#সমাধি ❤️
#পর্ব ——–২২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________________
“- রাসেদের মা কিছুটা তো বুঝতে পারল, অনু কি ছিলো আমার পাগল ছেলেটার জন্য।
তবে বড্ড দেরিতে। ঠিক আকলিমা বেগমের মতই……..
—- শেফাকে রাসেদের বাবা তার কাছে ডেকেছে।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে সত্যি মায়াও হচ্ছে।
কি করব এক দিকে ছেলের সুখ অন্য দিকে এই এতিম মেয়েটার অসহায়তা।
রাসেদের মায়ের জায়গায় থাকলে কি আমিও সেই কাজটিই করতাম!!!
— আর অনু মেয়েটা ওরই কি দুষ!! এমন মা বাবা থাকা মানে নরক ভ্রমণের চেয়েও কঠিন।
মেয়ের মন না বুঝে কি শাস্তিটাই দিলো দুজনকে।
প্রথম যদি সব মানতো তাহলে কি এসব হত! আর না মেয়েটা বিধবা হত।
রাসেদ আর অনুর জীবনটা অন্য রকমই হত। শেফা তার ভাইকে নিয়েই সুখে থাকতো।
গুরা থেকে দেখলে সব অনুর মা বাবার জন্যে ঘটেছে।
এখন আর এসব বলে লাভ নেই।
আল্লাহ আগে অনুর দেখা পাইয়ে দাও।তার পর সবাই বসে দেখা যাক কি হয়।
!————–
পর দিন সন্ধা— বাহিরে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে সব। সময়টা ৭ হবে হয়তো।এখন ঘড়িতে তাকানোর সময় কারো নেই। তবুও চোখটা বার বার ঘরিতেই।
-শেফা রাসেদের পথ চেয়ে।যদিও এতে রাসেদের কিছু আসে যায়না। আর কোন লাভও নেই।সাথে তো তার মনের মানুষ রবে।তার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকানোর সময় কই!!!
” শেফার অপেক্ষা শেষ হল।রাসেদ এসেছে সদর দরজায় দাড়িয়ে সবার দিকে এক এক করে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো।
— শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে সিরিতে পা দিয়েছে।
পিছন ডাক দেয়ার সাহস হচ্ছেনা করো, তবু তো জানতে হবে।যার জন্যে পাগল পারা হয়ে গেলো সেই অনু কোথায়?
” ধৈর্য্য কম রাসেদের মা রাসেদের চলন্ত পা থামিয়ে তার সামনে।
অনু কে আনলিনা যে? ও আসেনি!!
— প্রশ্ন এরিয়ে আবার পা চালাতে গিয়েও বাধা।
অনু অনেক কষ্ট পেয়েছে জানি বাবা। যদি ও আসতে মানা করে তাহলে চল আমি যাবো গিয়ে অনুকে ফিরিয়ে আনব চল…
না রাসেদের মাকে কিছু বললো না বাবার প্রশ্নের উওর দিলো সোজা চলে গেলো নিজ কক্ষে।
“- কেউ বুঝতে পারছেনা কি হল।অনু আসলোনা কেন? মনে হয় আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে।
কিনা কি বলেছি….
রাসেদ কাল ঠিকই বলেছে। আমি বদলে গেছি, নারী হয়ে আরেক নারীর কষ্ট বুঝা তো দূর, আরো বাড়িয়ে দিয়েছি।
আল্লাহ এর জন্য আমায় ক্ষমা করলেই হল।
আর রাসেদ – ও আমার সাথে এতটাই নারাজ যে আমার দিকে তাকাওনা অবদি???
“—
“- রাসেদ ওর রুমে ঢুকে আলমারি থেকে শাড়িটা নিলো।সেই নীল শাড়ি।
তবে শাড়িতে একটা গন্ধ পাচ্ছে।গন্ধটা নাকের কাছে নিতেই বুঝতে পারলো,যার জন্যে শাড়ি কেনা হয়েছে সে এই শাড়িতে হাত বুলিয়েছে। ওর শরিলে মেখেছে।হয়তো কেঁদেছে,,, তাইতো ওর শরিলের গন্ধ এখনও লেগে।
— তবে কাপরের ভাজে হাত দিতেই তার কলিজায় আঘাত। ডায়রি?? আমার ডায়রি কোথায়!!
