তুমি আসবে বলে পর্ব -৪১+৪২+৪৩+৪৪

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪১

ভা ই য়া….অরনির অস্পষ্ট স্বরে বলা কথা শুনে সবাই চমকায়। সবাই অরনির দিকে তাকায় দেখে অরনি চোখে পানি থাকা সত্ত্বেও ঠোঁটে হাসি তার চোখ দরজার দিকে। সবাই অরনির দৃষ্টি লক্ষ্য করে দেখে আয়ান আসছে তার মাথায় বেন্ডেজ করা সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। আয়রা আয়ানকে দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগে আয়ান হতভম্ব হয় যায় আয়রার কান্নায় সে নিজেকে সামলে আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…

আয়ানঃ আয়রা আমি ঠিক আছি দেখো। কিছু হয়নি আমার তুমি কান্না বন্ধ করো তোমার শরীল খারাপ করবে।

কিন্তু আয়রা তা করছে না সে এখনো একই ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে তার মনে হচ্ছিলো তার আয়ান তাকে ছেড়ে চলে গেছে সে কি করে একা বেঁচে থাকবে অয়নের কি হবে। আয়রা কান্না করতে করতে বললো….

আয়রাঃ কোথায় ছিলে তুমি যানো তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো। দাদাভাই আর বাবা গিয়ে ছিলো তোমাকে খুজতে সেখানে এসে বলে ওখানে কারোর এক্সিডেন্ট হয়েছে আর সে মারা গেছে।একমুহূর্তে জন্য মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো। আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো বলো অয়নের কি হতো।

বলো জোরে কান্না করতে লাগে সে৷ আয়ান আয়রা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো… আমার কিছু হয়নি তুমি কান্না করবে না প্লিজ তোমার শরীর খারাপ করবে বলছি তো।

আয়রা আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ায় ঠিক করে। আয়ান আয়রাকে শান্ত করে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে এতে সে একটু লজ্জা বোধ করে এভাবে সবার সামনে আয়রাকে ধরে থাকা ঠিক হয়নি কি আয়রা নিজের মধ্যে ছিলো না তাই সে কি করবে। আয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো…

আয়ানঃ আমি ঠিক আচ্ছি সত্যি।

আদিঃ তোর ফোন বন্ধ কেন যানিস আমার তোকে কোথায় কোথায় খুজেছি চাচ্চুকে কখনো এতোটা অসহায়ত্ব দেখিনি কিন্তু আজ তোর এক্সিডেন্টের কথা শুনে তিনি কতটা ভেঙ্গে পরেছিলেন। বাড়ির সবার ওপর দিয়ে কি যচ্ছিল এই কয়েক ঘন্টায় একটা বার ফোন করে জানাতে পারলি না তুই ঠিক আছিস।

আয়ানঃ আমি যখন আয়রার সাথে কথা বলছিলাম তখন পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে আমার কোল ঘেসে আঘাত করতে নিলে রোদ আমাকে ধরে ফলে কিন্তু আমার সামনের থাকা মানুষটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। সেই হটগোলের মধ্যে ফোন কোথাও পরে যায় আর আমার পায়ে মাথায় আঘাত লাগে তাই রোদ আমাকে হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এখন নিয়ে আসলো তখন আমার মাথায় কিছু ছিলো না তোমাদের বলবো বলে…

আয়ানের কথা শুনে সবাই তার পাশে দাড়িয়ে থাকা রোদকে দেখে এতখন আয়ানকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকায় তারপাশে দাড়িয়ে থাকা রোদকে চোখে পরেনি কারো। আকাশ রোদকে বললে…

আকাশঃ রোদ তোমার জন্য আজ আমার ছেলেটা জানে বেঁচে গেছে তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো জানি না।

অর্ণবঃ আঙ্কেল ধন্যবাদ দেবার কোনো দরকার নেই আমার কর্তব্য ছিলো এটা।

দিদুনঃ তুমি আমার অয়নকে বাবা হারা হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে অনেক উপকার করছো দাদুভাই।

আদিঃ ধন্যবাদ রোদ আজ অনেক বড় উপকার করলে আমাদের।

অর্ণব অন্তু দিকে তাকিয়ে বললো… এই উপকারে ফল আমি একদিন চেয়ে নেবো তোমার কাছ থেকে।

আদিঃ আবশ্যই বলো কি চাই।

অর্ণবঃ এখন না সময় হোক তারপর চেয়ে নেবো এখন আসি।

অর্ণব আর দাড়িয়ে থাকলো না সে চলে গেলো সবাই অর্ণবের কথা মজার ছলে নিলেও অন্তুর কাছে অর্ণবের কথা তার কাছে মজার মনে হয়নি। আয়ান বললো…

আয়ানঃ যে এই কাজটা করিয়েছে তাকে আমি ছাড়বো না সে আয়ানের ভালো মানুষি দেখেছে খারাপটা না।

বলে ওপরে আজাদ মির্জা দিকে তাকায় আজাদ মির্জা চোখে মুখে হারের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কেউ আয়ানে কথার মানে বুঝতে না পারলেও আয়রা বুঝতে পেরেছে কিন্তু কিছু বললো না। আয়রা আয়ানকে নিহিতা মির্জাকে দেখিয়ে তার কাছে যেতে বললো আয়ান ধীরে পায়ে নিহিতা সামনে বসে তার হাতে হাত রেখে আম্মু বলতেই নিহিতা মির্জা হু হু করে কান্না করে আয়ানের চোখে মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে এখন তার বুক শান্ত হয়েছে এতখনে বুকটা খা খা করছিলো। আয়ান তার মাকে জড়িয়ে ধরে উপস্থিত সবাই তাদেরকে দেখে খুশি আয়ানের মন গলেছে তার মায়ের জন্য ভেবেই তারা খুশি। আয়ান তার মা কে ছেড়ে বললো….

আয়ানঃ আম্মু আমি ঠিক আছি দেখো আমার কিছু হয় নি তুমি কান্না করো না।

বলে নিহিতার চোখ মুছিয়ে দিলো নিহিতা মির্জা আয়ানের কপালে চুমু দিয়ে বললো…

নিহিতা মির্জাঃ বাবা তোমার এক্সিডেন্টর কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আমার বুকের মানিক আমার বুক থেকে চলে গেছে। আমি কি নিয়ে থাকবো ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠলো তোমাকে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেছে। আমার ছেড়ে কোথাও চলে যাবে না বললো।

আয়ানঃ না আম্মু আমি কোথাও যাবো না।

নিহিতা আয়ানকে বুকে জড়িয়ে নিলো কিছুখন পর আয়ান তাকে ছাড়িয়ে অরনির দিকে তাকিয়ে বললো..

আয়ানঃ সরি রে অরু তোর গিফটা ওখানেই ভেঙ্গে গেছে কিন্তু কাল পাকা নিয়ে আসবো আরেকটা।

অরনি কান্না করে বললো… আমার গিফট লাগবে না তুই ঠিক আছিস তাই হবে।

আয়ান অরনির কথা শুনে হাসলো অরনির কোল থেকে ঘুমন্ত অয়নকে নিয়ে তার সারা মুখে চুমু দেয় তার আত্মায় যেন শান্তি আসে যখন ট্রাকটা তার গা ঘেঁসে গেলো তার মনে হচ্ছিল আজ আর বেঁচে ফিরবে না তার আয়রা আর অয়নের কাছে কিন্তু আল্লাহ অশেষ ধন্যবাদ রোদ তাকে সঠিক সময় বাচিয়ে নেয়। আয়ান তার দিদুনকে মজা করে বলে…

আয়ানঃ দিদুন দেখো আমি কিন্তু তোমার টানে চলে এসেছি তাই আজ তুমি আমায় খাইয়ে দেবে।

দিদুন হেসে বললো… আমার টানে এসেছো না কার টানে সে রুমে গেলে বোঝা যাবে কিন্তু যখন বলছো আমার হাতে খাবে তাইলে সেটা করাই যায়। বৌমা যাও খাবার বারো সবার জন্য কেউ তো খাইয় নি আজ আমি আমার নাতি নাতনিরে নিজের হাতে খাইয়ে দেবে।

নিহিতা মির্জা তার শাশুড়ী মাকে কথা শুনে তাই করলো আয়ান তার দিদুনের কথায় মাথা নিচু করে ফলে অরনি অন্তু হাসতে লাগে তার দিদুন কি মিন করেছে তারা সবাই বুঝতে পরেছে আয়রা লজ্জায় লাল হতে লাগলো। তারপর পুরো মির্জা বাড়ির সবাই এক সাথে খেতে বসে দিদুন তার নাতি নাতনিরে খাইয়ে দেয়………
________________________________

আনভিঃ আঙ্কেল ভালো আন্টিকে আমি মাম্মাম বানানো।

আনভির কথায় আদি চমকে যায় সে আনভির দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আদিকে অর্ণব একটা জরুরি কথা বলবে বলে তাকে অফিসে আসতে বলে। আদি এসে দেখে অর্ণব ব্যস্ত তাই তার কেবিনে বসতে বলে সে একটুপর আসবে বলে আদি এখানে আসলে দেখে আনভি রং নিয়ে ছবি আঁকছে সে হেসে ওখানে বসে। আদি কথা বলছিলো তখন আনভি এই কথাটা বলে। আদি কি উত্তর দেবে সে ভেবে পাচ্ছে না আদি বললো…

আদিঃ আনভি মামুনি এসব কি বলছো।

আনভি আদির কাছে এসে তার হাত ধরে বললো…

আনভিঃ আঙ্কেল আমি ভালো আন্টিকে মাম্মাম বানানো। আণ্টিকে আমার কাছে রাখবো সে আমায় এতো (হাত উঁচু করে দেখায়) এতো ভালোবাসবে।

আদিঃ না মামুনি হয় না তা

আনভি জেদ ধরে বললো… কেন হয় না ভালো আন্টিকে পাপার সাথে বিয়ে দিলে তো সে আমার সাথে থাকতে পারবে তাই-না।

আদি আনভির জেদ ধরেতে দেখে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে তো আর বলতে পারবে না তোমার পাপা ভালো আন্টিকে বিয়ে করবে না তোমার পাপা তোমার মাম্মাকে ভালোবাসা আর অন্তু কিছুতেই বিয়ে করবে না সেটার কারণ সে জানে না কেন বিয়ে করবে না তারপরও সে কিছু করতে পারবে না। আদি আনভিকে কোলে তুলে নিয়ে বললে…

আদিঃ তোমার ভালো আন্টি তোমাকে এমনি তেও ভালোবাসে তাই মাম্মাম করতে হবে কেন?

