তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -২৩

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৩

আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন আমি কী করে বুঝলাম আপনি ফোন করেছেন? যেখানে আপনি কল দিয়ে একটা কথাও বলেনি। সাধারণত বন্যা এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। আমার একটা ধারণা ছিল আপনি আমাকে কল করতে পারেন।

এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা তো পূর্ব পরিচিত নই যে একজন আরেক জনের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিব।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝতে পেরেছি। আমি জানি বন্যা আপনাকে আমার কথা বলে দিয়েছে। আর আপনি বন্যার কাছে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছেন। সবাই তো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী দেখতে চায়। তেমন আপনিও চান। আমি জানি যে, আপনি বন্যাকে ভালোবাসেন।

সত্যিই আপনি অনেক ট্যালেন্টেড। বন্যা যতটুকু বলেছিল তার থেকেও বেশি ট্যালেন্টেড। বন্যার কাছে আপনার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আপনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম সত্যিই আপনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি। যাই হোক আপনি যখন সবটা বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন কোথাও একটা মিট করি।

সাফাত আলতো হেসে বলে, তার দরকার নাই। আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা আর সম্ভব নয়। বন্যা এখন আপনার স্ত্রী।

আপনি কিন্তু চাইলে বিয়েটা আটকাতে পারতেন। বা আমাকে ইনফর্ম করলে আমি নিজেই বিয়েটা ভেঙে দিতাম। কিন্তু আপনি সেই চেষ্টা করেননি।

চেষ্টা তো করেছিলাম। যখন বুঝলাম বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই তখন হাল ছেড়ে দিলাম। মেনে নিলাম ভাগ্যকে। বন্যা আমার ভাগ্যে ছিল না আপনার ভাগ্যে ছিল। তাই তো পেয়েও তাকে পাওয়া হলো না। সারাজীবন পাশে থাকার কথা দিয়েও পাশে থাকতে পারলাম না। মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিতে হলো। আশা করি আপনি সারাজীবন বন্যার পাশে থাকবেন।

কিন্তু বন্যা তো আপনাকে ভালোবাসে।

মিস্টার নোমান ভালোবাসা অল্পতে শেষ হয় না। ভালোবাসা জীবনে একবার ও আসে না। ভালোবাসা জীবনে একবার না বহুবার বহুরুপে আসে। নাইবা হলেন বন্যার প্রথম ভালোবাসা শেষ ভালোবাসা হয়ে দেখিয়ে দিন মেয়েটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল। ছোটবেলা থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি। খুব ছোট থাকতে বাবাকে হারিয়েছে। মা যে কেমন সেটা নিজেই দেখেছেন। টাকার জন্য নিজের মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে আপনার কাছে। অবাক হবেন নাহ আমি সবটা জানি। আপনার আর বন্যার বিয়ে হওয়ার আগেই আমি আপনার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছি। বন্যাকে তো আর যার তার হাতে তুলে দিতে পারি না। ভালোবেসে বন্যাকে আগলে রাখুন দেখবেন ঠিক একদিন বন্যাও আপনাকে ভালোবেসে ফেলবে।

নোমান আফসোসের সুরে বলে, আজকে আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আপনার আগে কেনো আমার সাথে বন্যার দেখা হলো না। আমার ভাগ্যেই যখন বন্যা ছিল তাহলে বন্যার প্রথম ভালোবাসা আমি কেনো হলাম না?

আফসোস করবেন নাহ নোমান। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আপনি বন্যার প্রথম ভালোবাসা না হলেন শেষ ভালোবাসা হোন।

বন্যা না হয় একদিন আমাকে ভালোবেসে ফেলবে। আমরা দুইজন সংসার করবো। কিন্তু আপনার কী হবে? এমন ছন্নছাড়া হয়ে তো জীবন চলবে না।

আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনি ভাবুন কীভাবে বন্যার মনে নিজের জায়গা করে নিবেন। আমি আছিই বা এই…….। ভালো থাকবেন। বন্যাকে ভালোবেসে আগলে রাখবেন। সারাজীবন পাশে থাকবেন। আশা করি আমার মতো মাঝ পথে হাত ছেড়ে দিবেন নাহ। আল্লাহ হাফেজ।

সাফাত নোমানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দেয়। নোমান ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে যায়। বন্যা বিছানার ওপর বসে তার দিকে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে। না না তার দিকে না তার হাতে থাকা বন্যার ফোনের দিকে। নোমান তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দেয়। ক্যাবলা কান্তের মতো একটা হাসি দিয়ে বলে,

না মানে কয়টা বাজে সেটাই দেখছিলাম।

বন্যা নোমানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, আপনার কী আমাকে বোকা মনে হয়? নিজের হাতে ফোন রেখে আমার ফোন নিয়েছেন সময় দেখার জন্য। হাউ ফানি। যেটা পারেন নাহ সেটা বলতে যান কেনো? আগে মিথ্যা বলতে শিখুন তারপর মিথ্যা বলতে আসবেন।

নোমান কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করছে। বন্যাই আবার বলে,

আপনি সাফাতকে কেনো ফোন দিয়েছিলেন?

