হয়ে গেছে।এই তিন-চারদিনে ও সবারই মোটামুটি পছন্দের হয়ে গেছে। আদনানের চিন্তাভাবনাও পরিবর্তন হয়েছে।সে আরুহীকে যেরকমটা ভেবেছিলো আরুহী আসলে সেই ধরনের মেয়ে না।
কিচেনে আরুহী আর সামান্থা মিলে রান্নার কাজ সারছে।সামান্থা অনেক্ষন যাবৎ খেয়াল করছে আরুহী কেমন এক ধ্যান ধরে বসে আছে।সামান্থা হাতের খুন্তিটা রেখে আরুহীর সামনে এসে দাঁড়ায়।

“রুহী আর ইউ ওকে?অনেক্ষন যাবৎ দেখছি তুই অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছিস।কী এতো ভাবছিস?

” ভাবছি আমার এখন চলে যাওয়া উচিৎ।

“কিন্তু তুই তো,,,

” মজা করছিলাম সিরিয়াসলি নিস না।আর এত বড় বাড়িতে আমাকে ঠিক মানাবে না রে।আমি যেমন তেমনই ডিজার্ভ করি।বড়লোকদের অহংকার বেশি থাকে।যা আমার পছন্দ না।বাট তোর বর,শশুড়,শাশুড়ী উনারা অনেক ভালো।

“তাহলে কার কথা বলছিস তুই?কে অহংকারী?

” তোর কাছে কোনোকিছু লুকিয়ে লাভ নেই।আমার মনে হয় আদিল অনেক অহংকারী।কারণ কাল যখন দুলাভাই আমায় আর আদিলকে নিয়ে মজা করেছিলো তখন তোর শাশুড়ী মা মুখটা গোমড়া করে নিয়েছিলো,আর বলছিলো আদিল মেনে নিলেই হয়।এটার মানে বুঝতে পারছিস?

“তাই বলে তুই চলে যাবি?আজ বিকেলেই তো ও দেশে ফিরছে।ওকে একটু দেখে তো যা।

” ওকে।
~~~~~
রাত আটটার দিকে কলিংবেল বাজে।আদনানের মা সবাই ড্রয়িংরুমেই বসা ছিলেন।কলিংবেল বাজতেই আদনানের মা গিয়ে দরজাটা খুলে দেন।উনার দুই ছেলে দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে।আদিল বাসায় ঢুকতেই ওর নজর যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে।আরুহী এখনো আদিলকে দেখেনি। সে নিচু হয়ে মনোযোগ দিয়ে কী যেন দেখছে।চোখ তুলে আদিলের দিকে তাকানো মাত্রই বড় একটা ঢুক গিলে।এটা কীভাবে সম্ভব। ওই এই বাড়িতে কী করছে?তারমানে?
আরুহী ড্রয়িংরুম ছেড়ে চলে যেতে চায় তার আগেই আদিল ওকে থামিয়ে দেয়।

“হেই স্টুপিড তুমি এখানে কী করছো?

আদিলের কথা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। আদিলের কথায় মনে হচ্ছে ও আরুহীকে চিনে,বাট কীভাবে?

” আমি এখানে আবার মানে কী?আমি আমার বোনের শশুড় বাড়িতে এসেছি।আগে যদি জানতাম তাহলে কখনোই এই বাড়িতে আসতাম না যেই বাড়িতে আসার জন্য আগে স্বপ্ন দেখতাম।

সামান্থাঃমানে?

আরুহী জীভে একটা কামড় দেয়।ইমোশনাল হয়ে সে কী বলে দিলো।আরুহী দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে।
আদিল এখনো ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর বাঁকা হাসছে।
~~~~~।
রাত বারোটায় সবাই ডিনারে বসেছে।সবাই আসলেও আরুহী আসেনি।আদনানের মায়ের অনেক খারাপ লাগছে।এই কদিনে মেয়েটা একেবারে উনাকে ওর মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে।ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে ডিনার সব একসাথে বসে করেছে।তাই খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। উনি উনার চেয়ার ছেড়ে আরুহীকে টেনে নিয়ে এলেন।আরুহী বড়দের মুখের মর্যাদা রাখতে জানে তাই উনি একবার ডাক দিতেই আরুহী চলে এসেছে।আদিল আর আরুহী একদম বরাবর বসেছে।আরুহী মুখে খাবার দিয়ে বসে আছে গিলছেনা আদিল যেভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাতে খাবার গলা দিয়ে নামছেনা।আদনান মুখ তুলে আরুহীর দিকে তাকালে আরুহী একটা মুচকি হাসি দেয় কিন্তু সেটা অনেক প্রশস্ত। সমান্থা খেয়াল করছে আদিলকে।আদিলের চাহনী সামান্থার কাছে ভালো ঠেকছে না,,,তারমানে কী?
সামান্থা একটু গলা ঝেড়ে বলল,,,

