সমাধি পর্ব-১৩

#সমাধি ♦
#পর্ব -১৩
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________
“– শেফা সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে কাদঁছে। কাঁন্নার শব্দ না হলেও রাসেদের মায়ের মনে ঠিক জানান দিচ্ছে।
কয়েক বার দরজার সামনে গিয়েও ফিরে এসেছে, কি বলবে শব্দ না খুজে পেয়েই পিছ পা হওয়া।

“————–★

“- সন্ধা হয়েছে আসতে আসতে, এক টানা ড্রাইভ করেছে রাসেদ আর অনুর বাড়ির সামনে হাজির। বাড়িটা সদ্য নতুন করে পেন্ট করেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে আসবে সেই খুশিতে হয়তো।

বহু দিন পর এই বাড়ির সামনে রাসেদ।নিজের অজান্তেই মুখে হাসি সেই সকাল থেকে। না আজ তার খিদে লেগেছে।আর না ক্লান্তিকর ভাব। বাড়ির সামনে এসে অনুকে দেখার ইচ্ছাটা বেড়ে উঠছে সজৎ হচ্ছে না। বাড়িতে ঢুকার সাহস নেই।যদি অনুর স্বামী এসে থাকে।আর কিছু জানে তখন ওর সমস্যা হতে পারে।
তবে এখানে দাঁড়িয়ে থেকে তো দেখা পাওয়া মুসকিল হবে।

বাড়ির পাশেই যে দোকান টা রয়েছে সেখানে গিয়ে চা খাওয়া যাক।চা বাহানা, অযথা দাড়িয়ে থাকা বিপদ।আর দোকানে তো খালি মুখে বসা যায় না।

ঐ দোকানদারই খবরটা রাসেদের কানে পৌছিয়েছে।
“- বাড়িতে কিছু মানুষ এসেছে, আপনি আসতে পারেন”-
বাস রাসেদ বুঝে নিলো।বাড়িটা অনুদের তা ওরা আসবে না তো কে আসবে।

“- দোকানে অনেকক্ষন বসে রইলো, শীত শীত লাগছে।গরম কাপর তো আনা হয়নি। যাহ তারাহুরায় আনতেই ভুলে গেছি। এসিটা অন করে গাড়িতে বসবো?? না না আরাম পেয়ে যদি চোখ লেগে যায়।আর অনু ছাদে আসে আর আমি দেখতে না পাই।

“- এর চাইতে এখানেই বেশ আছি।চোখ এবার ছাদের দিকে। কারন গেট থেকে আর বের হবার সময় নয়।
যদি ওর পুরোনো অভ্যাস না পাল্টায় তাহলে ছাদে তো অনু আসবেই।
তখনই দেখতে পাওয়া যাবে।আহ অসজৎকর লাগছে।কখন নিশি রাত হবে।

“-

___________★

” আজ কাল বাড়িতে কি চলছে!!!
রাসেদের বাবা তার সহধর্মিণী কে প্রশ্নটা করেছে তবে সঠিক উওর পাবেনা জানে।

— কই কিছুনা তো। কি আবার চলবে।

” রাসেদের মায়ের উওরে রাসেদের বাবা হুমহুমম করে হাল্কা হেসে উঠলো।
এভাবে হাসাটার কারন? রাসেদের মা আলমারি ঘাটছিলো।তবে সব বাদ দিয়ে স্বামীর পাশে বসেছে।আগে জানা যাক এভাবে হাসলো কেন??
——-বাহিরের খবর জানেনা তো? জেনে আবার শরিলটা না খারাপ করে বসে।
এইভাবে হাসলে যে!!!

” আসলে রাসেদের মা,আমার পায়ে সমস্যার কারন হাটা চলা বন্ধ হয়েছে। তাই রুমটার বাহিরে পা দিই না।
তবে জানো কি আমার কানটা না কোন বাঁধা মানেনা। সারাক্ষণ বাহিরে পরে থাকে।

“- রাসেদের বাবা কোন ইঙ্গিতে কথাটা বলেছে তা রাসেদের মায়ের বুঝতে বাকি নেই। কথাটা এরিয়ে গিয়ে হাতে দুধের গ্লাসটা ধরিয়ে একটু ভাব গলায় বললো- দুধটা খেয়ে শুয়ে পরো।
আর কানটাকে নিয়ন্ত্রণ করো।
তুচ্ছতাচ্ছিল্য কথা কানে প্রস্রয় দিও না।