এই বাড়িতে কারো সাহস হবে না ডায়রি ধরার। এটাকি আমার অনুরই কাজ??
ও কি করে জানলো? আমি না থাকা কালিন আমার জিনিস পত্র ঘেটেছে। হুমম।
নিজেতো গেলি আর ডায়রিটাও নিয়ে গেলি!!
তোকে হারানের নেশায় যা লিখতাম।তা আমার থেকে আরাল হয়ে পড়ে আমায় ভেবে কাঁদতে নিয়েছিস?
—
শেফা রাসেদের দরজায় দাড়িয়ে।
মুখ না ঘুরিয়েই রাসেদ বলতে পারে শেফা এসেছে। আর কেন তা তো জানাই।
” কি চাই!!!
— রাসেদ এত হেলে দুলে চলছে কেন?
শেফার এই প্রশ্নের সাহস না হলেও অনুর কথাটা জানতেই হয়। আসলে মেয়েটা কোথায়? কোথায় গেলো ওরা।
রাসেদ অনু এলোনা যে??
— রাসেদ শাড়িটা জরিয়ে ধরে খাটে ধপ করে শুয়ে পরেছে।
আর বির বির করে চলছে।
শেফা আমার অনু হারিয়ে গেছে।
আমার অনু অভিমান করে কোথায় জেনো লুকিয়েছে। কত খুজলাম পেলাম না। ঐ বাড়িতেও যায়নি। ভাড়া বাড়িটা অন্যদের ভাড়া দিয়ে দিয়েছে বাড়িওয়ালা।
কোথায় গেলো আমার অনু.. কোথায়??
ধিরে ধিরে রাসেদের গলার স্বর দমে এলো। চোখ বন্ধ করে কি সব বলছে। যা ওর মুখের কাছে গিয়ে বসলেও বুঝা যাবেনা।
তবে এত টুক তো বুঝা গেলো অনু ওর আগের ঠিকানায় নেই।
যা মোটেই ভালো খবর নয়।
রাসেদ আজ হারাম জিনিস গলা দিয়ে নামিয়েছে।তবে এটা এখন রোজ কার অভ্যাস না হয়।
প্রথম তারিয়ে দেয়া আত্মত্যাগ ছিলো তবে এবার তো অপমান হয়েছে
আর অনুর কতটা কষ্ট হয়েছে ভেবেই রাসেদের এত কষ্ট।
“- রাসেদ ঘুমিয়ে পরেছে।ওর পরনের জুতো গুলো খুলে পা দুটো ঠিক করে মাথার নিয়ে বালিশ দিয়ে ওর পাশে বসেছে।
কেন রাসেদ!! তোমার ভিতরে এত ভালোবাসা কেন? অনুর জন্য এত উতলা কেন তুমি? সবার জন্যে ভাবো একটি বার আমার জন্যে ভাবোনা! কেন তোমার ঐ বিশাল রিদয়ে আমার জন্যে একটু জায়গা হয় না।কেন আমার চিন্তায় তোমার কপালে একটি ভাজও পরেনা.. কেন কেন????
” শেফার এই চাপা কাঁন্না বা কথা একটাও রাসেদের কানে পৌছালো না। সে যে মাতাল হয়ে অনুর সপ্নে বিভুর হওয়া। সেখানে অন্যের প্রবেশ নিষেধ।
——————————★★
“২ মাস আজ। অনুর খুজ মিলেনি। রাসেদ এবার ও অনেক লোক লাগিয়েছে। এখন তো একটাই বাকি টিভিতে নিউজ দেয়ার।
রাসেদের মা আজ ২ মাস ধরে ছেলের সামনে থেকেও চোখের আরালে। বাবার সাথে হুম হ্যা বললেও আর কারো সাথে টু শব্দও হয়না।
” মিহার স্বামী জানালো রাসেদ দোকানের ধারে কাছেও যাচ্ছেনা। দিনের বেলায় অনুর মত কাউকে দেখলে পিছু ছুটে। মুখ দেখতে পলে চলে আসে।আর রাত কোন না কোন মদের আসরে।
রাসেদের বাবা রাসেদের মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ দিলো।
উনার শেষ কথাটাই ছিলো ” কি করে দিলে রাসেদের মা! আমাদের সহজ সরল ছেলেটাকে মাতাল করে তুললে? ওর শান্তি ওর আশা সব নিজ হাতে খুন করলে??
