তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -২৪+২৫

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৪
Tahrim Muntahana

জগিং স্পটের একটু দূরেই একটা পার্কে হৃদান হৃদিতারা বসে আছে। আহিল কে কোনো সত্য এখন পযর্ন্ত জানানো হয়নি। তখন ওরা বলতেই যাচ্ছিলো মাঝপথে থেমে যায়।

ফ্লাসবেক

হেই দাড়াও তোমরা। আজকে বলা যাবে না। আমাদের হাতে যেহেতু ১০ দিনের মতো সময় আছেই সেহেতু আজকেই বলা বোকামো হবে। আমাদের ভুল বুঝতে পারে -হৃদিতা

হ্যাঁ হৃদপরী ঠিকি বলছে। আজকেই প্রথম দেখা আজকেই যদি মিথ্যে হয় তাহলে মাথা বিগড়ে যেতে পারে। আর রাগের মাথায় যদি জেদ করে বিয়ে করে তখন -হৃদান

না এ হতে পারে না আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে খেতে পারবো না -পিয়াস

তোমার মাথা ফাটামু বলদের মতো কথা বলছে। এদিকে টেনশনে বাঁচিতে -রোহানি

আমারো মনে হচ্ছে ভাইয়া এখন বলা ঠিক হবে না -নাশিন

আগে অরনি কে ভালোবাসুক আজকে তো ভালো লেগেছে -সোহা

হ্যাঁ ভালোবাসার পর সব জানালে কিছু মনে করবে না -পিয়ানি

হুমম হৃদরাজ যাও ওদের নিয়ে আসো -হৃদিতা

হুমম ওকে হৃদপরী -হৃদান

হৃদান সোহা পিয়ানি তিনজনে এগিয়ে গেল ওদের দিকে। আহিল অরনিকে কিছু বলতে চাচ্ছিলো আবার কিসের একটা বাঁধার জন্য বলতে পারছে না। নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে বলবে কি বলবে না। তখনি অনেকগুলো পা দেখে উপর দিকে তাকিয়ে হৃদান কে দেখে বিষ্ময়ে হা করে রইলো। হৃদান কে যে এইভাবে দেখবে ভাবতেই পারে নি।

অরনি এখানে কি হয়েছে দাড়িয়ে আছিস কেন? আর ইনিই বা কে? -হৃদান

আসলে হয়েছে টা কি -অরনি

ভুমিকা না করে সোজা বল -সোহা

আসলে একটা ছেলের কথা বলছিলাম না যে ডিস্টার্ব করে ওই বদলোক আজকেও এসেছিলো। আর ও হচ্ছে আহিল খান -অরনি

সাগরকে বদলোক বলতেই সাগর রেগে অরনির দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর রিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিলো বলে দূরে গিয়ে কিছুক্ষণ হেসে এসেছে। পিয়ানি আর সোহা অরনির কথা শুনে অবাক হওয়ার ভান করে চিল্লিয়ে উঠে

কিহহহ এই আমাদের বাঁশ আহিল খান -পিয়ানি

হোয়াটটট কে বাঁশ -আহিল

আর বইলেন না ভাই আপনি হইলেন অরনির ক্রাশ আর আমাদের বাঁশ -সোহা

আহিলের ওদের কথা বুঝতে পারলো না হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকলো। হৃদান বুঝতে পেয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো

হাই আমি হৃদান চৌধুরী হৃদতান ইনড্রাস্ট্রিজের ওনার -হৃদান

মি চৌধুরী আপনাকে কে না চিনে বলুন। আপনি এখানে? চিনেন এই পাগল কে -আহিল

অরনি কে দেখিয়ে বলল। পাগল বলায় অরনি তো ক্ষেপে আগুন। সোহা আর পিয়ানি ফিক করে হেসে দিলো তা দেখে অরনির রাগ আরো বাড়লো। রাগে অরনি আহিল কে মারতে লাগলো

তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে পাগল বলিস। তুই পাগল তোর বউ পাগল তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল -অরনি

আহিল অরনির দুহাত ধরে আছে অরনি ছুটোছুটি করছে

আরে আরে এমন করছো কেন আচ্ছা যাও বাবা সরি। তুমি তো কিউট গুলুমুলু সুন্দর মেয়ে। যে তোমাকে পাগল বলবে সেই পাগল -আহিল

হয়েছে এখন চল অরনি। আর হ্যাঁ অরনি আমার ফ্রেন্ড। তো আসি। এই হলো আমার ভিজির্টি কার্ড কোনো দরকার হলে আসবেন -হৃদান

থ্যাংকস মি. চৌধুরী -আহিল

বর্তমান…

সাগর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আর সবাই এটাওটা বলে হাসাহাসি করছে।

অরনি তুই সত্যি পাগল। রাগ উঠলে তুই সবকিছু ভুলে যাস। যেভাবে মারতেছিলি মি আহিল কে তোকে যদি ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিতো তখন -পিয়ানি

তখন আর কি হতো এক চড়েই দাঁত লেগে যেতো হাহাহা -সোহান

যা বলেছিস সোহান শেষে আমি প্রচার করতাম ক্রাশের হাতে চড় খেয়ে পার্কে অজ্ঞান হয়ে গেলো অরনি রহমান হাহাহা -সোহা

