#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২০
বধূবেসে বসে আছে ঐশি। তার পাশেই বরের সাজে বসে আছে একটা ২৪-২৫ বছর বয়সের ছেলে। ছেলেটার মুখে যেনো হাসি উপচে পড়ছে। ঐশির মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না সে খুশি নাকি অখুশি। আভিয়ান ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ঐশির দিকে। নিজের দোষে নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেললো। ঐশি একবার আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। আভিয়ান ঐশির চোখে দেখতে পাচ্ছে অভিমান। তার বিরুদ্ধে শত অভিযোগ।
আভিয়ান ভাবছে তার অবহেলায় অন্য কেউ আগলে নিলো ঐশিকে। আভিয়ানের চোখের সামনে দিয়েই ঐশি বউ হয়ে গেলো অন্য কারো। আভিয়ানের ভালোবাসা অন্য কারো হয়ে গেলো। হুট করেই ছেলেটি ঐশিকে জড়িয়ে ধরে।
এটা দেখেই আভিয়ান চিৎকার করে ওঠে। শোয়া থেকে লাফিয়ে ওঠে আভিয়ান। আভিয়ান শরীর থরথর করে কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। আভিয়ান হাত দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে নেয়। আভিয়ান ভাবছে এতক্ষণ তাহলে সে স্বপ্ন দেখছিল। আভিয়ান বালিশের নিচে হাতড়ে ফোনটা খুঁজে বের করে। কল লাগায় ঐশির নাম্বারে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আভিয়ানের নিজেকে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।
ঐশি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলবে। না এটা কী করে হতে পারে? ঐশি তো আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারে না।
আভিয়ান নিজেকে এসব উল্টাপাল্টা বুঝ দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু চোখে আর ঘুম ধরা দেয় না।
৪৫
আজ বন্যার বিয়ে। কিছুক্ষণ আগেও বন্যা সাফাতকে কল দিয়েছিল। সাফাত শুধু বলেছিল বিয়ে করে নাও। বন্যা শুধু একটাবার সাফাতের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। সাফাত বন্যার অনুরোধ ফেলতে পারেনি। তাই তো শেষ বারের মতো দেখা করতে এসেছে। সাফাত বন্যাদের বাসার পিছনের জঙ্গলটায় দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে বাচ্চাদের হইচইয়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে। বিয়ে বাড়ি হৈহুল্লোড় তো হবেই।
বিয়ে বাড়ির আলোয় জঙ্গলটাও আবছা আলোকিত হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে আজকে হয়তো তার সাথে বন্যার বিয়ে হতো। কিন্তু ভাগ্য? সাফাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। আকাশ মেঘলা হয়তো বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে মন্দ হয় না তার সাথে আজকে আকাশও কাঁদবে।
আবছা আলোয় সাফাত দেখতে পায় লাল রঙের বেনারসি পড়ে একটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাফাতে চিন্তে একটুও অসুবিধা হয় না যে এটা বন্যা। বন্যা লাল রঙের বেনারসি পড়েছে কি সুন্দর করে লাল টুকটুকে বউ সেজেছে। তারও তো ছিল বন্যাকে এমন লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিবে। বন্যা লাল টুকটুকে বউ সেজেছে ঠিকই কিন্তু তার জন্য না অন্য কারো জন্য। সাফাতের বুকটা ধক করে ওঠে। সাফাত অস্পষ্ট উচ্চারণ করে,
বন্যা।
বন্যা দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাফাতের বুকে। সাফাত দুই কদম পিছিয়ে যায়। সাফাতের পিঠ ঠেকে গাছের সাথে। বন্যা হু হু করে কেঁদে দেয়। কান্না জড়িত গলায় বলে,
সাফাত আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে। আমি কিছুতেই পারবো না তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতে।
সাফাতের চোখের কোণেও জল চিকচিক করছে। সে পারছে না শুধু বন্যার মতো শব্দ করে কাঁদতে। নিজেকে তার বড্ড অসহায় লাগছে। না চাইতেও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সাফাত কিছু একটা করো। তোমাকে ছাড়া অন্য একটা লোকের সাথে থাকতে হবে ছি আমার ভাবতেও ঘেন্না লাগছে। প্লিজ সাফাত আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। প্লিজ প্লিজ।
সাফাত আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলো না।
যাবে আমার সাথে।
বন্যা নিশ্চুপ হয়ে যায়।
বল যাবে আমার সাথে? বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে আসছে। আমিও পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে।
এটা কী এখন সম্ভব? আমি তোমাকে কারো সামনে ছোট হতে দেখতে পারবো না। এমনিতেও আমার জন্য তুমি সবার কাছে অনেক ছোট হয়েছে। আমি চাই না তুমি আমার জন্য আর কারো সামনে ছোট হও।
সাফাতকে অনুনয় করে বলে,
সাফাত আমাকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরবে। শেষ বারের মতো তোমার অধর জোড়া আমার কপালে একবার ছুঁইয়ে দিবে। যেনো কেউ সেই স্পর্শ মুছতে না পারে।
সাফাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বন্যাকে। সাফাত বেশ সময় নিয়ে বন্যার কপালে ভালোবাসাময় স্পর্শ এঁকে দেয়। এটাই হয়তো বন্যাকে দেওয়া সাফাতের প্রথম ও শেষ স্পর্শ।
ভালো থেকো।
সত্যিই কী সম্ভব?
