শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ১০

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(১০)
Sadia afrin nishi
____________________________

“মাশাল্লাহ খাবার গুলো খুবই সুস্বাদু। চিংড়ীর ভর্তাটা তো দারুণ। গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে এমন ভর্তার সংমিশ্রণ একেবারেই অতুলনীয় ”

খুবই তৃপ্তির সহিত খাবারটা সম্পন্ন করলাম।এতক্ষণ আমার তেমন কোনো দিকে হুঁশ ছিল না একমনে খেয়েই যাচ্ছিলাম। এখন খাওয়া শেষে হঠাৎ করে সাক্ষরের কথা মনে পরতেই আমার বরাবর চেয়ারে দৃষ্টি দিলাম।অসভ্য লোকটা কেমন ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে চেয়ে আছে। হয়তো আমাকে “পৃথিবীর সবথেকে বড় খাদক” মনে করছে।ওনার দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য আমি বলে উঠলাম,,

_খাবারটা মজা হয়েছে না খেতে?

_”কতটা মজা হয়েছে তা তো তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে”

_মানে কী বলতে চাইছেন আপনি?

_নাহ তেমন কিছু না

_এই এই সত্যি করে বলুন তো কী বোঝাতে চাইছেন

_তোমার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা খাবার আর গপগপিয়ে খাওয়ার ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে খাবারটা তোমার কাছে ঠিক কতটা ভালো লেগেছে

ওনার বলা কথায় তাড়াতাড়ি এক হাত দিয়ে ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা খাবার পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।ঠিক তখন উনি আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন আমার সন্নিকটে।তারপর পরম যত্নে আমার মুখ পরিষ্কার করে দিয়ে ওপরে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন,”দ্রুত খাওয়া শেষ করে রুমে এসো।”

কাল রাত থেকে না খেয়ে থাকায় পেটে অনেক ক্ষুধা ছিল।তাই সকালে নাস্তার জায়গায় ভাত পেয়ে বেশ ভালোই লেগেছে আমার।

★★★

এমন অদ্ভুত বাড়ি আমি কখনো দেখেনি। এ তো হরর ফিল্মসের বাড়ি গুলোকেও হার মানাবে।সকালে খাবার খেয়ে রুমে যাওয়ার পর সাক্ষর আমাকে বলল,সে নাকি কোথায় একটা যাবে তাই আমাকে একা বাড়িতে থাকতে হবে। আমিও সুযোগ বুঝে ওনার থেকে বাড়িটা ঘুরে দেখার পারমিশন নিয়ে নিলাম।পারমিশন চাইতেই উনি বললেন,,

_”এটা তোমার বাড়ি যখন যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারো আমাকে বলার কী আছে”

তারপর উনি চলে যেতেই লেগে পরলাম নিজের কাজে।অতঃপর আমি এখন পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছি।ঘুরতে ঘুরতে ওপরের সবগুলো ঘর ঘুরে দেখেছি তারপর নেমেছি নিচে।নিচের তলার প্রত্যেকটি কামরা ঘুরে দেখতে পারিনি তার আগেই আমার চোখের সামনে উদিত হয় এক অদ্ভুত দ্বার।দরজাটার গাঁয়ে তালা ঝোলানো।এটা কোনো সাধারণ তালা নয় বিশালাকৃতির একটি তালা।এই তালা ভাঙা তো দুর অধিক শক্তিশালী লোক ব্যতিত কেউ দু-হাতে তুলতে অব্দি পারবে না। কিন্তু আমি এটাই বুঝতে পারছি না এই ঘরে এই তালা ঝোলানোর কারণ কী।এই ঘরটায় নিশ্চয়ই স্পেশাল কিছু আছে।আচ্ছা সাক্ষরকে জিজ্ঞেস করলে সে কী আমাকে এই ঘরের সম্পর্কে বলবে কিছু? হয়তো বলবে না তবুও আমি একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো।আপাতত এই ঘরের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম।পুরো বাড়িটাই মোটামুটি ঘুরে দেখা শেষ।এমন জনশূন্য বাড়িকে “হরর হাউস”-ই বলা চলে।বাড়িটির সাজসজ্জা পরিপাটি হলেও আমাকে প্রতি মুহুর্তে এক অজানা আশঙ্কার জানান দেয়।