তবে রে আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাকে সে মারতেই পারতো না কারণ দেখেছিলি কিভাবে তাকিয়ে ছিলো -অরনি

ঠিক বলেছ আপু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিলো -রাহি

আচ্ছা শুনো কালকের প্লেন কি -রাইসা

কালকে কেন আজকে বিকেলের জন্য আরককটা প্লেন করি -আনহা

নাহ আমার এখান থেকে যেয়ে অফিস যেতে হবে। এখন যদি সব কাজ ফেলে রাখি সামনে বিয়ে তখন ঝামেলা হবে -হৃদান

হ্যাঁ আমাদের ও যেতে হবে। সব কাজ আগেই গুছিয়ে রাখতে হবে -পরশ

আচ্ছা তাহলে কালকে বিকেলে একটা প্লেন হবে -আধির

হুমমম কালকে ফাটাফাটি একটা প্লেন করতে হবে -রিয়া

এই সাগর তুই এমন চুপ করে আছিস কেন – সোহা

বেচারা নাগ করেচে -রাইসা

আমি বদলোক আমি লুচ্চা? আমি কথা বলবো না কারো সাথে হুমম। যার জন্য করা চুরি সেই কই চোর -সাগর

ওরে ওরে সাগু সোনা নাগ করেচে বুঝি। আচ্ছা সরি -অরনি

বউয়ের সাথেই এই পযর্ন্ত ঠিকঠাক রোমান্স করতে পারলাম না আমাকে লুচ্চা বানাইদিলো -সাগর

সাগরের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো আর রিয়া কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। হৃদিতা কিছু বলছে না। কি যেন ভাবছে

হৃদিপাখি কি হয়েছে তোমার -পরশ

চুপ করে আছো কেন হৃদিরানী আপসেট তুমি? -নাশিন

না ভাইয়া তেমন কিছু না -হৃদিতা

হৃদপরী কি হয়েছে বলো -হৃদান

কিছু হয়নি চলো বাসায় যাই -হৃদিতা

হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো আমার খুব খিদে পেয়েছে -পিয়াস

খিদে তো পাবেই পেটুক কোথাকার -রোহানি

হেই রোহু তুমি আমাকে এইভাবে ইনসাল্ট করতে পারলে আমার একটা প্রেসটিজ আছে না -পিয়াস

তুই চুপ থাক হাদারাম। মাকে নিজের পছন্দের কথা বলতে পারে না আসছে প্রেসটিজ নিয়ে। এক নাম্বারের বলদ -রোহানি

আমাকে চ্যালেন্জ করছো এই পিয়াস আনাফ কে? আচ্ছা আজকে মাকে যদি না বলছি আমি আর মুখ ই দেখাবো না হুমম -পিয়াস

যাও যাও তোমাকে চেনা আছে -রোহানি

হয়েছে থাম তোরা এখন চল আমারো খুব খিদে পেয়েছে -রাহি

সবাই হাসিমজা করতে করতে যে যার বাসায় চলে গেলো। হৃদিতা রিয়া রাইসা রোহানি রাহি আধির সাহিল এসে নাস্তা করে ভার্সিটি চলে গেলো। আনহা নিজের কলেজে। পরশ নাশিন হৃদান সাগর সোহান যে যার অফিসে চলে গেলো। পিয়াস আজ কোথাও যাবে না মাকে পটানোর ফন্দি করেছে। পিয়াস কিছুক্ষণ ভেবে ওর মার কাছে গেলো

আম্মু আম্মু শোন না আম্মু

কি হয়েছে তোর? আসার পর থেকে আমার পিছে পিছে ঘুরছিস কেন?

শুনো না আম্মু তুমি তো আমার সোনা আম্মু তাইনা

এই তোর মতলব ভালো ঠেকছে না তো। যা বলবার আছে তাড়াতাড়ি বল আমার কাজ আছে

আবব আম্মু আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসি সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। চার বছরের রিলেশন আমাদের। আম্মু তুমি প্লিজ রাগ করো তোমাকে বলবো বলবো করে বলা হয় নি

পিয়াস চোখ বন্ধ করে একদমে কথা বলে চোখ খুলতেই মায়ের আগুন চোখ দেখে শুকনো ঢুক গিলে যেই না দৌড় দিতে যাবে ওমনি কারো হাসির শব্দে থেমে গেলো। পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর মা হাসছে। প্রাণবন্ত হাসি। পিয়াস বুঝে নিয়েছে তার মা রাগ করেনি।

তুই কি ভেবেছিস তুই প্রেম করবি আর আমি জানবো না

মানে

মানে তোমাকে মানে বুঝাচ্ছি। হতচ্ছাড়া কি সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়ে তোর মতো গাধার প্রেমে কি করে পড়লো বলতো

তুমি জানো সব? চিনো রোহু কে

জি হ্যাঁ আমি আপনার রোহু কে চিনি। হৃদিতা না বললে তো চিনতাম ই না

মা তুমি রাগ করো নি তো

নারে বোকা ছেলে আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে রোহানিকে। দেখতে কি মিষ্টি তেমনি ব্যবহার ও খুব সুন্দর। তার মধ্যে বাস্কেটবল খেলোয়াড়, দুষ্টু সব মিলিয়ে আমি যেমন আমার জন্য মেয়ে আর আমার ছেলের জন্য বউ চাইতাম ঠিক তেমনি পেয়েছি। তাই আমি খুব খুশি