আনভিঃ দিয়া আমাকে নিয়ে টিচ করে বলে তোর মাম্মাম নেই তোকে তোর মাম্মাম ভালোবাসে না। তাই আমি ভালো আন্টিকে মাম্মাম বানানো সে তো আমাকে অনেক ভালোবাসে।

আনভির কথা শুনে আদি থমকে যায় এতটুকু মেয়ের মনে কতো কষ্ট তার মাম্মামকে না পাওয়ার কষ্ট সে কি বোঝাবে তাকে। বাইরে থেকে অর্ণব সব শুনেছে তার কষ্ট হচ্ছে তার মেয়ের জন্য কিছুদিন ধরে আনভি অনেক জেদ করছে অন্তুকে মাম্মাম বানানোর জন্য। আনভির এই জেদের জন্য তার শরীর খারাপ হচ্ছে খেতে চাচ্ছে না তাই সবাই তাকে বলে অন্তুকে সব বলতে না হয় আদিকে বলে আবার অন্তুকে বিয়ে করতে অর্ণব অনেক ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিয়ে আদিকে আজ তার অফিসে আসতে বলে সে আদিকে সব বলবে তারপর আদি যা করার করবে। অর্ণব কেবিনে আসলে আদি তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ আমি সব বুঝিয়ে বলছি তার আগে আনভিকে আমার কাছে দাও।

আদি অর্ণবের কাছে আনভিকে দিলে আনভি তার গলা জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে থাকে অর্ণব আনভিকে নেতিয়ে পরতে দেখে কষ্ট পায় সে আনভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আদি সব দেখছে আনভির মলিন শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখে তার বুক কেঁপে যায়। আনভি ঘুমিয়ে গেলে অর্ণব আদিবাকে তার কেবিনে আসতে বলে আদিবা আসলে অর্ণব আনভিকে তার কাছে দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ আদিবা আনভির শরীর ভালো না তুমি ওকে নিয়ে আমার বাড়িতে যাও আমি আদির সাথে কথা বলে বাড়ি আসছি।

আদিবাঃ ঠিক আছে ভাইয়া

বলে আদিবা একবার আদির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আনভিকে নিয়ে চলে যায়। আদি এখনো কিছু বুঝছে না অর্ণব তার চেয়ারে এসে বসলে আদি তার সামনের চেয়ারে বসে বললো…

আদিঃ রোদ আনভির কি হয়েছে আর আনভি এতো জেদ কেন করছে আর তার মাথায় অন্তুকে মাম্মাম বানানোর কথা আসলো কেন?

অর্ণব আদির সব প্রশ্ন শুনে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো… আদি আমি এখন যা বলবো সেটা প্লিজ মন দিয়ে শুনবে আর বোঝার চেষ্টা করবে না বুঝে কোনো রিয়েক্ট করবে না আশা করি।

অর্ণবের কথা মানে না বুঝে তার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকায় সে অর্ণবের কথার মানে বুঝতে চাচ্ছে সে তাকে এমন কি বলবে যে সে রিয়েক্ট করবে। আদি বললো… কি কথা?

অর্ণব কিছুটা সময় নিয়ে তার মনকে মানিয়ে বললো… আমি রোদ চৌধুরী না..

অর্ণবের কথা শুনে আদি অবাক হয়ে জোরে বললো… হোয়াট তুমি আমার সাথে মজা করছো।

অর্ণবঃ না আমি মজা করছি না।

আদি ভ্রু কুচকে বললোঃ তাইলে তুমি কে??

অর্ণব ঢোক গিলে বললো… আমি অর্ণব আহমেদ সাথে আমার আরো একটা পরিচয় আছে..

আদি অর্ণবের কথা শুনে বললো… কি পরিচয়?

অর্ণবঃ আমি অন্তুর হাজবেন্ড

অর্ণবের কথা শুনে আদি বিস্ময় হয়ে বললো… হাজবেন্ড?
__________________________________

আদি ক্লান্ত শরীলে বাড়িতে ঢুকলো তার মাথা এখনো ঘুরছে অর্ণবের কথা শুলো শুনে। তার অবর্তমানে এখানে ৪ বছরে এতো কিছু হয়ে গেছে সে কল্পনাও করতে পারছে না। তার অন্তুপাখি জীবনে এতো ঝড় হয়েছে সে বুঝতেও পারলো না। অন্তুর চুপ থাকা, নিজের মধ্যে কষ্ট গোপন রাখা, কথা চাপিয়ে যাওয়া সব তার চোখের সামনে হয়েছে কিন্তু সে কিছুই দেখেনি। না জানি তার অন্তুপাখি তার কাছ থেকে আর কি কি লুকিয়েছে। তার বাড়ির সবাই আজ তার কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে তারা পারতো না তাকে একটা বার বলতে তার অন্তুপাখি কষ্টে আছে তাইলে সে সব কাজ ফেলে চলে আসতো তার অন্তুপাখি কাছে। তার অন্তুপাখিকে কখনো কষ্ট পেতে হতো না সে আজ ব্যর্থ তার কর্তব্য থেকে ব্যর্থ সে তার অন্তুপাখি খেয়াল রাখতে ব্যর্থ। আদি চোখের কোণে পানি জমছে হালকা হাতে চোখের কোণ থেকে তা মুছে পা বারায় অন্তুর রুমের দিকে। অন্তুর রুমের দরজার কাছে এসে সে থমনে দাঁড়ায় অন্তুর হাসি মাখা মুখ দেখে তার কষ্ট দিগুণ হতে লাগলো অয়নকে নিয়ে অন্তুর কার্যকলাপ দেখে সে থ মেরে যায়।(আসলে অন্তু অয়নকে নিয়ে তার রুমে বসে সময় কাটাছে নানান কথা বলছে অয়নকে হাসতে দেখে অন্তুও হাসছে সেটাই আদি দেখছে) আদি এক পা এক পা করে অন্তুর কাছে আসছে আর অর্ণবের সব কথা তার কর্ণধারে বাজছে আদির অন্তুর কথা শুনে থমকে যায়।

অন্তুঃ অয়ন সোনা আমার মেয়েটা বেঁচে থাকলে তোমাকে দেখে অনেক খুশি হতো…

আদি আর এগোতে পারে না তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে অন্তু আদিকে দেখে মুচকি হাসি দিলে আদি নিজেকে সামলে বলে….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪২ (রহস্যভেদ-৩)

আদি আর এগোতে পারে না তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে অন্তু আদিকে দেখে মুচকি হাসি দেয়। আদি নিজেকে সামলে বলে….

আদিঃ কি করছিলি তুই একা একা…

অন্তু আদিকে হাতের ইশারায় অয়নকে দেখিয়ে বললো… দাদাভাই আমি একলা না এই যে অয়নবাবু আছে না আমার সাথে। আমরা তো আমাদের সিক্রেট শেয়ার করছি তাইনা অয়নবাবু

বলে অন্তু অয়নের গাল নাড়ে অয়ন হাসতে লাগলো আদি তা দেখে বললো… তাইলে অয়নকে তোর সিক্রেট না বলে আমাকে বল। আমি ও দেখি কি কি আছে তোর পেটের মধ্যে যা আমাকে বলা যায় না কিন্তু অয়নকে বলা যায়।

অন্তুঃ তোমাকে বলবো কেন, আমি তো শুধু আমার অয়নবাবুকে বলবো।

আদি কাথা ঘুড়ানোর জন্য বললো… আজ আনভিকে দেখতে গিয়েছিলি তুই?

অন্তু আদির দিকে তাকিয়ে বললো… না তো আজ সারা দিন অয়নকে নিয়ে ছিলাম। আনভিকে কাল দেখে এসেছি ওর শরীল খারাপ আজ যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আয়ান ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে ডক্টরে কাছে গিয়েছিলো তাই অয়নকে আমার কাছে দিয়ে যায়। আমি কাল গিয়ে আনভির সাথে দেখা করে আসবো।

আদিঃ ঠিক আছে কাল সকালে দেখা করে আসিস কিন্তু রাতে রেডি হয়ে যাস।

অন্তুঃ কেন কোথাও যাবো?

