#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৩
“কানাডার একটা সুন্দর রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাচ্ছিলাম আমি আর রিয়াদ স্যার!’হঠাৎ কি হলো রিয়াদ স্যারের আমার মুখের সামনে খাবার ধরে বলে উঠলেন উনিঃ
—“হা করো…
“ওনার এমন কাজে পুরো চমকে উঠলাম আমি!’বুঝলাম না এমন কেন করছেন রিয়াদ স্যার এখানে তো কেউ নেই!’তাহলে,কিছু বলবো তার আগেই মোবাইলটায় টুং করে বেজে উঠলো উপরে রিয়াদ স্যারের মেসেজ দেখে আরো চমকে উঠলাম আমি উনি আমার পাশে বসে আমায় মেসেজ করছে!’দুই’পাঁচ কিছু না ভেবে মেসেজটা দেখলাম আমি!’যেখানে লেখাঃ
—“কেউ আমাদের দেখছে তানজু!’
“সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি রিয়াদ স্যারের দিকে!’উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠলঃ
—“কি হলো নেও…
“কি করবো কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছি না!’অতিরিক্ত না ভেবে হা করলাম আমি সাথে সাথে রিয়াদ স্যার চামচে করে মুখে খাবার ভরে দিলেন!’রীতিমতো সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার!’এরই মাঝে রিয়াদ স্যার বলে উঠলেনঃ
—“তোমায় তো খাইয়ে দিলাম এবার আমায় খাইয়ে কে দিবে…
“এবারের কথায় শুনে মনে হলো আমি নেই আমার মাঝে!’আমার অবস্থা বুঝতে পেরে রিয়াদ স্যার আবারো বলে উঠলেনঃ
—“কি হলো…
“ওনার কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো আমার কিছুটা আমতা আমতা করে বললামঃ
—“হুম হা এই তো দিচ্ছি…
“তানজুর কথা শুনে মুচকি হাসলো রিয়াদ’!তারপর বললোঃ
—“গুড!’
“রিয়াদের গুড শুনে তানজু আস্তে আস্তে নিজের প্লেট থেকে চামচে করে কিছু খাবার উঠিয়ে মুখের সামনে ধরলো রিয়াদের!’রিয়াদও তানজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে মুখে পড়ে নিলো খাবার!’
“এদিকে…
“রেস্টুরেন্টের বাহিরে থাইগ্লাসের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের ছবি তুললো সেই ফটোগ্রাফার!’যার নাম ছেন্ডি!’রিয়াদ অনেক আগেই ছেলেটাকে ফলো করেছে,,যে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর আর তানজুর ফটো তুলছিল!’পুরোটা বুঝতে না পারলেও এতটুকু বুঝে গেছে ছেলেটি হয়তো তাকে আর তানজুকে সন্দেহ করছে!’তাই তো এতো একটিং,রিয়াদ এটাও আন্দাজ করতে পেরেছে যে ছেলেটাকে হয়তো অনন্যাই পাঠিয়েছে!’তাহলে কি বিশ্বাস করলো না অনন্যা!’
“মাথার ভিতর হাজারো প্রশ্ন নিয়ে খাবার খাচ্ছে রিয়াদ!”
“একে অপরকে খাইয়ে দিতে দিতে ব্রেকফাস্ট শেষ করলো রিয়াদ আর তানজু!’তানজু তো পুরোটা সময়ই শকটে ছিল!’সে তো বুঝে উঠতেই পারে না কখন রিয়াদ রিয়েল কিছু বলে আর কখন একটিং করে!”
________
“চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে রিয়াদ আর তানজু!’রিয়াদ মোবাইল দেখছে আর তানজু তাকিয়ে আছে রিয়াদের মুখের দিকে!’কিছু বলতে চায় সে কিন্তু বলতে পারছে না!’একরাশ অস্থিরতা নিয়ে তাকিয়ে আছে তানজু রিয়াদের দিকে!’
“রিয়াদ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠল তানজুকেঃ
—“তুমি কি কিছু বলবে নাকি এভাবেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে…
“রিয়াদের কথা শুনে চমকে উঠলো তানজু!’
—“কি করে বুঝলো আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি….(মনে মনে)
“রিয়াদ তার ফোনটাকে সরিয়ে রেখে তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“কি করে বুঝলাম সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো কি বলতে চাও বলো…
—😳😳😳
—“ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
—“না মানে কি করে বুঝলেন আমি এটা ভাবছিলাম..