সত্যি মা আই লাভ ইউ মা উম্মা

হয়েছে হয়েছে আর ডং দেখাতে হবে যা সর আমাকে কাজ করতে দে

কিন্তু মা ওর তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমি কিন্তু ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না

আরে পাগল ছেলে হৃদিতা মা আর হৃদান আছে তো ওরা সামলে নিবে সব। তুই চিন্তা করিস না আর তাও যদি তোর শশুড় না মানে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবি দেখবো তার এত বাহাদুরি কই থাকে

ওহ মা তুমি আসলেই সুপার হিরো না হিরোইন। আমার সোনা মা। আমি যাই ওদের খবর টা দিয়ে আসি

পরশ চলে গেল ওর মা হালকা হেসে কাজ করতে লাগলো। দুপুরের কিছু সময় আগেই আজকে হৃদিতা দের ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে। হৃদিতা আর রিয়া ঠিক করেছে আজ অফিসে যাবে লাঞ্চ করতে। রোহানিকে ওর বাবা তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে বলে ও হৃদিতাদের সাথে গেলো না আর সবাই ও যে যার বাড়ি চলে গেলো। যথারীতি হৃদিতা রিয়া বেরিয়ে পড়লো। বেশী সময় লাগবে না। রাহি আজকে গাড়ি নিয়ে আসেনি। বাসা থেকে রাগ করে চলে এসেছে। সব বান্ধুবীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে রাহির বাবাও চাচ্ছে রাহিও বিয়ে টা করে ফেলুক। কিন্তু ও তো একজনের জন্য অপেক্ষা করে আছে। সেতো পরিষ্কার করে বলছেও না ভালোবাসে তাই অপেক্ষা করছে কবে বলবে। রাহি একটু শপিং এ যাবে আজকে তাই রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছু সময় পর রিকশা পেতেই তাতে চেপে বসলো। ২০ মিনিটের মাথায় শপিং মলে পৌঁছে গেলো। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে চলে আসবে তার আগেই সামনের দৃশ্য দেখে ওর পা আপনাআপনিই থেমে গেলো। নড়ার শক্তি টুকু পাচ্ছে না মনে হচ্ছে। তার সামনেই তার ভালোবাসার মানুষটা অন্য জনের হাত ধরে হাটছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। নিজেকে সংযত করে সোহান কে ফোন দিলো। রিং হয়ে কেটে গেল সোহান দেখেও ধরলো না। আবার দিলো ধরলো না। দেখেও ধরলো না। তিন বারের সময় ধরলো

হ্যালো সোহান কোথায় আপনি

আমি তো বাড়িতে। কেন কি হয়েছে রাহু

না এমনি আমি একটু শপিং মলে আসছিলাম কেনাকাটা করতে। মনে হলো আপনার মতো কাউকে দেখলাম একটা মেয়ের হাত ধরে ঘুরতে। আমারি মনের ভুল হবে হয়তো তাইনা। আপনি তো বাড়িতে যাই হোক এখন রাখছি বাই

রাহি ফোন কেটে দিয়ে আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না বের হয়ে গেল। আর সোহান হতভম্ব হয়ে ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আশেপাশে তাকালো। নাহ নেই তো। সোহান ও আর থাকলো না বের হয়ে এলো শপিং মল থেকে। রাহি ওকে ভুল বুঝলো। রাহি সোজা বাড়ি এসে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। এত কষ্ট হচ্ছে কেন, ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন।সেই কখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে এর মধ্যে যে রাহির মা অনেকবার ডেকে গেছে শুনেই নি। শেষমেষ রাহির মা বুঝলো তা মেয়ে রাগ করেছে বিয়ের কথা বলায়। তাই রাহির বাবা কে বললো বিয়ের বিষয়ে কিছু না বলতে। মেয়ে যেমন থাকতে চায় থাকুক। বাবাও মেনে নিয়েছে বড্ড আদরের মেয়ে যে।

অন্যদিকে রিয়া হৃদিতা অফিসে ঢুকতেই সবাই সালাম দিয়ে কথা বললো। তাদের ভাইয়েরা এখন মিটিংয়ে আছে। কিন্তু হৃদিতার বেশ ক্ষিদে পেয়েছে। সকালে তাড়াহুড়ায় খেতে পারেনি। হৃদিতা খিদে পেলে বেশীক্ষণ না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চোখ লাল হয়ে যায়। শরীর কাঁপতে থাকে। এখনো এমন হচ্ছে ওর কিন্তু রিয়াকে বুঝতে দিচ্ছে না। তাও রিয়া বুঝে গেলো। জলদি মিটিং রুমেই চলে গেলো। পরশ খুব ইমপরটেন্ট বিষয়ে মিটিং করছে। মধ্যে অন্য কারখানার মালিক ও আছে। আর পরশ ভেবেছে হৃদিতাদের ভার্সিটি দুটোই ছুটি দিবে,দেড় টায় মিটিং শেষ হলে অনায়াসেই যেতে পারবে।
মিটিং রুমে পরশ লেকচার দিচ্ছিলো তারপাশেই নাশিন ও পরশ কে সাহায্য করছিলো। মিটিং রুমের দরজায় গার্ড দাড়ানো আছে। হৃদিতা রিয়া ওদের দেখে তাড়াতাড়ি গেলো কারণ পরশ ডিস্টার্ব করতে বারণ করেছে।