সে দিন রাসেদের মায়ের কোন উওর ছিলোনা। আর না আজ রয়েছে। এর পর থেকেই কথা বলা বন্ধ, নামেই শুধু এক ঘরে থাকা। এমনকি ঔষধ পর্যন্ত খায়না উনার হাতে।
“- এভাবে চললে ছেলের আশা ছেরে জীবন পার করতে হবে। এত দিন যাই ছিলো এত ভয়ানক তো ছিলোনা।
তবুও বলবো এই কয় দিন তো ভালোই ছিলো।সামনে যা দিন আসছে এর সামনে টিকে থাকলেই হয়।
“——★
মদের নেশায় আজও রাসেদ ডুবে।শেফা কোন রকম মিহার স্বামী সাহায্য নিয়ে মদের আড্ডা থেকে তুলে এনেছে।আজ কাল রাসেদের জন্য মদের ঘরটাও দেখা হল।
– কোন জায়গা বাদ রাখলো না রাসেদ। এই মদ খেলে যদি যন্ত্রণা ভুলা যায় তাহলে আমিও খাবো।
“—— রাসেদের মায়ের এক মাএ ভরসা শেফা, যদি সে একটু শক্ত হাতে রাসেদের হাতটা ধরে।
কি করে ছেলেকে শান্ত করব কি করে! অনু যে ভাবে মিলিয়ে গেলো এতে তো বুঝা যায় অনু আর ফিরবে না। ফিরার মত কোন রাস্তা সে রাখেনি।
অনু ফিরবেনা বলে আর রাসেদ রাগ হবে এই করবে সেই করবে বলে তো ছেলেকে মরণ পথে যেতে দিতে পারিনা।
ও আসবে এই আশায় তো ছেলের মরণ নিজ চোখে দেখতে পারব না।
“★★★—-
——-
আজও সারা দিন অনুর ছবি নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরেছে বাসের টিকিট কাউন্টার / রেল পথ সব জায়গায় খুজ চালিয়েছে।
আর সন্ধা হতেই ছাই পাস গিলে বাড়িতে ঢুকেছে।
তবে অবাক কান্ড আজ কেউ ওর জন্য বসে নেই।না মা না শেফা। কত বসে রবে, ভালোই হয়েছে রোজ রোজ আমায় নিয়ে চিন্তায় না করলেই হল।
হেলে দুলে রুমে ঢুকে চটাং করে শুয়ে পরেছে।বাস দুনিয়ায় আর খোঁজ নেই।
খিদে!! তা তো কবেই মরে গেছে।
——– ভোরের আলো ফুটেছে অনেক আগেই। জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রৌদ্র গায়ে মাখতেই রাসেদের ঘুম কাটলো।
মাথাটায় হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখা পেলো তার মায়ের।
মাথা নত করে কোন শব্দ ছারা মাকে এরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।তবে ব্যার্থ কড়া চোখ নিয়ে ওর সামনে ঠায় দাড়িয়ে। হাতে এক গ্লাস দুধ।
রাসেদের সামনে দুধ টুকু দেখিয়ে রাসেদের মায়ের অভিমানি স্বর।
” হাতে যে দুধের গ্লাসটা দেখছিস এতে বিষ মেশানো রয়েছে। আজ সবার হাতেই এক গ্লাস দুধ আর তাতে রয়েছে বিষ মিশানো। রাসেদ মাথা উচু করে মায়ের দিকে তাকাতেই রাসেদের মা মাথা নারিয়ে বলে দিলো, না না তোকে খাওয়াবোনা। তুই তো তর মতই থাকবি।আমাদের চিন্তা তো তর হয়না। তাই সবাই এক সাথে তরই সামনে বিষ খেয়ে মরব। তার পর যা ইচ্ছে তুই করিস না বলার কেউ না দেখার।
রাসেদ কিছু বলার আগেই রাসেদের বাবা বোন শেফা সবাই দুধের গ্লাস হাতে।
সবারটা বুঝলাম শেফাও!!
