#সমাধি ❤️
#পর্ব –১৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
________________________________
“– গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে রাসেদ। কি হয়ে গেলো। এটা কেমন ঝড়বয়ে গেলো অনুর জীবনে। প্রথম আমার থেকে পাওয়া কষ্ট কি কম ছিলো! তার পরেও স্বামীর ঘর করছিলো, সন্তানের মা হল। সব তো ভলোই হয়েছিলো, তবে মাঝ পথে মেয়েটার জীবন সাথি হাল ছেরে দিলো।
জানিনা অনুকে কি অবস্থায় দেখতে পাবো। হয়তো জীবিত শ্বাস চলছে। চলা ফেরা করা একটা লাশের দেখা মিলতে পারে।
ঠিকানা অনুযায়ী রাসেদ যাচ্ছে এ তো শহরের শেষ প্রান্তে।৷৷৷ সি এন জি ড্রাইভার দের থেকে জিজ্ঞেস করে করে পথ এগুচ্ছে, এক অজানা পথে চেনা মানুষের দেখা মেলার আশায়।
সেই আশা পূরন হলেই হয়।
———– দুপুর গরিয়ে এলো। ঠিকানা মত হাজির রাসেদ।তবে এখানে অনুরা থাকবে ভাবতে পারছেনা।
এটা তো ওদের মত মানুষের থাকার জায়গা হতে পারেনা।এখানে দিন মজুরী করা মানুষের থাকার স্থান।
, চিন্তা আরেকটি , এখানে তো কিচি মিচি করা বহু ঘর দেখতে পারছি। এর মধ্যে অনু কোন ঘরটায় থাকে?
কারো থেকে জানা ছারা উপায় নেই।
★★
—————- সবাইকে খেতে দিয়ে একটি কোনায় গুটি পায়ে দাড়িয়ে শেফা। মুখটা শুকিয়ে কি হয়েছে।ওর মনে হয়তো রাসেদকে হারানোর ভয়টা কুরে কুরে খাচ্ছে।রাসেদই যে ওর সব।ভাইয়া মারা যাবার আগে যার হাতে আমায় সপে দিলো সেই তো আমার থেকে দূর হতে চলছে।তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাচঁব!!কার জন্য কিসের জন্য!!
তবে দেয়া করি রাসেদ ওর ভালোবাসা ফিরে পাক।
ওর মনের মানুষের সাথে মিল হয় দোয়া করি। ও সুখে থাকলেই আমার পরম পাওয়া।
– রাসেদের মা শেফাকে বকনি দিয়ে খেতে বসিয়েছে। না খেয়ে আরো করুন অবস্থা করেছে নিজের।
রাসেদের বোন মিহা আর তার স্বামী শশুর বাড়ি কয়দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলো। আজ ফিরলো, মেয়েরা সাধারনত বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে।এখানে উল্টো যমুনা বইছে। ওর স্বামীকে নিয়ে শশুর বাড়ির ভ্রমন করে।
“- আপু আজকের খাবারটায় না আগের মত স্বাদ নেই। কেমন জেনো লাগছে।
— মিহা নরমালি কথাটা বলেছে।তবে এখানে বসা সকলেই জানে শেফার মনের খবর, যার কারনে রান্নায় মন নেই তার। মিহা তো বলে খালাস।
” ওহহ আসলে রান্না আজকে সত্যিই বাজে হয়েছে।দাড়াও তোমার জন্য কিছু একটা বানিয়ে আনি!!!
—- খাওয়া ছেরে উঠতে নিলে মিহা বাধা দেয়। আপু তুমি এখানে বসোতো খাবার এতটা খারাপ হয়নি যে খাওয়া যায় না।
এতটা বছরইতো এমন রান্না খেলাম তুমি আসার পর মুখের স্বাদ পাল্টেগেছে তো।
আজ না হয় সেই দিন গুলোর মত খেয়ে নেবো।
— রাসেদের মায়ের অগ্নি চোখ দেখে মিহা বার বার ঢুক গিলে যাচ্ছে।যাহ মা রেগে গেছে।
কি বললি? এত বছর আমার রান্না বাজে ছিলো নাহ!!
রাসেদের মা আর মিহা মিলে অস্থির পরিবেশটা নরমাল করল। মা মেয়ের কথায় সবার মুখে একটু হলেও হাসি এসেছে।বিশেষশত শেফার।আর ওর জন্য তো এমনটা করলোই।
——— ★★
“- মা দেখো তো কে এলো…
—– আকলিমা বেগম দরজা খুলে ভয়ে কাতর হয়ে আছে।
রাসেদকে দেখে ভূত দেখার মত তাকিয়ে আকলিমা।
“- ভেতরে আসবো???
— অনুর কানে পরিচিত একটা কন্ঠস্বর বাজছে।
বাহিরে কে এসেছে?? মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে দৌড়ে এসেছে অনু।
” অনুর মা দরজা থেকে সরে রাসেদকে ভেতরে আসার জন্য জানান দিলো।রাসেদ এসেই অনুর সামনা সামনি।
অনুযে পাগলের মত ছুটে এসেছে, বাহিরে কার কন্ঠস্বর শুনলো!
রাসেদকে দেখে জেনো শত জনমের পিপাসা মিটিয়ে নিলো।
রাসেদ অনুর থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে চোখ ভেজা দুজনেরই। তবে অনু কি আমায় ক্ষমা করবে? নাকি ঐ সব মনে করে দূরে ঠেলে দেবে??
