শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ০৯

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(৯)
Sadia afrin nishi
____________________________

বারান্দায় দাড়িয়ে থাকবে নাকি ঘরে আসবে?

_হুম আসছি

রুমে গিয়ে দেখি উনি একটা এ্যাস কালারের ট্রাউজার আর একটা হালকা খয়েরী কালারের জ্যাকেট পরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে।এই প্রথম ওনাকে আমি কালো রঙ ব্যতিত অন্যকোনো রঙে দেখলাম।এই খয়েরী রঙটি যেন ওনার গাঁয়ের সঙ্গে একদম মিশে আছে।একটা জিনিস কাঁকতালিয় হলেও সত্যি যে, “আমার আর ওনার গাঁয়ের রঙ একদম সেম “। আমরা দুজনেই উজ্জ্বল শ্যামলা।মাঝে মাঝে মনে হয় উপর ওয়ালা বোধহয় আমাদের ভাই-বোন করে পাঠাতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভুল বসতো স্বামী-স্ত্রী করে দিয়েছেন।

“এই মেয়ে এভাবে কী দেখছো? খেয়ে ফেলবে নাকি?”

_আমার এই মুহুর্তে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে ঠিকি তাই বলে আপনার মতো আস্ত একটা গরিলা খাওয়ার সাধ্য আমার নেই

_কী বললে তুমি আমি গরিলা?

_নাহ ঠিক গরিলা না গরিলার ছোট খাটো বাচ্চা

_কী বললে তুমি খুব উড়ছো তাই না দাড়াও দেখাচ্ছে তোমায়

ও মা এই পাঁজি লোকটা তো আমায় ধাওয়া করছে। ধরতে পারলে নির্ঘাত খবর করে ফেলবে।ক্ষুধার চোটে কী সব মুখ ফসকে বলে ফেলেছি ওনাকে। এবার হাতের কাছে পেলে একদম কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নেবে আমাকে।তার থেকে বরং আমিও পালাই।আমিও ছুট লাগালাম। সাক্ষর আমাকে পেছন থেকে বারবার থামতে বলছে কিন্তু আমিও হার মানার পাত্রী নই সমানে দৌড়ে চলেছি।

__”এই মেয়ে থামো বলছি পড়ে যাবে তো”

__এ্যাহহ শখ কতো আমি থেমে যাই আর আপনি আমাকে ধরে ফেলুন তাই তো। সেটা হচ্ছে না মহাশয়। পারলে ধরে দেখান

__এই সিরিয়াসলি বলছি কিচ্ছু বলবো না তোমায় প্লিজ থামো পড়ে গেলে অনেক লাগবে তোমার

__তাতে আপনার কী লাগলে আমার লাগবে

__”কী বললে তুমি ওকে আমি চলে যাচ্ছি তবে তুমি এভাবেই দৌড়াতে থাকো”

এটা কী হলো উনি তো রাগ করে চলে যাচ্ছেন।আমি আবার রাগার মতো কী বললাম।এবার আমি উল্টো দিকে দৌড় দিলাম ওনাকে ধরার উদ্দেশ্যে।প্রায় ওনাকে ধরে ফেলব এমন সময় শাড়িতে পাঁ বেজে পরলাম গিয়ে ওনার গাঁয়ের ওপর। দুজনেই বর্তমানে মেঝেতে অবস্থান করছি। উনি নিচে উবুড় হয়ে পরে আছেন আর আমি তার ওপর।নীহুরে নীহু এবার তুই শেষ। নিজে তো পরলি সাথে এই গরিলাটাও নিলি।এবার তোকে কে বাঁচাবে।

__এই মেয়ে আর কতক্ষণ এভাবে আমার ওপরে পরে থাকবে শুনি এবার তো নামো। মনে হচ্ছে আমাকে কোনো ফোমের বেড ভেবে নিয়েছো যার জন্য নামতেই চাইছো না

__হ্যাঁ হ্যাঁ উঠছি উঠছি

তাড়াতাড়ি উঠে পরলাম ওনার গাঁয়ের ওপর থেকে।বেশি কথা বললে হিতে বিপরীত হবে এমনিতেই ক্ষেপে আছে।