“আব আদিল,,,তুমি কী কাউকে পছন্দ করো?আসলে হয়েছে কী আমরা তোমার জন্য বউ দেখছি।

” সেটা আবার কেমন কথা?তুমি নিজেই তো বউ হয়ে এলে দশদিন হলো না,তারমধ্যে আবার বউ দেখাও শুরু করে দিয়েছো বাহ।অনেক দায়িত্ববান তুমি?তবে আমি একজনকে ভালোবাসি।আর থাকেই বিয়ে করতে চাই।

আরুহী মুখ তুলে আদিলের দিকে তাকায়।তারমানে কী আদিল নতুন কোনো সম্পর্কে গেছে।আরুহীর চোখ টলমল করছে।আদনান আঁড়চোখে আদিল আর আরুহীকে দেখছে আর সামান্থাকে ইশারা করছে।আদিল অল্প খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে আসে আর আরুহীও।

“আদনানের বাবাঃআমি যা ভাবছি তোমরাও কী সেটাই ভাবছো?

সামান্থাঃআমার মনে হয় ওরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনে।ইভেন কোনো পারসোনাল রিলেশনে ইনভলভও ছিলো ওরা।

আদনানঃযদি তাই হয় তাহলে আমার মনে হয় ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিৎ।
~~~~
রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সামান্থা চোখে ঘুম আসছেনা।আশেপাশের বিল্ডিং থেকে আলো আসছে,কয়েকটা বিল্ডিংয়ে আবার আলো নিভেও গেছে।সামান্থা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনছে।

” তারা গুনেই কী রাত পার করে দিবে।আর তারা গুনে লাভ নেই কারণ তারার হিসেব তুমি মিলাতে পারবেনা যেমন এখনো আমার মনের অবস্থার কথা বুঝে উঠতে পারোনি।

আদনানের এমন শীতল কন্ঠ সামান্থর মনে উতালপাতাল ঝর বইয়ে ফেলছে।কই
এর আগে তো কখনো এমন হয়নি।তারমানে কী,,, আর আদনান ওকে তুমি করে সম্ভোধন করছে??

“আব তুমি আমাকে তুমি করে বলছো?আর তোমার মনের অবস্থা মানে?

” কিছুনা ঘুমাবে এসো।

“তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো।প্লিজ বলো কী লুকাচ্ছো।

” আমি তোমায় ভালোবাসি।

“তাহলে এতদিন বলোনি কেন?আর তুমি না বললে তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে আর বিয়ের আগে পালিয়ে গেছে?

” কথাটা মিথ্যা ছিলো।আর ভালোবাসা কথা বলতে গেছিলাম অনেকবার বাট বলা হয়ে উঠেনি।তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারতেনা তাই ভয়ে বলতে পারিনি।কিন্তু আজ বলতে দ্বিধা নেই কারণ এখন তুমি আমার জীবন সাথী।বেলা শেষে তুমি আমারি।

“বাসর রাতে যা হলো,,,,,

” ওগুলো তোমায় ফিল করানোর জন্য।আমি চাইছিলাম তোমার খারাপ লাগুক।কারণ অনেক সময় খারাপ লাগা থেকেও ভালোবাসার উৎপত্তি হয়।যেমনটা আমার হয়েছে।আমিও তোমায় সহ্য করতে পারতাম প্রথমে তারপর ধীরে ধীরে যে কীভাবে ভালোবেসে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারিনি।

“আসলে,,,,,,

” আমি তোমার থেকে উত্তর জানতে চাইছিনা।কারণ আমি জানি তুমি আমার উপরে উইক।তা নাহলে তোমার মতো মেয়ে এতকিছু মেনে নিতনা।

আদনানের কথায় যুক্তি আছে।সামান্থা মুচকি হাসে। সেটা আদনানের দৃষ্টি এড়ায়নি।আদনান সামান্থার কাছে এসে ওর কপালে একটা ডিপ কিস করে।সামান্থা চোখ বুজে নেয়।
~~~~~
ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে সবেমাত্র বসেছে আরুহী।খট করে দরজা খুলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে আদিল দাঁড়িয়ে আছে।আরুহী বসা থেকে উঠে যায়।

