রৌদ্রবিলাসী পর্ব -১০

রৌদ্রবিলাসী
১০ পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” তো আমরা আলাদা হব,সমস্যা কি? ”
আহান ভাইয়ের কথা শুনে উপস্থিত কেউই অবাক না হলেও আমি প্রচুর অবাক হই।কিছুক্ষন আগে প্রপোজ করে ভালোবাসার কথা বলে,এখন আবার আলাদা হতে চাওয়া এটা কিরকম ফাজলামি বুঝতে পারিনা। আমি চুপ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি আবার আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় অন্য দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” আমরা আলাদা হব এবং বিয়েও হবে,তবে আমাদের দুজনের নয় ওদের দুজনের ”

উপস্থিত কেউ আহান ভাইয়ের কথার ঠিক মানেটা বুঝতে পারেনা।তাই সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” কি যা তা বলছিস তুই? ”

তিনি তার ঠোঁটের কোণে রহস্যময়ী হাসি টা নিয়ে এসে বলেন,

–” আমি কখনো যা তা বলি না বুঝলে,সব সময় ঠিকটাই বলি।তোমরা যদি বিশ্বাস না করো তাহলে আমার কি? ”

তিনি এই কথাটা বলে গভীর ভাবনার মধ্যে ঢুকে যান।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,

–” এসব মঙ্গল গ্রহের ভাষা ব্যবহার না করে পৃথিবীর ভাষা ব্যবহার করলে কি হয়?একটু সহজে বুঝতে পারতাম আরকি।একটু বুঝিয়ে বলেন না..”

আমার কথা শুনে তিনি উপস্থিত সবার সামনে আমাকে বলেন,

–” উষু আগে তোর মাথায় অনেক বুদ্ধি ছিল,কিন্তু এখন দেখি সব গবরে পরিণত হয়েছে। এই সহজ কথাটাও বুঝতে পারতেছিস না,কেমনে পরীক্ষা পাস করবি তুই বলতো আমাকে? ”

এভাবে সবার সামনে আমাকে আহান ভাই অপমান করবে তা ভাবতেও পারিনি।আমি তার দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে মাথা নিচু করে রাখি।তিনি এবার একটা কাশি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেন।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে একদিক থেকে আরেকদিকে হাটতে থাকেন।এবং হাটতে হাটতে বলতে শুরু করেন,

–” শোন,এদিকে এশার ননদ আমাকে বিয়ে করবে আর উষাকে কালিয়ার ভাই বালিয়া সরি বিশ্বাস।ঠিক বলছি না? ”

তার কথায় সবাই মাথা নাড়ায় কিন্তু এখনো কিছু বুঝতে পারে না।তিনি তার অসমাপ্ত কথার পিছনে আরো কিছু কথা জুড়ে দেয়ার জন্য পুনরায় বলতে শুরু করেন,

–” এখন আমাদের কাজ হলো,দুইপক্ষকেই জানিয়ে দেয়া যে আমরা রাজি…”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি চমকে উঠি।আমরা রাজি মানে,আমি কখনো রাজি না।ওই কালিয়ার ভাইকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই।আহান ভাই আমার মনের ব্যাপারটা বুঝতে পারে সবার সামনে আমার মাথায় একটা বাড়ি মেরে পুনরায় বলতে থাকেন,

–” তাদেরকে জানাবো আমরা রাজি এবং কিছু শর্ত আছে এখানে? ”

–” কি শর্ত,” জানতে চায় আহান ভাইয়ের বাবা।

–” তাদেরকে বলতে হবে যে,আমাদের দুজনের বিয়ে আমাদের এই বাড়িতে হবে।অথএব,উষাকে বিয়ে করতে চাইলে কালিয়ার ভাইকে এখানে আসতে হবে প্লাস এশার ননদকেও এখানে আসতে হবে বিয়ে করতে চাইলে ”

–” তাতে কি হবে শুনি?,”পুনরায় প্রশ্ন করেন আহান ভাইয়ের বাবা।

আহান ভাই এবার তার মুখের মধ্যে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে আসেন।তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” এই সামান্য ব্যাপারটাও বুঝতে পারছো না তুমি বাবা,আরে পাত্র-কন্যা বদল হবে বুঝলে ”

চকিতে আহান ভাইয়ের কথা-বাত্রা সব বুঝে যাই আমি।তিনি কি করতে চাইছেন সেটা বুঝতেও অসুবিধা হয় না আমার।কিন্তু মনের এক কোণে জমা পড়ে থাকে একটা সন্দেহ,’কাজ হবে তো?’

