তুমি আসবে বলে পর্ব -৩৭+৩৮+৩৯+৪০

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩৭ (রহস্যভেদ-২)

কাঁপা কাঁপা হাতে আয়রা অন্তুর থেকে তার ছেলেকে কোলে তুলে নিলো আয়রার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে এটা তার সুখের অশ্রু এতো কষ্ট সহ্য করে এই মূহুর্তের জন্য তো অপেক্ষা করে ছিলো সে। মা হবার সুখ আয়রা পেয়েছে শারীরিক মানসিক সব যন্ত্র থেকে এই ছোট্ট প্রানকে দেখে তার ১০মাসের কষ্ট নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো এটাই তো মা হবার সুখ। সন্তানকে একটা হাসি দেখলে তাদের সব কষ্ট ভুলে যায় তেমন আয়রাও ছেলেকে দেখে সব ভুলে গেলো। আয়রা ছেলের মুখে অজস্র চুমু দিয়ে আয়ানকে বলে…

আয়রাঃ আয়ান দেখো আমার ছেলে আমাদের ছেলে। এই ছোট প্রানটার জন্য তো এতো দিনের দুঃখ, কষ্ট আজ এই অপেক্ষা শেষে আমাদের সুখের মূহুর্ত। আমাদের ছোট্ট অয়ন

আয়ানঃ হ্যা আমাদের ছোট্ট অয়ন

আয়ানের বুকেতে আয়রা মাথা দেখে অয়নকে দেখছে তারা। আয়রার জ্ঞান ফেরার পর তার সামনে আয়ান বসে ছিলো তাকে দেখে তার বাচ্চা কথা বলে আয়ান তাকে বলে তাদের ছেলে হয়েছে। এটা শুনে আয়রা কান্না করে তাকে দেখতে চায় তখন আয়ান অন্তুকে নিয়ে এসে তার কাছে ছেলেকে দেয়। আয়ান আয়রাকে একা থাকতে দিয়ে সবাই বাইরে আসে করিডোর দাড়িয়ে আদি বলে..

আদিঃ দিদুন অরনি কোথায়?

দিদুনঃ অরনিকে আমি বাড়িতে পাঠয়েছি।

আদিঃ ওও

আকাশ মির্জা নিহিতার কাছে এসে বললে.. নিহিতা তুমি আজ আয়রাকে নিজের রক্ত দিয়ে অনেক উপকার করেছো। তোমার কাজে আমি সত্যি খুশি।

নিহিতা মির্জাঃ আমি আয়রাকে না নিজের ছেলেকে বাঁচিয়েছি। ওই মেয়ে না বাঁচলে আমার ছেলে মরে যেতো সেটা আমি চায় না।

আকাশঃ অয়নকে কোলে নিলে না তুমি?

নিহিতা মির্জা কথা বললো না আকাশ ও আর কিছু বললো না একটু একটু করে যখন নিহিতার মন গলছে তাইলে আয়রাকে মেনে নিয়ে অয়ন কেও কোলে নেবে। নিহিতা মির্জা চুপচাপ বসে রইলো তারা সবাই একটু পর বাড়ি যাবে তার আগে আয়রাকে একবার দেখে যাবে…
_________________________________

সারা গোডাউনে আশিকের আত্মচিতকারে বারি খাচ্ছে আশিক ব্যাথায় গোঙ্গাতে থাকে তার সারা শরীর ব্যাথার কারনে ছটফট করছে কিন্তু সে কিছু করতে পারছে না তার হাত বা বাঁধা। অর্ণব (এখন থেকে রোদের নামের জায়গায় অর্ণব নাম দেয়া হবে) ক্লান্ত হয়ে হাতের রড নিচে ফেলে আশিকের চুলের মুঠো ধরে মুখ উচ্চু করে তার মুখের সামনে আশিকের মুখ তুলো। চুল ধরাতে আশিক ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে অর্ণবের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে রাগে সারা শরীর পুরছে। অর্ণব রুক্ষ গলায় বললো….

অর্ণবঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার জান আমার অন্তুকে ছোঁয়ার। জানোয়ারের বা* তোকে তো আজ আমি মেরে ফেলবো।

বলে আবার রড তুলে মারতে লাগলো আশিকে। অরনি অর্ণবের এই রণমুর্তি ধারণকৃত মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায় সে কখনো অর্ণবকে এই রুপে দেখে নিয়ে সব সময় নম্র, শান্ত দেখেছে অরনি ভয়ে প্রাপ্যকে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্য অরনিকে জড়িয়ে রাখে তার মাঝে। প্রাপ্য অর্ণবকে দেখে বুঝতে পারছে ৪ বছের জমে থাকা রাগ আশিকের ওপর ঝারচ্ছে। এখানে আসার পর আশিক যখন রোদের আসল পরিচয় জানলো তখন আশিকের প্রান উড়ে যায়।

আশিকঃ কি যাতা বলছো অর্ণব তো ৪ বছর আগে মারা গেছে।

অর্ণবঃ কে বলেছে অর্ণব মারা গেছে তোরা কি লাশ দেখেছিলি অর্ণবের। আমি সেই দিন বেঁচে যায় কিন্তু তুই আজ বাঁচবি না তোকে আজ মরতে হবে।

আশিকঃ ক কি বলছিস তুই আমাকে মারবি। কেন মারবি আমাকে কি করেছি আমি?

অর্ণবঃ কি করেছিস তুই জানোয়ার। তোর অপবিত্র হাত দিয়ে আমার জানকে স্পর্শ করেছিস ওকে কষ্ট দিয়েছিস ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছিস তোকে কি করে ছেড়ে দেয় বল। তোর আজ শেষে দিন..

বলে রড দিয়ে মারতে লাগলো আশিকে সেখন থেকে। প্রাপ্য অর্ণবের দিকে ভয়ে ভয়ে বললো….

প্রাপ্যঃ অর্ণব ভাইয়া তুই নিজের হাতে ওকে মেরে নিজেকে কেন অপবিত্র করছিস।

অর্ণব রড ফেলে দেয় আশিকের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্যর দিকে তাকায় প্রাপ্য অর্ণবের চোখ দেখে ভয় পেয়ে যা ঢোক গিলে বললো…

প্রাপ্যঃ ভাইয়া ভাবির কথাটা ভাব এখন যদি তুই কোন ভাবে আইনি জটিলতায় পরিস তখন কি হবে আর আনভি তোকে ছাড়া থাকতে পারে না সেটা অন্তত ভাব।

অর্ণবঃ অন্তুর কথা ভাবছি বলে এই শুয়ারে বা*কে মারতে চাচ্ছি। অন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছে ওর জন্য।

প্রাপ্য আবার প্রশ্ন করেঃ আর আনভি তার কথা ভেবেছিস?

আনভির নাম শুনে অর্ণব নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয় তার আম্মু তাকে ছাড়া থাকতে পারে না। অর্ণব তার লোক ডেকে বললে…

অর্ণবঃ একে এমন ভাবে মারবে যেন এক্সিডেন্ট মনে হয় নিয়ে যাও একে।

অর্ণবের কথা শুনে আশিকে ভয় পেয়ে যায় সে নিজের প্রানভিক্ষা যাওয়ার জন্য অর্ণবকে বললে..

আশিকঃ অর্ণব প্লিজ আমাকে মারিস না আমি অন্তুর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো তাও তুই আমাকে মারিস না আমি এদেশ থেকে চলে যাবো এবারের মতো ক্ষমা করে দে।

আশিকের কথা শুনে অর্ণব রেগে বললো…. ক্ষমা তোকে কোন দিন না তুই আমার ক্ষতি করলে ছেড়ে দিতাম কিন্তু তুই অন্তুর দিকে হাত বাড়িয়েছিস তাই তোকে মারতেই হবে। কি হলো নিয়ে যাও ওকে..

অর্ণবের কথায় লোকগুলো আশিকে নিয়ে যায়। অরনি প্রাপ্য দুজনি চমকে যায় অর্ণবের কথায় তারা মনে করেছিলো সে আশিকে ছেড়ে দেবে বা আটকে রাখবে কিন্তু তাকে মেরে ফেলবে ভাবেনি। অর্ণব প্রাপ্য কে বললে…

অর্ণবঃ প্রাপ্য অরুকে মির্জা বাড়িতে দিয়ে আসো।

অরনিঃ অর্ণব ভাইয়া দিদিয়া…

অরনিকে কিছু না বলতে দিয়ে অর্ণব বললো… অন্তু অনেক স্ট্রিং অরু সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে।

প্রাপ্যঃ ভাইয়া তুই কোথায় যাবি?