আদিঃ হ্যাঁ কাল আমি কক্সবাজার যাবো কাজের জন্য সাথে রোদ, প্রাপ্য আর আদিবা যাবে তাই আমি ভাবলাম তোকে আর অরনিকে ও নিয়ে যাবো। অনেক দিন হয়েছে এক সাথে কোথাও যাইনি তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না।

অন্তুঃ কিন্তু দাদাভাই

আদিঃ কোন কিন্তু না ব্যাগ প্যাক করে নিস ২ দিনের জন্য থাকবো। আমি দিদুনকে বলেছি, তুই অরনিকে বলিস আচ্ছা আমি যায় তুই অয়নকে নিয়ে থাক।

অন্তু মাথা নাড়ায় আদি উঠে একবার অন্তুর দিকে তাকিয়ে হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে তার রুমে যেতে লাগলো। এদিকে অন্তুর কাছে আদিকে কেমন ছন্নছাড়া লাগছে তার চোখমুখ কেমন অন্ধকার লাগছিলো আবার কি আদিবার সাথে কিছু হয়েছে না-কি অন্য কিছু হয়েছে। অন্তু আর ভাবলো না কাল সকালে আনভিকে দেখে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে তার কিছুতেই কক্সবাজার যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু দাদাভাইকে কষ্ট দিতে চায় না সে। অন্তু আবার অয়নের সাথে কথা বলতে লাগলো….
___________________________________

আদি তার রুমে এসে রুম লক করে নিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো এতখন অন্তুর সামনে নিজেকে কি ভাবে ধরে রেখেছিলো তা শুধু সেই যানে। আদি ড্রয়ের থেকে সিগারেট নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে তা ধরিয়ে ঠোঁটের মাঝে নিয়ে টান দিতে লাগে আর ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো তার শুধু বিকেলের অর্ণবের কথা গুলো মনে করতে লাগলো…..

বিকেলে,,,,

অর্ণবের কথা শুনে আদি হতবাক হয়ে যায় তার বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। আদি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…

আদিঃ মমানে তুমি অন্তু হাজবেন্ড কি করে হবে অন্তুর তো বিয়ে এখনো হয়নি।

অর্ণবঃ আপনি অনেক কিছু জানে না অন্তুর বিষয়ে ৪বছরে আগে অন্তুর সাথে কি হয়েছে তা বাড়ির কেউ সেটা আপনাকে বলেনি।

আদি অর্ণবের কথা বুঝতে না পেরে বললো… মানে বাড়ি কেউ কেন আমাকে অন্তুর বিষয়ে লুকাবে আর অন্তুর সাথে ৪ বছর আগে কি হয়েছিলো?

অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে এক এক করে অর্ণব আদিকে বলতে লাগলো, তাদের প্রেম, বিয়ে, তাদের সন্তানের কথায়, আয়নের কথা সব, তার অর্ণব থেকে রোদ হবার কথা সব বললো সে সব শুনে আদি স্তব্ধ হয়ে যায়। আদি চোখের কার্নিশে গরিয়ে জল পরতে লাগলো তার অন্তুপাখি এতো কষ্ট সহ্য করেছে আর সে তার পাশে ছিলো না ভাবতেই তার রাগ হচ্ছে। তার বাড়ির সবার ওপর রাগ হচ্ছে তারা কি করে তার কাছে থেকে এতো বড় সত্যি লুকালো। তার থেকেও বড় কথা যে এই সব করেছে তাকে ঘেন্না লাগছে তার কাছে। অর্ণব আদির অবস্থা বুঝে বললো…

অর্ণবঃ ভাইয়া প্লিজ নিজেকে শান্ত করুন।

আদিঃ কি ভাবে শান্ত হবো আমার অন্তুপাখির জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটলো আর আমি কিছু জানতে পারলাম না আমার বোন দিনের পর দিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছে সেটা কি করে হতে দিলাম আমি। অন্তুপাখিকে আমি কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি আর সেই অন্তুপাখির জীবন তছনছ হয়ে গেছে সেটা আমি ঘুনাক্ষরে টের পাইনি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে অনেক ছোট মনে হচ্ছে আমি আমার অন্তুপাখিকে আগলে রাখতে পারিনি ভাবতেই নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।

অর্ণবঃ ভাইয়া আপনি এভাবে ভেঙ্গে পরলে অন্তু কষ্ট পাবে। অন্তু কিন্তু আপনাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারে না সেটা আপনি জানেন তার জন্য আপনাকে অন্তু কিছু বলেনি।

আদি চুপ করে থাকে কিছুখন নিজেকে ধাতস্ত করে বললো… এখন তুমি কি চাও বলো?

অর্ণব মাথা নিচু করে বললো… ভাইয়া আপনি আনভিকে দেখেছেন ওর শরীর খারাপ করছে আর তার জেদ সে অন্তুকে মাম্মাম বানাবে তাই আমি চাই অন্তুকে সব সত্যি বলে তাকে নিজের কাছে আনতে। অন্তকে দরকার আনভির জন্য না হলে আমি আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলবো।

অর্ণবের কথা শুনে আদি নড়েচড়ে বসে তার কাছে এখনো আনভির পরিচয় নিয়ে সন্দেহ আছে সে কি অর্ণবে মেয়ে না-কি রোদের। অর্ণব কি তার বোনকে ধোঁকা দিয়েছে আর অন্তুর বাচ্চা তো মারা গিয়েছে তাইলে আনভি কে। আদি তীক্ষ্ণ নজরে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো…

আদিঃ আনভি কে অর্ণব?

আদির করা প্রশ্নে অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে তার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো অর্ণব। সে যদি এখন আনভির পরিচয় আদির কাছে দেয় তাইলে সে তা কিভাবে নেবে সে জানে না। আদি এখনো অর্ণবের কাছে উত্তর পাবার জন্য তার দিকে তাকিয়ে আছে অর্ণবের ইতস্তত দেখে তার সন্দেহ হচ্ছে অর্ণব তার কাছে থেকে এখনো অনেক কিছু লুকাছে…

আদিঃ কি হলো বললো আনভিকে?

অর্ণব নিচু কন্ঠে বললো… আনভি আমার আর অন্তুর মেয়ে..

বলে চুপ করে থাকে আদি এটা শুনে বিস্মিত হয় সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না অর্ণবে একটু আগের বলা কথা। অন্তুর মেয়েতো মারা গেছে তাইলে আনভি কি করে তার মেয়ে হয় আদি আবার অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো…

আদিঃ অন্তুর মেয়েতো মারা গিয়েছে তুমি একটু আগে বলে তাইলে আনভি কি করে তার মেয়ে হয়?

আদির কথায় অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বললো… অন্তুকে মিথ্যে কথা বলা হয়েছিলে যে আমাদের মেয়ে বেঁচে নেই।

আদি তার কথায় চমকে গিয়ে বললো… কেন করলে তুমি এটা তুমি জানতে অন্তুপাখি তার মেয়েকে না পেলে মরে যাবে তাইলে কেন এটা করলে অর্ণব?

অর্ণবঃ আনভির জীবন বাঁচাতে।

আদিঃ মানে?

অর্ণব বলতে লাগলো… আমি অন্তুর সব খোজ খবর অরু আর দিদুনের কাছ থেকে নিতাম এমন কি সেখানে লুকিয়ে দেখেও আসতাম কিন্তু অন্তু সেটা বুঝতে পারতো না। অনেক বার মনে হয়েছে অন্তুকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যায় কিন্তু আমাদের সাথে যে অন্যায় গুলো করেছে তাকে শাস্তি না দিলে আমি শান্তুি পেতেম না তাই যাইনি। হঠাৎ এক দিন দিদুন ফোন করে বলে অন্তুর ব্যাথা শুরু হয়েছে তাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে তারা আমি শুনে সব কাজ ফেলে প্রাপ্য কে নিয়ে হসপিটালে ছুটলাম…..

অতীতে,,,,,

অর্ণব আর প্রাপ্য যখন হসপিটালে যায় তখন অন্তু একটা ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জম্ম দেয় কিন্তু অন্তু তখন অজ্ঞান অবস্থাতে ছিলো। শুধু অরনি ছিলো অন্তুর কেবিনের বাইরে অরনি অর্ণবকে দেখে তাদের কাছে এসে বললো…

অরনিঃ অর্ণব ভাইয়া কংগ্রাচুলেশন আপনার ছোট একটা মেয়ে হয়েছে তাকে দেখেতে অনেকটা দিদিয়া মতো হলেও চোখ আপনার মতো।

অরনির কথা শুনে অর্ণবের শরীল শীতল হতে লাগলো। সে বাবা হয়েছে তার মেয়ে হয়েছে ভাবতেই গায়ের কাটা দিতে লাগলো অর্ণবের অন্তর কথা মনে পরতেই সে বলে..

অর্ণবঃ অরু অন্তু কেমন আছে?

