#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়
#থ্রিলার_রোম্যান্টিক
#পর্ব_৩
#Sadia_afrin_nishi
বাস্তবতার নিষ্ঠুর গন্ডি পেরিয়ে একজন আমাদের দিকে বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত।বাবা আর আমি যখন পথে পথে ঘুরছিলাম তখন আমাদের সাথে দেখা হয় একটি ছেলের।ছেলেটির চেহারা, শরীর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কালো রঙের পোশাকে পুরো শরীর মোড়ানো, মুখে মাস্ক লাগানো।আমি কিছুক্ষণ অদ্ভুত প্রকৃতির এই মানবকে বোঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বোধগম্য হলো না। এমন তপ্ত গরমে এই চাঁদোয়া পোশাকের প্রয়োজনীয়তা বোঝার সাধ্য আমার নেই।খনেকের জন্য লোকটিকে আমার পাগল উপাধিতে আখ্যায়িত করতে খুব ইচ্ছে করল।আমার ভাবনার ছেদ ঘটল বাবার কথায়।বাবা লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন,,
_বাজান আমগো একটু সাহায্য করবেন
লোকটি ইশারায় বোঝাল কী সাহায্য করতে হবে। বাবা লোকটির ইশারা বুঝতে পেরে বলল,,
_বাপজান আমরা গ্যারাম(গ্রাম) থেইক্কা আইছি।শহরে নিজেগো মানুষ বলতে কেউ নাই।যার কাছে সাহায্য চাই সেই আমগো দুরদুর কইরা তাড়াইয়া দেয়।আপনি কী আমারে একটা কামের(কাজের)
ব্যবস্থা কইরা দিতে পারেন(হাত জোর করে)
লোকটি বাবার কথার উত্তরে ইশারায় তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য বললেন।আমি এবার পুরোপুরি সিওর যে এই লোক নির্ঘাত বোবা। তাই তো কোনো বাক্য ব্যয় না করে ইশারা-ইঙ্গিত করছে।ইস লোকটির জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে।
লোকটি আমাদের একটা ইটের দেওয়াল দেওয়া বাড়িতে নিয়ে এলেন।এমন বাড়ি গ্রামে দালান নামে পরিচিত।লোকটি বাবার উদ্দেশ্যে বললেন,,
_আজ থেকে এটাই আপনার ঘর।আপনারা এখানেই থাকবেন। রাতের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব চলে আসবে। আর কাল আপনার কাজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
এতটুকু বলে লোকটি শোঁ করে চলে গেল।”এটা কী মানুষ নাকি রোবট”, আমার ভাবনা জুড়ে এখন শুধু এই একটি প্রলাপের বিচরণ চলছে।মনের গহীন কোণে তাকে দেওয়া মতো একটা উপাধি এসে ধরা দিল। সেটি হলো “রোবটম্যান”।আনমনেই হাসলাম নিজের চিন্তাধারা পর্যবেক্ষণ করে।
_ _ _ _ _
পরদিন সকাল সকাল সেই রোবটম্যান বাবার জন্য কাজের জোগাড় করে দেয়।বাবার শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তার জন্য একটা মিডিয়াম সাইজের মুদি দোকান খুলে দেয়।মুদি দোকানটা সুন্দর করে পণ্যাদি দিয়ে সজ্জিত করে দেয়। আমি আর বাবা দুজনেই ওনার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।
এভাবেই আমাদের দিন চলতে লাগল।নতুন শহর, নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগলেও পরবর্তীতে আমার আর কোনো অসুবিধে হয়নি।বাবা আমাকে একটা গার্লস স্কুলে ভর্তি করে দিল।একবছর সেখানে পড়ার পর আমি এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি খুব ভালো নম্বর পেয়ে পাস করলাম।তারপর একটা সরকারি কলেজে আমার পড়ার সুযোগ করে দিলো ওই রোবটম্যান।এই রোবটম্যান আমাদের পাশে সবসময় বটগাছের ছায়ার স্বরুপ।
আজ আমার মনটা ভীষণ খুশি।নতুন নতুন কলেজে যাচ্ছি বেশ ভালোই লাগছে। অনেকগুলো ফ্রেন্ডসও হয়ে গেছে আমার। ওরা সবাই খুব ভালো।সবকিছু মিলিয়ে মেজাজটা আজকে খুব ফুড়ফুড়ে।আনমনেই গান গেয়ে গেয়ে ফুলে হাত বুলাচ্ছিলাম।এই চার-পাঁচটা ফুল গাছ আমি লাগিয়েছি।ফুল গাছ আমার ভীষণ পছন্দের।ফিউচারে একটা নার্সারি করার প্রবল ইচ্ছে আছে।
“””””আমার সোনা বন্ধু রে তুমি কোথায় রইলা রে(২)
দিনে রাইতে তোমায় আমি
খুঁইজা মরি রে হহহ
আমার সোনা বন্ধু রে
তুমি কোথায় রইলা রে”””
হঠাৎই এক অদ্ভুতুরে কন্ঠস্বরে আমার গান থেমে গেল। পেছন ফিরে দেখি রোবটম্যান পকেটে দুহাত গুজে আমার দিকেই চেয়ে আছে। আজও তার মুখটা দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তার এহেন প্রকাশ্যে পলায়নের হেতুটি জানতে কিন্তু সাহসে কুলায় না।
আমার ভাবনার মাঝে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে তিনি আবারও বলে উঠলেন,,
_উত্তর দিচ্ছো না কেন?এই বয়সেই সোনা বন্ধুর খোঁজ চলছে(রাগান্বিত স্বরে)
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,
_এটা তো শুধু একটা গান ছিল। এতো সিরিয়াস ভাবার কিছু নেই
সে আমার উত্তরে নিজের এক ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,,
_বাব্বাহহ তোমার তো দেখছি কথার ফুলঝুরি ছুটছে মুখ থেকে। সাহস টা কী একটু বেশিই মনে হচ্ছে না?