অর্ণবঃ আমি আমার বাড্ডার ফ্ল্যাটে যাবো কিছু সময় লাগবে নিজেকে শান্ত করতে। তুই চিন্তা করিস না আমি সময় মতো বাড়িতে ফিরে যাবো। তুই অরুকে বাড়িতে দিয়ে যায়।

অর্ণব বলে চলে যায় গাড়ি নিয়ে তার ফ্ল্যাটে যেখানে অন্তুর সাথে তার ভালোবাসার একটা ছোট্ট সংসার ছিলো তার এখন শান্তি লাগবে আর সেখানে গেলেই শান্তি পাবে। প্রাপ্য অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আজ ৪বছর পর অর্ণবকে এই হিংস্র রুপে দেখেলো। অরনিকে নিয়ে বেরিয়ে যায় সে…..
_______________________________

অন্তুর ওরনা বুকের ওপর নিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে অর্ণব। একটু আগে সে তার পুরাতন ফ্ল্যাটে এসে তার কাবাড থেকে অন্তু ওরনা নিয়ে বেড শুয়ে আছে তখন থেকে। অর্ণব চোখ খুলে ওরনাটা তার নাকের করছে নিলে ওরনা থেকে অন্তুর শরীরের স্মেল আসে অর্নবের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা যায়। অর্ণবের চোখের সামনে সেই দিনের সব ঘটনা একে একে আসতে লাগে…

অতীত,,,

অর্ণব যখন পাহাড় থেকে নদীতে আছড়ে পরে তখন তা মুখের বা পাশে অনেক চোট লাগে সে নদী পানির স্রোতে ভেসে চলে আসে অনেক দূরে। প্রাপ্য আর তার ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে নদীর ধারে পিকনিক করতে যায় সেদিন। তারা সবাই মিলে গল্প গুজব করছিলো তখন তার ফ্রেন্ড নীলা চিতকার দিয়ে সবাই কে ডাকে…

নীলাঃ সবাই এদিকে আয় দেখ এখানে কেউ পরে আছে মনে হচ্ছে বেঁচে আছে।

নীলার কথা শুনে সবাই সেদিকে গিয়ে দেখে সত্যি একটা ছেলে পরে আছে উপর হয়ে প্রাপ্য আগাতে নিলে আরিফ বলে…

আরিফঃপ্রাপ্য যাস না এটা পুলিশ কেস হতে পারে। ছেলেটা বেঁচে আছে কি না জানি না পরে সবাই মুসকিলে পরবো।

সবাই আরিফের কথায় সায় দেয় কিন্তু প্রাপ্য মন মানে না সে একটা মানুষকে মৃতুর মুখে দেখেও যাবে না সে সেটা করতে পারবে না তার চোখের সামনে তার ভাইয়ার রক্তাক্ত চেহারাটি ভেসে উঠলো তার রোদ ভাইয়ার একটা কার এক্সিডেন্টে মারা যায় কিছু দিন আগে কেউ তাকে সাহায্য করতে যায় না তার ফলে সে মারা যায়। প্রাপ্য নিজে একা গিয়ে অর্ণবকে উল্টে দেখে অর্নবের মুখের বা পাশ বিচ্ছিরি ভাবে থেঁতলে গেছে প্রাপ্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে তার পালস চেক করে দেখে সে বেঁচে আছে। প্রাপ্য সবাইকে বললে…

প্রাপ্যঃ দেখ ছেলেটা বেঁচে আছে ছেলেটাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। ছেলেটার আমাদের চোখের সামনে যদি মারা যায় তাইলে নিজেদের কি কখনো ক্ষমা করতে পারবি।

সবাইকে প্রাপ্য কথায় সায় দিয়ে অর্ণবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে হসপিটালের যায় প্রাপ্য তার বাবাকে ফোন করে সব বলে তিনি তাড়াতাড়ি সেখানে চলে আসে। আসিফ চৌধুরী ডক্টরের সাথে কথা বলে ডক্টর বলে…

ডক্টরঃ মি.চৌধুরী ছেলেটা বেঁচে গেছে কিন্তু তার মুখের বা পাশটা থেঁতলে গেছে। তার শরীরে মারের চিহ্ন আছে মনে হচ্ছে তাকে মেরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছেলেটা বাঁচতে চায় তাই হয়তো আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছে তাই যতদ্রুত সম্ভব তার মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে।

মি.চৌধুরীঃ ঠিক আছে আপনি ব্যবস্থা করুন আমি যতদ্রুত পারি তাকে নিয়ে সিংগাপুর চলে যাবো।

ডক্টরের সাথে কথা বলে মি.চৌধুরী প্রাপ্য সাথে কথা বললে… তোমার সকল ফ্রেন্ডদের বলে দাও এই কথা যেনো বাইয়ে না যা আমার মনে হচ্ছে ছেলেটার সাথে কিছু হয়েছে তার গায়ে মারের চিহ্ন ছিলো। তাই আমারা ছেলেটিকে নিয়ে সিংগাপুর চলে যাবো।

প্রাপ্যঃ বাবা তুমি ছেলেটা কে নিয়ে এতো করছো কেন। আমরা তো শুধু তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম তাইলে এসব কেন করছো?

মি.চৌধুরীঃ যানি না কিন্তু ছেলেটাকে দেখে আমার রোদর কথা মনে পরছে। আমার ছেলে মারা গেছে এখনো বিশ্বাস হয় না তাই এই ছেলের মুখে আমার রোদের চেহারা বসিয়ে আমার রোদকে আবার জীবিত করবো..

প্রাপ্য আর কথা বলে না তার বাবা তার ভাইয়ার মৃত্যু মানতে পারেনি তাই এটা করছে তারও মনে হলো এটা করা ঠিক ছেলেটাও নতুন ভাবে বাঁচবে আর তার ভাইয়াও আবার ফিরে আসবে। তারা অর্ণবকে নিয়ে দুদিনের মধ্যে সিংগাপুর চলে যায় প্রাপ্য তার ফ্রেন্ডদের বলে সব ম্যানেজ করে নেয়। অর্ণবের চেহারাতে রোদের চেহারা বসানো হয়। অর্ণব একটু সুস্থ হলে সে তার সব কথা তার সাথে কি হয়েছে অন্তু তার বাচ্চা সব প্রাপ্য আর মি.চৌধুরী কাছে বলে। সব শুনে মি.চৌধুরী বলে…

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব দেখো তুমি নতুন জীবন পেয়েছো নতুন করে সব শুরু করো। তোমার সাথে যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি দাও। আমার তোমার পাশে আছি।

অর্ণবঃ আপনি ঠিক বলেছেন সবাইকে তার পাপের ফল পতে হবে আমি তা দেবো আঙ্কেল।

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব আমি আমার ছেলের চেহারা তোমাকে দিয়েছি তাই আজ থেকে তুমি রোদ তোমার পরিচয় এটাই তুমি আসিফ চৌধুরী ছেলে আর প্রাপ্য চৌধুরী ভাইয়া রোদ চৌধুরী। তাই আমাকে বাবা বলে ডাকবে।

অর্ণবঃ ঠিক আছে বাবাই।

বলে তাকে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্য ও। অর্ণবকে ৪মাস ওখানে থাকতে হয় তার পর দেশে এসে অন্তুর খোজ করে অরনির সাথে দেখা করে তার কলেজে। প্রথমে যখন অর্ণব অরনিকে বলে সে অর্ণব কিন্তু অরনি কিছুতেই মানতে চায় না। তারপর অর্ণব প্রাপ্য কে নিয়ে গিয়ে অরনিকে বলে..

প্রাপ্যঃ অরনি অর্ণব ভাইয়া যা বলছে সব সত্যি। আমি নিজে তাকে নদী থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায় আর ভাইয়ার মুখ থেঁতলে যাওয়ায় আমার ভাইয়া রোদের চেহারা তাকে দেয়।

প্রাপ্য সব কথা শুনে অরনি অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে…

অরনিঃ ভাইয়া দিদিয়া ভালো নেই সে পাগলের মতো আচরণ করে তার পেটে যে বেবি আছে মাঝে মাঝে ভুলে যায়। আমি দিদুন মিলে তাকে সামলায় এখন একটু বুঝতে পারে তাই নিজের ক্ষতি করে না। আপনি চলুন দিদিয়াকে নিয়ে আসবেন।

অর্ণবঃ না অরু আমার এখনো অনেক কাজ আছে সবাই কে তার পাপে শাস্তি দেবো তার পর অন্তুর কাছে যাব না হলে আমি দুর্বল হয়ে যাবো। তুমি কাউকে কিছু বলো না আর অন্তু আর আমার সন্তানকে দেখে রেখো প্লিজ।

অরনি কথা দেয় কিন্তু সে দিদুনকে সব বলে দিদুন সব শুনে অর্ণবের কাছে যায় তার সাথে কথা বলে এমনকি আয়ানের বলা কথা সব বলে দেয় এতে অর্ণব নতুন ভাবে সব গুটি সাজায়। অন্তুর জন্য সে ৪টা বছর ছটফট করেছে কিন্তু আনভি আসার পর সেই ছটফটানি একটু হলেও কমেছে।

ফোনের আওয়াজে ভবনা থেকে বেরিয়ে আসে অর্ণব। সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার বাবাই ফোন দিয়েছে সে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আনভির কান্নার আওয়াজ আসতেই অর্ণব অস্থির হয়ে বললো..