অরনিঃ দিদিয়া ভালো আছে কিন্তু অনেক দূর্বল তাই অজ্ঞান আছে কিন্তু একটু পর জ্ঞান ফিরবে। দিদুন ডক্টরের সাথে কথা বলতে গিয়েছে। আপনি তারাতাড়ি গিয়ে দেখে আসেন মেয়েকে।

প্রাপ্যঃ ভাইয়া তুই যা আমি এখানে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছি কেউ আসলে আমি তোকে বলবো।

অর্ণব সেখান থেকে চলে এসে অন্তুর কেবিনে যায় দরজা খুলতেই অন্তু শুকনো ক্লান্তকর মুখ দেখতে পায়। অর্ণব ধিরে পায় অন্তুর কাছে এসে তার পাশে চেয়ারে বসে অন্তুর ক্যানোলা বিহীন হাতটা ধরে অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছুসময় এভাবে থেকে অর্ণব মুচকি হেসে অন্তুর হাতে চুমু দিয়ে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান তুমি আমাকে আজ যে খুশিটা দিয়েছো তাতে আমি কি খুশি আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। জান তুমি আমাকে বাঁচার জন্য আরেকটা কারণ দিলে, আমাকে আমার আম্মুকে দিয়েছো। আই লাভ ইউ জান তুমি আমার জীবনে এসে আমার জীবনটা রাঙিয়ে দিয়েছো। আ’ম সো হেপ্পি।

বলে অন্তুর সারা মুখে চুমু দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পালনা থেকে তার মেয়েকে তুলে কোলে নিতেই তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু কণা পরে কিন্তু ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি। অর্ণব মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তার পর বললে…

অর্ণবঃ আমার মেয়ে আমার অংশ। জান দেখো আমাদের মেয়ে দেখতে তোমার মতো হয়েছে কিন্তু চোখ আমার মতো কিছু হালকা বাদামি রং। আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। আমার আনভি আমার আম্মু..

বলে চুমু দিলো আনভি অর্ণবের দিকে হেঁসে তাকিয়ে থাকলো অর্ণব হেসে ফেলে তা দেখে। অর্ণব মেয়েকে আদর করতে লাগলো তখনি হবতম্ভ হয়ে কেবিনে আসে দিদুন, আওয়াজ আসতেই অর্ণব সেদিকে তাকিয়ে দিদুনকে চিন্তিতো দেখে সে ভ্রু কুচকে বললো…

অর্ণবঃ দিদুন কি হয়েছে আপনাকে এমন দেখাছে কেন?

দিদুন তার কপালের ঘাম মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো… অর্ণব তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে এখনি এখান থেকে চলে যাও।

অর্ণব কিছু বুঝতে না পেরে বললো… মানে কেন?

দিদুনঃ তোমার মেয়ের জীবন সংশয় আছে তাই। তাকে বাচাতে হলে তাকে নিয়ে এখনি চলে যাও..

দিদুনকে বলতে না দিয়ে অর্ণব বললো… কি বলছেন কি দিদুন কে আনভির ক্ষতি করবে।

দিদুন অর্ণবকে কিছু বলতেই অর্ণবের চোখ লাল হতে লাগলো রাগে সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। দিদুন অর্ণবকে রাগতে দেখে অর্ণবের কাছে এসে বলে…

দিদুনঃ অর্ণব আমার কথা মানো আনভিকে নিয়ে চলে যাও না হলে তোমাদের দুজনকে মেরে ফেলবে।

দিদুন কান্না করে বললো অর্ণব কিছু বুঝছে না সে কি করবে অর্ণব দিদুনকে বলে… দিদুন আমি অন্তুকে নিয়ে যাবো এখনি। আমি এখানে এক মুহূর্ত রাখবো না ওকে..

অর্ণবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তিনি বলেন… পাগলামি করো না অন্তুকে নিয়ে গেলে সবাই বুঝে যাবে তুমি বেঁচে আছো তাই তোমাদের তিনজনকেই মেরে ফেলবে। আর অন্তুর যে অবস্থা তুমি ওকে নিতে পারবে না তার ওপর আনভিকে। তুমি ভেবে দেখো বাচ্চাটা সদ্য জম্ম নিয়েছে ওকে বাঁচানো তোমার দ্বায়িত্ব। অন্তু যখন জানবে তুমি তার মেয়েকে মরার হাত থেকে বাঁচাতে পারনি তখন সে বেঁচে থাকতে পারবে, তোমাকে ক্ষমা করতে পারবে। আমরা সবাই অন্তুকে দেখে রাখবো কিন্তু তুমি এখনি আনভিকে নিয়ে এখান থেকে যাও।

দিদুনের কথা শুনে অর্ণব অন্তুকে না নিয়ে আনভিকে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়ে তার মন মানছিলো না এটা করতে কিন্তু তার কিছু করার ছিলো না একদিকে আনভি অন্যদিকে অন্তু সে আর কিছু না ভেবে আনভিকে আর প্রাপ্যকে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে তার পর তারা লন্ডন সিফট করে। আর অন্তুকে তার মেয়ের মৃত্যু কথা বলে দিদুন সেটা শুনে অন্তু একেবারে ভেঙে পরে..

সব শুনে আদি স্তব্ধ হয়ে যায় চারিদিকে নেমে আসে নিরবতা। অর্ণব তার চোখের কোণে থেকে জল মুছে আদির দিকে তাকিয়ে বলে…

অর্ণবঃ ভাইয়া প্লিজ অন্তুকে আমার লাগবে আনভির শরীর ভালো না সে তার মাম্মামকে চায়।

আদিঃ এখন আমাকে কি করতে হবে।

অর্ণবঃ আমাদের নতুন প্রজেক্টের পর পর দুইটা মিটিং আছে কক্সবাজারে তাই আমাদের সবাইকে কালকে যেতে হবে আমি চায় অন্তুকে আপনি সেখানে নিয়ে যান আমি তার সাথে একান্তে কথা বলে আমার আর আনভির সম্পর্কে সব খুলে বলবো।

আদিঃ ঠিক আছে। আর একটা কথা আমাকে ভাইয়া বলবে না।

অর্ণব ভ্রু কুচকে বললো… কেন?

আদিঃ যেদিন সব ঠিক হবে আমার অন্তুপাখি জীবনে তুমি সুখ নিয়ে আসবে সেদিন তোমার মুখ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে। তাই আগে যা বলতে এখনো তাই বলবে।

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে আদি আর কিছু কথা বলে সেখান থেকে চলে আসে। এদিকে অর্ণব সব সত্যি তাকে বলে তার মন থেকে একটা পাথর নামলো কিন্তু সে অন্তুকে সব সত্যি বলে সে কি ভাবে রিয়েক্ট করবে সে সেটা জানে না। অন্তু কি তাকে ক্ষমা করবে না-কি অভিমানে তাকে সরিয়ে দেবে তাকে অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ায় তাকে বাড়ি যেতে হবে…

সিগারেটের শেষ বারের মতো ফুঁ দিয়ে আদি ফেলে দেয় তার কাছে সব কেমন বিষাক্ত লাগছে কেমন গুমোট ভাব তার দম বন্ধ লাগছে। আদি অর্ণবে চোখে তার অন্তুপাখি জন্য সত্যি কারের ভালোবাসা দেখেছে তার জন্য ছটফটানি দেখেছে সে বুঝে গেছে তার অন্তুপাখিকে অর্ণব ছাড়া কেউ এতো ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু অর্ণবের চোখে এখনো একটা সত্যি লুকাছে সে সেটা বুঝতে পেরেছে কিন্তু কি সত্যি আর আদিবা অর্ণবের বিষয়ে সব সত্যি জানে তার মানে অর্ণব কি আদিবার সাথে যা হয়েছে সে জানে তাকে অর্ণবের কাছে জানতে হবে কি হয়েছিলো আদিবার সাথে। আদি তার রুমে এসে ওভাবেই শুয়ে পরে তার কাছে একটা সুযোগ আছে আদিবার সাথে একান্ত কিছু কথা বলা সে এই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চায় না আদি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়…

সব কি এতো সহজে ঠিক হয়ে যাবে, না-কি অন্য কোনো ঝড় আসতে চলেছে তাদের সবার জীবনে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৩

পরেরদিন রাতে,,

বিরক্ত নিয়ে গাবতলি বাসটার্মিনালে দাড়িয়ে আছে অন্তু আর অরনি। তারা বুঝতে পারছে না যে তাদের দাদাভাই গাড়ি বাদে বাসে কেন কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছে। ধুর ভাল্লাগেন। অন্তু আর অরনি কে এখানে রেখে আদি লাপাত্তা হয়ে গেছে। অন্তু যখন অরনিকে বলে কক্সবাজার যাবে তখন সে অনেক এক্সাসাইটেট হয়ে যায় সব প্যাক করে নাচতে নাচতে আর অন্তু শুধু অরনির কান্ডকারখানা দেখে কিন্তু যখন আদি বলো তারা বাসে যাবে তখন অরনির মুখ দেখার মতো ছিলো অরনির মুখ পেঁচার মতো করে নেই তা দেখে অন্তু আদি ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলে তার জানে অরনি বাস জার্নি করতে পছন্দ করে না তারপরও সে তাদের খুশিতে চলে আসে। অরনি সামনে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্য কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাদের দিকে আসছে। প্রাপ্য এসে তাদের সামনে দাড়িয়ে বলে…

প্রাপ্যঃ তোমরা এখানে একা দাড়িয়ে আছো কেন?

অরনিঃ দাদাভাই কোথায় যেন গিয়েছে তাই আর তুমি একা কেন ভাইয়া কোথায়?