—– মাথা নত করে চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে চলছে রাসেদ।কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
“হয়তো দুজনের কথা বলার জন্য শব্দ নেই। তবে ভেতরে কারো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
বাচ্চার কান্নার শব্দ৷
অনু বাচ্চার কান্নার শব্দে আবার ছুটে ভেতরে চলে গেলো।
আর বেরিয়ে এলো ফুটফুটে এক কন্যাকে কুলে করে।
— অনুর মেয়েকে দেখে রাসেদের প্রান জুড়িয়ে এলো। অনুর মেয়ে হয়েছে তা সিউর হল পড়নে যে ছোট্ট ফ্রক তা দেখে।
ভারি মিষ্টি মেয়েটা।
” রাসেদ তার হাত বাড়িয়ে অনুর মেয়েকে চাইলো। অনু আর রাসেদ মুখে কথা না বলতে পারলেও তাদের চোখ সব বলছে।
— অনু তার মেয়েকে রাসেদের কোলে তুলে দিয়েছে। আকলিমা বেগম দুয়ার ঘেসে এখনও দাড়িয়ে। এখানে না কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে আর না সাহস। উনার জন্যেই আজ মেয়েটা দুখের সাগরে ভাসছে।
— বেশ কিছুটা সময় অনুর মেয়েকে মন ভরে দেখলো।আর প্রথম শব্দ বার করলো।
“অনু কি নাম রেখেছিস ওর!!
— কান্নায় কাতর গলা অনুর রাসেদ ভাইয়ের সাথে তো কতই কথা বলতে চায় তবে বলতে পারছেনা।
চোখের পানিটা চট করে মুছে নিয়ে মেয়ের নাম জানালো।
“– রাইমা…….
” নাম টা শুনে রাসেদ একটু ভাবনায় মজলো।কার নামের সাথে মিল রেখে নাম হয়েছে!!
– অজান্তেই মুখের কোনায় একটু হাসি।
“অনু তর মতই দেখতে হয়েছে তর মেয়েটা।
রাসেদ কথা তো শুরু করল তবে অনুর উওর পাওয়া দুষ্কর।
এখন তো অনুর হাউ মাউ করে কাদঁতে ইচ্ছে করছে
তবে পারছে না।কত অভিমান যে জমানো তা বলতে চেয়েও বলতে তো পারছে না।
— রাসেদ অনুর কাছ ঘেসে দাড়িয়ে অনুর ভেজা চোখ টা দেখতে পারছে।
কেন চুপসে আছিস? রাগ করে আছিস তো শাস্তি দে.মার কাট। তবে এই নিশ্চুপতা বন্ধ কর।
আমার ঐ অন্যায়ের জন্য আর কত শাস্তি দিবি বল?? আরো শাস্তি দিতে চাইলে দে না অনু।তবু কথা বল।
——“-
অনু রাসেদের কোল থেকে নিজের মেয়েকে ছু মেরে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো। দরজাটা বন্ধ করে এবার জোরেই কেঁদে উঠলো। ওর কান্না টা রাসেদের বুকে ছুরি চালায়।
—- অনু মনে হয় ঐ দিনের কথা ভুলেনি।আজও হয়তো আমায় ঘিন্না করে। তাই তো আমার সাথে কথাই বলতে চায়না।
” আকলিমা বেগম এবার তার জায়গা থেকে নড়েছে। এসেই সোজা রাসেদের পায়ে পরেছে।
আমার পাপের জন্য আজ মেয়েটার এই দূর্দশা। আমার মেয়েটার জীবন একেবারে শেষ করে দিয়েছি আমি।
— ছি আন্টি পা ছারুন।
কি করছেন এসব!!
” প্রাসচিত্ত করতে দাও রাসেদ ভাই।আম্মু জীবনে বহু পাপ করেছে।
— তপু!!!
কি বলছিস???
” পেছন থেকে তপু এসে কখন দাড়িয়েছে তা কেউ টেরই পায়নি।গলায় গামছা দিয়ে বোল বাধা চানাচুর ঝাল মুড়ির একটা ছোট খাটো দোকান গলায় করে রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ায় তা বুঝতে বাকি নেই।তবে এত দূর্দশা হল কি করে?? এত সম্পদের মালিক জায়গা জমি সব কোথায়??? আর ও তো রাসেদের রেখে যাওয়া ছোট্ট তপু নয়। হাতে পায়ে তেমন বড় না হলেও বাস্তবতা বয়সের চাইতে বেশি দায়িত্ব্যবান বানিয়ে তুলেছে।
আর অনুর স্বামীর তো কম ছিলোনা। সেখান থেকেই অনু চলো এলো কেন?
— রাসেদ আকলিমাকে টেনে তার বরাবর দার করিয়েছে।
আন্টি আপনাদের এই হাল কেন? কি হয়েছিলো??
অনুর জীবনে এমন ঝড় এলোই কি করে??
— অনু মারা গেছে বাবা।
” কিহ??
রাসেদের গিলে খাওয়া চোখ।কি বলছে আন্টি?
— রাসেদ তোমার উপর রাগ করে ঐ দিন অনু চলে তো আসে।তবে ওটা আমার ঐ আগের অনু ছিলোনা। আগের অনু মারা গিয়ে নতুন অনুর জন্ম হয়েছিলো সেদিন।
মেয়েটা জেনো কেমন হয়ে উঠলো।বিয়ের দিন মেয়েরা কাঁদিয়ে ভাসায়।তবে আমার মেয়েটা চুপ চাপ একা একা ওর বরের গাড়িতে উঠে পরে।
বিয়ের পরে একদিনের জন্যেও বাড়ি আসতে চায়নি।
তার পর একদিন…..
চলবে….