অর্ণবঃ বাবাই আম্মু কান্না করছে কেন?

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো দিদিভাই কখন থেকে কান্না করছে তাকে সামলানো যাচ্ছে না।

অর্ণবঃ আমি আসছি।

বলে ফোন রেখে দেয় অর্ণব আনভির তাকে দরকার অর্ণব আনভির কান্না সহ্য করতে পারে না তাকে বাড়ি যেতে হবে। অর্ণব রুমটা ভালো করে দেখে এখানে তাদের দুজনের অনেক স্মৃতি আছে তাদের ভালোবাসা খুনসুটি এমনকি তাদের প্রথম কাছে আসা অর্ণব হাসলো। অর্ণব এখানে আসে কিছুদিন পর পর কিন্তু অন্তু একটা বারও ধরতে পারে না সে যখনি আসে রুম গুলোকে পরিষ্কার দেখলে ভালো লাগে অন্তু তাদের ভালোবাসার ঘর এভাবে যত্ন করে রেখেছে ভবে। অর্ণব তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যায় বাড়ি উদ্দেশ্য সেখানে আনভির দরকার তাকে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩৮

রাত-৮,,

অর্ণবের কোলে ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট আনভি এখনো শরীরটা মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে তার সাথে নাক টানছে, অর্ণব আনভির চোখ মুছিয়ে দিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে আগলে নেই। অর্ণবের সামনে মি.চৌধুরী আর প্রাপ্য বসে আছে মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে তাদের। অর্ণব তার ফ্ল্যাট থেকে এসে দেখে আনভি কান্না করছে তার বাবাই তাকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই থামছে না সে। অর্ণব এসে আনভিকে কোলে নিলে আনভি অর্ণবের বুকের সাথে লেপ্টে দুহাত দিয়ে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো…

আনভিঃ পাপা আজ ভালো আন্টি আসেনি আমার সাথে দেখা করতে। সে কেন আসেনি আমার সাথে দেখা করতে? আমার ভালো আন্টিকে চাই তুমি এনে দাও ভালো আন্টিকে…

বলে জোরে কান্না করে দেয় অর্ণব মেয়ের কান্না দেখে তার বুকের ভেতরটা জ্বলতে লাগলো। অর্ণব বুঝলো আজ অন্তু আসতে পারেনি বলে আনভি কষ্ট পাচ্ছে, অন্তু আজ সময় পায়নি আসার জন্য, সে তো আয়রাকে নিয়ে এতো ছুটাছুটির মধ্যে ছিলো হয় তো আনভির কাছে আসার কথা মনে ছিলো না তার। এই কয়েক দিন অন্তু আনভির কাছে অনেক কিছু হয়ে গেছে, আনভি অন্তুকে নিজের কাছে রাখতে অনেক বাহানা করে কিন্তু যখন কিছুতেই কিছু না হয় তখন সে কান্না করে। অর্ণব আনভির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে করতে বললো…

অর্ণবঃ আম্মু ভালো আন্টির বাড়িতে আজ নতুন একটা ছোট্ট বাবু এসেছে তাই আসতে পারেনি তোমার কাছে। এতে কান্নার কি আছে কাল দেখো সে চলে আসবে তোমার কাছে।

অর্ণবের কথা শুনে আনভি মাথা তুলে ঠোঁট উল্টে বললো….. তাইলে ভালো আন্টি আমাকে আর ভালোবাসবে না আমার কাছে ও আর আসবে না। ওই বাবুকে ভালোবাসবে।

বলে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো অর্ণব তার মেয়ে কথা শুনে অবাক এটা কি বললো আনভি। আনভি মনে অন্তুকে নিয়ে ইনসিকিউরিটি জন্ম নিচ্ছে সে অন্তুকে কারোর সাথে ভাগ করতে চাই। অর্ণব আনভির চোখের পানি মুছে বললো…

অর্ণবঃ আম্মু তোমার ভালো আন্টি শুধু তোমার, তোমাকে ছাড়া আর কারোর না। সে শুধু তোমার সাথে থাকবে তোমাকেই ভালোবাসবে।

আনভিঃ সত্যি পাপা

অর্ণবঃ ইয়েস আম্মু।

আনভি খুশি হলো তার পাপার কথা শুনে অর্ণব আনভিকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তাকে ঘুম পাড়াতে লাগালো। অর্ণব মি.চৌধুরী দিকে তাকিয়ে বললো…

অর্ণবঃ কি হয়েছে বাবাই তুমি এমন করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?

অর্ণবের কথা শুনে মি.চৌধুরী নড়েচড়ে বসলো। গম্ভীর গলায় বললো…

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব আশিকে মারতে গেলে কেন ওকে আটকে রাখলেই তো হতো।

অর্ণব বুঝতে পারলো প্রাপ্য তাকে সব বলে দিয়েছে। অর্ণব প্রাপ্য দিকে চোখ রাঙায় সব কথা বাবাইকে বলার জন্য, প্রাপ্য অর্ণবের চোখ রাঙানি দেখে নড়েচড়ে বসে মাথা নিচু করে নিলো। অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো…

অর্ণবঃ বাবাই ওর পাপের ঘরা ভরে গেছে তাই। ও আমার অন্তু দিকে হাত বারিয়ে ছিলো সাথে ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে একবার না দু দুবার তাকে আমি কি করে তাকে ছেড়ে দি বলো।

প্রাপ্যঃ কিন্তু ভাইয়া কালকে যখন নিউজে এসব নিয়ে কথা হবে তখন তখন কি করবে।

অর্ণবঃ সেটার ব্যবস্থা করে নিয়েছি আমি তোকে ভাবতে হবে না। আমি আনভিকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি।

অর্ণব আনভিকে নিয়ে যেতে নিলে প্রাপ্য শুকনো গলায় বললো… ভাইয়া তুমি ভাবিকে পেলে আমাদের ভুলে চলে যাবে না তো?

অর্ণব প্রাপ্যর কথা শুনে তার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকায় প্রাপ্য চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। অর্ণব বুঝতে পারলো তার বাবাই আর প্রাপ্যর মুখ এতখন আশিকে মারার জন্য শুকনো ছিলো না, সে যদি অন্তুকে পেয়ে চলে যায় সেই জন্য মুখ গোমড়া করে ছিলো। অর্ণব আনভিকে ভালো করে কোলে নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো…

অর্ণবঃ আমার নতুন জীবনে যেমন অন্তুর অধিকার আছে তেমন বাবাই আর তোরও সেই অধিকার আছে। আমি তোমাদের ছেড়ে কখনো কোথাও যাবো না এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারিস। আমার এই নতুন জীবন তোমরা দিয়েছো তাই আমি তোমাদের কাছে ঋনী।

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব আমি রোদকে হারিয়ে তোমায় পেয়েছি। তোমাকে আমি হারাতে চায় না আর না আনভিকে। আমি জানি আমি স্বার্থপর হচ্ছি কিন্তু আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।

অর্ণবঃ বাবাই আমি জানি তুমি রোদকে অনেক ভালোবাসতে সাথে আমাকেও এখন ভালোবাসো। তাই আমি তোমাদের ভালোবাসা ছেড়ে কোথায় যাবো বলতো। ছোট থেকে ভালোবাসা পায়নি এখন যখন পাচ্ছি সেটা আমি কোনো ভাবেই ছাড়তে পারবো না কোন মূল্যও না।