“এসব কী ধরনের অভদ্রতা।উইদাউট পার্মিশন আপনি আমার রুমে ঢুকে গেলেন?এটা কী ধরনের ম্যানার্স?

” আমার বাড়ি, আমার ঘর আমি যখন খুশি তখন ডুকতে পারি।তার জন্যে আমার কারও পার্মিশনের দরকার নেই।

“মোস্ট এ্যারোগেন্ট ইজ নট এ গুড।বেশি অহংকার আপনার।স্রেফ এই কারনেই সেদিন আমাদের সেপারেট হয়ে যাওয়া।অহংকারী মানুষদের আমি দুচোখেও দেখতে পারিনা।আগে ভাবিনি এই আদিলই সেই আদিল।যদি জানতাম তাহলে আমার ছাঁয়াও এই বাড়িতে পরত না কোনো দিন।

” ভুলটা তোমার তাই শুধরেও তুমিই নিবে।সেদিন তো তুমিই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে।

“কারণটাও আমি বলেছি।সো প্লিজ এই রুম থেকে বেড়ুন।

” ব্যাগপত্র গুছাচ্ছো কেন?

“কাল আমি চলে যাচ্ছি।এমনিতেই চলে যেতাম।

” কিন্তু তুমি যেতে পারবেনা।একেবারের জন্য এই বাড়িতে থেকে যাবে তুমি।

“মানে?

” মানে বাবা মা আমাদের দুজনের বিয়ে ঠিক করেছে। আর উনারা এটাও জেনে গেছেন আমরা আগে রিলেশনে ছিলাম।যদি তুমি এখানে না আসতে তবুও আমি গিয়ে তোমায় খুঁজে বেড় করতাম। এই আদিল খান কথার মর্যাদা রাখতে জানে,একবার যখন তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকেই বিয়ে করব তাহলে তোমাকেই বিয়ে করব।তাই এখনো এটার নড়চড় হবেনা।রেডি থেকো।

“কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইছিনা।

” আমার দুচোখের দিকে তাকিয়ে বলো যে তুমি আমায় বিয়ে করবেনা।

আরুহী আদিলের চোখের দিকে তাকাচ্ছেনা।মুখ নিচু করে রেখেছে।

“কী হলো তাকাও?

আরুহী আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে শক্ত করে আদিলকে জড়িয়ে ধরে।

” মা আমার জন্য অনেকবার পাত্র দেখেছে।আমি শুধু না করেই গেয়েছি।মুখে তোমাকে ভালোবাসিনা বললেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।

“তো আমায় নিয়ে করতে রাজী তো?

” এক পায়ে রাজী।

~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~

[গল্পের সাথে গল্পের নামের কোনো মিল নেই আমি জানি।আমি চাইছিলাম যে গল্প দিয়ে আমি আমার লেখা অফ দিয়েছিলাম সেটা দিয়েই শুরু করবো।আর এটাও বলেছিলাম গল্পটা বেশি লম্বা করবনা।তবুও আরও কয়েকপার্ট লিখার কথা ছিলো কিন্তু আমি খুব অসুস্থ তাই পারিনি।নেক্সট গল্প শীঘ্রই নিয়ে আসব।আর সেটা হবে একেবারে ভিন্ন ধরনের ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here