তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -১৯

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৯

সাফাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে। সাফাতের চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে এককার হয়ে যাচ্ছে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। শুধু আছে টাকার মূল্য। সাফাত কী তাহলে তার ভালোবাসা হারিয়ে ফেললো? সাফাতের কানে শুধু বাঁজছে ভালোবাসা কেনো এতো অসহায়?

জুড়ে জুড়ে হাওয়া বইছে। দ্রুত গতিতে চলছে গাড়ি। রাস্তার ময়লা পানি এসে ছিটকে পড়ে সাফাতের শরীরে। সাফাতের কোনো হেলদুল নেই সে তো আনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটেই চলেছে। আজকে তার নিজেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগছে। ১ ঘন্টার মতো বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তা দিয়ে হাঁটে সাফাত। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে বিষণ্ণ মন নিয়ে রওনা দেয় নিজের বাসার দিকে।

প্রায় ১০ টা নাগাদ নিজের বাসায় পৌছায় সাফাত। কলিংবেল বাজাতেই কণা এসে দরজা খুলে দেয়। সাফাত কারো সাথেই কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকেই সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়ে। শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে।

মাঝ রাতের দিকে সাফাতের হাড় কাঁপানো জ্বর আসে। সারা রাত জেগে কণা আর তিশান আহম্মেদ সাফাতের মাথায় জল পট্টি দেয়। কিন্তু রাত যত বাড়তে থাকে সাফাতের জ্বরও তত বাড়তে থাকে। সকালে ডক্টর ডেকে নিয়ে আসে তিশান আহম্মেদ। ডক্টরের পরামর্শে সাফাতকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সাফাত তিন দিন হসপিটালে ভর্তি ছিল। এই তিন দিন বন্যা কোনো ভাবেই সাফাতের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।

সাফাত হসপিটাল থেকে ফিরেই নিতুর মাধ্যমে বন্যার সাথে যোগাযোগ করে। বন্যার কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা জেনে নেয়। নোমানের বাসার ঠিকানাও নিয়ে নেয়। সাফাত ঠিক করে নোমানের বাসায় যাবে। নোমানের সাথে দেখা করে সবটা জানাবে। তারপর নোমানেই ডিসাইড করবে উনি দুটো ভালোবাসার মানুষকে এক করবে নাকি আলাদা করে দিবে।

সাফাত ফ্রেস হয়ে নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়ে। কণা বলেছিল একটু রেস্ট নিতে কিন্তু সাফাত শুনেনি। সাফাত গাড়িতে উঠতেই হসপিটাল থেকে কল আসে। সাফাত নোমানের বাসা না গিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয়।

৪৩

সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত গিয়েছে। নেমে এসেছে সন্ধ্যা। পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। মানুষ তার কর্মস্থান থেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষের ব্যস্ত আনাগোনা। কেউ ক্লান্ত হয়ে নিরস মুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে কেউ বা হাসি মুখে।

সাফাত রুম অন্ধকার করে ফ্লোরে বসে আছে বেডের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে। সাফাতের ফোনটা বেঁজে ওঠে। নিতু নাম্বার দেখে কলটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে রাখে। তার আর কিছু বলার নেই। তখনি রুমে দরজা ঠেলে প্রবেশ করে কণা। এক ফালি আলো এসে চোখে পড়তেই সাফাত চোখ কুঁচকে ফেলে। কিন্তু চোখ খুলে না।

ভাইয়া।

কণার ডাক শুনে সাফাত চোখ মেলে তাকায়। সাফাতের চোখ দুটো লাল বয়েছে। কণা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফাতের দিকে।

কিছু বলবি?

কণা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। অন্ধকারে সাফাতের মুখের অভিব্যক্তি বুঝা যাচ্ছে না। শুকনো ঢোক গিলে উসখুস করতে লাগলো কণা। বন্যার কথা এখন বলা মানে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো।

তাহলে এভাবে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা বলার বলে বিদায় হ।

কণা সাফাতের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।

আজব তুই এখানে বসছিস কেনো? যা বলার তাড়াতাড়ি বলে আমার সামনে থেকে যা।

ভাইয়া বন্যা আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

জানি।

তুমি কিছু করবে না?

কী করবো?

করার মতো কী কিছুই নেই? তুমি বন্যা আপুর বিয়ে আটাকানোর চেষ্টা করবে না?

নাহ।

ভাইয়া বন্যা আপু অনেক কাঁদছিল। বন্যা আপু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

আমিও বাসি। আমার যতটুকু করার ছিল ততটুকু করেছি। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।

তারা কেনো বিয়ে দিবে না তোমার কাছে? কী কমতি আছে তোমার মাঝে? সব দিক দিয়েই তুমি পারফেক্ট।

তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আমি বেকার।

বেকার তো কী হয়েছে? তুমি তো সারাজীবন বেকার থাকবে না। এটাও না যে তোমার চাকরি করার মতো যোগ্যতা নেই। এক দু মাসের মধ্যে হয়তো তুমি নতুন চাকরি পেয়েও যাবে। তারা তোমার জন্য দুই মাস অপেক্ষা করতে পারবে না। আর বন্যা আপু তোমাকে ভালোবাসে। তারা বন্যা আপুর কথাটা একবার ভাববে না।