———-★

” এক টানা চোখ দুটোকে ছাদে টিকিয়ে রেখেছে রাসেদ।
অনেক রাত হয়েছে দোকান বন্ধ করবে তাই সেখান থেকে উঠে গাড়িতে বসেছে অনুর রাসেদ ভাই।কানে শুধু রাসেদ ভাই বলে একটি ডাক শুনতে অাকুল।

তবে সকাল হয়ে গেলো পাশের মসজিদে আজান হয়ে গেলো, অনুতো দূর একটা কুকুরের দেখা মিললো না।
এটা রাসেদের জন্য যন্ত্রণা দায়ক।
“——– এই যে মিয়া ভাই।
সকাল ৮ টা প্রায়। রাসেদের ক্লান্ত চোখটা একটু বুজে গিয়েছিলো।কারো আওয়াজ পেতেই চোখের পাতা মেলে দেখলো এক লোক।

দাড়োয়ানের পোশাক পরনে যখন দারোয়ানই হবে।
— গাড়ি থেকে বার হয়ে উস্সুক রাসেদ।
অনু আমায় দেখেছে,হয়তো ওকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।তবে এটা কি সম্ভব!! অনু সব ভুলে আমায় ডাকবে?

“- জ্বি!!!

—- গত কাল থাইকা দেখতাছি, এই হানে গাইরা বইছেন।মতলব কি??, বড় বাড়ি দেইখা ডাকাতির ফন্দিবাজি করার চিন্তা নাকি!!#

— রাসেদ হা হয়ে আছে এখনও,কি ভাবলো আর কি হল। একেবারে ডাকাতের অপবাদ?
না না আমি রাসেদ এই বাড়িতেই অনেক আগে থাকতাম। আপনি তখন ছিলেন না।

“- ওহহ, তা এই হানে বইয়া কি আবার এই বাড়িতে থাকার মতলব করেন???

দারোয়ান টা বড্ড অভদ্র,তার কথাই বুঝা যায়।ধুর এর সাথে এত কথাই কেন বলছি।
আঙ্কেলের কথা বলি যদি পেচাল বন্ধ হয়।

“— কামাল সাহেব আমার আঙ্কেল হয়।
রাসেদের কথায় কোন প্রতিক্রিয়া নেই দারোয়ানের মুখে না তার ভাষায়।

ওহহ ভালো তা কামাল সাহেবের বাড়িতে যান, যান ভাগেন তো।
কাল সন্ধা থাইকা বাড়ির সামনে ঘুর ঘুর করতাছেন, মালিক আমার লগে চিল্লাইতাছে।কোন অচেনা লোক তো এখানে দারাইতে পারব না।
সন্দেহ জনক ব্যাপার লাগে।

———- রাসেদ একটু ভাবনায় পরল।দারোয়ান কি বললো ।
কামাল সাহেবের বাড়িতে যেতে? তাহলে এটা কার বাড়ি? দারোয়ান টা পাগল নাকি?
আর আমি ওদের কাছে অচেনা হয়ে গেলাম কবে থেকে?? উনার কোন উপকারই করিনি? এভাবে অচেনা করে দিলো আমায়।আর আমি কিনা এদের সন্মান রাখতে নিজের ভালোবাসা বিসর্জ্জন দিয়েছিলাম।

“রাসেদের রাগ আর আটকনোর মতই না। আরেক দিকে অনুকে দেখার জন্য পিপাসার্থ চোখ। সে আজ সোজা বাড়িতে ঢুকবে আর কামাল আর ঐ মহিলার সামনা সামনি হবে।

— তেরে গেটের ভিতর ঢুকতে গেলে বাঁধা।বাঁধা পরবে জানতো তবে তা মনবেনা রাসেদ তাও ভেবে নিয়েছে।

” সদর দরজায় দাড়িয়ে কলিং বেলটা চেপেই যাচ্ছে। আজ আকলিমা বেগমকে জিজ্ঞেস করবে।বাড়িতে একটা কুকুর পুষলেও তার অবদান মানুষ মনে রাখে।আর আমি কি কুকুরের চাইতেও হেও ছিলাম!!!

“- দারোয়ান বার বার রাসেদকে বারন করছে। ভাই কি করতাছেন বাইর হন।
নাহ সে নড়বে না তো না।না মানে তো না ই হয়।

—–বিরক্ত হয়ে এবার কেউ সদর দরজাটা খুললো।
মাঝারি বয়সের এক ভদ্রলোক।
দরজা খুলেই রাসেদের দিকে কপাল কুচকানো চাহনি দিয়ে।

” কি ব্যাপার কাকে চাই!!
রাসেদ কে একটু নরমেই জিজ্ঞেস করল।তবে চোখ গরম তো দারোয়ান দেখছে।

— রাসেদ লোকটা কে জীবনে প্রথম দেখলো।উনিতো এ বাড়ির লোক নয়।তবে অনুর শশুর বাড়ির কেউ!!