মেম স্যার ইমপরটেন্ট মিটিয়ে আছে। ভেতরে কাউকে যেতে নিষেধ করেছে -গার্ড

এখন আপনার সাথে কথা বলার সময় নেই ভেতরে যেতে হবে -রিয়া

গার্ড কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদিতা গার্ডের দিকে তাকাতেই গার্ড ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো। গার্ড মনে করেছে রেগে আছে কিন্ত আসলেই তা না হৃদিতার খিদে সহ্য করতে না পেরে চোখ লাল হয়ে গেছে। হৃদিতা আর রিয়া মিটিং রুমে প্রবেশ করলো। হটাৎ করে দরছার শব্দ হতেই সবাই বিরক্তিতে তাকালো, পরশ রেগে তাকাতেই তার বোনদের দেখতে পেতে হাসি দিতে গিয়েও থেমে গেলো।

ভাইয়ু হৃদিরানীর খুব খিদে পেয়েছে

রিয়ার কথা শুনে হৃদিতাকে ভালো করে দেখেই পরশের বুকটা ধক করে উঠলো। বোনের একটু কষ্টও সহ্য হয়না। নাশিন দৌড়ে বাইরে চলে গেলো বোনদের জন্য খাবার আনতে। পরশ ও দৌড়ে গিয়ে হৃদিতাকে কোলে তুলে নিজের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে রিয়াকে পাশের চেয়ারে বসতে বলে নিজেও চেয়ারে বসে হৃদিতার মাথা বুকে চেপে রেখেছে। তাড়াতাড়ি পানি খাইয়ে দিলো। এর মধ্যেই নাশিন খাবার নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো। পরশ আগে হৃদিতাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। হৃদিতার খাওয়া শেষ হতেই হৃদিতা একটু সুস্থ হলো। চোখ লাল কমে আসছে। তবুও শরীর দুর্বল লাগছে।টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলো

ভাইয়ু রিয়া আর নাশু ভাইয়াকে খাইয়ে দিয়ে তুমি খাও আমি ঠিক আছি

হৃদিতার কথায় ওরা একটু স্বস্থি পেলো তারপর পরশ ওদের দুইজন কে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। ম্যানেজার অনেক আগেই মিটিংয়ের সময় একটু পিছিয়ে দিয়ে ওনাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছে। পরশ খেয়ে উঠতে কেউ পাগলের মতো দৌড়ে মিটিং রুমে প্রবেশ করলো। মানুষ টাকে দেখে ওরা সবাই অবাকই হয়েছে বটে তারপর আবার এমন পাগল পাগল অবস্থা দেখে বুঝলোনা কি হয়েছে……
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৫
Tahrim Muntahana

হৃদান দৌড়ে অফিসে ঢুকেই হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। হৃদিতা খুব অবাক হয়েছে। এখন কেউ ই হৃদান কে আশা করেনি। কারণ হৃদান নিজেও মিটিংয়ে ছিলো।

হৃদপরী এখন কেমন লাগছে? ঠিক আছো তুমি? খারাপ লাগছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে। নিজের প্রতি এত হেয়ালি কেন হৃদপরী। আমার তো নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিলো যখন তোমার অসুস্থতার খবর শুনলাম। আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো তুমি?

একদমে কথাগুলো বলে জোরে দম নিলো। একটুর জন্য আত্মা টা বেরিয়ে যাচ্ছিলো। হৃদানের ব্যকুলতা দেখে হৃদিতা মলিন হাসলো। হাসিটা হৃদানের একদম পছন্দ হয়নি। কোলে তুলে নিলো। আচমকা কোলে তুলাতে হৃদিতা হকচকিয়ে উঠলো।

পরশ আমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। চিন্তা করিস না তুই এদিকটা সামলে তারপর আয়। রিয়ু বনু চল -হৃদান

পরশ হৃদিতার কপালে চুমু দিতেই নাশিন ও আদর করে দিলো। রিয়াকে বাদ যাবে কেন রিয়াকেও দুজন আদর দিলো। তারপর হৃদান হৃদিতাকে নিয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে পিছুপিছু রিয়া এলো। অফিস স্টাফদের সামনে দিয়ে যেতেই সবাই কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়া হালকা হাসলো। ওরা এতক্ষণ হৃদানকে নিয়েই কথা বলছিলো। এতবড় বিজনেস ম্যান এইভাবে হন্তদন্ত হয়ে পাগলের মতো দৌড়ে উপরে যেতে দেখলে কে অবাক হবে না তারপর হৃদিতা চৌধুরী কে কোলে নিয়ে বের হচ্ছে। রিয়া কিছুদূর যেতেই আবার থেমে গেল। স্টাফদের কাছে যেয়ে বলল