অর্ণবের উত্তর শুনে প্রাপ্য আর মি.চৌধুরী ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটলো। তারা জানতেন অর্ণব তাদেরকে ছেড়ে যাবে না কিন্তু ভয় হচ্ছিল বলে তারা অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে আর অর্ণবের উত্তর শুনে তাদের ভয় কেটে যায়। অর্ণব তাদের হাসতে দেখে শান্তি পেলো তারা দুজন এখন অর্ণবের জীবনে একটা অংশ তাদের ছাড়া তার চলবে না। অর্ণব আনভিকে নিয়ে তার রুমে চলে যায়….
________________________________

পরেরদিন,,,

অন্তু আর অরনি আয়রাকে দেখতে হসপিটালে এসেছে সাথে আয়ান আর আয়রার খাবার নিয়ে এসেছে। আয়ানের ছেলের নাম রাখা হয়েছে অঙ্কুর মির্জা ডাক নাম অয়ন। আয়রা এখন মোটামুটি সুস্থ তাকে আর দুইদিন এখানে রাখতে হবে তারপর ছেড়ে দেবে। অরনি, অন্তু ভেতরে আসলে দেখে আয়রা অয়নকে বেস্টফিড করাছে আর আয়ান ফোনে কথা বলছে কিছুটা দূরে। আয়রা তাদেরকে দেখে বললো…

আয়রাঃ তোমারা ওখানে কেন দাড়িয়ে আছো। কাছে আসো দেখো তোমার ভাইপো আমাকে অনেক জ্বালাছে।

আয়রা কথা শুনে আয়ান একবার অরনি আর অন্তুকে দেখে আবার ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত হলো। অরনি আয়রার কাছে এসে বললো…

অরনিঃ ভাবি দিদুন তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছে তুমি অয়নকে আমাদের কাছে দিয়ে খেয়ে নাও।

আয়রা হেসে অয়নকে অরনির কাছে দিয়ে দিলে অন্তু খাবার বেরে আয়রাকে দেয়। কিন্তু আয়ানকে কি করে বলবে ভেব পাচ্ছে না সে। আয়রা অন্তু ইতস্তত দেখে বললো…

আয়রাঃ আয়ান ভাত খেয়ে নাও কাল থেকে কিছু খাও নিই আমি জানি আসো এখানে।

আয়ান ফোন রেখে হাত ধুয়ে এসে প্লেট নিয়ে খেতে লাগলো সত্যি সে কাল থেকে কিছু খাইনি এখন খাবারে নাম শুনে খিদে লাগছে। অন্তু চুপ করে আছে অরনি অয়নের সাথে কি সব কথা বলছে আর খিলখিল করে হাসছে। আয়ান খেতে খেতে একবার অন্তুকে আরাচোখে দেখে শান্ত স্বরে বললো…

আয়ানঃ কাল রাতে আশিক একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে।

আয়ানের কথা শুনে অরনি বাদে সবাই হতবিহ্ব হয় যায়, কি বলো আয়ান আশিক মারা গেছে যে কাল দুপুরেও তাদের সাথে কথা বলো আর রাতে মারা গেলো কি ভাবে। অন্তুর হাত পা কাপছে কথাটা শুনে আয়ান আরা চোখে আবার অন্তুর দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। আয়রা আয়ানের দিকে তাকায় তার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে আয়ানের কথায় আশিকের মৃত্যু নিছক এক্সিডেন্ট না-কি অন্য কিছু। আয়ান আয়রা দিকে তাকিয়ে বললো…

আয়ানঃ হোয়াট এমন কেরে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে। আমার কথা কি তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না ওকে দাড়াও (বলে ফোন বের করে একটা ছবি তাদের সামনে ধরে বলে) এই দেখো।

অন্তু, আয়রা ছবিটা দেখে আঁতকে গেলো কেন না আশিকের সারা শরীর বিচ্ছিরী ভাবে কেটে কুটে গেছে। অন্তু আর দেখতে পারে না আয়রা চোখ বন্ধ করে নেয় আয়ান ফোন রেখে খেতে লাগলো আবার। তাদের খাওয়া হলে অন্তু সব গুছিয়ে নিয়ে অয়নকে কোলে নেয় অন্তুর কোলে যেতেই অয়ন অন্তুর কোলে আরামে ঘুমিয়ে যায়। তা দেখে আয়রা অন্তুকে বলে…

আয়রাঃ অন্তু অয়নকে তুমিই দেখে রেখো এখন থেকে। দেখো কি সুন্দর ভাবে তোমার কোলে ঘুমিয়ে আছে আমি টেনশন মুক্ত হলাম।

অন্তু হেসে বললো… তুমি ও না ভাবি কি সব বলো এখন অয়নকে নাও কালকে বাড়ি গেলে তখন অয়নকে নিয়ে মেতে থাকবো।

অন্তু অয়নকে আয়রাকে দিলে সে ভালো করে শুয়ে দেয়। অরনি অন্তু চলে যায় তারা চলে যেতেই আয়রা আয়ানে দিকে প্রশ্ন করে…

আয়রাঃ আয়ান আশিকে কে মেরেছে?

আয়রার কথা শুনে আয়ান বাকা হাসলো শুধু কিন্তু কিছু বললো না কিন্তু আয়রা আয়ানের হাসিতে বুঝতে পারে ঘটনা কি……..
_______________________________

ভালো আন্টি কাল কেন আসলে না তুমি জানো আমি কতো ওয়েট করেছি তোমার তোমার জন্য, অনেক কেঁদেও ছিলাম হু… অভিমানী সুরে বললো আনভি। আনভির অভিমানী কন্ঠ বুঝতে পেরে অন্তু তার সামনে হাঁটু গেরে বসে দু কান ধরে বলো….

অন্তুঃ সরি মামুনি আর হবে না এমন এবারে মতো ক্ষমা করে দাও। আমি আর এমন ভুল করবো না। তুমি আর কান্না করো না প্লিজ।

আনভিঃ ওকে এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আর যেন না হয় এমন।

আনভির কথা শুনে অন্তু আনভিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে চুমু খেলো আনভি গালে, তাতে খিলখিল করে হাসতে লাগলো আনভি। দূর থেকে সবটা অর্ণব দেখছে তার ঠোঁটে লেগে আছে প্রাপ্তির হাসি সে তো এটা চেয়েছিলো। হসপিটাল থেকে সোজা আনভির সাথে দেখা করতে এসেছে অন্তু কিন্তু আনভি কথা বলছিলো না তার সাথে তখন বুঝতে পারে আনভি রাগ হয়েছে তার কাল না আসাতে তাই তাকে এভাবে বুঝালো। আনভি অন্তুকে ছেড়ে বললো….

আনভিঃ ভালো আন্টি তুমি আমার সাথেই থেকে যাও না তাইলে ভালো হবে। তুমি আমি পাপা এক সাথে থাকবো সব সময়। আমরা অনেক মজা করবো।

আনভির কথা শুনে অন্তু অবাক হলো সে বললো… মামুনি এটা হয় না।

আনভিঃ কেন হয় না?

অন্তু এখন কি করে বুঝাবে আনভিকে এটা কেন হয় না। সে এখানে থাকতে পারবে না সেটা ছোট্ট আনভি কি করে বুঝাবে সবাই খারাপ ভাববে তাদেরকে। অন্তু আনভিকে বললো…

অন্তুঃ মামুনি তোমার পাপা আর আমি তো শুধু বন্ধু তাইলে কি করে তোমাদের সাথে থাকবো? আর আমার তো বাড়ি আছে।

আনভি কিছুখন ভেবে বললো…. তাইলে তুমি পাপার সাথে বিয়ে করে নাও তখন আমার কাছে সারা জীবনের মতো থাকতে পারবে। আর ওই বাড়িতে না থেকে এখানে থাকবে তাইতো হবে…

আনভির কথা শুনে অন্তু হতভম্ব হয়ে রইলো এতটুকু মেয়ে কি বললো এটা। এদিকে অর্ণব আনভির কথা শুনে ঠোঁটের টিপে টিপে হাসতে লাগলো। অর্ণব জানে আনভির কথার সাথে কেউ পারে না এখন অন্তু কি করবে সেটা দেখার কথা। অন্তু ঢোগ গিলে বললো…

অন্তুঃ আনভি মামুনি এটা হয় না। তোমার তো পাপার বিয়ে হয়ে গেছে তোমার মাম্মামের সাথে তাই তোমার পাপার সাথে আমার বিয়ে হতে পারে না বুঝলে।

আনভি জেদ ধরে বললো… কেন হয় না আমার মাম্মাম আমাদের সাথে থাকে না। তুমি পাপাকে বিয়ে করো আমার মাম্মাম হয়ে যাও না।