প্রাপ্যঃ আনভি কিছুতেই ভাইয়াকে আসতে দেবে না কান্না করছিলো তাকে বুঝিয়ে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে আসলাম। ভাইয়া ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে এখনি আসবে।

প্রাপ্যর কথা শুনে অন্তুর মনে পরে যা সকালে সে আনভির সাথে দেখে করতে গিয়েছিলো। দুপুর পর্যন্ত সে ওখানেই ছিলো আনভির সাথে খেলা করেছে। কিন্তু সে যখন চলে আসবে আনভি তাকে ছাড়তে চায়নি তাকে জড়িয়ে ধরে তার কোলে চুপটি করে বসেছিলো। অন্তু আনভির সাথে কথা বলে বুঝলো তার শরীল এখন একটু বেটার আছে কিন্তু আনভি তাকে ছারে না তখন অন্তু বললো…

অন্তুঃ আনভি মামুনি আমি আবার আসবো তোমার কাছে আজ আমি যাই।

আনভি মলিন গলায় বলে… না তুমি যাবে না। তুমি আমার কাছেই থাকবে।

আনভির জেদের কাছে না পেরে অন্তু তাকে বলে…

অন্তুঃ ওকে আমি কোথাও যাচ্ছি না তুমি একটু ঘুমাও তাইলে।

অন্তু আনভিকে অনেক কষ্টে ঘুমিয়ে রেখে মি.চৌধুরী কে বলে সে সেখান থেকে চলে আসে। সে জানে আনভি ঘুম থেকে উঠে তাকে না দেখতে পেয়ে কান্না করবে।অন্তুর ভাবনা কাটে আদির কথায় অন্তু তাকিয়ে দেখে সবাই এসে গেছে। আদি অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে…

আদিঃ রোদ তোমার এতো সময় লাগলো কেন আসতে আমরা কখন এসেছি এখানে।

অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে শান্তগলায় বললে…. কেউ একজন কাউকে কথা দিয়ে রাখতে পারেনি তাই তার কথা রাখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে…

আদি তার কথার মানে বুঝতে পেরে বললো… মানে?

অর্ণবঃ মানে আনভি ঘুম থেকে উঠে কান্না করছিলো। তার কান্না না থামাতে পেরে পরে বাবাই আমাকে ফোন করে সব বলে আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি করে বাড়ি গিয়ে আনভিকে সামলাতে সামলাতে দেড়ি হয়ে গেছে।

অর্ণব এখনো অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তুর কাছে অর্ণবের কিছুক্ষণ আগের বলা কথার মানে বুঝতে একটুও দেড়ি হয়নি সে বুঝতে পেরেছে আনভিকে তার কথাটা দেওয়া ঠিক হয় নি, সে এখন বুঝতে পারছে মেয়েটা না জানি কতোটা কষ্ট পেয়েছে তাকে ঘুম থেকে উঠে না দেখতে পেয়ে। অন্ত মুখ ছোট করে মাথা নিচু করে নেয় তা দেখে অর্ণব চোখ সরিয়ে নেয় আজ অন্তর কাজে সে কষ্ট পেরেছে আনভিকে কথা না দিলেও পারতো, আনভি ঘুম থেকে উঠে অন্তুকে নিজের কাছে না দেখে পেয়ে সে কান্নাকাটি করে এতে তার শরীলে এফেক্ট করে মি.চৌধুরী অর্ণবকে আনভির কথা বলে সে তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে আনভিকে সামলাতে লাগলো কিন্তু আনভি তার কথা শুনতে চায় না অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়েছে। অর্ণব বলে….

অর্ণবঃ তোমরা বসে ওঠো আমি বাবাইর সাথে কথা বলে আসছি।

অর্ণব ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে চলে যায় আদি সবাইকে বাসে উঠতে বলে। অন্তু বাসে উঠে বা পাশের ৩ নম্বর সিটে জানালার পাশে বসে, অরনি প্রাপ্য ডান পাশের ৫নম্বর সিটে বসে, আদিবা অন্তুর কাছে বসতে গেলে আদি তার হাতের কব্জি ধরে বললো…

আদিঃ তোমাকে ওখানে কে বসতে বলেছে তুমি আমার সাথে পেছনে গিয়ে চুপচাপ বসবে। না হলে কি হবে সেটা তুমি জানো।

আদিবা ভয়ে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ আদির সাথে শেষের ২ সিট আগে বসলো তারা। অন্তু জানালা দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশে চারিদিকে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে আজ হয়তো পূর্নিমার। আনভির জন্য তার মন খজ খজ করছে আনভি ঠিক আছে তো হঠাৎ তার পাশে কেউ বসলে সে তার দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব বসে আছে। বাসের ভেতরের আলোতে তার মুখ দেখে বোঝায় যাচ্ছে আনভির জন্য হয়তো চিন্তিতো সে কেমন মুখটা মলিন হয়ে গেছে, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, ঠোঁট শুকিয়ে আছে, শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে আছে, অন্তু এতো নিখুঁত ভাবে কখনো অর্ণবকে (রোদকে) দেখেনি হঠাৎ অন্তু অর্ণবের (রোদের) চোখে তাকালে তার চোখে সেই কালোমনি বিশিষ্ট চোখের মনিতে আটকে যায়। তার কাছে অর্ণবের (রোদের) চোখের মনি কালো মনে হয় না কেন যেনো, তার মনে হয় কালো রঙের পেছেনে অন্য রং লুকিয়ে আছে অর্ণবের (রোদরে) চোখে। অন্তুর হুশ আসে অর্ণবের ডাকে অন্তু এতোখন কি করছিলো ভেবে লজ্জায় মাথা নামিয়ে জানালার বাইরে দেখতে লাগলো সে। অন্তুর লজ্জা পাওয়া মুখ দেখে অর্ণব হাসলো। তাকে অন্তু এইভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো মনে হচ্ছিল সে তাকে ধরে ফেলেছে কিন্তু না সে তা করতে পারেনি অর্ণব কথা না বলে চুপচাপ সিটের পিছনে মাথা হেলে দেয়। বাসের সব লাইট বন্ধ করে গাড়ি চলতে শুরু করে, সবাই ঘুমাতে লাগলো, প্রাপ্য অরনিকে তার বুকের মাঝে নিয়ে দাবা কন্ঠে গল্প করছে, আদিবা বাইরে তাকিয়ে আছে আর আদি চাঁদের আলোতে তার আদুমনিকে দেখতে লাগলো আদিবা আদির চাহনি বুঝতে পারলে লজ্জা পায় সেটা দেখে আদি হাসে।

গাড়ি আপন গতিতে ছুটতে থাকে তার সাথে অন্তুর অবাধ্য চুল উড়তে থাকে মাঝে মাঝে অর্ণবের মুখে সেই চুল আছড়ে পরছে কিন্তু অর্ণব বিরক্ত বোধ করলো না সে বেশ ইনজয় করছে তার প্রেয়সীর অবাধ্য চুলের সুগন্ধি মাখা ঘ্রাণ নিতে। তাকে এই ঘ্রাণ মাতাল করে দিচ্ছে, অন্তু গায়ের মিষ্টি সুবাস তাকে পাগল করছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সে সক্ষম হচ্ছে না কিন্তু সে আবার একই ভুল করতে চায় না অন্তুকে কষ্ট দিতে চায় না তাই চুপটি মেরে শুয়ে থাকলো। অন্তু জানালা থেকে মুখ সরিয়ে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাচ্ছে সে কি ঘুমিয়ে গেছে না-কি জেগে আছে। অর্ণবের সাথে সে কথা বলতে চায় আনভি ঠিক আছে কি না সে জানতে চায় অন্তু ভাবা ভাবি শেষে অর্ণবকে ডাকে…

অন্তুঃ এই যে শুনছেন? আপনি কি ঘুমিয়ে গিয়েছেন?

অন্তুর রিনিঝিনি মিষ্টি কন্ঠ শুনে অর্ণবের বুকের ভেতর তোলপাড় করছে সে চোখ বন্ধ করে বললো… হুম..

অর্ণবের কথা শুনে সে বঝে সে ঘুমায় নি অন্তু ইতস্তত নিয়ে বললো… আনভি ঠিক আছে?

