#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৮
প্রেয়সী তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছিল। তাদের সবাইকে আমি এক এক করে খুঁজে বের করবো আর কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিব।
১৪
পরের দিন সাফাতের সাথে বন্যাও ভার্সিটি আসে। বন্যা ও এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। বন্যা আর কণা সমবয়সী। সাফাত বন্যাকে ক্যাম্পাসে রেখে লাইব্রেরীতে চলে যায়। বন্যা কণাকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। সে এই ভার্সিটির কিছুই চিনে না। কোথায় যাবে? কোনদিকে গেলে কণাকে খোঁজে পাবে। কিছুই বুঝতে পারছে না। সাফাতও তাকে একা রেখে চলে গেলো।
বন্যা নিজের ফোনটা বের করে কণাকে কল দেয়। কিন্তু ফোন সুইচঅফ দেখাচ্ছে। বন্যার দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার কপালে সূক্ষ্ম দুইটা বাঁজ পড়ে। বন্যা গতকাল সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিল তখন কণা ফোন ধরেনি। বন্যা ভাবে কণা হয়তো বিজি তাই ফোন ধরতে পারেনি। পরে হয়তো কণা কল ব্যাক করবে। কিন্তু বন্যার ধারণা সত্যি হয় না। কণা কল ব্যাক করেনি।
তারপর বন্যা নিজেই আবার কণাকে কল দেয়। কিন্তু ফোন সুইচঅফ দেখায়। বন্যা সাফাতকে কল লাগায়। একবার রিং হতেই ঐ পাশ থেকে কল রিসিভ হয়।
কী ব্যাপার জান? আজকে বুঝি আমাকে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। হুম? দুই মিনিট না যেতেই চোখে হারাচ্ছো।
উফ সাফাত ফাজলামো বন্ধ করো। কণা কোথায়?
কণা আবার কোথায় থাকবে? ভার্সিটিতেই আছে মনে হয়।
না ভার্সিটিতে নেই।
ভার্সিটিতে নেই। তাহলে কণা কোথায় গেছে?
বন্যা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, আমি কী করে জানবো? তুমি জানো না তোমার বোন কোথায়?
আরে রাগ করছো কেনো? আমি তো জাস্ট জিঙ্গেস করলাম।
কেনো জিঙ্গেস করবা? গতকাল থেকে যে কণার ফোন বন্ধ সেই খবর কী তোমার কাছে আছে? আমি আংকেলকেও ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু আংকেলের ফোনও বন্ধ।
সাফাত ভীষণ অবাক বন্যার কথা শুনে। সাফাত তাড়াতাড়ি কলটা কেটে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বন্যাকে না নিয়েই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে। দ্রুত ড্রাইভ করে তাদের বাসায় আসে। ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখে বড় একটা তালা ঝুলছে। আশেপাশের সবাইকে জিঙ্গেস করে কেউই কণাদের খবর দিতে পারে না।
১৫
আজ তিন দিন হলো কণার কোনো খোঁজ নেই। সাথে তাহসিন আহম্মেদকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাফাত বাসায় গিয়েছিল কিন্তু কাউকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। সাফাত পাগলের মতো খুঁজে চলছে তার বোন আর বাবাকে। কিন্তু কোথাও খোঁজে পাচ্ছে না। সকল আত্নীয়দের ফোন দেয়। কিন্তু কেউই তাহসিন আহম্মেদ বা কণার খবর দিতে পারেনি।
এই তিন দিনেই সাফাতের অবস্থা পাগলের মতো হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম সব বাদ দিয়ে কণা আর তার বাবাকে শহরের প্রত্যেকটা অলি গলিতে খুঁজেছে।
সাফাত বেডে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আসে। মাথার উসকো খুসকো চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। হাতে তাদের ফেমিলি ফটোফ্রেম। ছবিটাতে সাফাত আর কণা তাহসিন আহম্মেদকে দুই দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সাফাতের চোখ থেকে ফোটা ফোটা অশ্রু ছবিটার ওপর পড়ছে।
আমি কী তবে হারিয়ে ফেললাম তোমাদের? তোমাদের ওপর একটু রাগ করেছিলাম বলে এভাবে আমাকে একা করে চলে গেলে। আচ্ছা তোমরা বলো রাগ করাটা কী স্বাভাবিক না?