অন্তু আনভিকে কথা শুনে ‘থ’ হয়ে যায় আনভি তাকে মাম্মাম বললো বলে তার বুকের ভেতর ভালোলাগা সৃষ্টি হয় কিন্তু আনভি যে আবদার করছে সে সেটা সে পুরোন করতে পারবে না। সে শুধু অর্ণবকে ভালোবাসে তার স্ত্রী হয়ে থাকতে চায় আর কোন পরিচয় তার লাগবে না। অন্তু আনভিকে বুকে নিয়ে বললে…

অন্তুঃ আনভি এটা হয় না জেদ করে না আমি তোমার সাথে দেখা করতে প্রতিদিন আসবো। অনেক অনেক ভালোবাসাব ওকে।

আনভি মুখ ফুলিয়ে থাকলো কিন্তু কিছু বললো না। আড়াল থেকে অর্ণব তাদের দেখছে আনভির জেদ সম্পকে সে জানে যখন তার মাথায় অন্তুকে মাম্মাম বানানোর কথা এসেছে তাইলে সে করবেই। এখন কিছু না বলেও পরে এটা নিয়ে ঠিক কি করবে সে জানে না। অন্তু আনভির মলিন মুখ দেখে তাকে হাসাতে আনভিকে কাতুকুতু দিতে লাগে যাতে সে হাসে, আনভি কাতুকুতু সহ্য করতে না পেরে সে হাসতে লাগলো। আনভি অন্তুর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়েতে লাগলো আর খিলখিল করে হাসতে লাগে সাথে অন্তুও। অর্ণব তাদের হাসির মুগ্ধতা বিভর হতে লাগলো। আনভি রুম থেকে বাইরে চলে আসলে অন্তুও তার সাথে আসতে নিলে অর্ণবের সাথে হঠাৎ ধাক্কা লাগায় দুজনে একসাথে পরে গিয়ে এমন এক আপতিকর ঘটনা ঘটলো এতে তারা দুজনের একজনও এর জন্য প্রস্তুতি ছিলো না……
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩৯

রাতের আকাশে নিস্তব্ধতা, স্নিগ্ধতা মুরানো পরিবেশের দূর আকাশের একফালি চাঁদে চারিদিকে ঝকঝক করছে আলো। গাড়ির উচ্চস্বরে হনের চারিপাশটা কেমন বেজাল দশাতে পরিণত হয়েছে কিন্তু এসবের মধ্যে অন্তু এক মনে বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে তার মধ্যে নেয় কোন বাহিরের দুনিয়ায় চিন্তা ভাবনা সে এখন নিজের মধ্যে যে ঝড় উঠছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত। রোদ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে অন্তুকে দেখছে তার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে তার জন্য আজ অন্তু নিজের কোনো ক্ষতি না করে বসে। সে তো কোনো অন্যায় করেনি সে তো তার স্ত্রীকে কাছে টেনে নিয়েছিলো কিন্তু অন্তু তো জানে না তার আসল পরিচয় সে তো ভাবে আমি রোদ। অর্ণবের তখন কার কথা মনে পরে যায় অন্তুর সাথে ধাক্কা লেগে যখন তার পরে যায় তখন…..

কিছুক্ষণ আগে,,,

হঠাৎ অন্তুর সাথে অর্ণবের ধাক্কা লাগায় অর্ণব নিজেকে সামলাতে না পেরে অন্তুকে নিয়ে নিচে পরে যায় আর সাথে সাথে অর্ণবের অধর অন্তু গালে ছুয়ে যায়। অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায় হঠাৎ এমন হওয়ায় অন্তু চোখ এখনো অর্ণবের চোখের সীমাবদ্ধ আছে। অন্তুর কাছে অর্ণবের চোখে আজ নতুন কিছু দেখেছে তার কাছে অনেক কিছু বলতে চায় এই চোখ। অন্তুর হার্ট বিট ফাস্ট হতে লাগলো, কেমন অস্থির হতে লাগলো সে, তার এমন অস্থিরতা তো সব সময় অর্ণবের কাছে আসাতে হতো কিন্তু আজ রোদের কাছে আসাতে কেন হচ্ছে সে বুঝছে না। অন্তুর মনে হচ্ছে রোদকে তার কাছ থেকে সরানো উচিৎ কিন্তু কিছু একটা বাধা দিচ্ছে তাকে এদিকে অর্ণবের চোখ অন্তুর গোলাপি রঙা ঠোঁটেতে আটকে আছে কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে। অর্ণবের কাছে অন্তুর কাঁপা কাঁপা ঠোঁট তাকে দূর্বল করে দিচ্ছে সে ভুল করতে চায় না কিন্তু সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। এতো দিনের পরে সে অন্তুকে এতো কাছে পেয়েছে তার চোখে অন্তুকে পাবার তীব্র নেশাতে ডুবেছে অর্ণব আস্তে আস্তে অন্তুর ঠোঁটের দিকে এগোতে নিলে অন্তু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে কিছুক্ষণ পর অন্তু তার ঠোঁটের নিচের তিলের ওপর অর্ণবের অধরের স্পর্শ পেতেই তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। অর্ণবের যখন হুশ আসে সে কি করছে তখন তাড়াহুড়ো করে অন্তুর ওপর থেকে সরে আসে অন্তু তখনো চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। অর্ণব অন্তুর চোখের কোণে পানি দেখে তার বুকের বা পাশে ব্যথা অনুভব হয়। সে কি করে পারলো এটা করতে অন্তু তো আর যানে না সে অর্ণব অন্তু জানে আমি রোদ এখন যদি সে নিজের কোনো ক্ষতি করে তখন কি করবে অর্ণব আর না দাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। অন্তু অর্ণবের চলে যেতে দেখে ফুপিয়ে ওঠে তার কাছে এই স্পর্শ চেনা মনে হচ্ছিল কিন্তু পরিস্থিতি চাপে সে তার মনকে প্রাধান্য না দিয়ে রোদের করা কাজে কষ্ট পায়। অন্তু যতো সময় চৌধুরী বাড়িতে ছিলো অর্ণবের সাথে কথা হয় না বা দেখে রাতে একা ফিরে আসতে চাইলে মি.চৌধুরী অর্ণবের সাথে যেতে বলো অন্তু না করতে পারে না তাই তার সাথে আসতে হয়ে কিন্তু তারা দুজনে কারোর সাথে কথা বলে নি এখনো।

অর্ণব নিরবতা ভেঙে বললো… অন্তু আ’ম সরি তখন হঠাৎ কি হলো যানি না কিন্তু আমি এটা করতে চাই নি তুমি আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ।

অন্তু শান্তস্বরে বললো… রোদ আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না তাই আপনি চুপ করুন।

অন্তুর শান্তস্বরে বলা কথা অর্ণবের কাছে ঝড়ের পূর্বাভাস মনে হচ্ছে না জানি বাড়ি গিয়ে এই মেয়ে কি কি করবে। অন্তর কথা প্রত্তুত্তরে কিছু বলো না অর্ণব কিন্তু সে অরনিকে মেসেজ করে দিলো যেন অন্তুর সাথে থাকে আজ রাতটা এক মুহূর্তের জন্য যেন ছাড়ে না অরনি কারন জিজ্ঞেস করলে সে বলে পরে বলবে তাই অরনি আর কিছু বললো না। মির্জা বাড়ি আসলে অন্তু অর্ণবকে কিছু না বলে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায় এদিকে অর্ণবের মনে ভয় ধরে গেছে না জানি কি হবে…..
_______________________________

রুমে এসে অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায়, তার রুম দেখে তার ভেতরে চাপা রাগ যেনো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। সে রুমের চারপাশে ভালো করে দেখে তার চোখ আটকায় বিছানার শুয়ে থাকা অরনির দিকে। সে দেখে অরনি তার রং তুলি কাগজ সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে বেডে শুয়ে পায়ের ওপর বা তুলে ফোনে কি যেনো করছে তা দেখে অন্তুর মেজাজ পুরোই বিগড়ে যায় একেতো রোদের করা কাজে সে ক্ষিপ্ত তার ওপর অরনির বাচ্চামতে। অন্তুর নিজের রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে অরনিকে ধমুক দিয়ে বলে…

অন্তুঃ অরু কি বাচ্চী এটা তুই কি করেছিস আমার রুমে রং, তুলি, খাতা, সব এলোমেলো করে রেখে তুই আরামে ফোন গুতাছিস। আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো তুই জানিস না আমি আমার জিনিসে কারোর হাত দেওয়া পছন্দ করিনা তাইলে তোর সাহস হয় কি করে এটা করতে।