__এই মেয়ে তোমাকে বলেছিলাম তো দৌড় বন্ধ করতে তার পরেও দৌড়চ্ছিলে ভালো কথা কিন্তু আমার গাঁয়ে এসে পরলে কোন সাহসে (ধমক দিয়ে)

__আমি কী ইচ্ছে করে পরেছি নাকি।আর আমাকে সবসময় এই মেয়ে এই মেয়ে বলেন কেন? আমার একটা সুন্দর নাম আছে ওটা বলেই ডাকবেন

__সুন্দর না ছাই ওই তো নামের শ্রী “নীহারিকা “। হুহহ তোমার নামটা উচ্চারণ করতে গেলে আমার আগে “হারিকেন” শব্দটি মুখে আসে তাই বলি না বুঝতে পেরেছো

__হারিকেন, কেন হারিকেন মুখে আসার কারণ?

__জানি না তবে চলে আসে

হুট করে কেমন জানি আমার বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা করে উঠল,চোখে পানি টলমল।ওনার মুখ থেকে নিজের নামের প্রশংসা শুনতেই বোধহয় আমি বেশি পছন্দ করতাম কিন্তু আফসোস উনি তো রীতিমতো আমার নামটা অবজ্ঞা করলেন।ওনার সাথে এই মুহুর্তে আর একটি কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।মুখ ফুলিয়ে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম ঠিক তখনই উনি আমার হাতটা টেনে ধরলেন।ওনার এই হাত ধরাটা আমার কাছে “জুতা মেরে গরুদান” করার মতো মনে হলো।অভিমানটা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।আমি ওনার থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,

__কোন সাহসে আপনি আমার গাঁয়ে হাত দিচ্ছেন। একদম ছোঁবেন না আমাকে।আপনি খুব খারাপ পঁচা একটা লোক।আমি আপনাকে ঘৃণা করি অত্যাধিক পরিমাণে।

আর কিছু বলতে পারলাম না আমি।আমার টলমলে চোখ জোড়া দিয়ে এবার কান্নার বর্ষণ হতে শুরু করল।কেন এতটা কষ্ট হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছি না। খুব সামান্য একটা কথাই তো উনও বলেছিলেন তাতেই এতো রিয়েক্ট কেন করছি আমি?নিজের ব্যবহার নিজেরই ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না আমার।

আমার উপস্থিত কর্মকাণ্ডে উনি কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন প্রথমে পরক্ষণেই আবার কী যেন মনে করে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন।উনার হাসিটা যেন আমার মনে “আগুনে ঘিঁ ঢালার মতো “কার্যকর হলো।এই মুহূর্তে ওনাকে আমার খুন করতে মন চাইছে। কোথায় একটু শান্তনা দেবে তা না করে তিনি হাসছেন।আমি এবার আরও জোরে কাঁদতে লাগলাম।উনি এবার মুখ খুললেন। আমার উদ্দেশ্যে বললেন,,

__কাঁদলে তোমাকে বেশ লাগে। একদম “লিটল বার্বি কুইন”। চোখের টানা টানা পিসিগুলো ভিজে গিয়ে মনে হয় একদম শিশিরে ভেজা ঘাস।এতটুকু বলেই উনি তাড়াতাড়ি এই স্থান ত্যাগ করলেন।শুধু যেতে যেতে একবার বললেন,,” খেতে চাইলে আসতে পারো”।

এতক্ষণ খাবার কথা একদমই মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল।এই অসভ্য লোকটার কথা চিন্তা করে কেঁদে না ভাসিয়ে এখন খেতে যাওয়াটাই অতি উত্তম বলে মনে করছি আমি।তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।দৌড়াদৌড়িতে এতক্ষণ আমি খেয়ালই করিনি যে আমরা নিচ তলায় চলে এসেছি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে দেখতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি আমি।ডাইনিংরুমে ঢুকে আমি তো অবাক। এতো এতো খাবার কোথা থেকে এলো।আমি যতটুকু জানি সাক্ষর তো রান্না করতে পারেনা তাহলে কে রান্না করল এই খাবার আর কখনই বা করল।খাবার থেকে তো এখনো ধোঁয়া উড়ছে তারমানে সদ্য রান্না করা খাবার এটা।

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here