সামনে আরো কিছু দেখার বাকি আছে এখন আপনারা কাজে মন দিন। ভালো থাকবেন আসি

বলেই মুচকি হেসে চলে আসলো। হৃদান গাড়িতে গিয়ে বসেছে। হৃদিতাকে ফন্ট সিটে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে হৃদিতাকে বুকে টেনে নিলো। হৃদিতাও চুপটি মেরে বুকে মুখ গুজে রইলো। এই জায়গাটা যে খুব শান্তির জায়গা। রিয়া তাড়াতাড়ি এসে পেছনে বসতেই হৃদান গাড়ি স্টার্ট দিলো। পূর্ব থেকে একহাতে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলো বলে হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরে গাড়ি চালাতে হৃদানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দূর্বল থাকায় হৃদিতা হৃদানের বুকেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই হৃদান আর হৃদিতা কে জাগালো না ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে তুলে নিলো। এই ভাবে হুট করে কোলে তুলায় হৃদিতা পিটপিট করে একটু তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। হৃদান হালকা হেসে এগিয়ে গেলো। রিয়া ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো তার পাশেই কয়েকজন মেইড ও বসে ছিলো। অনেক আগে থেকেই এমন করেন। তারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে বলে কি তারা মানুষ না? তারা খেটে খায় তাদের আত্মসম্মান আছে বলেই। আত্মসম্মান না থাকলে মানুষের কাছে হাত পাততো। প্রথম প্রথম বাড়ির মালকিনদের সাথে বসে টিভি দেখতে ইতস্তত করলেও এখন আনন্দেই দেখে। এইভাবে মেয়েকে হৃদানের কোলে দেখে পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী বিচলিত হয়ে যায় সাথে মেইড গুলাও। পরশী চৌধুরী কিছু বলবে তার আগেই হৃদান ইশারা করে কিছু না বলতে।

মামুনি হৃদপরীর কিছু হয়নি। ঘুমিয়েছে তাই আমি ওকে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে আসি। তারপর তোমার সাথে কথা বলছি

বলেই হৃদান উপরে চলে যায়। রিয়া কিছু না বলেই আগে ফ্রেস হবে বলে চলে যায়। হৃদান হৃদিতাকে ভালো করে শুয়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে প্রেয়সীর কপালে দুই গালে চুমু দিয়ে বের হয়ে আসে। এসেই সোফায় ধপ করে বসে পড়ে।

ছোট আম্মু তোমার হাতের স্পেশাল কফিটা খাবো আর মামুনি তোমার হাতের মজার নুডলস টা -হৃদান

তুমি বস আমি এখনি নিয়ে আসছি বানিয়ে আমার সোনা ছেলে -নিশি চৌধুরী

আচ্ছা তুমি রিয়ার সাথে গল্প করো আমিও আসছি -পরশী চৌধুরী

হৃদান কথা না বলে মুচকি হাসলো একটু রিয়াও এসে পড়লো।

হৃদ ভাইয়া তুমি জানলে কেমনে হৃদরানী অসুস্থ হয়ে পড়েছে -রিয়া

তোদের পিছে আমার গার্ড অলটাইম থাকে।তোরা যখন গাড়িতে উঠছিলো তখনি আমাকে গার্ড ফোন দিয়ে বলে হৃদপরীর আচরণ স্বাভাবিক লাগছে না। কেমন যেন হাত পা কাঁপছে। তারপর ও তুই চিন্তিত হয়ে পড়বি বলে নিজেই ড্রাইভ করেছে। যখন গাড়ি পার্ক করে নামলি তখনি হৃদিতার চোখ দেখে বুঝে যায় অসুস্থ আর আমাকে জানায়। আমি ছিলাম ইমপরটেন্ট একটা মিটিংয়ে নিউজটা জানার সাথে সাথে দৌড়ে চলে আসি। এতক্ষণে মনে হয় ম্যানেজার মিটিং কেন্সেল করে দিয়েছে -হৃদান

মিটিং কেন্সেল করেছ সমস্যা হবে না ওনারায় বা কি ভাবলো -রিয়া

মানুষ কি ভাবলো না ভাবলো আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাছে সবার আগে আমার হৃদপরী। আর হৃদান চৌধুরীর সাথে ডিল করা এ সহজ না বনু -হৃদান

আই সি -রিয়া

ওদের আড্ডা দেওয়ার মাঝখানেই নিশি চৌধুরী হৃদানের জন্য কফি আর রিয়ার জন্য চা নিয়ে আসলো।

নাও বাচ্চা তোমার কফি -নিশি চৌধুরী

হ্যাঁ দাও ছোট আম্মু। আর তুমি বসো -হৃদান

হুমম বসছি। তা তোমার ব্যবসায় কেমন চলছে -নিশি চৌধুরী

আমার ব্যবসায় বরাবর ই বিন্দাস চলে ছোট আম্মু -হৃদান

হাহাহা -নিশি চৌধুরী

নাও বাচ্চা তোমার নুডলস। নিশি তুই ও নে। আর রিয়ু আম্মু তুমিও খাও সেই কখন খেয়েছো -পরশী চৌধুরী

যদিও আমার খিদে নেই বাট বড় আম্মু তোমার হাতের স্পেশাল নুডলস তো মিস করা যায় না। দাও দাও -রিয়া

হাহাহা নাও আম্মু -পরশী

ওয়াও মামুনি তোমার হাতের ননুডলস আর ছোট আম্মুর হাতের কফি সত্যিই অসাধারণ। এখন আমাকে উঠতে হবে। মামুনি ছোট আম্মু আমি এখন আসি রাতে আসবো আরেক বার। বাই -হৃদান