আকাম্মসিক অন্তুর রুদ্ররুপ দেখে অরনি ভয় পেয়ে যায় তার সাথে অন্তুর ধমুক শুনে তার হাট ফেল হবার অতিক্রম। অরনি অর্ণবের কথা মতো অন্তুকে ব্যস্ত রাখতে এসব করে কিন্তু সে জানতো না তার দিদিয়ার মুড এতো আগুন ছিলো যে তার কাজে সেটা ব্লাস্ট হয়ে যাবে। অরনি কিউটি একটা স্মাইল দিয়ে বললো…

অরনিঃ আসলে দিদিয়া আমি অয়নের জন্য ওয়েলকাম কাড বানাতে চাচ্ছিলাম কিন্তু হচ্ছিল না তাই তোর কাছে এসেছিলাম কিন্তু এসে দেখি তুই নাই তা আর কি…

অন্তুঃ তাই আর কি এসব করে ফেলেছিস। আমার আসার জন্য ওয়েট করতি আমি এসে করে দিতাম কিন্তু তোর তো ধৈর্য নেই তাই তো।

অরনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো… সরি বলছি তো এবারের মতো মাফ করে দে আর হবে না সত্যি।

অন্তু অনেক কষ্ট তার হাসি থেমে রেখেছিলো এতোখন অরনির কান্ডকারখানা দেখে কিন্তু এখন আর আটকে রাখতে না পেরে জোরে হেসে ফেলে তার হাসি দেখে অরনি ও হাফ ছেড়ে বাঁচে। অরনি গিয়ে অন্তুকে জড়িয়ে ধরলো অন্তু ও তাকে জড়িয়ে ধরলো। অরনির কাজে সে সফল কেন না অন্তুর মন অন্য দিকে সে ঘুড়াতে পেরেছে। অন্তুর কাছে রোদর করা কথা ক্ষনিকের সুখে ভুলে গেছে সে। অরনি তার ফোনের কল কেটে দেয় এতোখন অরনি অন্তুর করা কাজ সব কথা অর্ণব ফোনে শুনলো অন্তুকে হাসতে দেখে সে স্বস্তি পায় অন্তু নিজের ক্ষতি করবে না ফোন রেখে বললো…পাগলি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো কিন্তু অর্ণব নিজেকে কন্ট্রোল কর না হলে আবার আজকের মতো ভুল করবি। বলে মাথা হালকা মেরে সে চলে যায়….
________________________________

দেখতে দেখেতে জীবন থেকে ৩০টি দিন চলে গেছে সাথে চলে গেছে অনেক সুন্দর মূহুর্ত। অয়নকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে ২৮ দিন হয়েছে আয়রাকে বেড রেস্ট দিয়েছে সে সব সময় রেস্টে থাকে আয়ান আয়রার খেয়াল রাখে যখন থাকে না তখন অন্তু, অরনি, দিদুন মিলে খেয়াল রাখে। অয়ন এখন হাত বা ছড়িয়ে খেলে সাথে অ উ করে শব্দ করে তার কাজে দেখে সবাই হাসে। অন্তু অয়নকে নিজের সাথে রাখে বেশি এতে আয়রা বা আয়ান আপত্তি করে না অন্তুকে তারা খুশি দেখতে চায় তাই অয়নকে তার সাথে থাকতে দেয়। সেদিন অর্ণবের সাথে হওয়া ঘটনা নিয়ে সে আর কথা বলে না অর্ণবের সাথে আগের তুলনায় কথা কম বলে কিন্তু আনভির সাথে আগের মতোই সময় কাটায়। অর্ণব অন্তর কাজে কষ্ট পায় কিন্তু সে বোঝে অন্তু কেন তার কাছ থেকে দূরে থাকে সে নতুন কারোর মায়া বা অর্ণবকে ভুলতে পারবে না তাই সে কিছু বলে না। প্রাপ্য অরনিকে নিয়ে এখন ভয়ে কাজ করে একবার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে মানে দ্বিতীয় বার আসতে পারে তাই সে অর্ণবের সাথে কথা বলেছে অর্ণব বলেছে আদির সাথে কথা বলবে এই বিষয়ে। অর্ণবের কথায় প্রাপ্য শান্ত হয় কেন না তার ভাইয়া বলেছে তার মানে সে করবে। আদি নিজের কাজে ব্যস্ত বলে সে আদিবাকে সময় দিতে পারে না আদি চায় আদিবা তার অনুপস্থিতে কষ্ট অনুভব করুক এতে যদি আদিবা তাকে মেনে নেয় আদির কাজের সে ঠিক সফলতা পাচ্ছে আদিবা আদির অনুপস্থিতিতে কষ্ট পাচ্ছে পুরছে কিন্তু মুখ ফুটে আদিকে বলতে পারছে না তার মনের কথা।
______________________________

মানিকঃ স্যার আমরা বুঝতে পারছি না কে বা কারা আমাদের সাথে শত্রুতা করছে। একের পর এক ব্যবসা বন্ধ করছে।

আজাদ মির্জা রেগে গর্জে ওঠে বললো… এটা কি মশকরা হচ্ছে যে কেউ আমাদের ব্যবসার সমস্ত কথা জেনে এসব করছে। নিশ্চিত কেউ আছে আমাদের মধ্যে যে তাদের কাছে সব খবর পোঁছে দিচ্ছে।

মানিকঃ স্যার আমাদের মধ্যে কেউ তাদের সাথে যুক্ত নেই সেই খোজ আমি নিয়েছি আমার মনে হয় কেউ আপনার সব গোপন কার্যকারিতা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি ছিলো।

মানিকর কথা শুনে আজাদ মির্জা চিন্তায় পেরে যায় কে তার কাজ সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি ছিলো অনেক ভেবে শুধু আয়ানের নামটা আসছে তার মাথায় তার মানে কি আয়ান এসব করছে যদি করে তাকে কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আজাদ মির্জা গম্ভীর কন্ঠে বললো…

আজাদ মির্জাঃ তুমি আয়ানে পিছু যে লোক লাগিয়ে ছিলে সে কি বলেছে এসবের পিছনে কি আয়ান আসছে।

মানিকঃ না স্যার আয়ান নেই অন্য কেউ আছে আর আয়ানের এই কয়েক দিন তেমন সন্দেহ জনক কাজ দেখিনি।

আজাদ মির্জা কিছুখন চুপ থেকে বললো…. আয়ানকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দাও। তারপর দেখছি নতুন কে উদ্ভবন হয়েছে য়ে আমার ক্ষতি করতে চায়।

মানিক ভেয়ে বললো… আয়ান তো আপনার ভাইয়ের ছেলে তাকে মেরে ফেলবেন।

আজাদ মির্জাঃ আমার রাস্তায় যে কেউ আসলে তাকে মারতে আমি দ্বিধা বোধ করি না সেটা তুমি নিশ্চিত যানো। এই রাজনীতির কারনে আমি আমার বউ.. বাদ দাও পুরোন কথা কাজ যেন হয়ে যায়।

মানিকঃ জ্বি স্যার

মানিক ফোন রাখতেই আজাদ মির্জা মুখে শয়তানি হাসি বৃদ্ধি পায়। সে আয়ানকে অনেক আগে মারতে পারতো কিন্তু কিছু কাজের কারনে সে মারে নি কিন্তু এখন সে আয়ানকে জীবিত রেখে নিজের সর্বনাশ ডাকতে চায় না ভেবেই নিয়েছে সে…
__________________________

হেপ্পি বার্থডে টু ইউ, হেপ্পি বার্থডে টু ইউ অরু, হেপ্পি বার্থডে টু ইউ… বলে কেক হাতে সবাই অরনির রুমে এসে তাকে উইস করে অরনি সবাইকে দেখে খুশিতে বললো…

অরনিঃ তোমাদের মনে আছে আমার জম্মদিনের কথা। আমি তো মনে করেছিলাম তোমরা সবাই ভুলে গেছো। কিন্তু আমি তোমাদের সারপ্রাইজে খুশি থেঙ্কংইউ সবাইকে।

আদিঃ অরুবুড়ি তোমার বার্থডে আর আমরা ভুলে যাবো তা হয় না।

দিদুনঃ আদি দাদুভাই ঠিক বলছে অরুদিদিভাই আসো কেক কাটো।

অরনি কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো কিন্তু নিহিতা মির্জা কাছে গেলে তার সাথে করা সব কথা মনে পরতে সে সরে আসে তা দেখে নিহিতা মির্জা চোখে জল চলে আসে। অন্তু অরনিকে ইশারায় কিছু বলে অরনি মুখ ফুলিয়ে তার মাকে কাছে গিয়ে কেক খাওয়ায় এতে নিহিতা মির্জা অরনিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে…

