শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ০৬

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়
#থ্রিলার_রোম্যান্টিক
#পর্ব_৬
#Sadia_afrin_nishi

“এভাবে সর্বাঙ্গ দুলিয়ে দুলিয়ে বেহায়াদের মতো লাফানোর কারন?”

__”আমি বেহায়াদের মতো লাফাচ্ছি?”

__তা নয়তো কী।এটা পাবলিক প্লেস বৃষ্টিবিলাস করার জায়গা নয়

__তাতে কী? একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই বেহায়া খাতায় নাম উঠানোর যৌক্তিক্তা কোথায়?

__যৌক্তিক্তা অবশ্যই আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছ কতটা বাজে ভাবে বৃষ্টির পানি তোমার শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে।যার ফলে তোমার শরীর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।এটা যে কত বড় বেহায়াপনা সেটা কী তোমার অবলোকন হচ্ছে না?

নিজের দিকে চোখ পরতেই এবার আমার হুঁশ ফিরল। ছিহ সত্যিই খুব বাজে অবস্থায় অবস্থান করছি এখন আমি।এভাবে এই অসভ্য লোকটার সামনে এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি ভাবতেই আমার মাটির সঙ্গে মিশে যেতে মন চাইছে।কী বলবো ভেবে না পেয়ে চোখ নামিয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছি।আমাকে মৌনতা পালন করতে দেখে রোবটম্যান নিজেই বলে উঠল,,

__এবার নিশ্চয়ই বুঝতে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না

আমি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়লাম যার অর্থ “বুঝতে পেরেছি”

আমার এতো তাড়াতাড়ি হাড় মেনে নেওয়াতে রোবটম্যান হয়তো একটু বেশিই খুশি হয়েছে তাইতো আমার দিকে তাকিয়ে একটা বিজয়ী হাসি দিলেন।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,,

__”বাইকে ওঠো”

ব্যাস,এই একটি কথাই আমার হৃদয়ে ভীতি কম্পন তোলার জন্য যথেষ্ঠ ছিল।গতদিনের কথা ভাবলেই এখন আমার বুক কেঁপে উঠে আর সেখানে উনি কীনা আমাকে আজ আবার ওই মরণ কলে ওঠার জন্য বলছেন।না না না আমি আজ কিছুতেই ওটাতে উঠব না।মনে মনে এসব বকতে বকতে অবলীলায় পেছন সরছি আমি।হঠাৎই শক্তপোক্ত হাতের টানে আবারও আগের জায়গায় ফিরে এলাম।রোবটম্যান আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওনার ওই রক্তিম আভা মিশ্রিত রসগোল্লার মতো চোখ দেখে আমার কলিজা আরও একবার কম্পিত হলো।ওনার ওই চোখ বলছে,”আমি যদি এখন বাইকে না উঠি তাহলে আমার ক্লাস নেওয়া শুরু করবেন উনি”।কিন্তু আমার এই নিষ্পাপ মন বলছে,”আমি যদি আজ আবার বাইকে চড়ি তো আমার নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে পারবে না কেউ। এ আমি কোন মসিবতে পরলাম রে বাবা।”ডাঙায় বাঘ,পানিতে কুমির “এখন আমার এমন অবস্থা।

__তুমি কী উঠবে,”দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল রোবটম্যান”।

আমি আর কোনো উপায়ান্তর না করতে পেরে চুপচাপ বাইকে চেপে বসলাম। বর্তমানে আমার এখন একটাই কাজ” আল্লাহর নাম জব করা” আর আমি এখন সেটাই করছি।মুহুর্তেই হুঁশ করে বাইক চলতে শুরু করল।

__”কলেজ থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বেশ ভালোই লাগছিল। কিছুদূর যেতেই বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেল। না চাইতেও বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলাম। তারপর ফাঁকা রাস্তা পেয়ে এক প্রকার দৌড়ে বাড়ি ফিরছিলাম আর তখনই রোবটম্যানের সামনে পরলাম ব্যস তারপর এসব কাহিনী। আমার বাড়ি ফেরার প্রচেষ্টাকে ওনার কাছে লাফানো মনে হলো।ভাগ্যিস বৃষ্টির জন্য রাস্তাটা ফাঁকা ছিল নয়তো প্রচন্ড লজ্জায় পরতে হতো আমাকে।”

বাইক থামতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি।তাড়াতাড়ি করে নেমে এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম। পেছনের লোকটিকে ফিরে দেখার মতো মানসিকতা আমার আর হলো না।আমি ঘরে চলে যেতেই লোকটা কিছুক্ষণ পর চলে গেল। আমি তার বাইকের স্টার্টের শব্দেই বুঝে গেলাম তার প্রস্থান করার সময়সীমা।

_ _ _ _ _

দিনকে দিন রোবটম্যানের পাগলামি কেমন জানি বেরেই চলেছে।আমার প্রতি তিনি হয়তো একটু বেশিই ডেস্পারেট হয়ে পরছেন কিন্তু তার এমন ব্যবহার ক্রমশই আমাকে তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।যার নাম জানি না,পরিচয় জানি না এমনকি মুখটা পর্যন্ত দেখিনি তাকে নিয়ে কোনো প্রকার অনুভূতি তৈরি হোক সেটা আমি চাইছি না। আমি তো আর বাচ্চা নই যে একটা ছেলের চোখের ভাষা পরতে পারব না। তার চোখের ভাষা আমার কাছে যতটা স্পষ্ট তার থেকেও হাজার গুণ বেশি জটিলতায় পরিপূর্ণ সেই মানুষটি। তাই সবকিছু বোঝা স্বত্বেও অবুঝের মতো থাকি তার সামনে। অনেকটা দেখেও না দেখার মতো।

কলেজ, বাড়ি,ফ্রেন্ড, পড়াশোনা, বাবা আর রোবটম্যান এদেরকে ঘিরেই আমার জীবনটা চলছে।কলেজে এখন আমার আরও কিছু ফ্রেন্ড হয়েছে কিন্তু মিতালীর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।সবার থেকে মিতালী আমার বেশি ক্লোজ ফ্রেন্ড।কলেজে সেই হাবাগোবা ছেলেটাকে প্রায়ই দেখি।ছেলেটা প্রচুর সাধাসিধে। এমন সরলতার জন্য তাকে কলেজে অন্য স্টুডেন্টদের কাছে অনেক হেনস্তা হতে হয়। আমি দেখি সেসব কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনা। খুব মায়া হয় লোকটার ওপর। সত্যিই আমাদের এই সমাজ বড়ই বৈচিত্র্যময়। তেলা মাথায় সবাই তেল দিতে পছন্দ করে কিন্তু যার কিছু নাই তার ধারে কাছেও মানুষ ঘেঁষে না। হ্যাবলাকান্ত ছেলেটার একটা জিনিস আমি ভীষণভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি,”ছেলেটির পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ”।অন্য ছেলেমেয়েদের মতো ফালতু বাহ্যিক চাকচিক্যে সে বিশ্বাসী নয়, সে বিশ্বাসী পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করায়।সে চেষ্টাই রাতদিন করে সে।এই ছেলেটিকে দেখলে আমার নিজের অতীত খুব মনে পড়ে। হয়তো এই ছেলেরও আমার জীবনের মতো করুন কোনো অতীত আছে।

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here