না মানে।

দেখুন আপনার কাছে কিছু লুকাতে চাইনি বলে আমি আমার আর সাফাতের সম্পর্কে বলেছিলাম। কিন্তু আপনি এ নিয়ে যে জামেলা করবেন সেটা আমি বুঝতে পারিনি। কেনো সাফাতকে ফোন দিয়ে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছেন। সাফাত আমার প্রাক্তন তাই ওর ব্যাপারে আপনি নাক না গলালেই আমি খুশি হবো। আর হ্যাঁ আশা করি ভবিষ্যৎ আর সাফাতকে ফোন দিবেন নাহ।

কথাগুলো বলে বন্যা ওয়াশরুমে চলে যায়। নোমান বুকে হাত দিয়ে জুরে একটা শ্বাস নেয়। এতক্ষণ যেনো তার দমটা আটকে ছিল। সাফাত মনে মনে ভাবছে, খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম, মেয়ে তো নয় জেনো ধানি লঙ্কা।

৫২

কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কণা ধপ করে চোখ খুলে ফেলে। একটা মানুষকে নিজের দিকে জুকে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায় কণা। সে মানুষ দেখতে পাচ্ছে না শুধু একটা মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। কণা ভয় পেয়ে ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে। কণা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালানোর জন্য হাতরে হাতরে খোঁজছে টেবিল ল্যাম্পটা। কিন্তু হাতের নাগালে পাচ্ছে না টেবিল ল্যাম্পটা। মানুষের অবয়ব কণার আরো কাছে চলে আসে। কণা ভয়ে সিটিয়ে যায়। দেওয়ালের সাথে লেগে বসে আছে।

যাকে দেখার জন্য এতোদিন উতলা হয়ে ছিলে। আজকে তাকে দেখেই ভয় পাচ্ছো। দিস ইজ নট ডান ধূলিকণা।

কী সব বলছেন আপনি? কে আপনি? আপনার সাহস কী করে হলো আমাকে ধূলিকণা ডাকার? লজ্জা করে না আপনার এতো রাতে একটা অবিবাহিত মেয়ের রুমে আসতে।

ইশ এভাবে তাকিয়ো না তোমার চোখ দুটো দেখলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। রাগলে তোমার নাক লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করে এক কামড় দিয়ে খেয়ে ফিলি। নিজের দেওয়া নামে ডাকতে আবার সাহস লাগে। লজ্জা শরম ভয়
তিন থাকতে নেই। আমি তোমার সেই চিঠি প্রেরক।

কণা এবার ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। সামনে বসে থাকা লোকটিকে দেখে চমকে ওঠে কণা। সে এ কাকে দেখছে? তার সামনে আদিয়াত আয়মান তুর্ণ বসে আছে কণার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

আপনি?

কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি?

আমি এখন কাউকেই আশা করছিলাম না। আপনি এখানে কী করছেন?

এতোদিন নিজেই আমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে। আর আজ যখন আমি দেখতে আসলাম তখন বলো আমি এখানে কী করছি। দিস ইজ নট ডান।

আপনিই সে?

হ্যাঁ আমিই তোমার সে। তোমার চিঠি প্রেরক। তোমার প্রেমিক পুরুষ।

না এটা হতে পারে না। প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান।

কী হতে পারে না? তুমি বললেই আমি চলে যাব নাকি। এতদিন তুমি আমাকে দেখার জন্য পাগলামি করছে। আজ থেকে আমি পাগলামো করবো।

প্লিজ চলে যান নাহ। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক হতে পারে না?

কেনো হতে পারে না? আমি কী তোমার যোগ্য নই।

আপনি নন বরং আমি আপনার যোগ্য নই। আপনি আমার থেকেও আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমার কোনো যোগ্যতাই নেই আপনার পাশে দাঁড়ানোর। আমার মতো একটা কুৎসিত চেহেরার অধিকারী মেয়েকে আপনার পাশে মানায় না।

কুৎসিত চেহেরা কথাটা শুনেই আদিয়াত ভীষণ রাগ ওঠে যায়। কণার গাল চেপে ধরে।
চিৎকার করে বলে,

কতবার বলেছি তোকে নিজেকে কুৎসিত বলবি না। নিজেকে ছোট করে দেখবি না। তোর আমার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আছে কী না নেই? সেই বিছার আমি করবো। তুমি কেনো বুঝতে পারো না তুমি আমার কাছে কি।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here