—“বোকার মতো কথা বলো না তানজু, এখানে না বোঝার কি আছে?’ওসব বাদ দেও আগে বলো কি বলবে আমায়,বলে ফেলো…
—“আসলে স্যার তখন রেস্টুরেন্টে,কে দেখছিল আমাদের…
—“কে দেখছিল সেটা বলতে পারবো না বাট ছেলেটাকে যে অনন্যা পাঠিয়েছে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই…
—“কি,তার মানে অনন্যা ম্যাম বিশ্বাস করে নি,তাহলে সকালে যে..
—“সেটাই তো!’যাক ওসব বাদ দেও শুধু মনে রেখো এখন থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে কিছুতেই অনন্যাকে বুঝতে দেওয়া যাবে আমরা একটিং করছি…
—“আচ্ছা স্যার অনন্যা ম্যাম তো আজ নয় কাল সত্যিটা জেনেই যাবে তখন…
—“এক প্রশ্ন বার বার কেন করো বলো তো!’
—“না আমি তো শুধু বলছিলাম…
—“ডোন্ট ওয়ারি ওটা নিয়ে তুমি ভেবো না পরে আমি বুঝে নিবো,
—“ঠিক আছে স্যার…
“উওরে রিয়াদ আর কিছু বললো না!’কিছুক্ষন চুপ থেকে তানজু আবারো বলে উঠলঃ
—“তাহলে স্যার আমরা কানাডা থেকে ফিরছি কবে আপনার নতুন ফিল্মের শুটিং তো এখানে হবে না…
—“দু’দিন পর বেক করবো পরশু একটা পার্টি আছে ওটার পর,,তুমি ভুলে গেলে নাকি..
—“না স্যার ভুলি নি আসলে কাল থেকে মাথাটা একটু চক্কর দিচ্ছে তাই গুলিয়ে গেছি আর কি…
—“বেশি গুলিয়ে গেলে কিন্তু প্রবলেম তানজু..
—“ডোন্ট ওয়ারি স্যার আই হেন্ডেল ইট,তাহলে স্যার আজ কি করবো…
—“কি আর করবো শুধু ঘুরবো সাথে একজনকে ঘুরাবো….
“রিয়াদের কথার অর্থ না বুঝতে পেরে বলে উঠল তানজুঃ
—“মানে..
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ তানজুর গাল ধরে বলে উঠলঃ
—“একটিং মাই ফেক গার্লফ্রেন্ড….
—“কি…😳
“হেঁসে উঠলো রিয়াদ!’
.
.
“সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেফুরে ছেন্ডিকে বোকা বানিয়েছে রিয়াদ!’একদম পারফেক্ট বয়ফ্রেন্ডের মতো বিহেভ করেছে সে তানজুর সাথে প্রচুর শপিং করেছে, আইসক্রিম খেয়েছে সাথে পার্কে ঘুরে বেরিয়েছে দুজন!’রিয়াদের একটিং এতটাই নিক্ষুত ছিল যে ছেন্ডি ধরতেই পারে নি রিয়াদরা তাকে দেখানোর জন্য নাটক করছে!’সবকিছুরই পিক তুলেছে ছেন্ডি,যেমন তানজুর ঠোঁটে আইসক্রিম লাগলে রিয়াদ তার হাত দিয়ে মুছে দিয়েছে!’শপিং মলে তানজুকে তার চয়েজ করা ড্রেস কিনে দেওয়া, সহ আরো নানা কিছু!’
“টেবিলের উপর রিয়াদ আর তানজুর এসব ছবি দেখে রাগে গা জ্বলে উঠছে অনন্যার!’ছেন্ডি অনন্যার পাশে দাঁড়িয়ে বললোঃ
—“আপনার কথা মতো আজ সারাদিন আমি ওদের উপর নজর রেখেছি ম্যাম,
আমার মনে হয় রিয়াদ স্যার তানজু সত্যি সত্যি গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড,বাকিটা আপনি যা মনে করেন ম্যাম তাহলে আজ আমি আসি,,
“উওরে হাত নাড়িয়ে যেতে বলে অনন্যা!’অনন্যার হাতের ইশারা পেতেই ছেন্ডি চলে যায়!’অনন্যা কিছুক্ষন ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে রাগী লুকিং এ সে কিছুতেই বিষয়টাকে মেনে নিতে পারছে না!’
“অনন্যা রেগে একটা ছবির দু’ভাগ করে ফেলে যে ছবিটায় রিয়াদ তানজুর ঠোঁটের আইসক্রিম মুছে দিয়েছিল!’রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার…
________________________________________
__________________
“রাত_১০টা….
“হোটেলের ছাদের উপরে থাকা সুইমিং পুলের সামনে চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে রিয়াদ!’আর পাশেই তানজু দাঁড়িয়ে আছে!’হঠাৎই তানজু বলে উঠলঃ
—“একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না স্যার…
—“কি বাড়াবাড়ি…
—“আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছে না নাকি বুঝতে চাইছেন স্যার…
—“ওহ তুমি সারাদিনের কথা বলছো…
—“আপনার এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটা নিতি পারছি না স্যার…
—“এত টেনশন কেন নিচ্ছো বলো তো…
—“আপনি সবটা এত ইজিলি কেন নিচ্ছেন বলুন তো….
