সমাধি পর্ব-১২

#সমাধি ♦
#পর্ব —-১২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
______________________________

“—- আজকে শেফা ছাদে! এটা বেশ বিরক্তিকর লাগছে, ওর পাশে শুধু অনুকে দেখতে চেয়েছিলো তবে বিধাতার এতেও আপত্তি ছিলো।
— রাসেদ ভাই রাত ভর ছাদে কি করো রোজ রোজ!
আকাশ থেকে অমৃত পরবে সেই আশায় আসো?

” রাসেদ ভাই!!
আহ শেফাকে কত বলেছি রাসেদ ভাই জেনো না ডাকে।রাসেদ ভাই ডাক শুনলেই ওর বুকটা ছেত করে উঠে।
রাসেদ ভাই শুধুমাত্র অনু ডাকবে।আর কেউ নয় বাস…..

” শেফার দিকে তাকিয়ে আবার উপরের দিকে হা হয়ে রাসেদ।

– তোমাকে না বলেছি রাসেদ ভাই ডাকবে না। শুধু রাসেদে তোমার মুখ সীমাবদ্ধ হয় না কেন???
“- রাগ করলে??
— রাসেদ রাগ টা নিমিষেই লুকিয়েছে। ওর কি দূষ অযথা এই মেয়ের প্রতি রাগ করার মানে হয়?

” না রাগ করব কেন? তবে ভাই ডাকটা বন্ধ করো আমার ভালো লাগেনা।
– রাসেদকে ভাই ডাকলে ভালো লাগেনা তার মানে!! ও আমায় অন্য চোখে দেখে তাই তো বার বার ভাই ডাকলেই নাকে রাগ ভর্তি হয়। তাহলে কি রাসেদের মনে আমার জন্য জায়গাটা তৈরি হচ্ছে!!,
শেফাতো এই ভাই ডাকাকে নিয়ে অন্য রকমই চিন্তা শুরু করেছে।
” আসলে তুমি আমার থেকে তো বড় তাই রাসেদ ডাকতে একটু অন্য রকম লাগে!!!
—– ডাকবে তো আমাকেই, তাহলে আমিই যখন বলছি সমস্যা কি??
শুধু রাসেদ ডাকবে ওকে…

” দুজন কথাটুক বলে আবার চুপ।শেফার মন টা খারাপ দেখাচ্ছে। ভাই ডাকতে বারন করলাম তাই নাকি?
না ব্যাপারটা তেমন নয়,আসলে রাসেদের মা যে বললো মনের কথা না বলতে পারলে কাঁদতে হবে সেই কারনে।
পরিবেশটা একটু নরমাল করা দরকার তাই রাসেদই কথা শুরু করল।

—— মায়ের কাছে আমার নালিশ করছিলে??
” ওমা তোমার নালিশ কখন করলাম??
শেফা তো ভয়ই পেয়ে গেলো উনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলো।

‘— তুমি আমাদের কথা শুনছিলে লুকিয়ে থেকে???
” আরেহ না না মায়ের রুমেই আসছিলাম তখন শুনলাম তুমি মাকে বলছো,আমার কথা নাকি তোমার মাথায় ঢুকেনা।
বাস এটুকই.৷

আল্লাহ যাক বাঁচা গেলো, সে সব কথা শুনেনি।

— কি ভাবছো শেফা!!
“না কিছুনা,
– তা এখন বলো আমার কোন কথা তোমার বুঝতে কষ্ট হয়!! না বললে তো আর এর সমাধান হবে না।

” শেফা বেচারি কি বলবে? বলবে তোমার সায়েরি আমার মাথায় ঢুকেনা!!
না না এর চাইতে চুপ থাকি দেখি কি করে।

— রাসেদ শেফার উওর পেলো না, আর না এ নিয়ে মাথা ব্যাথা করছে। সামনের দিকে চোখ স্থির করে শেফাকে ডাকলো রাসেদ।
” শেফা!
— হুম বলো।
” তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানোনা।আর কাউকে ভালোকরে না জেনে, তার থেকে কোন আশা রাখা কি ঠিক!!
— তার মানে রাসেদ সব শুনেছে, শেফা হালকা হেসেই রাসেদের কথার জবাব দিলো।
‘ হুম কাউকে না জেনে তার থেকে কোন কিছু আশা রাখা ভুল।তবে যা জানার তা জেনেই মতি ভাই তোমার উপর ভরসা করে আমায় তুলে দিয়েছিলো তোমার হাতে।
তুমি আমার হাত না ধরলে হয়তো আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম,হয়তো বা কারো লালসার শিকার হতাম।
– আর মতি ভাইয়ের সিদ্ধান্তে আমিও খুশি।