অর্ণব চট করে চোখ খুলে অন্তুর দিকে তাকায় এতে অন্তু অপ্রস্তুত হয়ে পরে চাদের আলোতে অর্ণব তা স্পষ্ট বুঝতে পায়। অর্ণব অন্তুর মুখের হাবভাব দেখে বুঝতে পারে অন্তুর মধ্যে অপরাধ বোধ হচ্ছে সকালের কাজে তাই সে বললে…

অর্ণবঃ আম্মু ঠিক আছে ঘুমিয়ে আছে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

অর্ণবে কুদ্ধ কন্ঠে বলা কথা অন্তুর ভেতরটা পুরিয়ে দিলো চোখ ছলছল করে উঠলো কিন্তু বুঝতে দিলো সে কিন্তু অর্ণব ঠিক বুঝতে পেরেছে তার কথায় অন্তু কষ্ট পেয়েছে কিন্তু কিছু বললো না সে, অন্তু নাক টেনে চোখ বন্ধ করে রাখে। অর্ণব অন্তুর ঘুমে বিভোর হয়ে যাবা মুখখানি দেখেতে থাকে। অর্ণব অন্তুর গাঢ় ঘুমে বুঝতে পেয়ে সে তাকে আস্তে করে তার বাহু ডোরে নিয়ে নেয় আলতো করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। অন্তু উষ্ণ আলিঙ্গন পেতে সে তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ গুজে অর্ণব হসলো মনে মনে বললো… জান আজ তুমি আনভিকে যে কষ্ট দিয়েছো সেটা তুমি বুঝো। কিন্তু যখন আনভির সত্যি তুমি জানবে তখন আজকের করা কাজের জন্য তুমি অনুতপ্ত হবে তখন কিভাবে তোমাকে সামলাবো বলো। আনভিকে সামলাতে পারলেও তোমাকে সামলানো অনেক কষ্টকর হবে। তোমাকে যে অনেক কিছু বলা বাঁকি তুমি কি সব শুনে আমাকে ভুল বুঝবে দূরে চলে যাবে আমার থেকে কিন্তু আমিতো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। ৪ বছর তুমি যতো কষ্ট সহ্য করেছো তার থেকে বেশি আমি সহ্য করেছি, তোমাকে দেখতে, কথা বলতে, ভালোবাসতে, সব কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখেছি। জান আনভিকে সামলাতে পারছিলাম না তাই তাকে সব সত্যি বলেছি তাকে, সে আজ যেনেছে তার ভালো আন্টি তার মাম্মাম জানো তখন তার মুখে লেগে থাকা হসি বলে দিচ্ছিলো তার জীবনের সুখের চাবি কাঠি তুমি শুধু তুমি। আনভি তোমাকে পাবার জন্য ওয়েট করছে বাড়িতে, তুমি তাকে ভালোবাসবে বলে ওয়েট করছে, জান আনভি অনেক কিছু পায়নি সে পাওয়া তোমাকে পূর্ণ করতে হবে। আমার মেয়ে তার মাম্মামকে চায় ভীষণ ভাবে চায়… বলে অন্তুর কপালে ভালোবাসর স্পর্শ দেয়…
________________________________

রোদের তীব্র আলো চোখে পরতেই ঘুম ভাঙ্গে যায় অন্তু, চোখ খুলে তার পাশে অরনিকে না দেখে কপালে ভাজ পরে তার। অন্তু উঠে বসে অরনিকে কয়েক বার ডাকে কিন্তু কোন উত্তর পায় না তাই উঠে দাড়ায় সে ওয়াশরুমে দরজায় নক করে দেখে অরনি নেই। অন্তু বারান্দায় দাড়িয়ে আসেপাশে দেখতে লাগলো কিন্তু সামনে সমুদ্র সৈকত প্রকৃতি দেখে তার মন ভরে গেলো। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দীর্ঘ ৮ ঘন্টার জার্নি করে সকালে তারা এই হোটেলে উঠেছে এই জল তরঙ্গ হোটেল থেকে সমুদ্র সৈকত কাছে তাই। এখানকার সার্ভিস ভালো সকালে সবাই ক্লান্ত থাকায় নাস্তা করে যে যার রুমে যায় ঘুমাতে। অন্তু নিচে তাকিয়ে দেখে অরনি প্রাপ্য সুইমিং পুলের কাছে বসে আছে তাই সে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। অরনি প্রাপ্য সাথে কিছু বিষয়ে কথা বলছিলো তখন অন্তুকে তাদের কাছে আসতে দেখে কথা বলা বন্ধ করে দেয় অরনি অন্তুকে বলে….

অরনিঃ দিদিয়া ঘুম হয়েছে ভালো?

অন্তু অরনির পাশে এসে বসে বলে… হুম হয়েছে দাদাভাই কোথায়?

প্রাপ্যঃ ভাইয়া, আদি ভাইয়া, আদিবা মিটিং করতে গেছে একটু পরে চলে আসবে।

অন্তুঃ ও তুমি যাওনি?

প্রাপ্যঃ আমার না গেলেও হবে আর তোমাদের দুজনকে এখানে একা ফেলে যেতে পারবো না তাই যাই নি।

অরনিঃ দিদিয়া চলো খেয়ে নেবে দুপুর পার হয়ে গেছে একটু পর আমরা বিচে যাবো।

অন্তু আর কথা বাড়ায় না তার খিদা পেয়েছে তারা তিনজনের হোটেলের রেস্তোরাঁ গিয়ে খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বেরেতে গেলে সেখানে অর্ণব, আদি, আদিবা তাদের সাথে মিট করবে…
__________________________________

সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে হাটছে অন্তু তার থেকে কিছু দূরে অরনি প্রাপ্য হাত ধরে হাটছে অন্তুর ভালো লাগছে তাদেরকে এমন দেখতে। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে অন্তু আসে পাশে দেখতে লাগলো বিকেলে অনেক মানুষ আসেছে এখানে কেউ এসেছে কাপাল হয়ে, কেউ এসেছে ফ্যামেলি নিয়ে, কেউ বা বন্ধুদের সাথে অন্তু সবাইকে দেখতে দেখতে এগোতে নিলে হঠাৎ কিছুতে বেঁধে পরতে নিলে একজোরা বলিষ্ঠ হাত তাকে ধরে ফলে অন্তু নিজেকে সামলে উঠে দাড়িয়ে তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে অবাক হয়ে সে আর কেউ নয় অর্ণব। অর্ণব মিটিং শেষ করে অন্তুদের কাছে আসলে দেখে অন্তু পরে যাচ্ছিলো তাই সে তাকে ধরে অর্ণব অন্তুকে বললো…

অর্ণবঃ দেখে চলতে পারো না একটু হলেই তো পরে যেতে।

অর্ণবের কন্ঠে স্পষ্ট তার জন্য চিন্তা দেখলো অন্তু। কিন্তু অর্ণব (রোদ) তার জন্য কেন চিন্তা করবে অন্তু বললে..

অন্তুঃ আসলে খেয়াল করিনি আর ধন্যবাদ ধরার জন্য।

অর্ণব কিছু বলো না আর না অন্তু দুজনের মাঝে নিরবতা নেমে এলো। অর্ণব একবার অন্তুকে দেখে কিছুটা সাহস নিয়ে বললো….

অর্ণবঃ অন্তু আমার কিছু বলার ছিলো।

অন্তুঃ হ্যাঁ বলুন কি বলবেন।

অর্ণবঃ আসলে অন্তু তোমাকে একটা সত্যি বলার ছিলো। মানে আমার আর আনভির নিয়ে একটা সত্যি তোমাকে বলতে চাই।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু তার দিকে তাকায়। অন্তুর তাকানো দেখে অর্ণব নার্ভাস হয়ে পরে, তার হাত পা কাঁপছে। অন্তু তা বুঝতে পেরে বললো…

অন্তুঃ আগে মনে সাহস জোগাড় করুন তারপর সত্যি বলতে আসবেন।

অন্তু বলে সামনে এগিয়ে যায় তার কাছে অর্ণবের (রোদের) কোনো সত্যি শোনার ইন্টারেস্টি নেয় সে চুপচাপ হয়ে পূনরায় হাটতে লাগে। অর্ণব তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ফোঁস করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বললো… এই মেয়ে এই ভাবে কথা শুনবে না অন্য উপায় করতে হবে। বলে সেও অন্তুর কাছে চলে যায়। আবারো নিরাবতা পালন হলো তাদের মধ্যে। তারা দুজনে আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো অন্তু সামনে তাকিয়ে দেখে আদি ফোনে কথা বলছে আর আদিবার এক হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আদিবা তাতে খুশি না বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে আদির দিকে কিন্তু এতে আদির কিছু যায় আসে না সে নিজের কাজ করছে তা দেখে অন্তু ফিক করে হেসে ফেলে অন্তুর হাসলো কেন তাই দেখতে অর্ণব সামনে তাকিয়ে আদির কাজে তার হাসি পেলো কিন্তু অনেক দিন পর অন্তুর হাসি দেখে সে মুগ্ধ হয়ে গেলো। এই হাসি দেখার জন্যই তো এতো কিছু করা তার অন্তুকে আবার সেই আগের চঞ্চল করতে চায়, যে হাসবে, রাগ করবে, অভিমান করবে, মুখ ফুলাবে, আর তাকে ভালোবাসবে। বিকেলের শেষে গোধুলি লগ্নের মনোরম পরিবেশে সূর্যে রক্তিম আভাতে অন্তুকে দেখতে স্নিগ্ধ মনোমুগ্ধকর লাগছে অর্ণবের কাছে। অন্তুর ফর্সা মুখে লাল আভা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা দুজনে আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে এক সাথে দুজনের মধ্যে একটা নিরবতা….

