শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ০৮

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(৮)
Sadia afrin nishi
____________________________

আজানের ধ্বনি কর্ণপাত হতেই আমার ধ্যান ভাঙল।অতীতের স্মৃতি থেকে বেড়িয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম।রোবটম্যান এখনো রুমে ফেরেনি।আমার কেমন জানি রোবটম্যানের চরিত্র অদ্ভুত টাইপ’স লাগে।বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে একটা শাড়ি চুজ করে নিলাম পড়ার জন্য। আগে আমি সবসময় থ্রি-পিস পরতাম কিন্তু এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে থ্রি-পিস পরলে যদি রোবটম্যান রেগে যায় এটা ভেবেই শাড়ি নিলাম।অতটা ভালো শাড়ি পরতে না পারলেও মোটামুটিভাবে শাড়িটা গাঁয়ে জড়িয়ে, ফ্রেশ হয়ে, অজু করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে নিজের এই একাকিত্ব জীবনে আল্লাহর ইবাদাতকেই নিজের সঙ্গী করে নিয়েছি।এখন বুঝতে পারছি জীবনের কতগুলো দিন নষ্ট করেছি।শুরু থেকেই আল্লাহর প্রতি ভরসা করা উচিত ছিল। আল্লাহ কাউকে কখনো হতাশ করেন না।মন থেকে আল্লাহকে ডাকলে তিনি অবশ্যই মানুষের মনের আশা পূর্ণ করেন।আল্লাহর কাছে আমার শুধু এখন একটাই চাওয়া, “আমি যে আমার মৃত বাবার আমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটা সত্যি করতে পারি”।আমি এখন থেকে প্রাণপণে শুধু সেটাই করার চেষ্টা করবো।

ফজরের নামাজ আদায় শেষে কুরআন তেলওয়াত করলাম প্রায় ঘন্টা খানেক।ঘড়ির কাটায় এখন কেবল ভোর ছয়টা।এতো সকালে একা একা কী করবো ঘরে বসে।ক্ষুধাও লেগেছে খুব।ক্ষুধার জন্য ঘুমও আসছে না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রোবটম্যান আমার খোঁজ-খবর নিয়েছে আমাদের বাড়িতে গিয়ে কিন্তু কখনো তার বাড়িতে নিয়ে আসেনি আমাকে।এই প্রথম আমি তার বাড়িতে এলাম।বাড়িটা বেশি একটা বড় না।গোলাপি রঙের আস্তরণে মোড়ানো চারপাশ, জানালায় থাই লাগানো,বেশি জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও খুবই গোছানো এবং পরিপাটি বাড়িটি।ওনার বাড়ির ভেতরকার সাজসজ্জা দেখলেই বোঝা যায় লোকটা কতটা খুঁতখুঁতে।সব কিছুই তার পারফেক্ট চাই।গত রাতে সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় বুঝতে পারলাম এখানে রোবটম্যান ছাড়া কেউই থাকে না হয়তো।নিচের তলা, ওপর তলা সবকিছুই ফাঁকা। ফাঁকা বললে ভুল হবে আসবাবপত্রে পরিপূর্ণ কিন্তু একদমই জনমানব শূন্য।একটা কাজের লোকেরও পাত্তা নেই বাড়িতে। এই লোকটা এখানে এভাবে একা একা থাকে কী করে। আচ্ছা কোনোভাবে এই রোবটম্যানই কলেজের সেই ছেলেটি নয়তো? ধুর তা কী করে হবে, সেই ছেলেটি আর রোবটম্যানের চেহারায় মিল থাকলেও তাদের চলাফেরায় তো বিস্তর ফারাক।

ঘর থেকে বেড়নো ঠিক হবে কী না বুঝতে পারছি না।ওই লোকটা সেই যে গেল আরও তো ফিরল না। বাসায় আছে নাকি বাহিরে গেছে তাও তো আমার অজানা।প্রত্যেকটি মেয়েরই নিজের বাসর নিয়ে নানারকম স্বপ্ন থাকে।আমার ক্ষেত্রে সেসব কিছুই ভিন্ন। বিয়ের আগে জীবন সংগ্রামের মাঝে এসব নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়নি আর বিয়ের পর এখন তো অন্যরকম সংগ্রাম।তাই এই রাত পন্ড হওয়া নিয়ে আমার কোনো প্রকার কোনো অাক্ষেপ নেই।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলে চিরুনি চালাচ্ছিলাম এমন সময় দরজায় খট করে আওয়াজ তোলায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম সামনে থাকা আয়নায়।হাতের চিরুনি আপনা হতেই হাত থেকে মেঝেতে পরে গেল।চোখাচোখি হলো চারটি চোখ।রোবটম্যানের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে হয়তো সারারাত ঘুমোয়নি তাই এমন হয়েছে।আমার এই মুহূর্তে কিছু প্রশ্ন তাকে কিছু প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারছি না। সব কথা গলার কাছে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।রোবটম্যানের দৃষ্টি কেবল আমাতেই সীমাবদ্ধ।আমি একটু নার্ভাস হয়ে তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।ঠিক তখনই ওনার কন্ঠস্বর ভেসে আসল,,

_”কিছু বলতে চাও,এমন করছো কেন?”

_এ্যাহহহ না মানে আসলে

_নার্ভাস হওয়ার কী আছে, আমাকে প্রথম দেখছ নাকি?(বিরক্তির স্বরে)

_নাহ হয়েছে কী

_উহ বললে বলো নয়তো আমি ফ্রেশ হতে গেলাম

_আ আ আপ আপনার নানাম টা (তোতলানো স্বরে)

আমার কথায় উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।আমার এবার জান যায় যায় অবস্থা।প্রশ্নটা করেও বিপদে পরলাম।

__”সাক্ষর আহমেদ”

এতটুকু বলেই উনি আর এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় করলেন না তাড়াতাড়ি আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে পা বাড়ালেন ওয়াশরুমের দিকে।যাওয়ার সময় ওনার পায়ের সাথে চিরুনিটা বেজে গেল।উনি চিরুনিটা তুলে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।

এতক্ষণে হয়তো আমার ধরে প্রাণ ফিরে এলো।আমার কানে এখনো বারবার বেজে চলেছে ওনার নামটি। নামটা নিজের মনে খোদাই করে নিলাম।হাতে থাকা চিরুনিটি নিজের মাথায় চালাতে চালাতে আপনমনে আওড়াতে লাগলাম, “সাক্ষর আহমেদ”

_ _ _ _ _

সাক্ষর ওয়াশরুম থেকে বেরনোর আগেই আমি রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। বুকের মধ্যে কেমন ঢিপঢিপ করছে।শত হোক উনি তো এখন আমার স্বামী তাই একটু আলাদা অনুভূতি তো জন্মাবেই।উনি কাল রাতে কোথায় ছিলেন খুব জানতে ইচ্ছে করছে। সেই সাথে ইচ্ছে করছে কিছু খেয়ে এই বাড়িটা ঘুরে দেখতে।কিন্তু ওনার মনোভাব যদি অন্যরকম হয়। থাক বাবা আগ বাড়িয়ে কিছু বলে বকা শুনতে রাজি নই আমি। তারচেয়ে বরং অপেক্ষা করি ওনার অনুমতির।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here