শেফা তো ওর মায়ের কাছে পরাজিত হয়ে রাসেদের ভালো ভেবেই…
” কি সব নাটক হচ্ছে??
কড়া মেজাজি স্বরে হলেওআজ কেউ ভয় পাবেনা রাসেদ কে।
নাটক বলছিস তো! এই নাটক আমাদের কবরে যাবার পরেই শেষ হবে একটু সবুর কর।
— বাবা, মিহা তোমরা কি দুধের গ্লাস হাতে মায়ের সাথে তালে তাল দিচ্ছো, আর শেফা তুমিও??
“প্রশ্নটা শেফার কাছে আসতেই ওর মাথা নত।
নাটক না রাসেদ আজ হয় তুই আমাদের সুখের জন্য অনুকে ভুলে শেফাকে বিয়ে করবি।আর নিজের জীবনটা সাজাবি।নয়তে এই রইলো বিষ আমরা মরার পর সব তর মর্জি হবে।
“- কি পাগলামু এসব!!
রাসেদের মা তো দুধ মুখেই তুলে নিয়েছে।ছেলের চেয়ে আমার জেদ কম নাকি?
পলকের মধ্যেই রাসেদের মা এটা কি করে বসলো।রাসেদ তার মায়ের থেকে গ্লাসটা নিয়ে আছরে ফেলেছে।
– এখন তো ফেলে দিলি তার পর? তুই রাজি না হওয়া অবদি আমরা যাচ্ছিনা।আর যদি না হস আজ কে আমাদের সবার শেষ দিন। জানাজা টা অন্তত্ব্য দিস সময় পেলে, তর তো ছায়ার পিছন ছুটে অভ্যাস।তুই ছায়া নিয়েই বেঁচে থাক।আমরা তর ছায়ার মোহে বাচঁতে পারব না।
রাসেদের বাবা দুধ টুক মুখের সামনে নিয়ে বলে উঠলো।আর পারলাম না বাপ। তর ইচ্ছে মানতে পারলাম এত দিন আর আমাদেরই ইচ্ছের দাম তর কাছে নেই,তা জেনে বেঁচে থেকে কি লাভ।
বাবা..বলে কাছে গিয়ে রাসেদ তাদের সিদ্ধান্তে রাজি।
বাবা এসব ছারো তোমরা যা বলবে তাই হবে।তবু আমায় এতিম করে দেবার চিন্তা করো না বাবা প্লিজ।
শেফার চোখে আজও জল তবে সুখের।হাত থেকে দুধের গ্লাসটা ফেলে।দৌড়ো চলে গেছে ওর রুমে।আজ কাদঁবে সে মন ভরে কাদঁবে।আজ সুখের কান্না করবে।
রাসেদের মা ভাবতেই পারেনি এত সহজে কাজ হবে।
ভেবেছিলো আরো অনেক রকম ব্লেকমিল করতে হবে।তবে যাই হক রাজি হয়েছে তাই দেরি নয়। কাল পরশুর মধ্যেই সব মিটিয়ে নিতে হবে।
রাসেদেরও মাথা ঠিক নেই।একি বলে বসলাম। আমার অনুকে এত বড় ধোকা?
আমার অনুর স্থানে অন্য কাউকে বসানো। কি করব আমি। একদিকে জন্ম দাতা বাবা মা, অন্য দিকে নিজের ভালোবাসা।
শত দ্বিধায় রাসেদ ভুগছে। রাসেদের মা রাসেদের কপাল চুমুতে ভরিয়ে তুলছে।
রাসেদ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চোখ ভেজাচ্ছে তবে এরই মধ্যে একটি ফোন আরো রাসেদের জন্য মুসকিল করে তুললো।
— হ্যালো..
” রাসেদ ভাই।
” চোখ কপাল কুচকে রাসেদ হ্যা সূচক জবাব। গলা টা পরিচিত। হ্যা রাসেদ বলছি।
কে??
— রাসেদ ভাই আমি, আমি তপু।
(চলবে)