কেনো সম্ভব না? চাইলেই সব সম্ভব।
আদৌ আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো?
সাফাত বন্যার চোখের পানিটা মুছে বলে, যাও।
বন্যা দুই পা এগিয়ে গিয়ে আবার দুই পা পিছিয়ে এসে সাফাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আমি সত্যিই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি মরে যাব তোমাকে ছাড়া। তিলে তিলে মরার থেকে একবারেই মরে যাওয়া ভালো। প্লিজ আমাকে মেরে ফেলো। আমি পারছি না আর এই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে।
কেনো পাগলামো করছো বন্যা? তোমার বার বার ফিরে আসা যে আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে সেটা কী তুমি বুঝতে পারছো না?
আমাদের সাথে কেনো এমনটা হলো? কেনো আমরা দুজন এক হতে পারলাম নাহ? কেনো আমি তোমাকে পেলাম নাহ? কেনো আমাদের আলাদা হতে হলো?
আমি তো তোমারি বন্যা। আমি তোমার ছিলাম, আছি আর সারাজীবন থাকবো। তুমি ব্যতীত আমার জীবনে অন্য কেউ আসবে না।
আমার সাথে কেনো এমন হয় সবসময়? বল না সাফাত? আমার কপালে কী আল্লাহ একটুও সুখ লেখেনি? আমি কী কারো ভালোবাসার যোগ্য না? আল্লাহ কেনো সব সময় আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেয়? আমার কী সুখী হওয়ার অধিকার নেই? ছোটবেলা থেকেই তো দুঃখ আমার নিত্যসঙ্গী। যাও একটু সুখের হাতছানি পেলাম। ভাগ্য সেটাও কেড়ে নিল।
সাফাত বন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আমার না হও, অন্য কারো হও। কিন্তু সুখী হও।
বন্যা সাফাতের বুকে মুখ গুঁজেই বলে, ভালোবাসি তোমায়। সাফাত কোনো মতে ঠোঁট নাড়িয়ে উচ্চারণ করে, আমিও। কারো আসার শব্দ শুনে নিতু বন্যাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে যায়। নিতু মনে মনে কঠিন প্রতিঙ্গা করে নেয় যারা তার বন্যা আপুর কাছ থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি দিবে। বন্যা যেতে যেতে বলে, ভালোবাসি তোমায়। সত্যিই অনেক ভালোবাসি। সাফাত বন্যার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলে,
ভালো থেকো আমার না হওয়া ভালোবাসা। হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না তাই তো আমি তোমাকে পাইনি।
সাফাত একটু দম নিয়ে বলে, তুমি আমার হলে না তাতে আমার আফসোস নেই। শুধু চাইবো তুমি যেনো সুখী হও। আল্লাহ যেনো আমার সুখটাও তোমার নামে লিখে দেয়।
সাফাত নিজের চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে নেয়। ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে। আজকে তার কোনো গন্তব্য নেই। আজকে সে গন্তব্যহীন, উদ্দেশ্যহীন পথে হাঁটবে। নিজেকে তার জড় বস্তু মনে হচ্ছে। শরীরটা বয়ে বেড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। সাফাতের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে তো এটা করতে পারবে না। তার যে এখনো অনেক দায়িত্ব বাকি। তার একটা বৃদ্ধ বাবা আছে একটা যুবতী বোন আছে। বোনটাকে একটা বিয়ে দিতে হবে। ভালো একটা ছেলের হাতে তুলে দিতে হবে। যে তার বোনকে ভালোবাসবে। সে যদি না থাকে তার পরে সেই ছেলেটি তার বোনকে আগলে রাখবে।
৪৬
আভিয়ান লাগাতার ঐশিকে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু ঐশিকে ফোনে পাচ্ছে না। ফোন কানে নিয়েই পাগলের মতো ছুটে যায় ঐশিদের বাসার দিকে। ঐশিদের বাসার সামনে আসতে আসতে রাত ৯টা বেঁজে যায়। বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ফোন করতে থাকে। ঐশির রুম অন্ধকার। আভিয়ান বুঝতে পারছে না সে কী করবে?
আভিয়ানের চোখ যায় ঐশিদের বাসার গেইটের দিকে। ঐশি একটা ছেলের বাইক থেকে নামছে। ছেলেটি ঐশির গালে ধরে টান দেয়। ঐশি ছেলেটির পিঠে একটা থাপ্পড় মারে। হেলমেট পড়ে থাকায় ছেলেটিকে চিনতে পারছে না।
চলবে………..