বলেই আর দেরী করলো না বেরিয়ে গেল। মিটিং টা এটেন্ড করতে হবে। রিয়া চলে গেল হৃদিতার ঘরে। পরশী চৌধুরী আর নিশি চৌধুরী বসে পড়লো টিভির সামনে। হৃদান গিয়ে মিটিং টা কমপ্লিট করে ডেস্কে এইমাত্র বসেছে তখনি হৃদানের পিএ আহাদ খবর দিলো কে যেন দেখা করতে এসেছে। হৃদান ভাবলো এখন আবার কে এসেছে। দেখার জন্য বললো পাঠিয়ে দিতে। পিএ বসের অনুমতি পেয়ে লোকটাকে পাঠিয়ে দিলো। হৃদান বসে একটা ফাইল দেখছিলো। কালকে আরেকটা মিটিং আছে। তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো

মে আই কামিং মি চৌধুরী

আওয়াজ শুনে হৃদানের মনে হলো কোথাও শুনেছে উপরে তাকাতেই লোকটাকে দেখে চমকে উঠলো হৃদান। আহিল খান এসেছে। এই সকালেই তো কথা হলো। চমকানো ভাবটা প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভাবে হালকা হেসে এগিয়ে গেলো।

আরে মি খান আপনি -হৃদান

চলে আসলাম মি চৌধুরী। বিরক্ত করলাম নাতো -আহিল

নো নো বিরক্ত কেন? আপনি এসেছেন আমি খুব খুশি হয়েছি। কি নিবেন চা না কফি? লাঞ্চ করেছেন? -হৃদান

মি চৌধুরী আপনি এত বিচলিত হবেন না আমি লাঞ্চ করেই এসেছি। কফি উইথ সোগার হলে ভালো হয়। দু চামিচ চিনি -আহিল

আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি। হ্যাঁ আহাদ আমার রুমে দুটো কফি পাঠাও উইথ সোগার। একটাতে দু চামিচ আরেকটিতে এক চামিচ -হৃদান

আপনার সাথে আমার কিছু ইমপরটেন্ট কথা ছিলো মি চৌধুরী -আহিল

আমি বুঝতে পারছি আমি কি বলতে এসেছেন। তার আগে আম সরি ফর দেট আমরা আপনাকে একটু ঠকিয়েছি কিন্তু সেটি ইতিবাচক নেতিবাচক নয় -হৃদান

বুঝলাম না -আহিল

আপনি অরনির কথায় বলতে এসেছেন তাইনা -হৃদান

হৃদানের সোজাসাপ্টা কথা শুনে আহিল একটু থতমত খেলো। হৃদান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হালকা হাসলো। আহিল এবার হৃদানের দিকে ভালো করে মনোযোগ দিলো। হৃদান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুমে পিয়াস প্রবেশ করলো। হৃদানের সামনে আহিলকে বসে থাকতে দেখে ও বিরক্ত হলো। বিরক্ত হলো বলতে গেলে রাগ হলো। যখন থেকে শুনেছে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে এই লোকের জন্য হারাতে পারে তখন থেকে অনেক রাগ। কোনো কিছু না বলে ধপ করে আরেক চেয়ারে বসে পড়লো। বসেই আবার হৃদানের পিএ আহাদ কে ফোন দিলো

এই পাহাদ আমার জন্য কফি পাঠাও চিনি বেশী দিবা। মেজাজ খারাপ বুজছো

পাহাদ নামটা শুনে আহাদের খুব রাগ হলো। এই পিয়াস আর মেয়ে বান্ধুবী মানে অরনি সোহা পিয়ানি এই চারজন শুধু শুধু ওর নামটাকে এমন ভাবে ব্যাঙ্গায়। এর জন্য এই চারজনের উপর ওর খুব রাগ। একটু সহজ সরল বোকা বলে সবাই একটু বেশীই ভালোবাসে অফিসের। রাগ করে বলেই ফেললো

ওই মিয়াস ব্যাটা আমার নাম আহাদ পাহাদ না

বলেই খট করে কেটে দিলো। পিয়াসের খুব হাসি পেলো আহাদের সরলতা দেখে কিন্তু এই মুহূর্তে হাসলে চলবে না। হৃদান আর আহিল দুইজনেই ওর মতিগতি লক্ষ্য করছে। হৃদান ওর ব্যবহারের মানে ঠিক ধরতে পেরেছে তাই মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু আহিল তো কিছু বুঝতে পারছে না তাই বেচারা চুপ করে আছে। অন্যদিকে আহাদ খুব রেগে আছে আজকে। তাই মনে মনে ফন্দী আটলো পিয়াসকে জব্দ করার।

আমাকে পাহাদ বলা এই আহাদ কে পাহাদ বলা। আমি কিছু বলি না বলে শুধু আমার পেছনে লাগা আজকে ব্যাটা মিয়াস কে যদি শিক্ষা না দিয়েছি আমার নাম পাহাদ এই না না আহাদ না হুমম

বিড়বিড় করতে করতে আহাদ নিজেই কিচেনের দিকে গেলো। এইদিকে পিয়াস মুখ গোমড়া করে আহিলের দিকে একবার তাকাচ্ছে আরেকবার হৃদানের দিকে তাকাচ্ছে। হৃদান এবার শব্দ করে হেসে দিলো। হৃদানের হাসির শব্দে আহিল চমকে উঠলো। সামনের মানুষ টা হাসছে মানে হৃদান চৌধুরী হাসছে সে বিশ্বাস ই করতে পারছে না। পিয়াস বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এবার হৃদান হাসি থামিয়ে নড়েচড়ে বসলো

