সমাধি পর্ব-১১

#সমাধি ♦
#পর্ব -১১
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
“– মতি এত কষ্টে থেকেও শুধু ওর বোন বোনই করছিলো!
সি এন জি তে করে হাসপাতালে আনার সময় রাসেদ মতির মাথাটা নিজের শরিলের সাথে মিশিয়ে কান্নাই করে যাচ্ছিলো।
আমার জন্য সব হয়েছে মতি ভাই, আমি একটা অলক্ষনে মানুষ, যাকে ভালেবাসেছি সেই দূরে চলে যায়। নিজেকে বার বার দুষারুপ করে চলছে রাসেদ।

মতির শরিলের সমস্ত রক্তই মনে হয় রাসেদের গায়ে মেখে গেছে।
মুখটা কেমন সাদা ফ্যাকাশে হয়ে উঠছিলো।

-” না রাসেদ এতে তোমার কোন দুষ নেই।অযথা নিয়তির লিখনকে নিজের দুষ বলেনা।
তোমার অনু কে তারিয়ে দেয়ার পিছনেও নিশ্চয়ই কোন বড় কারন আছে।আর সেটাই হয়তো আমার জানা হবে না।
আসলে আমার সময় কম রাসেদ।

“- মতির গলায় যে ছোট্ট কাঁচ টা বিধেছিলো সেটা তো রাসেদ বের করেছে।তবে গলা দিয়ে রক্ত
বন্ধ হচ্ছেনা কত কাপর দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছে তবু ও না। কথা বলতে গেলে আরো বেশি রক্তক্ষরন হচ্ছে।
তাই রাসেদ মতিকে কথা বলতে বারন করে চলছে,তবে মতির অনেক কিছু বলার আছে অনেক।

” সেদিন হাসপাতালে নেবার সময়ই -মতি রাসেদের হাতটা ধরে বিনয় স্বরে রাসেদকে তার শেষ ইচ্ছা জানিয়েছিলো।

“– রাসেদ, ভাই আমার। আমার বোন শেফার আমি ছারা আর কেউ নেই দুনিয়ায়।
আমি যদি তোমায় কোন কথা রাখতে বলি রাখবে!!

— এক হাতে মতির হাত টা ধরে আর অন্য হাতটায় মাথায় হাত দিয়ে রাসেদ মতির সাথে কথা বলতে চাইছে।কাঁন্নার বেগে কথা স্পষ্ট আসছে না।

“- আপনি আমায় আপনার মনে ঠাই দিয়েছেন।ভাইয়ের কমতি পূরন করিয়েছেন। আপনার কোন কথা নয় বরং বলবেন আদেশ। আর সেই আদেশ আমার জীবন দিয়ে হলেও তা পূরন করব।

— এত কষ্টের মাঝেও মতির হাসি ফুটেছে মুখে, কারন মনে যে শান্তি লাগলো।
রাসেদ আমার যদি কিছু হয়ে যায়।তাহলে আমার বোনকে তুমি দেখো। আমার বোন কে তোমার ভরসায় রেখে যেতে চাই। আশে পাশে মানুষ তো বহু রয়েছে তবে আপন বলতে তোমায়ই লেগেছে।

“- মতি ভাই অলক্ষনে কথা বলবেন না।কিছু হবে না আপনার।
— আহ যা বলছি তার উওর দাও। একটু বিরক্ত মতি।কারন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ধিরে ধিরে কথা বলছে। আর এক কথা বার বার বলতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছেতো।

রাসেদ মতির কথা রাখতে শেফার সমস্ত দায়িত্বের বুঝা নিজের কাধে নেয়।

” আপনি চিন্তা করবেন না শেফাকে আমি আমার প্রান দিয়ে হলেও আগলে রাখবো।

— বড় শান্তি দিলে রাসেদ বড় শান্তি। মনে বড় স্বস্তি পেলাম। আমার যা আছে সব তোমায় দিলাম। আমার বোন ব্যাবসা বাড়ি সব।

–“”—না মতি ভাই এত বড় দায়িত্বের বুঝা আমায় দিবেন না। আমি বইতে পারব না। আপনার বোন আমার দায়িত্ব। তা আমি পালন করব তবে আপনার টাকা পয়সা আমার চাই না মতি ভাই।
– কষ্টের মাঝেও মতি হেসে উঠলো।ভাই ডাকছো আর ভাইয়ের দেয়া জিনিস ফিরিয়েও দিচ্ছো এটা কোন ধরনের ভাই???
তোমার কাছে শেষ অনুরুধ রাসেদ, সব ভুলে আমার বোনকে নিয়ে নতুন করে বাঁচো.. সব হারালে এর বিনিময় আল্লাহ কিছু তো পাইয়ে দেবে তোমায়।, আসলে তুমি শুরু থেকেই আমার পছন্দ ছিলে, বলা হয়নি ভেবেছিলাম পরে বলব,আর সেই বলা এভাবে হবে ভাবিনি রাসেদ।