” রাসেদ কিছুটা বিচলিত।শেফাও কথা কম জানেনা।
আসলে শেফা আমার থেকে তেমন কিছু আশা করে কষ্ট পাক তা চাইনা। ও বড় ভালো মেয়ে, ওর জন্য সব চাইতে বেষ্ট ছেলেই খুজবো, যাতে শেফা সুখে থাকে।আর যা আছে সব ওর স্বামীর হাতে তুলে দিতে পারলেই আমি আমার দায়িত্বের বুঝা নামাতে পারব।

“– শেফা তুমি আমার থেকে তেমন কিছু আশা করোনা যা আমি কখনোই দিতে পারব না।
কোন সম্পর্কে আমায় জরিয়ে না তোমার ভালো হবে না আমার।

— উঠে দাড়িয়েছে শেফা, কারন কোথায় জেনো রাসেদের কথায় আঘাত লেগেছে। তাই এখানে বসার ইচ্ছা নেই।
সব সম্পর্কের যদি নামই খুজো তাহলে কষ্ট হবে,আর যদি নাম ছারাই হয় তাহলে তো কষ্ট নেই তোমার!! এখন যে নাম ছারা একটা সম্পর্ক রয়েছে এটাই বা খারাপ কি!!
“- বসে থেকে শেফার দিকে হা হয়ে রাসেদ , আসলে শেফার কথাও রাসেদের মাথায় ঢুকেনা।

– রাসেদ,ভাইয়া আমায় তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলো।তাই আমার মতে তুমিই আমার সব। আর তোমার মনে আমার জন্যে কি আছে তা আমি জানতে চাই না।
যত দিন বেঁচে আছি ততো দিন তোমার পিছু ছারবনা। যদি এভাবেই থাকতে হয় তাতেও আমার সুখ। থাক না কিছু সম্পর্ক নাম হীনা হয়ে।
— রাসেদও শেফার বরাবর হয়ে দাড়িয়েছে। রাসেদ কিছু বলবে তার আগেই শেফা কাঁন্না জরিত কন্ঠে বলে উঠলো।

” আমার কান কেন ঠিক করলে রাসেদ! কানে কম শুনাটাও কিন্তু বেশ ভালো কষ্ট কম হত। না কিছু শুনতে পেতাম না কষ্ট হত। সবার প্রতি ভালোবাসাই থাকতো অভিমান নয়।
কানের অপারেশন করে আমার কষ্টের শেষ নেই। এখন সব শুনি , এমনকি কার বুকের ভিতরে কার নাম আছে সেটাও কানে বাজে।

” মুখটা গুমরা করে শেফা তার রুমে চলে গেছে।

— রাসেদ এখনও সেখানেই দাড়িয়ে। শেফাকে কাঁদছে তাতে কষ্ট হচ্ছে ওর।মতি ভাই যে বিশ্বাস করে আমার হাতে ওকে তুলে দিয়েছিলো,তার অপমাননা করছিনা তো আমি!!!

ভেবেছিলাম মেয়েটা বোকা সোকা।তবে না মনের ভিতর বহু অভিমান লুকিয়ে রাখতে জানে।সব কষ্ট সাইডে রেখে হাসতে জানে।
” ওর কথায় বুঝলাম অনুর ঘটনা সে জেনে গেছে।তাই তো বললো কানে কম শুনাই ভালো ছিলো। সব জেনেও না জানার ভান ধরে থাকা তো কেউ ওর থেকে শিখুক।

“- শেফার কথা সাইডে রেখে আবার অনুর ভাবনায় ডুব দিলো রাসেদ। তবে এখন বার বার শেফার কথা গুলো কানে বাজছে,যার কারনে অনুর ভাবনায় ডুব দিয়েও শেফার কাঁন্না কৃত চেহারা সামনে আসছে।

নাহহ শেফার জন্যে যত দ্রুত সম্ভব ভালো ছেলে খুজতে হবে।মেয়েটার এভাবে কষ্ট করার মানেই হয় না। অযথা মনের কোথাও না কোথাও আমায় নিয়ে ওর অনেক সপ্ন,তা স্পষ্ট দেখা যায়।

“——-★——

” শো- রুমে ঢুকে সব পর্যবেক্ষণ করায় ব্যাস্ত রাসেদ।কর্মচারি আরো কিছু দরকার। নতুন শো-রুমের জন্য কিছুটা কর্মচারী চাই। তাই পেপারে নিউজ দিয়েছে।তবে রাসেদ জানে আজ কাল তেমন কেউ পেপার পরে না তাই অন্য রাস্তা ভাবতে হবে।
আর অনলাইনের চাইতে ভালো কোন আইডিয়া মাথায় এলোনা রাসেদের।

ইশশশ,, শেফার কথাটা ভুলেই গেলাম।সবার আগে ওর জন্য ছেলে খুজতে হবে। পেপারে তো মাঝে মধ্যে দেখা যায় বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছে। আর অনলাইনেও যদি নজর রাখি তাহলে ভালো পাত্রের সন্ধান মিলতে পারে।

————- চার পাঁচ দিন ধরে পেপারে কি এত ঘাটিস রাসেদ! আর গোল গোল বৃত্ত আকিস!!!