“- জ্বি আমি রাসেদ, কামাল সাহেব আছেন??
—- কামাল নামটা শুনে ভদ্রলোক একটু ভাবনায় পরল।
এখানে কামাল বলেতো কেউ নেই।
” কামাল বলতে নেই মানে? স্যার আমি এই বাড়ির মালিক কামাল সাহেবের কথা বলছি।
— এই ছেলে কি আপতাপ বকছো? এই বাড়ির মালিক আমি। এখানে কোন কামাল টামাল নেই যাও তো বিদেয় হও।

কথাটা বলে রাসেদের নাক বরাবর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে।

না এসবের মানে না বুঝে সে যাবেনা। তাই আবার সদর দরজায় তান্ডব শুরু।
অতিষ্ঠ বাড়ি সকলে।কে এমন করছে আর কেন??

আবার ও ভদ্র লোকটা বেরিয়ে মেজাজি স্বরে রাসেদের উপর আক্রমন।

— রাসেদ দুইহাত জোর করে, সেই লোকটার সামনে দাড়িয়ে এমনটা করার জন্য ক্ষমা চাইলো।
আর বিনিত স্বরে বলে উঠলো।স্যার প্লিজ আমায় হেল্প করুন। আমি কামাল সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই।নয়তো উনার মেয়ে অনুকে একটু ডেকে দিন।

— লোকটা রাসেদের করুন মুখটা দেখে বুধহয় মায়া হল।তাই রাসেদকে ভেতরে ডেকে বসতে দিলো।
রাসেদ দেখতে পারছে ভিতরটা অনেক পাল্টানো।জিনিস পএ অন্যভাবে গুছানো।

চারিদিক চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে অনুর দেখা মেলার আশায়।

— তুমি কামাল কে আর ওর পরিবারকে চেনো?.
” জ্বি স্যার আমি এই বাড়িতেই থাকতাম ওদের সাথে।দুই বছর ধরে জোগাজোগ নেই আর কি।

– ভদ্রলোক টা রাসেদকে জানালো এ-ই বাড়িটা তিনি কিনে নিয়েছেন।
কারন অনুর বাবা মারা যাবার পর ওর মা আর ও সব কিছু বেঁচে দিয়েছিলো।

— কামাল আঙ্কেল নেই!! খুব দূঃখ হল রাসেদের। ওরা বাড়ি সহ সব বিক্রি করে এখন কোথায়???
” ভদ্রলোক আরো জানায়। তাদের অবস্থা ভালোনা। কামাল সাহেবের মেয়েটা বড় অসহায় হয়ে আমার কাছে এসেছিলো।

।অনেক আগেই সব বন্ধক ছিলো আমার কাছে।সব বন্ধক দিয়ে মেয়ের জামাইকে পন দিয়েছে।

আর যখন উনার মেয়েটার ডেলিভারি, ঐ দিনই মেয়েটা বিধবা হয়, ।সেই শোক সইতে না পেরে কামাল মারা যায়।

আর পথে বসে ওরা। বাকি কিছু টাকা নিয়ে ওরা চলে যায়।

৬ মাস হল।
সব বিক্রি করেছে।

—— রাসেদের কানে আজ কথা গুলো শুনে নিজের কানই অবিশ্বাস্য লাগছে।
কি হয়ে গেলো এসব!! অনুর জীবনে এত কষ্ট কেন দিলে খোদা।আমার ঐ পুচকি অনুটা কি করে সব একা সইয়েছে।

” ভদ্রলোক রাসেদের চোখের পানি দেখে দাড়িয়ে পরে। কষ্ট তো লাগারই কথা ছেলেটা নাকি এ বাড়িতে ছিলো।

দেখো বাবা। বাড়িটা নতুন করে রং করে সব নতুন করে সাজিয়েছি। এখানে আমরা মাঝে মধ্যে আসতাম এখন থেকে এখানেই থাকব।

রাসেদ কেমন সং হয়ে বসে রয়েছে। হাত পা সব অকেজো লাগছে।
কোন মতে উঠে দাড়াতেই ভদ্রলোক রাসেদের হাতে একটা ছোট্ট কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা ওদের বর্তমান বাসার ঠিকানা।

—-চলবে…..♦♦

রাসেদ কি অনুকে তার জীবনে ফিরে পাবে? আর শেফা? ঐ মেয়েটার কি দুষ? কার জীবনে কি মোর আসতে চললো।??
জানাতে ভুলবেন না।( ভুল ত্রুটি মাফ করবেন)
“—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here