“- কথা বলতে বলতে হাসপাতাল চলে এলো। মতির শেষ শব্দটা রাসেদকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছিলো। রাসেদ ভেবেছে মতি ভাই কিছু দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে ফিরে আসবো। তাই এসব কথা মাথায় এনে চিন্তা করা ঠিক নয়।

“- কই তা হল না।দুদিন হাসপাতালে থাকার পরেও অবস্থা আরো খারাপ হয়ে ছিলো। শেষ বার রাসেদ আর শেফাকে ডেকেছিলো।কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। মাথায় গলায় বেশ মোটা ব্যান্ডেজ বাধা। তাই রাসেদকে ইশারায় কাছে ডেকে শেফার হাতটা রাসেদের হাতে দিয়ে বিদায় নিয়েছিলো।।

কত বড় মনের মানুষ ছিলো মতি ভাই।মুখে ভাই ডাকেনি অন্তর দিয়েও তা মেনেছে। নিজের সব আমায় বিলিয়ে গেলো। আর তার বোনের দায়িত্বের ভার টাও।

তবে সেই দায়িত্ব থেকে পিছপা হব না।
সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই শেফাকে সাথে নিয়ে পথ চলা শুরু। দুজনে মিলে অনেক কষ্ট করেছে। মতির কোন আমানতের খেয়ানত করেনি রাসেদ।বহু কষ্টের পর আজ এতটুকু হয়েছে।শেফা বড় লক্ষী মেয়ে। ঠিক মতি ভাইয়ের মতই উদার।
শেফা তার ভাইয়ের মূত্যুর শোকটা কিছু কাটিয়ে উঠেছে।রাসেদের সাথে ঘুল মিলিয়ে গেছে।

— শেফার জন্যে রাসেদই তার সব। আর রাসেদের জন্যে শেফা ওর দায়িত্ব্য।

★বর্তমানে।

“- রাসেদের যা আছে সবই মতি ভাইয়ের দান।উনার দোয়া আর আল্লাহর মেহের বানিতে আজ এই অবদি আসা।

—–

” শেফা এই বাড়ির সব কাজ একাই সমালাচ্ছে। ওরা কাজ করে না এমন নয়।আসলে শেফা কাউকে কাজই করতে দেয়না। চেহারায় নয় কাজেও গুনবতী মেয়েটা।

আর রাসেদের মায়ের তো শেফাকে বেশ ভালো লাগে।এবার ছেলেটা সব ভুলে যদি এগুতে চায়,তাহলেই হল।

“- রাসেদের মা সব জানে।রাসেদ সবার থেকে লোকালেও মায়ের থেকে পারেনি সব বলেছে মাকে।বলে মন শান্ত করতে চেয়েছে তাই।
আর ছেলের হাল মাকে জানাবেনা তো কাকে জানাবে?

— আজও জানেনা রাসেদ অনু কোথায়, নিশ্চই বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে হেব্বি আছে।
আমার কথা কি ওর মনে হয়??
হয় তো হয়।ভালোর দিক না হলেও বেঈমানের দিক দিয়ে হয়তো। কতই না ভালোবাসতো, আমার জন্যে কাজের মেয়ে হয়েও কাটাতে রাজি ছিলো। জানিনা ঐ পুচকিটা শশুর বাড়িতেও এমন ছেলে মানুষি করে নাকি! ওর স্বামীর সাথে ওর সম্পর্ক কেমন? সব চিন্তায় শুধু অনু।

– অনু পাশে না থাকলেও, ওর কথা ভেবেই দিন রাসেদের এবং শেষ।
আলমারিটা খুলে বার বার ঐ নীল রঙের শাড়িটা জরিয়ে কাঁদে। এই শাড়িটা অনুকে দেয়া হল না। ইসস কত ভালো হত যদি দূর থেকে ওকে দেখতে পেতাম। এখন দেখতে কেমন হয়েছে অনু!!! ও কি শাড়ি পরে নাকি আগের মতই থ্রিপিস পরে!!
ওর যখন বাচ্চা হয়েছে তখন হয়তো পেটটা গুলু মুলু দেখতে হয়েছিলো। ভেবেই মুখে হালকা হাসি রাসেদের। সারা দিন একই ভাবনা।যেনো ভাবনার জগতের রাজা।

__________★

“— রাসেদের মায়ের মাথায় বেশ সুন্দর করে তৈল দিচ্ছে শেফা।
মুখে হাসি এনে চোখ বুজে রয়েছে রাসেদের মা। বেশ ভালো লাগছে ঘুম ঘুম ভাব আসছে,মেয়েটার হাতে জাদু আছে। শেফাকে এবার ডেকে বললো কি এভাবেই আমার সেবা করে দিন যাবে তর!!