আমার জন্য তারা কেনো অপেক্ষা করবে। যেখানে হাতের কাছে টাকাওয়ালা প্রতিষ্ঠিত ছেলে পাচ্ছে সেখানে আমাকে সময় দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু হয় না কণা। মাঝে মাঝে পরিস্থিতির কাছেও ভালোবাসা অসহায় হয়ে পড়ে। তখন বলার আর করার মতো কিছু থাকে না।

ভাইয়া তুমিও পরিস্থিতির দোহায় দিচ্ছো। তোমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসো। তাহলে কেনো নিজের বেকারত্বকে বড় করে দেখছো। তোমরা দুজনেই তো এডাল্ট। নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেওয়ার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তোমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলো।

পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো? এটা হয় না কণা। বন্যার ফ্যামিলি মেনে নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

তুমি বন্যা আপুর কোন ফ্যামিলির কথা বলছো? বন্যা আপুর মা? যে মহিলা নাকি নিজের সুখের জন্য নিজের মেয়েকে ভুলে যায়। সবার সামনে পরিচয় দিতে হবে বলে চিনেও না চেনার ভান করে। আর বন্যা আপুর নানা বাড়ির কথা যদি বলো। তাহলে আমি বলবো উনাদের মতো মানুষের কথা না ভাবাই ভালো। যারা পিচ্চি একটা মেয়েকে অন্ধকার রুমে আটকে রাখতে পারে। আর যাই হোক তাদের মাঝে মনুষ্যত্ব বলে কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।

কণা তুই এখন যা এখান থেকে।

না আমি যাব না। তুমি এভাবে পরিস্থিতির দোহায় দিয়ে বন্যা আপুকে মাঝ পথে ছেড়ে দিতে পারো না।

কী করবো বল? আমার মতো একটা বেকার ছেলার সাথে বন্যার জীবন জড়িয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করে দিব। আমার নিজেরও একটা বোন আছে। আমি শুধু চায় বন্যা সুখে থাকুক। সেটা যেকোনো মুল্যে। আমি আছিই আর মাত্র…..

সাফাতের আর কোনো কথা বুঝা গেলো না। সাফাতের গলা জড়িয়ে আসছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সাফাতকে কাঁদতে দেখে কণাও হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। সাফাত কণাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। সাফাতের মন বলছে মেয়েটা যখন কাঁদছে কাঁদুক। কাঁদলে মন হালকা হয়। সাফাত জানে তার এই পাগলী বোনটা তাকে অনেক ভালোবাসে। তার জন্য সবকিছু করতে পারে। আচ্ছে সে যখন থাকবে না। তখন মেয়েটা কী করবে? পারবে নিজেকে সামলাতে?

৪৪

ঐশি আভিয়ানকে কল দেয়। কিন্তু আভিয়ান রিসিভ করে না। বরং ছোট করে টেক্সট করে দেয় সে এখন বিজি। তাই ফোন ধরতে পারবে না। তাকে যেনো ফোন দিয়ে ডিস্টার্ভ না করা হয়।

টেক্সটা দেখেই ঐশির চোখ দুটো পানিতে টলমল করতে থাকে। ঐশি আভিয়ানের এতো ইগ্নোরেন্স সহ্য করতে পারছে না। ঐশি শুনেছিল, ভালোবাসা রং বদলায়। ঐশি ভাবছে তাহলে কী আভিয়ানের ভালোবাসাও বদলে গেলো? আভিয়ান তাকে ভুলে গেলো।

আভিয়ান যদি তাকে ছাড়া থাকতে পারে তাহলে সে কেনো পারবে না? অবশ্যই পারবে। সে আভিয়ানের জন্য আর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিবে না। সে বেহয়ার মতো আভিয়ানকে অনেক বার কল দিয়েছে। আর দিবে না। এখন থেকে সে নিজেও এড়িয়ে চলা শিখে যাবে।

_______________

বধূবেসে বসে আছে ঐশি। তার পাশেই বরের সাজে বসে আছে একটা ২৪-২৫ বছর বয়সের ছেলে। ছেলেটার মুখে যেনো হাসি উপচে পড়ছে। ঐশির মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না সে খুশি নাকি অখুশি। আভিয়ান ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ঐশির দিকে। নিজের দোষে নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেললো। ঐশি একবার আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। আভিয়ান ঐশির চোখে দেখতে পাচ্ছে অভিমান। তার বিরুদ্ধে শত অভিযোগ।

চলবে……

( এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক তাই আপনারা বাস্তবিক অর্থ খুঁজতে আসবেন নাহ। আমি এটা বলবো না আমি শুধু বলবো, গল্পের প্লট মিলানোর জন্য অনেক সময় কাল্পনিক বা অবাস্তব কিছু লিখতে হয়। তাই আপনারা সব সময় গল্পে বাস্তব জীবনের সাথে মিল খুঁজতে এসে বিব্রত হবেন নাহ। গল্প মানেই গল্প বাস্তবের সাথে মিল থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here