,মায়ের কথার জবাব দিতে রাসেদ চোখটা একবার মায়ের দিকে ঘুরিয়ে সাথে সাথে পেপারে টিকিয়েছে।

,শেফার জন্য ভালো পাএ খুজছি.মা..
পিছন থেকে কারো হাত থেকে চায়ের কাপটা পরেছে সেই শব্দ অনুসরণ করে দেখলো কাপটা ভেঙে টুকরো টুকরো।
এখানে কে ছিলো তা বুঝতে বাকি নেই।
রাসেদ ভাবনায় বিভুর। মাথায় হাত দিয়ে সোফায় হেলিয়ে বসে পরেছে। রাসেদের মায়ের এবার উচ্চ কন্ঠ।কারন শেফাকে এভাবে সে কষ্ট দিতে পারেনা।যার জন্য শেফাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, সে তো তার সংসার দিব্যি চালাচ্ছে।শুধু আমার ছেলেটাই দেবদাস হয়ে রবে??
— রাসেদ এটা তর থেকে আশা করিনি। যদি সবার ভালো চাস তাহলে শেফাকে বিয়ে করে ঘর বাধ।তোকে অনেক কায়দায় বুঝাতে চেয়েছি।তুই আমার ইশারা বুঝিস না।নাকি বুঝতে চাস না। তাই সোজা করে আজ বলে দিলাম।

শেফাকে আমার পুত্র বধু হিসাবে দেখতে চাই..বাস কড়া আদেশ রাসেদের মায়ের।……

“রাসেদ কিছু বলবে তার আগেই একটা ফোন রাসেদের মুখে হাসি টেনে এনেছে।
রাসেদ তার মাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে উঠলো।মা অনুর খুজ পেয়েছি মা।আমার অনু ওর শহরে এসেছে। ও ফিরে এসেছে মা।
( অনুর খবর পাওয়ার জন্যে ঢাকায় লোক লাগিয়ে রেখেছে। ছবি দিয়ে বলেছে যেনো এই মেয়েটার দেখা পেলেই তাকে খবর দেয়া হয়। ওর বাড়ির পাশের দোকানেই বলা আছে এই বাড়ির মানুষ গুলো ফিরলেই তাকে জানাতে জেনো ভুল না করে।)

দৌড়ে রাসেদ তার রুমে গিয়ে গাড়ির চাবি আর প্রয়োজনীয় সব সাথে নিলো।ঢাকায় যাবে অনুকে দেখতে দূর থেকে দেখতে পেলেই হল।
—-আসতে দুদিন সময় লাগবে মা চলি… মায়ের থেকে বিদায় নিলো রাসেদ।
রাসেদের মা রাসেদকে বাধা দিতে গেলে শেফা তাকে বাধা দেয়।

যেতে দিন খালা। বনের পাখি খাঁচায় আটকে না নিজের সুখ না পাখির।
জোর করে কিছু নয় না খালা। ওর যা মন চায় করুন, কিচ্ছু বলবেন না। ওর মন মত সব হতে দেখেই আমার সুখ খুজবো…

“- রাসেদের মা শেফার হাত দুটো ধরে কান্নাই করে বসলো।
আমার ছেলেটাকি কোন দিন ঐ ছায়া থেকে সরে আসবে না শেফা!! ও কি নিজের জন্য ভাববে না। ওর চোখে কি তর চেহারা ভাসে না।

“- শেফার ছোট্ট উওর রাসেদের মায়ের সব কষ্ট দূর করে দিলো।

” মা যে ছায়ার পেছনে ছুটে তাকে আটকাতে নেই, আটকে রাখলে ছায়ার মোহ কাটবে না, এর চেয়ে ভালো ছেরে দিন , দেখবেন ক্লান্ত হয়ে ছায়ার পিছন ছেরে নিজের দিকে তাকাবে। তখন জানবে ছায়া কখনো ধরা পরে না। ছুটে বেরালে ছায়া ধরা যায় না।
ওর যা ইচ্ছা করুক,আমি ওর জন্য সারাজীবন পথ চাইবো। না হক সে আমার তবে তার উপস্থিতি জেনো আমার থেকে দূর না হয়।

চলবে…..❤️❤️.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here