কিছু কিছু ভালোবাসা নিরবতার মাঝে লুকিয়ে থাকে..
কিছু কিছু কথা না বলা কথার মাঝে লুকিয়ে থাকে…
কিছু কিছু সুখ অন্যর সুখে মাঝে লুকিয়ে থাকে…
কিছু কিছু দুঃখ নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে হয়…
একেই তো ভালোবাসা বলে…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৪

সমুদ্র নীল জলের দিকে তাকিয়ে আছে এক মনে অন্তু হালকা বাতাসে তার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে সমান তালে। সকালে সবাই এক সাথে ব্রেকফাস্ট করে একটু রেস্ট নিয়ে বিচে এসেছে তারা আজ রাতে তারা চলে যাবে ঢাকা আদির মিটিং শেষ তাই তারা একটু ঘুরে বেরাবে তাই এখানে এসে বসে আছে অন্তু আর তারা সবাই ঘুরছে। হালকা হালকা শীত পরতে শুরু করছে কিন্তু রোদের তেজ দেখলে মনে হয় গ্রীম্মকাল চলছে দেশের ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু জলবায়ু দূষণের কারনে ঋতুর আমাজ হচ্ছে না। অন্তু সামনে তাকিয়ে একটা কাপলকে দেখছে মনে হচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের হানিমুনে এসেছে। অন্তু হাসলো সে তো অর্ণবের সাথে এখানে আসতে চেয়েছিলো একটা ছোট সংসার করতে চেয়েছিলো কিন্তু তা হলো না সব এলোমেলো হয়ে গেলো। হঠাৎ তার পাশে কারোর উপস্থিত টের পেতে সে তার দিকে তাকিয়ে দেখে আদিবা মুচকি হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে অন্তু চোখ ফিরিয়ে নেয়। অন্তুর এমন কাজে আদিবা কষ্ট পায় সে অন্তুর সাথে অনেক বার কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সে বলতে দেয় নি কিছু না কিছু বলে তাকে এরিয়ে গেছে আদিবা নিচুস্বরে বললো…

আদিবাঃ অন্তু আমার সাথে কথা বলবি না? দেখ আমি সরি বলছি তো তুই বলে আমি তোর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো তাও কথা বল প্লিজ।

আদিবার কথা শুনে অন্তু তার দিকে তাকিয়ে টেরি স্মাইল দিয়ে তার পা আদিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…

অন্তুঃ ধর পা…

অন্তুর আকাম্মসিক কাজে আদিবা বিস্মিত সে তো কথার কথা বলেছিলো কিন্তু অন্তু তো সত্যি সত্যি তার পা এগিয়ে দিলো আদিবা কাঁদো কাঁদো মুখে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে সে কি সত্যি অন্তুর পা ধরবে। অন্তু আদিবার মুখের অবস্থা দেখে মনে মনে শয়তানী হাসলো কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করলো না সে আদিবার ওপর রেগে ছিলো কিন্তু আদির কথা আর যুক্তিতে সেও বিশ্বাস করে এসব আদিবা নিজের ইচ্ছেতে করে নি কেউ বাধ্য করেছে তাকে। অবশেষে কিছু না বুঝে আদিবা অন্তুর পা ধরতে গেলে অন্তু আদিবাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

অন্তুঃ বেস্টু+ননদিনী হয় আমি তোর তাই আমি তোর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবো তুই আমার না তাই পায়ে হাত দিলে হাত কেটে নেব তখন আমার দাদাভাই এক হাত আলা বউ নিয়ে সংসার করবে আমরা একটুও ভালো লাগবে না তখন।

আদিবাঃ সরি দোস্ত আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি কিন্তু কিন্তু..

আদিবাকে না বলতে দিয়ে অন্তু বললো… কিন্তু কিছু না আমাকে এক্সপ্লেন করা লাগবে না। আমি জানি আমাকে কষ্ট দিয়ে তুইও ভালো ছিলি না তাই এসব বাদ দে

আদিবা অন্তুকে ছাড়িয়ে বললো… অন্তু আমি কিছু বলতে চায় না আমি যেমন আছি তেমনি ভালো আছি। শুধু আদির জন্য খারাপ লাগছে সে যেভাবে আমরা সাথে লেগে আছে উনি আবার কষ্ট পাবে আমার জন্যে।

অন্তু ভ্রু কুচকে বললো…. কেন কষ্ট পাবে?

আদিবাঃ আমি কিছুতেই আদিকে আমার জীবনে দ্বিতীয় বার জরাতে চাই না আর না সে অতীতে কি হয়েছে তা জানতে দেবো।

অন্তুঃ কিন্তু কেন তুই দাদাভাই কে মেনে নিতে পারছিস না। তুই দেখছিস না দাদাভাই কতো কষ্টে আছে তোর কি মনে হয় না দাদাভাইকে ভালো রাখা তোর দ্বায়িত্ব।

আদিবা কিছু বলো না তার কিছু বলার মতো নেয় আদি যে কষ্টে আছে সে দেখছে বুঝছে অনুভব করছে কিন্তু সে যদি আদির জীবনে যায় তাহলে তার ক্ষতি করতে সে পিছপা হবে না, সে আদির ক্ষতি করতে চায় না। আদিবা কিছু না বলাতে অন্তু বলে…

অন্তুঃ বেস্টু আমি শুধু আমার দাদাভাইর কারনে তোকে মাফ করেছি সে তোর মধ্যে সুখ পায় বলে আমি চুপ আছি কিন্তু দ্বিতীয় বার আমার দাদাভাই কষ্ট পেলে তোকে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।

কথাটি বলে সে চুপ করে থাকে আদিবা অন্তুর কথা শুনে চুপচাপ উঠে চলে যায়। আদিবা চলে যাবার কিছুক্ষণ পর অর্ণব এসে অন্তুর পাশে বসে বললো…

অর্ণবঃ তো মিস.অন্তু এতো মনযোগ সহকারে কি দেখছেন?

অন্তু না তাকিয়ে বললো… কিছু না শুধু সমুদ্রের ঢেউ দেখছি। দেখুন কি সুন্দর একের ওপর এক ঢেউ আছড়ে পরছে সমুদ্রের কোলে।

অন্তুর কথাতে অর্ণব সেদিকে তাকিয়ে বললো… হুমম..

কিছুটা নিরব থেকে অর্ণব বললো… অন্তু আপনাকে কিছু কথা বলতে চায় আমি কথাটা অনেক জরুরি..

অন্তু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দেখে সে কিছুটা ঘাবড়ে আছে আর ইতস্ততা করছে অন্তু তাকে বলে… বলুন আমি শুনছি।

অর্ণবঃ অন্তু আমি আসলে অর্ণ…

আর কিছু বলতে পারে না তার আগে অরনি এসে অন্তুর হাত ধরে বলে…

অরনিঃ দিদিয়া প্লিজ চল না পানিতে নামি প্লিজ প্লিজ..

অন্তু কিছু বলার অর্ণব বললো… অরনি অন্তু সাঁতার জানে না তুমি প্রাপ্য সাথে যাও।

অর্ণবের কথায় অন্তু চমকে যায় সে অর্ণবের দিকে তাকায় সে তো কখনো অর্ণবকে (রোদ) বলেনি সে সাঁতার জানে না তাইলে সে কেমন করে যানলো। অন্তু ভ্রু কুচকে বললো… আমি তো আপনাকে বলি নি আমি সাঁতার জানি না। তাইলে আপনি কি করে জানলে??

অন্তুর কথায় অর্ণব ঘাবড়ে যায় অন্তু তীক্ষ্ণ নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে উওর শোনার জন্য। অর্ণব আমতা আমতা করে বললো…. আদি বলেছিলো তাই। বলে সে শ্বাস ছেড়ে কিন্তু অর্ণবের কথায় অন্তু প্রাসন্ন হলো না তার কাছে কেমন যেন লাগছিলো অর্ণবের কথা। অরনি জিবে কামুর দিয়ে বললো…

অরনিঃ সরি সরি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম দিদিয়া সাঁতার জানে না।

অন্তুঃ অরনি চল আমি পানিতে নামবো।

অর্ণবঃ অন্তু জেদ করবে না তুমি সাঁতার জানো না যদি ডুবে যাও তখন?

অন্তুঃ মরবো না আমি। আমার মৃত্যু এতো সহজে হবে না আমাকে আরো কষ্ট পেতে হবে তারপর যদি মৃত্যু হয়..

বলে অরনির হাত ধরে সমুদ্রের ধারে নিয়ে গেলো এদিকে অন্তুর কথা শুনে অর্ণব থমকে যায় অন্তু কি বলে গেলো একটু আগে অন্তুর মনে এতো যন্ত্রণা, কষ্ট আছে তা না হলে সে এতো বড় কথা বলতে পারতো না। অর্ণবের ভাবনার মাঝে অরনির চিৎকার ভেসে আসে অরনি কান্না করে আদিকে ডাকছে আর কি যেন বলছে অর্ণব অন্তুর কথা ভেবে দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখে অরনি কান্না করছে কিন্তু অন্তু সেখানে নেই অন্তুকে না দেখে তার কলিজায় কেঁপে ওঠে। অরনির চিৎকার শুনে ইতি মধ্যে আদি, আদিবা, প্রাপ্য সেখানে চলে আসে অর্ণব অরনিকে বললো…

অর্ণবঃ অরু অন্তু কোথায় তোমার সাথেই তো এখানে আসলো কি হলো বললো…

অরনি কান্না করতে করতে বললো… ভাইয়া দিদিয়া এখানেই ছিলো আমার সাথে কিন্তু ঢেউ আসায় আমি ছিটকে যায় দিদিয়ার থেকে এখন তাকে পাচ্ছি না।

অরনির কথা শুনে অর্ণবের প্রাণ পাখি মনে হলো উড়ে যাচ্ছে। সে কাপা কাপা গলায় বললো… মমানে পাচ্ছো না মানে। কোথায় অন্তু।

অর্ণব পাগলের মতো সারা দিকে চোখ বুলাতে লাগলো আদি, প্রাপ্য অন্তুর কথা শুনে এদিক ওদিকে খুজতে লাগলো আদিবা অরনিকে সামলাতে লাগলো মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে। অর্ণব কিছুদূর পানিতে কারো হাত দেখে দৌড়ে সেদিকে সাঁতরে গেলো সেখানে, সেখানে গিয়ে সেই হাত ধরে টেনে তুলতেই অন্তু বেরিয়ে আসে অন্তু ক্লান্ত চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে অর্ণব তাকে নিয়ে সমুদ্রের পারে এসে তাকে নামিয়ে পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করে অন্তুর মুখে হালকা ভাবে থাপ্পরে বললো…

অর্ণবঃ অন্তু এই অন্তু জান প্লিজ চোখ খলো। দেখো আমাকে ভয় দেখাবে না,আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি না অন্তু অন্তু।

অর্ণবের চিৎকার শুনে সবাই সেখানে চলে আসে অন্তুকে কিছু বলতে না দেখে অরনি কান্না করতে লাগলো আদি বসে অন্তুকে ডাকতে লাগলো..