আমি এবার কী বলবো বুঝতে পারছি না আর কিছু বললেও এই লোক বুঝবে কী না সন্দেহ তাই চুপ থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছি।
কিন্তু বেশিক্ষণ আর চুপ থাকা হলো না। লোকটি আমার দিকে আবার প্রশ্ন ছুড়ল,,
_এই গাছগুলো কে লাগিয়েছে?
আমি তখন একটু মাথা উচু করে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম,, আমি লাগিয়েছি।
লোকটি তখন আমার গোলাপ গাছ থেকে একটি ফুল ছিঁড়ে আমার কানে গুজে দিল।ওনার এমন সাবলীল কর্মকাণ্ডে আমি হতবাক।আমি স্বশব্দে বলে উঠলাম,,
_এটা কী করছেন আপনি?আমার গাছে হাত দিয়েছেন কেন?
লোকটির প্রস্তুত উত্তর,,
_যাকে যেখানে শোভা পায় সেখানে রেখেছি।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটি ঝড়ের গতিতে পদচারণ করেন রুমের বাহিরে। এই লোকের হাবভাব বোঝা দায়।এতদিনের পরিচয়ে আজই প্রথম তার সাথে আমার কথা হলো।এর আগে কখনো কথা বলার প্রয়োজন হয়নি যা বলতো তা বাবাই বলতো।আজ নিজে থেকে কথা বলতে এসে এভাবে হেনস্তা করবে আমাকে,তা আমি কখনোই ভাবিনি।
_ _ _ _ _
আজ কলেজে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে। রান্না শেষ করতে দেড়ি হলো যে তাই তো লেট হলো।প্রত্যেকদিন রান্না করে রেখে তারপর কলেজ যাই আজও তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়েছে যার ফলস্বরূপ রান্নায় দেড়ি আর তারও ফলশ্রুতিতে কলেজে দেড়ি।হাহহহ নিজের ওপরই এখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কেন যে স্বপ্ন দেখতে গেলাম।সব দোষ ওই স্বপ্নের।আরেহ স্বপ্ন দেখতে দেখতেই তো ঘুম ভাঙতে দেড়ি হলো।নো নো নো স্বপ্নের কী দোষ, সব দোষ ওই স্বপ্ন গমনকৃত অবয়বটির।সে কেন আমার স্বপ্নে বিচরণ করে।তারজন্যই সব হলো।ধুর ভাল্লাগে না কিছু,আজ নিশ্চয়ই বকা খেতে হবে।
প্রয়োজনের সময় কিছুই হাতের নাগাল পাওয়া যায় না।রিকশাগুলোও আজকে হাওয়ায় বিলীন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।রোদের তাপদাহে দাড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পরছে।নাকের ডগা,ললাটে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু জলরাশি।হাতের টিস্যু দিয়ে মুছে নিতেই মুহূর্তে পূণরায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে সেই স্হান।আজ বোধহয় ভাগ্য আমার সাথে ছলাকলায় মেতেছে।চরম বিরক্তির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আশ্চর্যে কপাল কুঁচকে এলো আমার সামনে দাড়ানো পুরুষ অবয়বটিকে দেখে। মনে মনে আওড়াতে লাগলাম,”এর এখানে আসার হেতু কী”?
চলবে,