নিহিতা মির্জাঃ সরি অরু এবারের মতো মাফ করো আর কখন এমন হবে না।

অরনিঃ আম্মু আমি তোমার ওপর রাগ করি নি।

সবাই একে একে অরনিকে গিফট দিয়ে চলে যায়। তারা সবাই চলে গেলে অরনি প্রাপ্যর সাথে কথা বলতে লাগলে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪০

রেস্টুরেন্টের চারিপাশটা শোরগুলে ভর্তি হলেও রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে এখন পুরোপুরি স্তব্ধতায় ঘেরা। অরনি কাঁদো কাঁদো মুখে বসে আছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে একটু হলে সে কেঁদে দেবে তার পাশেই মাথা নিচু করে অরনির হাত ধরে বসে আছে প্রাপ্য। তাদের দুজনকে ঘিরে রাগি চোখে বসে আছে আদি, অন্তু তাদের কে দেখে মনে হচ্ছে তারা ভীষণ রেগে আছে। অর্ণব এক হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করছে আর কি যানি বিরবির করেছে, কিন্তু তার বিরবিড়ানি কেউ বুঝতে পারছে না। আনভি আর আদিবা চুপচাপ বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করেছে।

(আপনার হয়তো বুঝতে পারছেন না আসলে কি হয়েছে তাইলে আমি বলছি। আজ অরনির বার্থডে থাকায় অর্ণব প্রাপ্যকে বলে অরনিকে নিয়ে ঢাকা মেট্রো রেস্টুরেন্টে (বনানী) নিয়ে আসতে, তাদের সাথে কথা আছে তাই প্রাপ্য অরনিকে নিয়ে এখানে আসলে দেখে আদি, আদিবা, আনভি, অন্তু, অর্ণব সবাই আছে তাদের সবাইকে দেখে বুঝতে বাকি নেই অর্ণব আজ সবাইকে তাদের কথা বলবে। তাই তারা চুপচাপ সেখানে বসে থাকলো আর অর্ণব একে একে সব বলো সব শুনে অন্তু, আদি চেহারায় রাগি ভাব আছে কিন্তু মনে কি আছে তারা কেউ জানে না এখন)

নিরবতা ভেঙ্গে আদি অরনিকে বলে… অরুবুড়ি রোদ যা বললো তা কি সত্যি?

আদির রাগিত কন্ঠে অরনি ভয়ে কান্না করে বললো… দাদাভাই রোদ ভাইয়া যা বললো সব সত্যি। আমি প্রাপ্যকে ভালোবাসি।

বলে অরনি কান্না করতে লাগো৷ অরনিকে কাঁদতে দেখে প্রাপ্য আদিকে বলে… ভাইয়া এতে অরুর দোষ নেই আমি অরুকে বাধ্য করেছিলাম আমার সাথে রিলেশনে যেতে তাই যা বলার দরকার আমাকে বলুন।

প্রাপ্য কথা শুনে অরনি তার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকায় প্রাপ্য তাকে সান্ত্বনা দেয় কিছু হবে না কিন্তু অরনি তাও কান্না করতে লাগলো। অন্তু অরনিকে কান্না করতে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো…

অন্তুঃ অরু তো ফ্যাচফ্যাচ কান্না থামা আর এতো কান্না কেন করছিস ভালোই তো বেসেছি কোন ভুল কিছু করিসনি তাইলে কান্না করছিস কেনো।

অরনিঃ দিদিয়া আমি প্রাপ্যকে খুব ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। দাদাভাই প্লিজ..

আর বলতে পারলো না সে কান্না করতে লাগলো তার কান্না করতে দেখে আনভি ঠোঁট উল্টে বললো… চাচীমনি কান্না করো না আমি চাচ্চুকে বলবো তোমার চকোলেট এনে দেবে।

আনভির কথা শুনে উপস্থিত সবাই তাদের হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলো না তাই সবাই ফিক করে হেসে ফেলো। তাদের হাসি দেখে অরনি প্রাপ্য তাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার বুঝতে পারছে না যেখানে সবাই তাদের বেপারে জেনে রেগে ছিলো সেখানে আনভির কথা শুনে হাসছে কেনো। আদি হাসতে হাসতে বললো…

আদিঃ আনভি মামুনি তোমার চাচীমনি চকোলেটের জন্য কান্না করছে না তোমার চাচীমনি তোমার চাচ্চুর সাথে থাকবে বলে কান্না করছে।

আদির কথায় আনভি খিলখিল করে হেসে ফেলো অন্তু অরনিকে বললো… অরু কান্না করিস না আমার কেউ তোকে প্রাপ্যকে ছাড়তে বলবো না বুঝলি।

আদিঃ অরুবুড়ি আমার শুধু মজা করছিলাম। আমাকে রোদ সব বলেছে তোদের রিলেশনে আমাদের অমত নেই। আমি চাচ্চুর সাথে কথা বলে নেবো দেখিস চাচ্চু আমার কথা রাখবে।

অরনি একটু হেসে বললো… সত্যি দাদাভাই

আদি মাথা নাড়ি হাসে হ্যাঁ বললো তা দেখে অরনি স্বস্তি পায়। অন্তু প্রাপ্য কে উদ্দেশ্য করে বললো..

অন্তুঃ প্রাপ্য ভাইয়া আপনাকে কিন্তু অরুকে খুশি রাখতে হবে বুঝলেন ওকে কষ্ট দিলে আপনাকে অনেক কষ্ট পেতে হবে।

প্রাপ্যঃ ভা.. অন্তুপু আপনি চিন্তা করবেন না অরুকে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না সারাজীবন তাকে মাথায় তুলে রাখবো।

আদিঃ তাই যেন হয় না হলে আমি তোমাকে শান্তিতে থাকতে দেবো না

প্রাপ্যঃ জ্বি ভাইয়া

আনভিঃ পাপা আমার খিদা পেয়েছে।

অর্ণবঃ হে আম্মু এখনি খাবার চলে আসবে।

অরনি কান্না বন্ধ করে প্রাপ্য তার হাতে হাত রেখে মুঠো বন্দী করে রাখে। অন্তু আনভি কোলে তার বা পাশে আদি বসে আছে আর ডান পাশে অর্ণব আদির পাশে আদিবা বসে আছে। আদি নিচু কন্ঠে আদিবাকে বললো…

আদিঃ আদুমনি দেখো অরুবুড়ির ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর আমাকে দেখো বউ থাকতেও আইবুরো হয়ে রয়ে গেলাম না পেলেম বউ না পেলাম সংসার।

আদি আফসোস সুরে বলো আদির কথা শুনে আদিবা ফিক করে হেঁসে ফলে তা দেখে আদি তার হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয় আদিবা একবার আদির দিকে একবার তার হাত দেখে চুপ করে থাকলো আদিবার চুপ দেখে আদি মুচকি হাসে। অর্ণব অন্তুকে আড়চোখে দেখছে অন্তু তা বুঝতে পেরে অর্ণবের দিকে না তাকিয়ে বলো…

অন্তুঃ আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে হবে না, না হলে চোখে সমস্যা হতে পারে। আর আমার মধ্যে কিছু নেই যে আপনাকে আড়চোখে দেখতে হবে।

অন্তুর কথা শুনে অর্ণব বিষম খেলো অর্ণব ভেবছে কি দোশু মেয়েরে বাবা কেমন করে তাকে ধরে ফেলো ভাবা যায় অর্ণব মৃদু হেসে মনে মনে বললো… তোমার মধ্যে কি আছে তা আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না জান। তোমাকে দেখলেই বার বার তোমাকে আপন করতে ইচ্ছে করে। কবে তোমায় সব বলবো কবে তোমায় দ্বিতীয় বার আপন করে নেবো।

ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলে সবাই খেতে ব্যস্ত হলো। অন্তু আনভিকে খাইয়ে দিচ্ছে নিজেও খাচ্ছে অর্ণব সব দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অন্তু আনভিকে কিভাবে মেনে নেবে তাই নিয়ে চিন্তা হচ্ছে তার। সবাই খেয়ে বিল মিটিয়ে বাইরে আসে অরনি প্রাপ্য বেরিয়ে যায় অরনির বার্থডে দুজন একসাথে সেলিবেট করতে। আদি আদিবাকে নিয়ে চলে যায় বাকি অন্তু না চাওয়া সত্ত্বেও অর্ণবের সাথে যেতে হয় অর্ণব মুচকি হেসে তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে….
______________________________

অর্ণব গাড়ি চালাচ্ছে আর অন্তু আর আনভিকে দেখছে। অন্তু সব বুঝতে পেরেও চুপ করে আছে তার অর্ণবের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না তাই চুপ করে আছে। অর্ণব বললো..