আরো কিছুক্ষন ভালোমতো কলাকৌশল বুঝিয়ে দেয় আহান ভাই সবাইকে যে কি করতে হবে?সবাই সবকিছু ভালোভাবে বুঝে নিয়ে নিজ নিজ কাজ ভাগ করে নিয়ে হাসি মুখে চলে যায় রুম থেকে।সবাই বের হয়ে যেতেই আহান ভাই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে পুনরায় ফিরে আসেন বিছানায়।তিনি আস্তে করে বিছানায় শুয়ে পড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” কি প্লান সেই না?আরে এগুলা যার তার মাথা থেকে বের হয় না,আমিতো মনে কর লিজেন্ড…”

তার এইসব প্রশংসা শোনার কোনো ইচ্ছা আমার নাই।সো তার কথা থামিয়ে দিয়ে আমি মাঝপথে বলি,

–” থাক আমি জানি,আর বলার প্রয়োজন নেই।নিজের প্রশংসা নিজে করে,কি অবস্থা? ”

আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি তিনি রেগে গেছেন তবে সেটা সীমিত পরিমাণে।তিনি আমার দিকে দীর্ঘক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ রাগে ফেটে পড়েন।তিনি আমার উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে বলেন,

–” তুইতো কোনো কাজের না,শুধু বসে বসে খাওয়া জানিস।এখন কাজ কর?আমার মাথাটা টিপে দে,যদি এটাও ভালোমতো না পারিস তো কঠিন শাস্তি পাবি ”

হুট করে তার এরকম রাগের কারন বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় না আমার।আমি কোনো প্রকার কথা না বাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি দীর্ঘ সময় ধরে।অথঃপর চুপচাপ তার মাথার পাশে বসে মাথা টিপে দিতে থাকি।কিছুক্ষন এই অবস্থায় থাকার পর হঠাৎ আহান ভাই তার মাথাটা আমার কোলের উপরে রাখেন।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।তিনি চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসছেন।

একপর্যায়ে বসে থাকতে থাকতে অবস্থা খারাপের চেয়েও খারাপ হয়ে যায় আমার।আমি তার মাথাটা সড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াই।আহান ভাই মাথা তুলে আমার দিকে তাকান।আমি এদিক থেকে ওদিকে হাটতে থাকি।অনেকক্ষন সময় ধরে বসে থাকার কারনে কমোড়টা লেগে গেছে।আহান ভাই আমাকে রুমে পায়চারি করতে দেখে খানিকটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” তুই কি আমাকে মারার জন্য অস্ত্র খুঁজতেছিস উষু?যদি সেটা করে থাকিস তাহলে এখনি সেই পথ থেকে ফিরে আয়।তোর শরিরের যে অবস্থা আমার একটা আঙ্গুলের সাথে পেরে উঠবি না বুঝলি।এখনো আহব্বান করছি ভালো পথে ফিরে আয়? ”

আমি তার কথা শুনে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে তার দিকে তাকাই।অথঃপর হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেই।হঠাৎ আমাকে কাঁদতে দেখে আহান ভাই অবাক হয়ে যান।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলেন,

–” কিরে কান্না করতেছিস ক্যান? ”

আমি তার দিকে তাকিয়ে আরো কান্নার স্পিড বাড়িয়ে দেই।তিনি এবার আর ব্যাপারটাকে নিয়ে না ভেবে পারেন না।তিনি উঠে বসে স্থির দৃষ্টি ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” বল কান্না করতেছিস ক্যান?বিশ্বাসের জন্য দুঃখ হচ্ছে নাকি আবার তোর? ”

আ‌মি এবার আর চুপ থাকতে পারিনা।মাথাটা রাগে ফেটে যায়।একসাথে কান্না করতে করতে চিল্লিয়ে বলি,

–” আপনি মানুষটা পুরোদমে ফালতু সবসময় মানুষকে ভুল বুঝেন।আপনিতো প্রতিনিয়ত আমাকে ভুল বুঝেই চলেছেন।আমি কখন আপনাকে মারার জন্য অস্ত্র খুজলাম শুনি।অনেকক্ষন বসে থাকার কারনে কমোড়টা লেগে গিয়েছিল তাই তো একটু উঠে..”

আমার কথাটা শেষ করতে পারিনা এমন সময় দরজায় হুটাহুট খুব জোড়ে বারি পড়তে থাকে।আমি কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে আছি।আহান ভাই লাফ দিয়ে উঠে দরজাটা খুলে দেন।দরজা খুলতেই একঝাক মানুষ বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।মানুষগুলোকে ভালোভাবে দেখে আমি বোঝার চেষ্টা করি এদেরকে আমি চিনি কিনা?কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরেও বুঝতে পারি না ব্যাপারটা।আহান ভাই তাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু-নাচিয়ে বলেন,

–” কে ভাই আপনারা? ”

আমি লক্ষ্য করি সেই দলের মধ্যে একজন মধ্যবয়সী,একটা আহান ভাইয়ের বয়সী ছেলে আরো কয়েকজন ছেলে।প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র আছে।এমন সময় আহান ভাইয়ের বয়সী ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে চিল্লিয়ে বলে,

–” আরে ফাদার,এই মেয়েটা..হ্যা এই মেয়েটাই ”

আহান ভাই আর আমি একদৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকি।কে রে ভাই এ?

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here