মি খান আপনি অরনির খোঁজে এসেছেন বুঝতে পারছি। সত্য কথা বলতে অরনি আপনাকে পছন্দ করে ভালোবাসে কিনা জানি না। হয়তো ভালোও বাসে। কারণ আজ পযর্ন্ত ওকে কোনো ছেলেকে নিয়ে এত ইনটারেস্ট হতে দেখি নি। ক্রাশ ও খেতে দেখিনি। কিন্তু আজ সকালে আপনার পিক দেখেই ক্রাশ খেয়েছে। আস্তে আস্তে ভালোবেসেও ফেলবে। এখন আপনার কি মতামত। আমি যেমন সোজাসাপ্টা কথা বলছি আপনিও কোনো ইতস্তত না করে বন্ধু ভেবে বলে ফেলুন

আসলে মোট কথা বলতে বাবা শুধু বলতো এই স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজের জন্য নিজেকেই তৈরী করতে হবে। কেউ কারো জন্য না। ভালোবেসে তোমার জন্য কয়দিন করলে তারপর অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। তাই নিজেকে এমন ভাবে তৈরী করো যাতে কারো কাছে কখনো হাত পাততে না হয়। তাই নিজেকে সেই ভাবে তৈরী করতে পড়াশুনা নিয়ে এতই বিজি ছিলাম যে এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। ভেবেছিলাম বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবো। কিন্তু আজকে সকালে অরনিকে দেখে জানিনা কি হলো মনের মধ্যে অচেনা সেই অনুভূতিটা টের পেলাম। কত মেয়ে প্রপোজ করেছে। কত মেয়ের টানা টানা চোখে কত ছেলে হারিয়েছে কিন্তু আমার কোনো দিন কাউকে দেখে বা কারো টানা টানা চোখে দেখে হারাতে ইচ্ছে করেনি কিন্তু আজ সকালে অরনির সেই ছোট ছোট চোখেই নিজেকে ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। চলে আসার সময় মনে হচ্ছিলো কোনো দামী কিছু রেখে যাচ্ছি। এখন এগুলোকে যদি ভালোবাসা বলে আমি ভালোবাসি তাহলে অরনি। লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলতে পারেন

আহিলের কথা শুনে হৃদান পিয়াস যেমন অবাক হয়েছে তেমনি মুগ্ধ ও হয়েছে। ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। পরশ আর না বসে আহিল কে জড়িয়ে ধরলো। আহিল প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরে ভ্রু কুচকালো।

মি খান আপনি আমার কতবড় উপকার করেছেন আমি বলে বুঝাতে পারবো না।আমি আপনার উপর যতটা বিরক্ত ছিলাম এখন তার চেয়ে বেশী ভালো লাগছে। আপনি চিন্তা করবেন না অরনি আপনার -পিয়াস

মানে আপনাদের আচরণ গুলো কেমন যেন বুঝতে পারছি না -আহিল

আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি মি খান তার আগে বলে রাখছি আপনি পুরোটা শুনে তারপর বিচার করবেন -হৃদান

আচ্ছা বলুন আপনি -আহিল

আপনার যে বিয়ে ঠিক সেই বিষয়ে আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন -হৃদান

না মানে আসলে অরনির কথাটা চিন্তা করতে করতে আর মনেই ছিলো না এই বিষয়ে। আর অরনি বললো দেখতে আসবে ওকে তাই চিন্তাই ছিলাম না পেরে আপনার কাছে আসলাম -আহিল

সত্যি কথা বলতে অরনিকে কেউ দেখতে আসবে না -হৃদান

হোয়াটটট ও যে বললো -আহিল

মিথ্যে বলেছে আপনাকে -হৃদান

কেন? কি এমন কারণে এই মিথ্যেটা বললো -আহিল

আসলে আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আপনার পাশের জনের গার্লফ্রেন্ড। আপনার বাবার বন্ধুর মেয়ে রোহানি। একটা অনুষ্ঠান রোহানিকে দেখে আপনার বাবার খুব পছন্দ হয় সেখান থেকে তিনবছর আগে আপনার বাবা রোহানির বাবাকে অনেক অনুরোধে রাজি করিয়ে আপনাদের বিয়ে ঠিক করে। এই বিষয়ে কেউ জানতো না। রোহানিও সেদিন শুনেছে। এখন কথা হচ্ছে পরশ আর রোহানি একে অপরকে চার বছর ধরে ভালোবাসে। রোহানির বাবা মনে করেছে রোহানির কোনো পছন্দ নেই আর তিনি কিছুতেই ওনার কথা ভাঙবেন না। তাই আমরা ছেলেমানুষি করেই একপ্রকার এই প্লেন টা করেছি। অরনি কে যে চারজন ছেলে সকালের ইভটিজিং করছিলো তারা আমার বন্ধু দুইজন সাগর সোহান আর রোহানির দুই বন্ধু আধির সাহিল। কিন্তু অরনির তোমাকে বলা কথা গুলো অভিনয় ভেবো না।