” কি বললো খালা! বুঝতে না পেরে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে শেফা। রাসেদের মা চোখ বন্ধ করেও জানে শেফার নজর তার দিকে।তাই হালকা হেসে বললো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। একটু রাসেদের কাছে বসতে পারিস না।ওর মাথায়ও এক দিন তৈল মালিশ করিস।
—– রাসেদের মা কথা টা শেষ করতেই লাফ দিয়ে উঠেছে শেফা।তৈলের বাটিটায় নাড়া পরতেই টুং করে ফ্লোরে পরেছে।বাটিটা এখন নিচে ঘুরে ঘুরে একটা কানো ধরা শব্দ করছে।
এটার জন্য বাচঁলো শেফা নয়তো ওর হার্টবির্ট শোনা যেতো।

— এভাবে সাপের পা দেখার মত লাফালি যে!!
” খালা, ওর কাছে গেলেই কি সব বিরহ কবির মত কবিতা বলে।আর কি সব বলে আমি বুঝিইনা। একে তো কথার আগা মাথা মাথায় ঢুকেনা।তার উপর জিজ্ঞেস করে বসে কি বুঝলে বুঝাও। আচ্ছা খালা তখন কি বলবো বলো তো??

“- রাসেদের মা নিচ থেকে উঠে বসেছে খাটের কোনায়।শেফার হাতটা টেনে ধরে কাছে বসিয়েছে।

* আমার ছেলের জীবনে বড় ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের সময় বুঝতে পারেনি কতটা ক্ষতি হচ্ছে।তবে ঝড় টা থামার পর দেখতে পেয়েছে বুঝতে পেরেছে, ঐ ঝড় কতটা ভয়ানক ভাবে ওর ভিতরে জখম করেছে।

রাসেদের মা কথাটা বলে মুহূর্তেই শেফাকে বলে উঠলো শেফা তুই কি রাসেদের ঐ জখমের মলম হবি না!! আমার ছেলেটাকে স্বাভাবিক করে তুলবি না।

“- ডাকাতের কাছে চুরের বিচার চাইতে আসা হল। শেফা ভ্যাবাচেকা খেয়ে রাসেদের মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। উনার ছেলে কি কম ছিলো যে উনিও উপন্যাস আবৃত্তি শুরু করল।

— এই শেফা.. বল না…
” খালা আমি আসি রান্না ঘরে মনে হয় কিছু পুরছে নাকে গন্ধ আসছে।
শেফাতো ছুটলো তবে রাসেদের মা পিছন থেকেই বলে উঠলো জলদি আমার ছেলেকে শিকলে বাঁধ, নয়তো তর কপালেও চোখের পানি আছে দেখে নিস।মনের কথা বলতে দেরি করতে নেই।
শেফা ভাবনায় বিভুর হয়ে উরনা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে চলে গেলো,

“——-

“-ছাদেই রাসেদের থাকা হয় বৃষ্টির দিন হলে আলাদা কথা। তবে বৃষ্টি না থাকলে মধ্য রাত অবদি ছাদের কিনারায় বসে রয়।মনে হয় এই বুঝি অনু এলো।এসেই বলবে রাসেই ভাই তুমি এমন কেন? তোমার দেখা পাইনা কেন??? তুমি এটা করেছো ওটা করেছো বকা দিয়েছো। নানান অভিমানের বাক্স নিয়ে হাজির হবে।তার পর ওর কাধে মাথা রেখে চাঁদ দেখবে।

” —রাসেদের কাধে একটা নরম হাতে ছোঁয়া পরেছে।।
আচমকাই ওর মুখ দিয়ে অনু নামটা বেরিয়ে এলো….

অনু তুই এসেছিস!!!
তবে পিছন ফিরে তাকাতেই উজ্জল হাসিটা মিলিয়ে গেলো.. শেফা তুমি এখানে???

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here