—“উফ!’তানজু তুমি কি এই টপিক ছাড়া আর কথা বলতে পারো না কাল থেকে শুধু এই টপিকেই পড়ে আছো…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল!’কানাডার শীতলা তাপে আছে তাঁরা,ঠান্ডা ঠান্ডা পরছে খুব শীতে তানজু কাঁপছে,ঠান্ডা বাতাস বইছে চারিদিকে,গায়ের চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানজু,কিন্তু কানাডার শীতের তুলনায় এটা খুবই ঠুংকো…!’আর রিয়াদ মোটা জ্যাকেট পরে কফি খাচ্ছে!’এর মধ্যে একজন ওয়েটার এসে দাঁড়ালো রিয়াদের সামনে!’রিয়াদের বললো সেঃ
—“Do you need anything else sir…(আপনার কি আর কিছু লাগবে স্যার)
—“No…
—“More Coffee sir.
—“not now..
—“ok sir can i go…
—“yes…
—“ok sir…
“এতটুকু বলে ওয়েটার চলে যায়!’
“কিছুক্ষন পর….
“রিয়াদ তার হাতের কফিটা শেষ করে বলে উঠল তানজুকেঃ
—“ওকে তানজু এখন রুমে যাও শীত পড়ছে খুব বেশিক্ষন বাহিরে থাকা ঠিক হবে না, আমিও যাচ্ছি…
—“ওকে স্যার আপনি যান আমি আসছি…
—“ওকে,আর বেশি ভেবো না আমি আছি না…
“বলেই হেঁটে চলে যেতে নেয় রিয়াদ!’
“কিছুটা দূর যেতেই হঠাৎই পানিতে কারো পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে পিছন ঘুরে তাকালো সে!’সামনেই তানজুকে পানির ভিতর লাফালাফি করতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল রিয়াদ!’রিয়াদ জানে তানজু সাতার জানে না,বেশি কিছু না ভেবে গায়ের জ্যাকেটটা খুলে রিয়াদও পানিতে ঝাপ দিলো!’সাঁতরে গিয়ে ধরলো সে তানজুকে…
“এদিকে…
“তানজু পানির ভিতর লাফালাফি করছে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তার!’হঠাৎ কি থেকে কি হলো কিছু বুঝে উঠতে পারলো না সে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই দু পা এগোতেই কিছু একটার সাথে পিছলা খেয়ে সোজা সুইমিং পুলের মধ্যে পড়ে তানজু!’তাকে কেউ ধরেছে বুঝতে পেরে তানজুও গলা জড়িয়ে ধরে তার!’তারপর তাড়াতাড়ি পানির উপর মাথা তুলে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে সাথে কাশতে লাগলো,,পানি খেয়ে ফেলেছে তানজু…
“এদিকে রিয়াদ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে!’সে বুঝে উঠতে পারছে না তানজু পানির ভিতর পরলো কি করে!’.
“তানজু কিছুক্ষন শ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই রিয়াদকে গলা জড়িয়ে ধরেছে দেখে ঘাবড়ে যায়!’কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু করারও নেই কারন পানির ভিতর আছে তারা,তাই আর একটু শক্ত করে রিয়াদকে ধরে বললোঃ
—“সরি স্যার…
“রিয়াদ কিছু না বলে তানজুকে নিয়ে চলে আসে সুইমিং পুলের কিনারায়!’কিনারায় আসতেই তানজু রিয়াদকে ছেড়ে উঠে পড়ে উপরে!’ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে তাঁর!’রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“পানির ভিতর পরলে কি করে?’
—“স্যার পরে বলবো…
“এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি দৌড়ে চলে যায় তানজু,রিয়াদও আর কিছু না ভেবে চলে যায় নিজের রুমে!’
.
“অন্যদিকে ওঁরা যেতেই সেই ওয়েটারটা দরজার আঁড়ালে দাঁড়িয়ে একটা ফোন করে বললোঃ
—“ম্যাম আপনি যেমনটা বলেছিলেন তেমনটাই করেছি কিন্তু রিয়াদ স্যার বাঁচিয়ে নিয়েছে….
“ওয়েটারের কথা শুনে অপরপাশে অনন্যা মেবাইলটা ছুঁড়ে মারলো নিচে!’সাথে সাথে মেবাইলরা ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে গেল..
“রাগ হচ্ছে তার ভিষণ রাগ….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!”আর গল্প কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু]
#TanjiL_Mim♥️