অর্ণবঃ আম্মু আইসক্রিম খাবে?

আইসক্রিমের কথা শুনে আনভি খুশি হয়ে মাথা নাড়ায় মানে সে খাবে আইসক্রিম, অর্ণব হাসে আনভিকে দেখে। অর্ণব একবার অন্তুর দিকে তাকিয়ে সে গাড়ি থামিয়ে সামনের আইসক্রিম পার্লার থেকে আইসক্রিম নিয়ে এসে আনভিকে একটা দিয়ে অন্তুকে দিকে আরেকটা বাড়িয়ে দেয় অন্তু অর্ণবের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো তার সবার ওপর রাগ থাকলেও আইসক্রিমের ওপর সেই রাগ দেখায় না। অন্তুকে আইসক্রিম খেতে দেখে অর্ণব হাসলো সে জানে অন্তুর রাগ কিভাবে ভাঙ্গা যায়। অর্ণব আনভির দিকে তাকিয়ে দেখে তার সারা মুখে আইসক্রিম লেগে গেছে অর্ণব টিস্যু নিয়ে আনভির মুখ মুছিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছু সময় পর অর্ণব অন্তুকে বলে..

অর্ণবঃ অন্তু আপনি সেই ঘটনার জন্য আমাকে মাফ করতে পারেনি তাই না। কিন্তু সত্যি ওটা আমি করতে চাইনি হঠাৎ একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় তখন তাই এই ভুলটা হয়েছে। তার জন্য আমি এক্সট্রিমলি সরি…

অন্তু শান্তস্বরে বললো… এতে আপনার দোষ না সেটা পরিস্থিতির দোষ ছিলো আপনি একজন পুরুষমানুষ তাই নিজের মোহ কাটাতে পারেনি।

অর্ণব অন্তুর কথা শুনে বললো… অন্তু ওটা আমার মোহ…

অন্তু তাকে কিছু না বলতে দিয়ে বললো… প্লিজ আর না আমি আর নিতে পারবো না তাই কথাটা বন্ধ করুন।

অর্ণব আর কথা বাড়ায় না অন্তু যে সেই ঘটনা নিয়ে তার মনের মধ্যে রোদ নামক ব্যক্তিটিকে নিজের জীবন থেকে দূরে রাখতে চায় সে সেটা ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। তাই সে আর কথা বাড়ায় না অন্তুকে মির্জা বাড়ি নামিয়ে দিয়ে সে চলে যায়…
__________________________________

হ্যালো মানিক ওদিকের কি অবস্থা কাজ ঠিক মতো হবে তো… আজাদ মির্জা গম্ভীর কন্ঠে। ফোনের ওপাশ থেকে মানিক ভয়ার্ত কন্ঠে বললো…

মানিকঃ স্যার একটা বার ভেবে দেখুন আয়ানে কে মেরে ফেলে যদি প্রবলেম হয় তখন। সামনে যে ইলেকশন তা কি আপনি ভুলে যাচ্ছে যদি এই কথা লিক হয় তাইলে আপনার রাজনীতির কেরিয়ার শেষে হয়ে যাবে।

আজাদ মির্জা মানিকের কথায় প্রচন্ড রেগে বললো… তোমাকে যা বলছি সেটা করো তোমাকে ভাবতে হবে না আমার কেরিয়ার নিয়ে।

মানিকঃ জ্বি স্যার। আমার লোক আয়ানের জন্য বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে দাড়িয়ে আছে আয়ান বের হলেই তাকে শেষ করে দেবে।

আজাদ মির্জাঃ ঠিক আছে তোমাকে ওখানকার খবর আমাকে দিতে হবে না। রাখছি..

বলে ফোন রেখে দিয়ে মনে মনে ছক করছে আয়ানকে মারা পরে সে কি করে কি করবে। আর তার অজানা শত্রু আবার কে তাকেও খুঁজতে হবে ভাবতে ভাবতে রকিং চেয়ারে বসে থাকলো…
_________________________________

আয়রাঃ আয়ান কতো সময় লাগবে আসতে? আর অরনির গিফট নিয়েছো তুমি।একটু পর কেক কাটা হবে।

আয়ানঃ শপিংমল থেকে বের হয়েছি এখন গাড়ির দিকে যাচ্ছি ১৫ মিনিট লাগবে বাড়ি ফিরতে।

আয়রাঃ ঠিক আছে তুমি সাবধা…..

আর কিছু বলার আগে একটা চিতকার ভেসে আসলো ফোনে। আয়রা বসা থেকে উঠে কাপা কাপা গলায় বললো… আআয়ান কিসের শব্দ ছিলো এটা তুমি ঠিক আছো আয়ান কি হলো কথা বলছো না কেন আয়ান…

বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো আয়রার কান্নার শব্দে সবাই তার দিকে এসে আদি চিন্তাত হয় বললো…

আদিঃ আয়রা কি হয়েছে তুমি কান্না করছো কেন? আর আয়ানে নাম ধরে ডাকছো কেন কি হয়েছে ওর?

আয়রা কান্না করতে করতে আদির দিকে তাকিয়ে বললো… দাদাভাই আয়ানের সাথে কথা বলছিলাম হঠাৎ একটা জোরে শব্দ হয় আর আয়ানের চিতকার শুনতে পায় তার পর আর কিছু বলো না ফোন করছি ফোন বন্ধ বলছে। আয়ানের কিছু হয়েছে আমার মনে হচ্ছে?

আয়রার কথা শুনে সবাই হতবিহ্বল হয়ে যায়। আয়ানের কিছু হয়েছে মানে আদি ফোন করতে লাগলো আয়ানকে কিন্তু ফোন বন্ধ। দিদুন কোলে অয়নকে নিয়ে বসে আছে, আয়রা কান্না করেই যাচ্ছে অন্তু অরনি তাকে সামলাছে। নিহিতা মির্জা ছেলের কথা শুনে ‘থ’ মেরে বসে আছে আনন্দ মিহিত মুহূর্তে নেমেয়ে এলো দুঃখের সময়। আজাদ মির্জা ওপর থেকে সব দেখছে তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি। আদি আর আকাশ যায় আয়ান যেখানে ছিলো। রাত-১টা সবাই থমেরে বসে আছে আয়রার ফুপিয়ে যাচ্ছে অরনির কোলে অয়ন ঘুমিয়ে আছে নিহিতা মির্জা কান্না করছে দিদুন তাকে বুঝাছে আয়ানের কিছু হয় নিই কিন্তু মার মন কি ভাবে বুঝবে সন্তানকে না দেখলে সে শান্তু হবে না। আদি, আকাশ ছোট মুখ করে বাড়ি ফিরে এলো তারা সব জায়গায় দেখেছে কিন্তু আয়ানের খোজ পায়নি আয়রার কথা ঠিক ছিলো সেখানে বাজে ভাবে একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে সে স্পটে মারা যায় তাকে হসপিটালে নিয়ে যায় কিন্তু কোন হসপিটালে নিয়েছে তারা কেউ বলতে পারে না তাই আদি আকাশ হতাশ হয়ে বাড়ি চলে আসে। আয়রা তাদের কে দেখে তারাদের সামনে এসে বললো…

আয়রাঃ দাদাভাই বাবা আয়ান কোথায় তোমরা না বলে আয়ানকে নিয়ে আসবে তাইলে সে কোথায় তোমরা একা কেন এলে।

আকাশ মির্জা আয়রার দিকে তাকিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো… মা রে সেখানে আয়ানকে পেলাম না কিন্তু ওখানে একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে সে সেখানেই মারা গেয়েছে কিন্তু কোন হসপিটালে নিয়েছে কেউ জানে না আমরা খুজেছি কিন্তু কোনো খোজ পেলাম না।

আকাশের কথা শুনে আয়রা থমকে যায় সে মানতে পারছে না আয়ান তাকে ছেড়ে চলে যায়বে। আকাশে কথা শুনে নিহিতা মির্জা কান্না করতে করতে বিলাব করতে লাগলো অরনি অন্তুর কান্না করতে লাগলো দিদুন চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ এমন একটা ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দিলো আয়রা পরে যেতে নিলে আদি তাকে ধরে ফেলে। সকাল পর্যন্ত এই বাড়িতে খুশির আমেজ ছিলো কিন্তু এখন সেখানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে…..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here