থেমে আহিলের দিকে তাকালো হৃদানের। আহিলের কোনো হেলদোল নেই। মুখের এক্সপ্রেশন দেখেও কিছু বোঝা যাচ্ছে না।হঠাৎ হৃদান পিয়াসকে অবাক করে দিয়ে আহিল হেসে উঠলো। হৃদান ওরা একটু হালকা হলো।

কি ভেবেছেন মি চৌধুরী আমি আপনার কাছে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই এসেছি -আহিল

মানে -পিয়াস

আসলে সকালেই আপনাদের উপর একটু সন্দেহ হয়েছিলো। আপনাদের আচরণ গুলো খুব ভাবাচ্ছিলো আমাকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মি সাগর মি সোহান আপনার বন্ধু। তখন একটু খটকা লাগলো তাই বাবা কে বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় বাবা মিস রোহানির কথা বলে। রোহানির খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মিস অরনির যে বোন সে রোহানির বন্ধু। তাই আমার কাছে অর্ধেক ক্লিয়ার হলো। আরো ক্লিয়ার করতে খোঁজ করতে লাগলাম। মি পিয়াস আর মিস রোহানির ব্যাপারটা জানতে পারলাম। তখন সবটা ক্লিয়ার হলো। তখন একটু রাগ হয়েছিলো পরে অরনির কথা মনে হওয়ায় সে রাগটা চলে গেছে। কারণ আপনারা এই প্লেন টা না করলে আমি অরনি কে পেতাম না। তবুও একটা ভয় ছিলো অরনির কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা। এটাও খোঁজ নিলাম। নাহ নেই। তখন ভাবলাম এখন ভালো না বাসলেও আমি ঠিক ভালোবাসাটা অর্জন করে নিবো। এখানে এসে জানতে পারলাম অরনিও আমাকে ভালোবাসে। আপনাদের উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। বরং খুশি।

তাহলে বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে -পিয়াস

এখন রোহানি ওর বাবাকে বলবে ও পিয়াসকে ভালোবাসে আমি বলবো আমি অরনি কে ভালোবাসি। তাই দুপরিবার ই এক থাকবে। কেউ কারোর কথা খেলাপ হবে না -আহিল

হ্যাঁ তাই হবে। আজকেই গিয়ে কথা বলতে হবে -হৃদান

তখনি বাইরে নক করার শব্দ হলো।

মে আই কামিং স্যার -আহাদ

ইয়েস কাম -হৃদান

হাই পিয়াস তোমার জন্য আমি নিজের হাতে কফি বানিয়েছি নাও খাও -আহাদ

আহাদের এত ভালো ভালো কথা শুনে পিয়াস আর হৃদানের একটু খটকা লাগলো

কি ব্যাপার পাহাদ তুমি এত ভালো ব্যবহার করছো আমার সাথে ব্যাপার কি -পিয়াস

কি যে বলো না আমি আবার কবে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। আমি নিজে বানিয়েছি খাও না। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে -আহাদ

পিয়াস আর কিছু ভাবলো না। আহাদ এমনিতেই সহজ সরল তাই ওত কিছু না ভেবে কফির মগটা হাতে নিলো। পিয়াসের হাতে কফির মগ দেখেই আহাদের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হৃদান ঠিক খেয়াল করেছে ব্যাপার টা। অন্যদিকে আহাদ মনে মনে বলছে

খাও না খাও মিয়াস ব্যাটা আমার সাথে ফাযলামি করা।আজকে টের পাবে হুমম। এমন মরিচ আর লবন দিয়েছি না একবার শুধু মুখে দাও তখন বুঝবা এই আহাদ কি জিনিস। হাহাহাহা

এরপর যেই পিয়াস কফি টা মুখে দিয়েছে পিয়াসের মুখের এক্সপ্রেশন টা দেখে আহাদ এক দৌড়ে বাহিরে চলে গেছে আর হৃদান শব্দ করে হেসে দিলো। আহিল কিছু না বুঝে চুপ করে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটি বাংলার পাঁচের মতো হয়ে আছে। এক চুমুক দেওয়ায় জ্বালটা ওতটা না পেলেও লবনের জন্য মুখটা তিতা হয়ে আছে।

মি পিয়াস কি হয়েছে -আহিল

পিয়াস কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেইড মিষ্টি নিয়ে আসলো। তাড়াতাড়ি একটা মিষ্টি মুখে পুরে নিলো। আহিল বুঝতে পারলো কফিতে গড়মিল আছে। হাসলো আহিল। মিষ্টি খাওয়ার পরে পিয়াস ও হাসলো ওর কান্ড দেখে। আর কিছু বললো না।

আচ্ছা মি চৌধুরী এখন আসি। দেখা হবে -আহিল

ওকে মি খান সি ইউ সোন -হৃদান

মি খান থ্যাংকস -পিয়াস

আই এম অলসো বাই -আহিল

আহিল চলে গেল। হৃদান আর পিয়াস কিছুক্ষণ শান্তিতে আড্ডা দিলো। তারপর দুইজন ই হৃদিতার দের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লো।
হৃদিতাদের বাড়ি আসতেই ড্রয়িং রমে তাকাতেই দুজনের চক্ষু চড়কগাছ…

চলবে….?
চলবে….?

(আর বেশী বড় করবো না। পয়ত্রিশ পর্বের বেশী যাবেনা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here