★★★

সাক্ষর সেই সকালে বেড়িয়েছে কিন্তু এখনো ফেরেনি।আমার মনটা ভীষণ অস্থির হচ্ছে।ঘড়ির কাটায় এখন বিকেল চারটা বেজে দশ মিনিট।সকালে বাড়িভ্রমণ করে এসে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে এই কিছুক্ষণ হলো শাওয়ার নিয়ে বসলাম আমি।এখন একটু ক্ষুধাও লেগেছে। এভাবে কাজ না করে কী বসে থাকা যায়?ধুর ভাল্লাগে না। এই লোকটা কই যে গেল।কাল থেকে আমি কলেজে যাবো তাহলে আর বাড়িতে বসে বোর হতে হবে না।নানাপ্রকার চিন্তা ভাবনা করছি তারমধ্যেই সাক্ষরের কন্ঠ শুনে দরজায় চোখ দিলাম।সাথে সাথে আমার মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠল।লোকটার মাথা বেয়ে রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে আছে।পরনের শার্টটাও রক্তে মাখামাখি।মাথায় ব্যান্ডজ করা বলে এখন আর রক্ত ঝড়ছে না ঠিকি কিন্তু শুরুতে যে অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়েছে তা তার শরীর দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
হাতের আঙ্গুলেও ব্যান্ডজ।আমার সারা শরীর কেমন স্তব্ধ হয়ে গেছে।এই মুহুর্তে কেমন রিয়েক্ট করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য মনে হচ্ছে।আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সাক্ষর বলল,,

_” কী হয়েছে এভাবে কী দেখছো আর আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো কিন্তু আমি পাইনি”

ওনার কথায় নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললাম,,

_”আপনার প্রশ্ন মানে কী প্রশ্ন ”

_ও মা এই মাত্রই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম যে,”ওভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে কী ভাবছ? এতটুকু কথা এখুনি ভুলে গেলে”

উনি যে দরজায় দাড়িয়ে আমাকে কীছু বলছিলেন তা ওনার এই রক্তাক্ত অবস্থা দেখে বেমালুম ভুলে গিয়েছি আমি।ওনার থেকে রিপিট টেলিকাস্ট শোনার পর এবার মনে পরল।

_ওসব কথা বাদ দিন তো আগে বলুন আপনার এমন অবস্থা কীভাবে হলো?

আমার কন্ঠে উৎকন্ঠা আর ওনার চোখে উচ্ছ্বাস। মনে হচ্ছে আমাকে উৎকন্ঠিত হতে দেখে উনি খুব খুশি হচ্ছেন।ওনার কোনো প্রতিত্তোর না পেয়ে আমি আবার বললাম,,

_”কী হলো বলুন এসব কী করে হলো”

উনি এবার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,,

_”ওসব তোমার না জানলেও চলবে”

_না জানলে চলবে কেন? আপনার অবস্থা কী হয়েছে দেখেছেন। আপনি এখন আমার হাসবেন্ড সো আপনার ভালো মন্দ সবকিছু দেখার দ্বায়ভার আমার এবং সবকিছু জানার অধিকারও আমার আছে।

_বাব্বাহহহ একরাত কাটতে না কাটতেন বউগিরি ফলাতে লেগে পরেছ

_যেটা আপনার মনে হয় সেটাই তবে আমি কিন্তু আমার কাজ করেই যাবো। এখন আপনাকে এসব নিয়ে জেড়া করবো না ঠিকি কারণ আপনার এখন রেস্টের প্রয়োজন কিন্তু সুযোগ বুজে সবকিছুর উত্তর করায়গন্ডায় বুঝে নেব বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই মি.সাক্ষর আহমেদ।

আমার কথা শুনে ওনার চোখগুলো রসগোল্লা হয়ে গেল।এতগুলো কথা যে আমি বলেছি তা হয়তো ওনার বিশ্বাসই হচ্ছে না।তাই উনি গাল হা করে বললেন,,

_”এইমাত্র এসব কথা তুমি বললে? ”

_কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?

_উহুম একদমই না

_তাহলে এবার দেখুন বিশ্বাস হবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট (জোরে একটা চিমটি দিলাম)

_আহহহহ এই মেয়ে এতবড় নখ তোমার হাতে। নিশ্চিত এটা কোনো রাক্ষসীর নখ

_হুম ঠিকই বলেছেন এগুলো রাক্ষসী থেকে ধার নিয়েছি আপনার মতো গরিলা বরকে টাইট দিতে।

_কী বললে তুমি খুব সাহস বেড়েছে তোমার

_আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ দিয়ে ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনি যান আমি আপনার কাপড় রেডি করছি

_তুমি আমার কাপড় রেডি করবে?

_হুম করবো, এগুলো তো এখন আমারই দ্বায়িত্ব

_হুম

_হুম,হুম না করে এবার যান প্লিজ

সাক্ষর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।যাওয়ার আগে একবার উকি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।আমি যে এতো তাড়াতাড়ি তাকে মেনে নেব এটা হয়তো তার কল্পনারও অতীত।কিন্তু আমি যে কেন তাকে এতো সহজে একসেপ্ট করলাম এটা তো আর সে জানে না।তা শুধু আমিই জানি এবং সবটা প্রকাশ করবো শুধু সময়ের অপেক্ষা।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here