সাফাত দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরে বলে,
কোথায় চলে গেলে তোমরা? তোমাদের ছাড়া আমার ভালো লাগে না। বাবা তোমার ছেলে ভালো নেই তোমাদের ছেড়ে। বোন তুই দেখতে পাচ্ছিস না আমি কাঁদছি। প্লিজ ফিরে আয় না। তোদের ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার যে আর কেউ নেই। তোরা যে আমাকে বড্ড একা করে দিলি।
১৬
আদ্রিয়ান আর তার ফ্রেন্ডরা একটা ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ঠিক তখনি ছোঁয়া এসে আদ্রিয়ানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ন্যাকামু সুরে বলে,
কেমন আছো বেবি।
এতে করে আদ্রিয়ান একটু বিরক্ত হয়। ‘কেমন আছো’ এই কথাটা ছোঁয়া দিনে যতবার কথা হবে ততবার বলবে। আর কথায় কথায় বেবি ডাকে। প্রতি লাইনে এক থেকে দুই বার করে বেবি ডাকে যেটা আদ্রিয়ানের কাছে আরো বেশি বিরক্তিকর। এমন ভাবে বেবি ডাকে জেনো আদ্রিয়ান তার ছেলে। আদ্রিয়ানের এখন ছোঁয়াকে একদম সহ্য হয় না। ছোঁয়াকে এখন তার কাছে এলার্জির মতো মনে হয়। আদ্রিয়ান ছোঁয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। বিরক্তিকর গলায় বলে,
গায়ে পড়া টাইপ মেয়েদের মতো এতো জড়াজড়ি করো কেনো? আমার অসহ্য লাগে।
আদ্রিয়ান তুমি এসব কী বলছো?
বাংলায় তো বললাম বুঝতে পারো নাই? সব সময় সবকিছু ভালো লাগে না।
তুমি আমাকে বলো তোমার কোন কোন কাজগুলো পছন্দ নয়। তোমার যেসব কাজ, আচারণ ভালো লাগে না আমি সেইসব করবো না। তবু তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো না। তুমি আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছো। আমার উপস্থিতি তোমাকে বিরক্ত করে তুলছে। এই সব আমি মেনে নিতে পারবো না বেবি।
প্লিজ এসব বেবি টেবি বলা বন্ধ করো। বিরক্ত লাগে। আমি কী কোনো ছোট বাচ্চা যে আমাকে বেবি বলে ডাকছো। না তুমি আমার মা খালা টাইপ কেউ তাই বেবি ডাকছো। আমার মাম্মাও হয়তো এতো বছরে আমাকে এতো বার বেবি ডাকেনি যতবার তুমি এক ঘন্টায় ডাকো। তোমার এসব বিহেইভিয়ার আমার আর ভালো লাগে না। সব সময় সুপার গ্লোর মতো আমার সাথে চিপকে থাকো। তুমি ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে আমার আশেপাশে ঘেষতে দাও না। কোনো মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসলে তার সাথে বাজে ব্যবহার করো। তোমার আমাকে নিয়ে ওভার পজেসিভনেসটা অসহ্য লাগে।
আদ্রিয়ান……..
প্লিজ লিভ মি এলোন। না থাক তুমিই থাকো আমিই গেলাম।
বিরক্ত হয়ে আদ্রিয়ান চলে যায়। আদ্রিয়ানের পিছন পিছন তার বন্ধুরাও চলে যায়। ছোঁয়া এখনো সেই ফাঁকা ক্লাসটাতেই দাঁড়িয়ে আছে। পানিতে চোখ ভরে আসছে ছোঁয়ার। আদ্রিয়ানের এমন ব্যবহার সে মেনে নিতে পারছে না। সে তো আদ্রিয়ানকে সত্যিই ভালোবাসে। আদ্রিয়ান কিছু দিন ধরে কেমন পাল্টে যাচ্ছে। ঠিক মতো কথা বলে না, কথা বললেও কেমন বিরক্ত হয়ে বলে। যথা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ইদানিং ছোঁয়ার সবকিছুই তার কাছে বিরক্ত লাগছে।
ছোঁয়া মনে মনে কিছু কথা আওড়ায়। কই সম্পর্কের শুরুতে তো তুমি এমন ছিলে না। আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে না। পড়াশোনার বাইরে যতটুকু সময় থাকতো তুমি আমাকেই দিতা। প্রতিদিন বিকালে ঘুরতে নিয়ে যেতে। এখন ঘুরতে নিয়ে যাও না প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। তোমার প্রতি আমার এই ওভার পজেসিভনেসটা এক সময় তোমার কাছে ভীষণ ভালো লাগতো। আমি যখন তোমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করতাম। তখন তুমি সেটা উপভোগ করতে। তাহলে দিন দিন কেনো পাল্টে যাচ্ছো? কেনো আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করো? আমার ব্যবহার তোমার ভালো লাগে না? নাকি তোমার জীবনে নতুন কারো আগমন হয়েছে? যার জন্য তোমার এখন আমারে বিরক্ত লাগে। আচ্ছা কণা কী ঠিক বলেছিল, আদ্রিয়ান তাকে ভালোবাসেনি শুধু তার সৌন্দর্যের মোহে পড়েছিল।
১৭
সাফাত শাওয়ার নিয়ে সবে মাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছ। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে। তখনি সাফাতের ফোনটা বেঁজে ওঠে। সাফাত ফোনটা হাতে নেয়। থানা থেকে ফোন আসছে
সাফাত তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করার পর এমন একটা খবর শুনতে হবে সেটা হয়তো সাফাত কল্পনাতেও ভাবেনি। সাফাত থমকে গেছে। সাফাতের হাত ফসকে ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়। সাফাত নড়তে চড়তে পারছে। তার পা দুটো কেউ যেনো আটা দিয়ে ফ্লোরের সাথে লাগিয়ে দিয়েছে।
চলবে……
(