আদিঃ অন্তুপাখি আমার দিকে তাকাও দাদাভাই ডাকছে তো তোমায়। তোমার কিছু হয় নি তাকাও

অর্ণব অন্তুর পালস চেক করে ধিরে ধিরে চলছে নিঃশ্বাসের গতি কমে গেছে। সে ঘাবড়ে যায় আদির হাত সরিয়ে অন্তুর বুকে তার দুহাত দিয়ে চাপ দিতে লাগলো তারপর মুখে মুখ লাগিয়ে অক্সিজেন দিতে লাগলো দু-তিন বার দিতেই অন্তু কাশতে লাগলো আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো অন্তুর নিশ্বাস নিতে দেখে সবাই স্বস্তি পায় অর্ণব তাকে বুকে নিয়ে অজস্র চুমু দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান তুমি ঠিক আছো এমন জেদ কেউ করে এখন যদি কিছু হয়ে যেতো তোমার তাইলে আমার কি হতো। তুমি একটুতো আমার কথা ভাবলে না..

বলে চোখের জল মুছে নিলো সে। অন্তুর নিথল অবস্থা দেখে অর্ণবে জান বেরিয়ে আসে এক মুহূর্তের জন্য, অর্ণবের মনে হচ্ছিল অন্তু তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অন্তু কার্ণপনে অর্ণবের সব কথা আসছে কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না অনেক কষ্টে সে পিটপিট করে তাকায় অর্ণবের দিকে। সে কিছু বলতে যাবে তখন তার চোখ পরে অর্ণবের চোখের দিকে, সে স্তব্ধ হয়ে যায় অর্ণবের চোখ দেখে। অন্তুর চোখ বুজে আসছে অন্তু অর্ণবের শার্ট জোরে চেপে ধরায় তার শার্টের উপর থেকে কয়েকটা বোতাম ছিরে যায় তার বুকে বা পাশটা স্পষ্ট দেখা যায় অন্তু চোখ বন্ধ করার পূর্বে তার বুকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে মুচকি হেসে ঢলে পরে অর্ণবের বুকে। অন্তুকে অজ্ঞান হতে দেখে সবাই বলে তাকে রুমে নিয়ে যেতে অর্ণব তাকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে নিয়ে যায়…..
_____________________________________

অর্ণব অন্তুকে তার রুমে নিয়ে এসে শুয়ে দিলো একে একে সবাই চলে আসে সেখানে। অর্ণব অন্তুর হাত ছাড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে রাগি চোখে অরনির দিকে তাকায় অরনি ভয় পেয়ে প্রাপ্যর হাত চেপে ধরে। প্রাপ্য অর্ণবকে রাগতে দেখে অর্ণবের বললে…

প্রাপ্যঃ ভাইয়া এতে অরনি…

প্রাপ্য কথা পূরণ করতে না দিয়ে অর্ণব রাগি কন্ঠে বললো… আমি অরনির ওপর রাগ করছি না নিজের ওপর রাগ হচ্ছে আমি অন্তুকে বলাম সেখানে না যেতে কিন্তু এই মেয়ে আমার কথা না মেনে অরনির সাথে গেলো তাইলে কি অরনির উচিৎ ছিলো না তাকে দেখে রাখার সে জানতো অন্তু সাঁতার জানে না তাইলে….

অর্ণবকে কিছু না বলতে দিয়ে আদি রুক্ষ কন্ঠে বললো… এতে তোমার দোষ বেশি না অর্ণব?

আদির কথা শুনে অর্ণব বিস্মিত হলো, অন্তুর এই অবস্থার জন্য আদি তাকে দায়ি করছে দেখে। সবাই আদির কথা শুমে বিস্ময় হয়, সবাই বুঝতে পারছে আদি অন্তুর জন্য চিন্তিত কিন্তু তাই বলে অর্ণবকে সরাসরি দোষ দিচ্ছে দেখে অবাক হলো…অর্ণব কাপা কাপা গলায় বললো…

অর্ণবঃ ম মানে আ আমার দোষ।

আদিঃ হ্যাঁ তোমার দোষ তুমি যদি অন্তুকে সব আগে বলে দিতে তাইলে সে এতোটা কষ্ট তার মধ্যে নিয়ে থাকতো না আর না এতো জেদ। তুমি জানো অন্তুর জেদ বরাবরি একটু বেশি যখন সে পানিতে যেতে চাইলো কেন তাকে যেতে দিলে তুমি। এখন দেখো আমার অন্তুপাখি কি হলো আজ যদি সঠিক সময় তাকে না পেতে তাইলে কি হতো, তুমি কাকে দোষ দিতে তখন বলো?

আদির কথা রুমের চারিদিকে বারি খেতে লাগলো কেউ আদির কথার ওপর কথা বলার সাহস পেলো না। অর্ণব স্তব্ধ হয়ে যায় আদি ঠিক বলেছে সে যদি আগে সব বলে দিতো তাইলে এটা হতো না, অন্তুর জেদ সে জানে তাইলে কি করে তাকে পানিতে নামতে দিলো আর সে কেন গেলো না তার খেয়াল রাখতে তার এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। আদি আবার বললো…

আদিঃ অর্ণব তোমার পরিস্থিতি আমি মেনেছি কিন্তু আমার বোনের ক্ষতি আমি মানবো না এর জন্যে যদি তোমার থেকে আমার বোনকে দূরে রাখতে হয় আমি রাখতে পিছপা হবো না বলে দিচ্ছি আমি। আমি গাড়ির ব্যবস্থা করছি অন্তুর জ্ঞান ফিরলে আমার ঢাকা রওনা হবো।

আদি তার কথা না বলে এক মুহূর্ত সেখানে দাড়ালো না। আদিকে রেগে এভাবে যেতে দেখে আদিবা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আদির পিছে পিছে চলে যায় সে জানে অন্তু আদির জীবনে কি আজ যদি অন্তুর কিছু হতো তাইলে আদি নিজের কি করতো সে নিজেও জানে না। রুমে স্তব্ধতা বিরাজোমান প্রাপ্য তার ভাইয়াকে ভাঙে পরতে দেখে তার কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রাখে অর্ণব প্রাপ্য দিকে তাকিয়ে বললো…

অর্ণবঃ প্রাপ্য আদি যা বলে গেলো তা সত্যি তাই না আমি যদি অন্তুকে নিজের সত্যি বলতাম তাইলে আজ অন্তু জেদ করতো না আমার কথা মানতো। আমি অন্তুকে শুধু কষ্ট দিচ্ছি তার লাইফে আসার পর থেকে কষ্ট দিচ্ছি শান্তিতে থাকতে দিতে পারছি না তাকে।

প্রাপ্যঃ ভাইয়া এটা সত্যি না তুমি ভাবিকে যতোটা ভালোবাসো সেটা আদি ভাইয়া যানে না তাই বলেছে এসব। ভাবি তোমার জীবনে এসে তোমার তার তার জীবন সুখময় করেছে আর যেটা তোমাদের সাথে হয়েছে সেটা পরিস্থিতি কারনে আর কিছু মানুষের স্বার্থে কারনে।

অর্ণব প্রাপ্য দিকে তাকিয়ে আবার অন্তুর দিকে তাকায় অন্তুর কাছে এসে তার কপালে চুমু দিয়ে বললো… জান আমি কাওকে খুশি রাখতে পারছি না, না তোমাকে, না আনভিকে আর না আমাকে প্লিজ আমার কথাটা যদি একটা বার শুনতে তাইলে এখন আমাদের হাতে অন্যরকম পরিস্থিতি হতো কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা আমি মানতে পারছিনা। কিন্তু আই প্রমিস তোমাকে সব সত্যি বলে নিজের কাছে নিয়ে আসবো কেউ তোমাকে আমার কাছে থেকে দূরে রাখতে পারবে না, না তোমার দাদাভাই না তোমার বাবা…আই লাভ ইউ জানবলে অরনিকে অন্তুর জামাকাপড় পাল্টে দিতে বলে সে আর প্রাপ্য চলে যায়। অরনি রুম লক করে অন্তুর জামাকাপড় নিতে লাগলো এদিকে অন্তুর চোখের কোণা দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পরে। অরনি তার চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে সে চেঞ্জ করে বাইরে চলে আসে….

কিছু কাঙ্খিত জিনিস না পাওয়ার মধ্যে কি দুঃখ আছে সে তা জানে….
কিন্তু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পাওয়ার মধ্যে কতো সুখ আছে সে তা বুঝাতে পারে না…
যখন তার সাথে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা ঘটে….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here